মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_২৫ #পুষ্পিতা_প্রিমা

0
369

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২৫
#পুষ্পিতা_প্রিমা

আচমকা মিনির ডাক শুনে রেহান চমকে উঠল। মিনি ফিরেছে? তারমানে চাচ্চু ও ফিরেছে? আইমি ও ফিরবে? কিন্তু না মিনিকে উড়ে উড়ে যেতে দেখা গেল আদির ঘরের দিকে। আদিকে না পেয়ে মিনি প্রত্যেকের রুমে রুমে গেল। আদির নামটা মুখে আনতে পারল না। শুধু ডানা ঝাপটে ঝাপটে বলল,
‘ মিস ইউ। মিস ইউ।
বাড়ির প্রত্যেকে অবাক হলো। জানতে চাইল, কোথায় ছিলে তুমি মিনি?
মিনি কিচ্ছু বলতে পারল না। শুধু বলল, মিস ইউ। মিস ইউ।
মিনুমা বলল, আদি কোথায়?
মিনি এবার ডানা ঝাপটে ডাকল,
‘ আদি। আদি মিস ইউ। মিস ইউ।
আদি আসল না। কোথায় আদি?
মিনি উড়ল এপাশওপাশ। এদিকওদিক। পুরো বাড়ি ঘুরল। উড়ল। কোথাও দেখতে পেলনা আদিকে। তার অবুঝ মন ও রাগ করে বসল আদির সাথে।

_____________________

চকচকে মেঝের উপর শোয়া ঘুমন্ত মেয়েটির আদুরে চেহারা, ঠোঁটদুটো ফুলানো। ঘুমন্ত চেহারায় ঠিক পরীর মতনই লাগছে। আলিয়া কাঁপাকাঁপা হাতে কোলে তুলে নেয় পরীকে। তার হাত কাঁপছে। পা কাঁপছে। কন্ঠনালী পর্যন্ত কাঁপছে। কিছুক্ষণ আগে ফোনে কথা বলা মেয়েটির কথাগুলো কানে বাজছে। ডক্টর আদি চৌধুরীর সন্তান আদিশা। চৌধুরী বংশের প্রদীপ। আমার ঘেন্না হলে ও ওই বাড়িরই সন্তান পরী। কতটা নিচ আপনারা মিসেস চৌধুরী। চৌধুরী বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষকে আমি ঘেন্না করি। আমি ঘেন্না করি ডক্টর আদি চৌধুরীকে। আমার সন্তানের বাবাকে। আমার ভাবতেই কষ্ট হয় ডক্টর আদি চৌধুরীই পরীর বাবা আর আপনারা তার দাদু দাদা। স্বার্থপর। পাষাণ। হৃদয়হীন।

