#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_18
_________________
” বাসায় আসা মাত্র ই তুই আমাকে এই জঙ্গলে নিয়ে আসলি কেন তাহরিম ? দেখ আমি এক কাপড়ে চলে আসছি , বড় মা র সাথে ও দেখা করতে পারলাম না , এবার বল কেন আনলি এখানে ? এই ভুতের বাড়ি তে তোর কি কাজ?
কিছু একটা ভেবে ,
ওয়েট অ্যা মিনিট ব্রো , তুই তো এখন মন্ত্রী তাহলে কি মন্ত্রী গীরি ছেড়ে এখন ভুত নিয়ে তন্ত্র সাধনা করার ইচ্ছে আছে না কি ? হুম?
বেশ সিরিয়াস ভঙিতে হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে ভ্রু জোড়া উঁচু করে কথা টা বলে উঠলো রুদ্র ,
রুদ্রের হেয়ালি বুঝতে পেরে তাহরিম বলল,
” ইয়াপ ব্রো ইউ আর রাইট , বাট সামথিং মিস্টেক আছে , এটা ভুত দিয়ে তন্ত্র সাধনা না , বিয়ের সাধনা হবে বয়স তো আর কম হলো না এবার তো বিয়ে সাদি করতে হবে , তবে ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত কোন কাজ কি আমি তাহরিম তালুকদার একা করেছি না কি সব সময় আমার নামের সাথে আরেকটা নাম জুড়ে থাকতো , রুদ্র তালুকদার, তাই না ব্রাদার ? ”
” বিয়ের সাধনা মানে কি ? তোর কি গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি ? ”
” ছে ছে গার্লফ্রেন্ড থাকবে কেন ? ‘
” তাহলে ? আর ওই মেয়ে দুটোই বা কে ?
আর জানিস ! মেয়েটা এত ভীতু ! আমাকে দেখেই ভুতত বলে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো , এতটা ভীতু আমি আগে দেখি নাই ! ”
রুদ্রের কথা শুনে তাহরিম ঠোঁট এলিয়ে হাসলো , ছাদের দেয়াল এ হেলান দিয়ে পান্জাবীর পকেটে হাত দিয়ে বলল ,
” আমার এখানে আসার দুটো কারণ ,
এক আমি ওই মেয়ে দুটো দেখলি না ? যেই মেয়েটা সাদা রঙের জামা পড়া ওই পূর্না , এই তোর ভবিষ্যত ভাবি আর সাথে যে মেয়েটা , যাকে তুই ভীতু ডাকলি সে হলো ইলমি, বুঝলি ? পেশায় দুজন ই সাংবাদিক , বিভিন্ন আর্টিক্যাল এর জন্য ও অনেক ক্ষমতা বান লোকের নজরে এসেছে পূর্ণা,
, যে কোন সময় যে কোন ভাবে ক্ষতি করে দিতে পারে , এখন আবার কাজ করছে মন্ত্রীদের নিয়ে তার উপর ওর কাছে এমন অনেক তথ্য ও আছে, যা দিয়ে অন্যান্য মন্ত্রী দের বিপদে ফেলতে পারে এমন কি ক্ষমতা চ্যুতি ও হতে পারে , তাই অনেকে ই ওকে মে’রে ফেলতে চায় , তাই ওকে সারাক্ষণ নজর বন্দী করে রাখতে হয় না হলে কখন যে কি হয় বলা তো যায় না , মেয়েটা বড্ড বেশি সাহসী আর কনফিডেন্সের কথা আর কি বলব ”
তাহরিমের কথা শুনে রুদ্র ওষ্ঠ দুটি ফাক করে ফোস করে শ্বাস ছাড়লো , সামনে র দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল ,
” হুম বুঝলাম , আর দ্বিতীয় টা কি ? ”
রুদ্র র প্রশ্ন শুনে বেশ চিন্তিত স্বরে বলল ,
” এই পরিত্যক্ত জমিদাার বাড়িটা ভুতুড়ে বাড়ি নামে পরিচিত , এখানে নাকি কি সব ভুত প্রেতের আড্ডা , কিন্তু বেশ কিছু আর্টিক্যাল আমি দেখেছি যেখানে কোথাও স্পষ্ট কোন তথ্য দেওয়া নেই এই ব্যাপারে , আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে অন্য কিছু হয় , তাই তদন্তে আমি নিজে ই এলাম , একে তো পূর্ণ র নিরাপত্তা আর তদন্ত , দুটোই ”
