ভালোবাসিবো_খুব_যতনে #Ayrah_Rahman #part_17

0
648

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_17

______________

” কককে ? কে আপনি ? ”

ভয়ে ভেতর টা শুকিয়ে আসছে ইলুর , সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেও নির্লীপ্ত ভঙ্গিতে ই আছে কোন কথা ও বলছে না ,

হঠাৎ বিজলি চমকানো র ফলে আলোতে সামনে থাকা লোকটার অবয়ব কিছু টা ঠাওর করতে পারল বোধ হয় ইলু , যতটুকু বুঝেছে এটা কোন পুরুষালী অবয়ব ,
তাহলে কি ভুত পুরুষের ছদ্মবেশ ধরেছে ?

এমনি তেও তো ভুত জাতিতে পুরুষ , কখন জানি খপ করে ঘাড় টা ধরে কট করে মটকে দেয় তার উপর সে ভুতের এতোটা কাছে ,
ইলু কাদো কাদো দৃষ্টিতে একবার সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকালো আবার পিছনে পালাবার পথ খুজতে লাগলো ,
ইলুর মনে হচ্ছে ভয়ে তার রক্ত শুন্য হয়ে গেছে মাথা টা কেমন জানি ঝিম ঝিম করছে , মাথা ঘুরাচ্ছে তার ভীষণ ভাবে , নাহ্ আর কিছু ই সে বলতে পারবে না ,

” ভুতততত ” বলে চিৎকার দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে পড়ে য়েতে নিলেই এক জোড়া শক্ত হাত আকড়ে ধরলো তার কোমড় , ইলুর মাথাটা গিয়ে ঠেকলো সেই পুরুষের বুকে, লোকটা আরেক হাত দু হাটুর ভাজে নিয়ে সহসাই কোলে তুলে নিলো তাকে , হয়তে সে এই সময় টার ই অপেক্ষা করছিলো ,

কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো সে ,

______________

ভুত না না প্রেতাত্মা আমাকে দেয়ালে চেপে দাঁড়িয়ে আছে, তার এক হাত দেয়ালে আরেক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , বিজলী চমকানোর আলোতে বুঝতে পারলাম সে মাস্ক পড়া , এহহ নিজেতো কালো মাস্ক পড়ে আছে দেখার ও উপায় নেই

, প্রেতাত্মা বলার প্রধান কারন হলো . লোকটা কে? তা আমার অজানা , ধরে আছে তো আছেই না নিজে কোন কথা বলছে না আমাকে বলতে দিচ্ছে . তাকিয়ে আছে তো আছেই , বুঝলাম না ভাই এই অন্ধকারে এই হতচ্ছাড়া টা দেখে কি ?

প্রায় মিনিট পাচেক পর আমার বেশ অতিষ্ঠ লাগছে তাই ছাড়া পাওয়ার জন্য কথা বলতে চাইলাম কিন্তু ভাগ্য আমার ! মুখ থেকে , ” উমম , , উমম ” শব্দ ছাড়া আর কিছু ই বের হলো না ৷,

হঠাৎ ই লোকটা আমার দিকে ঝুঁকে এলো যার ফলে আমি পিছনে যেতে গিয়ে আমার মাথাটা গিয়ে বারি খেলো দেয়ালের সাথে , চোখ কুচকে ব্যথা নিবারনের চেষ্টা করলাম,

আমার কানের কাছে এসে ধীর গতিতে ফিসফিস করে বলল ,

” ওয়েলকাম টু মাই ওয়ার্ল্ড ”

এই অন্ধকারে ফিসফিসিয়ে কথা শুনে আমি খানিকটা কেঁপে উঠলাম ,

উষ্ঠ দুটো ফাক করে নিশ্বাস ছাড়বো তার ও উপায় নেয় ,

ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলাম ,

আমার ছটফট করতে দেখে সামনে থাকা লোকটা কিছু টা বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বলল ,