আলিয়ার কানজোড়া ঝা ঝা করে উঠে। কথাগুলো অত বিষাক্ত কেন?
নরম তুলতুলে শরীরটা স্পর্শ করতেই যেন শক লাগল। হাত সত্যি সত্যি কেঁপে উঠল আলিয়ার। পরীকে তার দিকে ফিরিয়ে আনতেই কপালে সেই আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। আঙুলে কাটা চিহ্ন। রক্ত শুকিয়ে গেছে। কচি চেহারাটায় ক্লান্তি,ভয়ের ছাপ। এমন নরম তুলতুলে শরীরটা তো আগে অনুভব হয়নি। নিজের রক্ত জেনেছে বলেই কি এত মায়া কাজ করছে? আসলেই কি তারা স্বার্থপর?
আলিয়া পরীকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে দাঁড়াল। পরীর মুখ তার বুকের কাছে গিয়ে আটকাল। আদুরে মুখটা বুকের সাথে ঠেকে গেল। উষ্ণ কোল পেয়ে পরী আবার ও ঘুমিয়ে গেল। ঘুমের মাঝে ভ্রু কুঞ্চন করে মৃদুমন্দ কাঁদছে। আলিয়া কাঁপাকাঁপা ঠোঁট দিয়ে ছুয়ে দিল পরীর নরম ঠোটে, কপালে,সারামুখে। তারপর আবার বুকের সাথে চেপে ধরল। আপনাআপনি হাসি আসল তার। বুকের সাথে চেপে ধরে ছোট্ট মেয়েটির চুলের উপর চুমু খেয়ে বলল, আমার আদির মেয়ে! আদির একটা মেয়ে আছে? আদি বাবা?
আলিয়ার সত্যি সত্যি হাসি পেল। এই দিনই তো আদি ছোট একটা বাচ্চা। মা মা করে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াত। তার এখন একটা ছোট্ট মা আছে। আদি কি জানে?
আলিয়া পরীর পিঠে আদর করে চাপড় দিয়ে বলল,
‘ তুমি আমার আদরে ভাগ বসাতে এসেছ আদিশা? আদি এখন তোমাকে মা ডাকবে।
পরী নড়েচড়ে গুজে গেল আলিয়ার বুকে। আলিয়া হাসল। তার সুড়সুড়ি লাগল। বলল, তুমি আমাকে কি ডাকবে দাদুমণি? দাদু ডাকবে? তুমি ঘুমোচ্ছে আদিশা? উঠো দেখো তোমার দাদু কোলে নিয়েছে তোমায়?
আলিয়া সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। তার কোলে পরীকে দেখে মিনুমা আর রাইনা অবাক হলো। যখন দেখল আলিয়া পরীকে আদর করছে তাদের বিস্ময় আকাশ ছু্ঁল। কান্নাহাসিতে তারা একাকার হলো।
আজিজ চৌধুরী যখন রুমে ডুকে বিছানার উপর শোয়া ছোট্ট মেয়েটিকে দেখল অবাক হলো। বলল, লিয়া কি হচ্ছেটা কি? এই মেয়েটা এখানে কেন? বিছানায় কেন? তোমার গায়ে এমন শাড়ি কেন?
আলিয়া হাসল। বলল, আমার শাড়িতে ওর বুকে মাথা রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। ও ব্যাথা পাচ্ছে। তাই সুতি শাড়ি পড়েছি। আমার ও ভালো লাগছে। আদিশা ও ব্যাথা পাবেনা। ঘুমিয়েছে তাই সেই সুযোগে চেন্জ করে নিয়েছি।
আজিজ চাপা রাগ দেখিয়ে বলে, এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয় লিয়া। এই মেয়েটার প্রতি তোমার এত দরদ উতলে উঠছে কেন?
আলিয়া ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে চুপ করার জন্য বলল। বলল, উঠে যাবে। আস্তে কথা বলো।
আজিজ চৌধুরী এবার ধমকে উঠল। ‘ এই মেয়েটাকে ওই রুমে রেখে আসো লিয়া। আমার এমনিতেই মাথা খারাপ। আদির কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।
আলিয়া পরীর মাথার পাশে বসল। বলল,
‘ যদি এখন এখানে রেহান ঘুমোতো তাহলে কি করতে?

‘ রেহানের সাথে এই মেয়েটাকে কেন মিলাচ্ছ লিয়া? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?

‘ ওর নাম আছে মিঃ চৌধুরী। আদিশা চৌধুরী।

আজিজ চৌধুরী পাত্তা দিলনা। কানে নিল না সেইকথা। কিন্তু যখনি বোধগম্য হলো সে অবাক চোখে তাকাল আলিয়ার দিকে। বলল, ও চৌধুরী কি করে হয় লিয়া? আদি শা? আদির? না কি করে লিয়া? আমার আদির সন্তান?
আলিয়া হাসে। কান্নায় চোখ ভাসে। বলে, এই পুঁচকুটা আদির মেয়ে। আমি ভুল ছিলাম না। আমার ধারণায় সত্যি।

‘ তুমি সিউর কি করে? আদির সন্তান নেই। আমি তো নিজ হাতে মেরেছি। এই মেয়েটা কিছুতেই আদির সন্তান নয়। এই মেয়েটার শরীরে খান বাড়ির রক্ত বইছে। আমাদের নয়। রিক রেজওয়ান খানের মেয়ে সে।
আলিয়া পরীকে আলতোহাতে কোলে তুলে নেয়। পরীর গালে গাল লাগিয়ে বলে,
‘ আমি শতভাগ নিশ্চিত এই মেয়েটা আদির মেয়ে। ইশা এবরশন করায়নি। তোমার হাতে ভুল রিপোর্ট এসেছে। আমার কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে আমরা মারতে চেয়েছি আদির মেয়েকে। আদির রাজকন্যা সে। দেখো নাকটা আমার। চোখদুটো খেয়াল করে দেখিও পুরোটাই আদির। আমার আদির। আদি যদি জানতে পারে আমরা ওর বাচ্চাকে মারতে চেয়েছি কোনোদিন তাকবেনা আমাদের দিকে।
আজিজ চৌধুরী অবাক হয়। লিয়া এসব কি বলছে?