” হুমম বুঝলাম ! ”
_______________
” আলো নেভালি কেন পূর্ণ ? ”
আমি ভ্রু কুচকে মোমের দিকে তাকালাম , মোমটা শেষ হয়ে গেছে তাই নিভে গেছে হয়তো ,
” নেভাই নি , নিভে গেছে , মোমটা হয়তো শেষ তাই , আরেকটা জ্বালাবো ? ”
ইলমি আমার থেকে খানিক টা দুরেই বসে ছিলো , ব্যগে মাথা দিয়ে শুতে শুতে বলল ,
” থাক লাগবে না , পরে যদি কাজে লাগে তখন ! তারচেয়ে বরং আরেকটা থাক , তুই ও আমার পাশে সুয়ে পড় ”
আমি কিছু একটা ভেবে শুয়ে পড়লাম ওর পাশে তবে কারো চোখেই ঘুম নেই ,
বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে লাগলাম আমরা,
________________
হঠাৎ দুর থেকে বেশ অনেক গুলো আলোর রেস দেখতে পেয়ে রুদ্র সোজা হয়ে দাঁড়ালো , মনে হচ্ছে আলো গুলো ধীরে ধীরে এই জমিদার বাড়ির দিকে ই এগিয়ে আসছে ,
রুদ্র, তাহরিম কে ইশারা করতেই তাহরিম ঘুরে পিছনে তাকালো ,
ধীরে ধীরে ওর ভ্রু জোড়া কুচকে গেলো ,
” কিছু বুঝতে পারছিস তাহরিম? ”
তাহরিম সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল ,
” হুমম , বুঝব না কেন ? ”
” অপেক্ষা কর এরা এখানেই আসবে ”
তহরিম কোন কথা বলল না চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ,
বেশ কিছু ক্ষন পর আলোগুলো বেশ কাছাকাছি চলে এলো , কিছু মশাল আর টর্চ লাইট হাতে প্রায় ১৫-১৬ জন দাড়িয়ে আছে জমিদার বাড়ির ঠিক সদর দরজার সামনে , ছাদ থেকে অনেক টায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সে জায়গা টা ,
অন্ধকারে কারো মুখ ই স্পষ্ট নয় তবে এদের মাঝে কয়েকজন কে বেশ চেনা চেনা মনে হচ্ছে তাহরিম এর , তবে যাদের অনুমান করছে তারা যদি হয়ে থাকে তবে যব্বেশ একটা ক্লু পাবে সে ,
লোকগুলো সদর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো , এদের মাঝে একজন বেশ মাতব্বরি করছে , তাহরিম বুঝতে পারলো এই লোকটা ই মনে হয় ওদের বস হয়তো ,
তবে এই লোকটাকেই যেন সব চেয়ে বেশি চেনা চেনা মনে হচ্ছে ,
তাহরিম দাঁড়িয়ে দেখছে আসলে এরা আসলে করছে টা কি ,
_________________
গেইট খোলার আওয়াজ পেয়ে ধরফর করে উঠলাম আমি আর ইলু , দুজন দু’জনে র দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালাম ,
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম দরজাটার দিকে উদ্দেশ্য দরজার ফাক দিয়ে দেখার চেষ্টা করা, কি হচ্ছে বাহিরে ,
বেশ অনেক লোকজন দেখে আমি বেশ অবাক হলাম , এত রাতে এরা এখানে কেন , আমি দেখতে দেখতে ই লোকগুলো দোতলায় উঠে গেলো , আমি ব্যগ থেকে ক্যামেরা টা কাধে তুলে নিয়ে ইলুর হাত ধরে বাইরে আসলাম আমার কাধে আমার ব্যগ আর ইলুর কাঁধে ইলুর ব্যগ , উদ্দেশ্য কোন প্রমান জোগাড় করা , আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালিয়ে যাওয়া ,