” ওফফ রানী , এত ছটফট করো কেন বলো তো ? একটু শান্তিতে দেখতে দাও না তোমাকে ! তুমি জানো কতটা সময় ধরে তোমাকে দেখি না ? পুরোপুরি একটা দিন তোমায় না দেখে থাকতে হলো , তুমি ভাবতে পারছো? কত টা সময় তুমি আমার চোখের আড়ালে ছিলে ? ”

লোকটার কথা শুনে আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি যদিও স্পষ্ট ভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না , আমি ভাবতে লাগলাম , লোকটা কি পাগল না কি? নাকি মাথার তার কয়েকটা আলগা করা !

, হঠাৎ হঠাৎ বিজলী চমকানো র আলোতে কিছু টা দেখা যাচ্ছে লোকটাকে , যতবার আলোর ঝলকানি তে তার চোখের দিকে তাকাচ্ছি ঠিক ততবারই মনে হচ্ছে এর গভীরতা অনেক , খুব বেশি গভীর , এত গভীরে যাবার সাধ্য আমার নেই!

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে তিনি , হঠাৎ করে ই শব্দ করে হেসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো ,

” আমাকে বুঝতে যেও না রানী , নিজেকে অবুঝ মনে হবে ,
আমাকে খুজতে যেও না রানী নিজেকেই হারিয়ে ফেলবে যে ,
আমার চোখের গভীরতা অনেক খুজে কুল কিনারা পাবা না রানী তাই বৃথা চেষ্টা করো না ”

লোকটার সাথে আমার দুরত্ব টা দু এক ইঞ্চি থেকে বেশি তো হবেই না , এই প্রথম কোন ছেলে আমার এতো টা কাছে ,

সে এতো জোরে শ্বাস প্রস্বাস নিচ্ছে যেন আমি তা নির্ভুল ভাবে গুনতে পারব , তবে খটকা জনক লাগছে ভীষণ ,

লোকটার গায়ে গন্ধে টা আমার কেন জানি ভীষণ পরিচিত মনে হচ্ছে , মনে হচ্ছে এর আগেও এমন গন্ধ আমি পেয়েছি খুউউবব কাছ থেকে , ভীষণ চেনা আমার , কিন্তু কিছু তেই যেন মনে পড়ছে না ,

এসব চিন্তা ভাবনার মাঝে ই হঠাৎ লোকটা আমার মুখ হাত ছেড়ে দিলো ,

লোকটাকে কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখন ই মনে হলো আমার আশপাশে কেউ নেই , কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছি না , চলে গেছেন?

” আছেন কেউ ? ”

নাহ্ কোন সারা শব্দ নেই তারমানে কেউ নেই ,

, সব কিছু কেমন জানি গোলমেলে লাগছে , লোকটায় বা কে ছিল? এই ভরা জঙ্গলে কি করে সে ? কেন এসেছে এখানে ? বেশ কয়েক টা প্রশ্ন যেন মগজে ঠোকড়াচ্ছে , উত্তর মিলছে না কিছুতেই !

হঠাৎ ইলুর কথা মনে হলো ..

আমি এখানে ? তাহলে ইলু কোথায় ? নিশ্চয়ই আমাকে খুজছে ? দৌড়ে বের হলাম রুম থেকে , কোথাও কোন আলো নেই , ইলুর আওয়াজ ও নেই, বেশ অনেক টা ই ঘাবড়ে গেলাম আমি , মেয়েটা তো ভীষণ ভীতু , আমাকে না পেয়ে না জানি কি করছে মেয়েটা ,

বারান্দা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি কোন একটা রুমে আলো জ্বলছে , দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম ,

ঘর টা তে এসে দেখি ইলু মেঝেতে ব্যগ কে বালিশ বানিয়ে শুয়ে আছে , আমি ওকে এভাবে দেখে একটু নয় অনেকটাই অবাক হলাম , আমাকে না খুঁজে ও এভাবে শুয়ে থাকবে ব্যপার টা কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে ,