‘ তুমি ইমির কথা ভাবছ না কেন লিয়া? কিছুদিন পর তাদের বিয়ে। এসব সন্তান টন্তান তুমি দূরে রাখো। আদিকে জানিও না।

আলিয়া চিন্তায় পড়ে যান। বলে,
‘ এটা কি করে হয় আজিজ? আদির জানার অধিকার আছে তার একটা রাজকন্যা আছে। তুমি একবার অতীত ঘেটে দেখোনা আজিজ। আমি একটা মেয়ের জন্য কতই না পাগলামি করেছি। আদির সাথে অন্যায় হচ্ছে। ইশার সাথে ও অন্যায় হয়েছে।

আজিজ চৌধুরী দাঁড়িয়ে পড়েন। বলে,
‘ আমি মানিনা এই মেয়েটা আদির। আদির মেয়ে না এই মেয়ে। আমি ওই ইশা নামের মেয়েটিকে কিছুতেই মানতে পারব না। আমার আদির পাশে ইমিকেই চায়। আদি ও চায়।

‘ কিন্তু আদি মিষ্টিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ও মিষ্টিকেই চায়। তুমি দেখোনি ইন্ডিয়া গিয়ে ও ছয়মাস কি অবস্থায় ছিল। ও সত্যি মিষ্টিকে চায় আজিজ। আমরা হয়ত বুঝতে পারছিনা। আমরা ওর উপর সবকিছু চাপিয়ে দিচ্ছি না তো? আদির ভালো থাকাটা ঠিক কোথায়?

‘ আদি তোমাকে একবার ও বলেছে ও মিষ্টিকে চায়। তুমি কিসব উল্টাপাল্টা বলছ? এই মেয়েটা যাতে কিছুতেই আদি আইমির চোখে না পড়ে। আমি আফাজ সাহেবের কাছে মুখ দেখাব কি করে? উনি কত আয়োজন করছেন বিয়ের।

আলিয়া চৌধুরী দেখে পিটপিট করে চোখ খুলছে পরী। আড়মোড়া ভাঙছে। সোজা হয়ে না উঠে বিছানায় হাতের ভর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে উঠল। উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে কেঁদে দিল। ডাকল,মামমমমমমমমা………
আলিয়া চৌধুরী কোলে ডাকলেন। বললেন
‘ এসো আদিশা। এই দেখো। এদিকে।
পরী তার দিকে ফিরল। চোখ থেকে হাত নামিয়ে পিটপিট করে তাকাল আলিয়ার দিকে। হামাগুড়ি দিয়ে গেল আলিয়ার কাছে। তার গা বেয়ে উপরে উঠে বসল। আলিয়া দেখল মশা কামরে লাল লাল দাগ বসিয়ে ফেলেছে। পরী তার উরুতে পা দিয়ে দাঁড়াল। আলিয়া ব্যাথা পেলে ও কিচ্ছু বলল না। পরী আলিয়ার গাল ছোট ছোট হাত দুটো দিয়ে আঁকড়ে ধরল। জোরে জোরে আওয়াজ করে মারতে মারতে ডাকল, দাদদদদদদা….
আলিয়া হেসে উঠল। এভাবে কেউ মারে আদিশা? মাইর গুলো শক্ত আছে।
পরী তার মুখ দিয়ে দুমদুম আঘাত করল আলিয়ার মুখে। গালের ভেতর আঙুল ডুকিয়ে বলল, দাদদদদদদদদদা আমমম।

আজিজ চৌধুরী আড়চোখে তাকাল পরীর দিকে। বলল,
‘ লিয়া ছাড়ো ওকে। তোমার কোলের উপর দাঁড়িয়েছে ব্যাথা পাচ্ছ না? ছাড়ো।
আলিয়া ছাড়ল না। বলল, এগুলো কোনো ব্যাথা না আজিজ। নাতনীর হাতে যদি এটুকু ব্যাথা সহ্য করতে না পারি?
পরী চেঁচিয়ে কাদঁল। দাদদদদদা আমম……
আলিয়া তাকে কোলে নিয়ে নিল। বলল,চলো। আজকে তোমাকে মিষ্টিমুখ করাব। তোমার পাগলা বাবা কোথায় চলে গিয়েছে কে জানে? তাকে ফোন করব। তাকে খুঁজে বের করব।
পরী ঠাসসস ঠাসসস আওয়াজ তুলে মারল আলিয়াকে, প্রশ্ন করল,
‘ বাববববববা?
আলিয়া মাথা দুলিয়ে বলল, হ্যা।
আজিজ আলিয়ার পেছন পেছন ছুটে গেল। বলতে লাগল, লিয়া তুমি এসব বাজে কথা কাউকে বলবে না। আদিকে তো একদম না । আমি বিশ্বাস করিনা ও আদির মেয়ে। ওই মেয়েটা সহানুভূতি আদায় করার জন্য মিথ্যে বলেছে। আর তুমি গলে গিয়েছ। আইমি যাতে এসবের কিছুই না জানে। লিয়া???????
আলিয়া শোনেনা কারো কথা। আজ তার খুশির দিন। রেহান আর আদিশার সাথে সে সময় কাটাবে। হাসবে,খেলবে, খাবে,ঘুমোবে।
আজ সে পরীকে নিজ হাতে খাওয়াল। কোলে কোলে রাখল। মিনিকে দেখার সাথে সাথে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ডাকল,
‘ মিননননননি ওততততততো……..
আলিয় আর আজিজ চৌধুরী সহ সবাই অবাক হলো। মিনি উড়ে এল। উড়ে উড়ে পরীর গালে গাল ছুয়ে ডানা ঝাপটে ডাকল,প্রিন্সেস প্রিন্সেস মিস ইউ। মিস ইউ।