এতক্ষণে এত টুকু বুঝতে পারছি যে এরাই আসলে এখান কার নাম করা ভুতের ছদ্মবেশ ধারী মানুষ ,
আমি নিঃ শব্দে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম আমার পিছনে পিছনে ইলু ও উঠলো ,
আলো টা দোতলার সেই শেষ ঘর থেকে ই আসছে , সাথে লোকগুলোর কথা ও ভেসে আসছে , আমি ক্যামারা তে ভিডিও অন করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম সেদিকে পিছনে ইলু আসছে ওর হাতেও ওর ক্যামেরা , বাই এনি চান্স একটা নষ্ট হয়ে গেলো সব সব তো জলে যাবে তাই সেফটির জন্য ও ভিডিও করছে ,
” বসস , বেছে বেছে যব্বেশ একটা জায়গা বের করেছেন তো , পুলিশ কেন , এই জন্মে কেউ কখনো খুজে ই পাইবো না আর কেউ তো আসবই না এখানে ভুতের ভয়ে ”
বিপরীত দিকে ফিরে থাকা লোকটা হেসে উঠলো , পিছনে দিকে ফিরতে ফিরতে বলল ,
” তোদের মতো গরুর ছাগলের বুদ্ধি দিয়ে তো আর রাজনীতি করা যায় না ! বুদ্ধি লাগে বুদ্ধি , রাজনীতি করতে হলে বুদ্ধির সাথে কুবুদ্ধি র ও প্রয়োজন আছে ”
বলেই চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলল ,
লোকটাকে দেখে আমি আর ইলু ভরকে গেলাম , সাদা রঙের পান্জাবী , পাজামা পড়া , মাথায় টুপি আর গাল ভর্তি আধা পাকা দাড়ি শাফিন মিয়াজি , তাহরিম তালুকদার এর আগে উনিই ছিলেন এলাকার মন্ত্রী আর প্রভাব শালী ব্যক্তি , তবে এ বছর তাহরিম তালুকদার এর জন্য ই উনার ক্ষমতা চ্যুতি হয় যার ফলে বেশ রাগ উনার তাহরিম তালুকদার এর উপর ,
বেশ ভালো মানুষ বলেই জানতো সবাই উনাকে ,
এই তাহলে উনার আসল রুপ!
নাহ্ আর ভাবতে পারছি না , সুন্নতি লেবাসের ভিতর এই কোন রুপ উনার!
” বস যেই মাল গুলো বন্দরে আসবে ওগুলো রিসিভ করতে কি আপনি যাবেন? নাকি আমাদের কেউ গেলেই হবে ? ”
” না রুস্তম , আমি যাবো , প্রায় ১ কোটি টাকার মাদক আছে কোন ভাবে যদি পুলিশ জানতে পারে তাহলে আর রক্ষা নাই , তোদের উপর এ ক্ষেত্রে ভরসা করতে পারছি না , তাই আমি যাবো ”
” মাদক কি সব এই খানে আনবেন বস ? ”
” নাহ , মাটির নিচে চালান করবি , ই*য়াবা , ফেন*সিডিল , আর প্রায় ৭০ লাখ টাকার বিদেশি ম*দ এই চালানে । কম ই আনছি , এগুলো বিক্রি করতে পারলে পরবর্তী চালানে ৪ কোটির মতো আনমু , বুঝছচ ? ”
বলেই শাফিন মিয়াজি আধা পাকা দাড়ির মাঝে হাত বুলাতে লাগলো ,
হঠাৎ কারো নজর আমাদের দিকে আসতেই আমি ছিটকে সরে গেলাম ,
” কে? কে ওখানে ? ”
কারো চিৎকারে আমি আর ইলু ভরকে যায় , দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম , সদর দরজা খুলা , আমি আর ইলু জঙ্গলের মাঝে ই দৌড় লাগালাম , আমার এক হাতে ক্যামেরা আর অন্য হাতের মুঠোয় ইলুর হাত ,
পিছনে থেকে ওরা দৌড়ে আসছে , আজ যদি ধরা পরি আর রক্ষে নেই , এখানেই জীবনের গল্পের সমাপ্তি ঘোষিত হবে ,
চলবে ,
[ এই বাচ্চারা আজকের পর্ব কেমন লেগেছে গঠন গত মন্তব্য চাইইই
হ্যাপি রিডিং ]