জানালার দিকে নজর যেতেই আমার কেন জানি মনে হলো , আমাকে দেখা মাত্র ই কেউ জানালা থেকে সরে গেলো , ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম জানালার দিকে , কিন্তু কাউকে ই দেখলাম না , মনের ভুল ভেবে সরে আসলাম ওখান থেকে ,

ইলুর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসলাম , ভ্রু কুচকে বার কয়েক ডাকার পর ও কোন সারা শব্দ নেই ওর,
অজ্ঞান হয়ে গেছে নাকি? আমি আর কিছু চিন্তা না করেই ব্যগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি হাতে নিয়ে ওর মুখে ছিটা দিলাম , কয়েকবার দেওয়ার পর ই হুড়মুড় করে লাফ দিয়ে ওঠে দুরে সরে গেলো ও আমার থেকে ,

দু হাটু মুড়ে চোখ বন্ধ করে ই কেঁপে কেঁপে বলতে লাগলো ,

” ভুউউউতত প্লিজ মারবে না আমাকে , প্লিজ মারবে না , আমি বাঁচতে চাই , দয়া করো ”

” ইলু, ইলু চোখ খুল , এখানে ভুত নেই , দেখ আমি পূর্ণা , তুই চোখ খুল ”

তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না ও আনমনে বিরবির করে ই যাচ্ছে , বুঝলাম কোন কিছু নিয়ে বেশ ভয় পেয়েছে , কিন্তু কি নিয়ে? জানার জন্য তো আগে ওকে স্বাভাবিক করতে হবে ,

আমি গিয়ে ওর সামনে বসে আমার দুই হাত ওর বাহুতে রেখে দু বার শরীর ধাক্কা দিয়ে ডাকতেই ও পিটপিট করে চোখ খুলল তবুও ওর চোখে মুখে ভয়ে র ছাপ স্পষ্ট ,

আমাকে দেখা মাত্র ই দু হাতে আমাকে জরিয়ে ধরলো খুব জোরে ই ধরেছে , এত জোরে যে আমি ব্যথা পাচ্ছি তবুও কিছু বললাম না , ইলু ভয়ের তাড়নায় হুস হারিয়ে ফেলেছে ,

আমি কিছু না বলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম যতক্ষন না ও নরমাল হয়

____________________

জমিদার বাড়ির ছাদের দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে এক ২৫-২৬ বছরের যুবক , ঠিক তার সামনেই নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে তাহরিম তালুকদার,

” রুদ্র কাজটা কি তুই ঠিক করলি ? মেয়েটা কত ভয় পেয়েছে তুই জানিস ? তোকে নিয়ে আর পারলাম না ! এতদিন এব্রোডে থেকে এলি তবুও তোর ঘাড় ত্যারামি গেলো না! ”

শেষের কথাটা বেশ আফসোস এর স্বরে ই বলল তাহরিম ,

তাহরিমের কথা শুনে রুদ্র তার হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে দাড়ালো , ওষ্ঠ দুটো ফাক করে ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো ,

” এব্রোডে কি এমন কোন বিধি নিষেধ আছে না কি যে ওখানে থাকলে ই ঘাড় ত্যাড়ামি করা যাবে না , নিজের অভ্যাস বদলাতে হবে , মেয়েদের সাথে লেপ্টে থাকতে হবে , তাদের সাথে কথা বলতে হবে , কই আমার জানা মতে তো ছিল না! তুই যখন থাকতিস তখন ছিলো বুঝি? যদিও তুই দু বছর থেকে চলে এলি কিন্তু আমাকে ছয় বছর থাকতে হলো ”

চলবে…..

[ বলুন তো পাঠক গন এই রুদ্র বাবাজি কে ? গল্পে তার এন্ট্রি টা কেমন হবে? হুম হুম

হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here