এতদিন মিনি কোথায় ছিল তা আর বুঝতে বাকি রইল না কারো। পরীকে তার মিননননিকে পেয়ে কাঁদা ভুলে গেল। আলিয়া চৌধুরী তাকে নিজ হাতে গোসল করাল। খাওয়াল। পড়াল। মিনু আর রাইনাকে ছুঁতে ও দিল না। খেলনাপুতুল কিনে এনে মাঝখানে বসিয়ে দিল পরীকে। পরী ভুলে গেল সব কষ্ট। সব দুঃখ। সব আঘাত। খেলতে খেলতে মাঝেমাঝে মিনমিন করে হঠাৎ হঠাৎ ডাকে, পাপপপপপপা? মামমমমমমমা? রিইইইইই?
এত যত্ন আত্তির আদর ভালোবাসায় আলিয়া তাকে ডুবিয়ে রাখল। কারো কথা মনে পড়ার,তার কান্না করার কোনো সুযোগ রাখল না। তারপর পরী খেলতে খেলতে,খেতে খেতে, হাঁটতে হাঁটতে মিনমিন করে নিজের আনমনে ডাকে, আমমমমা…….. আমমমমা……

_______________________

খাবার টেবিল সাজিয়ে দিল মুনা আর ইশা। কারো মুখে টু শব্দ নেই। সবার চেহারা বিমর্ষ, বিবর্ণ। ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে এল রিপ। এত তার ব্যস্ততা ফোন কানে নিয়ে বসে পড়ল চেয়ার টেনে। ইশা কাঁপাকাঁপা হাতে প্লেট ঠেলে দিল রিপের দিকে। রিপ তাকাল ও না। কিচ্ছু বলল ও না । ফোনে কথা বলা শেষ করে চুপচাপ খেল। রিক কিছু প্রশ্ন করবে ভেবেছিল কিন্তু করা হলোনা। রিপ কারো দিকে একপলক তাকাল না। ইশা আগ বাড়িয়ে বলল,
‘ আরেকটু দিই?
রিপ জবাব দিল না তার প্রশ্নের। ইশা সরে গেল। মুনা এসে দাঁড়াল রিপের পাশে। বলল, রিপ কখন ফিরবি বাসায়? কিছু জানতে পেরেছিস?
রিপ পানি খেয়ে থামল। বলল, না।

‘ পরীকে নিয়ে আসবি না? তুই কথা দিয়েছিলি আমায়।

‘ পরী তো তোমার মেয়ে নয়। তাহলে তোমার এত চিন্তা কিসের?

রিক খাওয়া বন্ধ করে তাকাল রিপের দিকে। সেই একটুখানি খাবার মুখে তুলতে গিয়েছিল সে। কিন্তু আর মুখে তোলা হলোনা। খাওয়া রেখে বলল,

‘ পরী আমার মেয়ে রিপ।

রিপ কিচ্ছু বলল না। চুপচাপ খেতে লাগল। খাওয়া শেষে উঠে পড়ল। তালহা বেগম বলল,
‘ কোথায় যাবি এখন রিপ?

রিপ সোজা বলল, থানায়।
ইশা আঁতকে উঠল। রিপ খেয়াল করলে ও তার দিকে ফিরে তাকাল না। হেঁটে বেরিয়ে গেল। সদর দরজা পেরোতেই ডাক পাড়ল ইশা।

‘ রিপদা দোহাই লাগে তোমার। পুলিশকে কিছু বলোনা। রিপদা শুনতে পাচ্ছ ??????

রিপ বেরিয়ে পড়ে বাইরে। আবার ইশার ডাক শুনে বলে,

‘ শুনতে পাচ্ছি। রিপদা নামে আর কে আছে এই বাড়িতে।

ইশা সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দুইজনের কেউ তাকাল না কারো চোখের দিকে। ইশা অপরাধবোধ নিয়ে বলল,
‘ রিপদা তুমি এভাবে কথা বলোনা আমার সাথে। আমার কপালে যা ছিল তাই পেয়েছি আমি। আমার অপরাধ আমি তোমাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্বিতীয় অপরাধ আমি তা তোমার কাছ থেকে লুকিয়েছি। আমি মানছি আমি অপরাধ করেছি। আমি স্বীকার করেছি। এই ভুলের কারণে আমি শাস্তি ও মাথা পেতে নেব। তুমি আমায় শাস্তি দেবে রিপদা?

এইবার চোখ তুলে তাকায় রিপ। সরাসরি ইশার দিকে। হাসে। ম্লান হাসি। বিষাদ মেশানো হাসি।

ইশা টলমলে চোখে তাকায় রিপের দিকে। তার অবুঝ মন চেয়েছে রিপদা তার কান্নামাখা চোখদুটো দেখে একটিবার বলুক,

‘ আমি কি তোকে শাস্তি দিতে পারি ইশু?

কিন্তু না,, রিপদা কিছুই বলল না। অপরিচিত একটি বাইরের মানুষের মতো করে বলল,

‘ যার উপর আমার কোনো অধিকার নেই। যে আমার কেউ না। আমি যার কেউ নই। আমি তার উপর অধিকার কাটাতে যাই না মিসেস চৌধুরী। সেখানে আপনি তো চৌধুরী বাড়ির বউ, এত সুনামধন্য বাড়ির বউ আপনি! আপনাকে কি করে শাস্তি দেওয়া যায়? আর কিসেরই বা শাস্তি? কিসেরই বা ভুল। ভালোবাসাটা কোনো ভুল নয় মিসেস চৌধুরী। ভালোবাসা তাদের জন্যই ভুল হয়ে দাঁড়ায় যারা আসলেই বামন। চাঁদে যাওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত এমন দুর্লভ কাজটাই তাদের জন্য ভুল। তাই শাস্তিটাই তাদের পাওয়া উচিত। আপনি ঠিক কাজ করেছেন। একদম ঠিক কাজ। অল দ্য বেস্ট অফ ইউ।

রিপ দাঁড়ায় না কেন জানি। কিছু লুকোনোর জন্য বোধহয় এত তাড়া তার। বাইকে উঠে মুহূর্তেই নিরুদ্দেশ হলো। পেছনে রেখে গেল একরাশ অপরাধবোধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বোকা,পাষাণ মেয়েটির ছলছলে চোখজোড়া । পরে আনমনে হেসে মেয়েটি আওড়ায়।
‘ আমি সত্যিই তোমার কেউ না রিপদা। ভাই হয়ে আমার পাশে ছিলে তুমি। আমি হারিয়ে ফেললাম তোমাকে। নিজের দোষে। এক ভুল মানুষকে বিয়ে করে,ভালোবেসে।

রিপ এক ধ্যানে চালায় বাইক। বাইকের মিররে তার বেহায়া চোখদুটো দেখে নিজে নিজে আচমকা বাইক দাঁড় করায়। কতগুলো কলেজের মেয়ে চেঁচিয়ে উঠে তাদের গায়ে কাদা ছিঁটকে পড়ায়। রিপ ফিরে ও তাকায়না। নিজের উপর রাগ বাড়ে তরতর করে। এসব ন্যাকামো দেখার সময় নেই। বাইক স্টার্ট দিয়ে সে আবার চলে যায়। মেয়েগুলো চেঁচিয়ে উঠে। কি অভদ্র ছেলে? একটা সরি পর্যন্ত বলার প্রয়োজন মনে করল না। তারমধ্যে একজন নীরব দর্শক চেয়ে রইল সেই বাইক নিয়ে ছুটে চলা ছেলেটার যাওয়ার পানে। তার গায়ে বেশি কাঁদা পড়েছে। তাকে চুপ থাকতে দেখে তার বাকি বান্ধবীরা চেঁচিয়ে উঠল।
‘ তোর মতো গাধী জীবনে আর দুটো দেখিনি। এত কাঁদা পড়ল,কিছুই বললি না। স্ট্রেঞ্জ? তোর কাপড়ে তো বেশি পড়েছে। দেখ কি বাজে অবস্থা? ক্লাসে কিভাবে করবি?
মেয়েটি নিশ্চুপ তাকিয়ে দেখল নিমেষেই ধোঁয়াশা হওয়া বাইকে বসা ছেলেটিকে। মাথা নামিয়ে বলল, কিছু হবেনা। আমি আজ ক্লাসে আর যাব না। তোরা যাহ।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here