#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_19
_____________________
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আমি আর ইলু দৌড়াচ্ছিলাম , হঠাৎ পিছনে থেকে কোন শব্দ না পেয়ে পা থামালাম , বেশ অনেক টা ঘেমে গেছি , ইলুর দিকে তাকিয়ে দেখি ও বেশ হাঁপাচ্ছে ,
” ম্যারাথন দৌড় দিসি রে পূর্ণ , এমন দৌড় আমি আমার বাপের জন্মে দেই নাই ”
আমি ব্যাগ থেকে পানি বের করতে করতে বললাম ,
” এখানো কিন্তু আমরা সেইফ না ইলু , কখন জানি আবার এখানেও চলে আসে ! আমরা কিন্তু জঙ্গলের প্রায় অনেক টায় ভেতরে, বের হবার রাস্তা খুজতে হবে ”
ইলু আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল , আমার হাত থেকে পানির বোতল নিতে নিতে বলল,
” হুম , দাড়া পানি খেয়ে একটু জিরিয়ে নেই তারপর বাকি সব ”
ইলু পানি খেয়ে বোতল টা আমার হাতে দিলো , আমি ও একটু গলা ভিজিয়ে নিয়ে ব্যগে রেখে দিলাম ,
হঠাৎ কিছু পাতার মর্মর শব্দে আমি আর ইলু চুপ করে যায় , উঠে দাড়ালাম আমি , হঠাৎ কেউ একজন চিৎকার করে বলে উঠলো ,
” মজনুরে পাইছি ! মাইয়া দুইডা বেশি দুর যাইবার পারে নাই , এই খানেই আছে , ওই যে সামনে ! ”
বলতে বলতেই কিছু লোক আমাদের কাছে আসতে নিলে আমি আর ইলু দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই ইলু আর আমি দৌড় লাগালাম কিন্তু হাতের বাধন টা কখন জানি খুলে গেলো বুঝতে ই পারি নি , আমি আর ইলু দুজন দু দিকে চলে গেলাম , আমিও দৌড়াচ্ছি ইলুও দৌড়াচ্ছে ,
দুজন দুদিকে যাওয়ার ফলে লোক গুলো ও দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে , কিছু লোক আমার পিছনে আর কিছু লোক ইলুর পিছনে ,
হঠাৎ পায়ে কাটার মতো কিছু ফুটলো , জুতোর উপর দিয়ে কিভাবে কাটা ফুটলো বুঝতে পারলাম না , বরই গাছের চিকন ডালা মনে হচ্ছে , আমি কিছু চিন্তা না করে পা থেকে কাটা যুক্ত ডালা টা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলাম , কিন্তু কোন ভাবে ই যেন আর দৌড়াতে পারছি না , কষ্ট হচ্ছে ভিষণ , লোক গুলো ও মনে হচ্ছে কাছাকাছি চলে এসেছে , আমি খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়াচ্ছি , একটা বড় গাছের নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা হাত দিয়ে আমার হাত হেচকা টানে গাছের আড়ালে নিয়ে গেলো কেউ , হঠাৎ এমন হওয়ায় বেশ ঘাবড়ে গেলাম আমি , আমার মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে সে , যেন কথা বলতে না পারি ..
______________
এদিকে ইলু দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেছে , পিছনে তাকিয়ে দেখে লোকগুলো এখানো ওর পিছনে , ভিষণ ক্লান্ত লাগছে তার আর সম্ভব না এবার মনে হয় ধরাই পরে যাবে ,
হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকালো সে , অন্ধকারে তেমন কিছু বোঝার না গেলেও সাদা রঙ টা খুব ভালো ই বোঝা যায় ,
ইলু খেয়াল করলো তার হাত চেপে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা রঙের শার্ট পরা লোকটা এদিক ওদিক তাকিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে তার হাত হেচকা টানে দৌড় শুরু করলো, বেচারি ইলু কিছু বোঝে উঠার আগেই যেন সব ঘটে গেছে ,
বেচারি পড়তে পড়তে বেঁচেছে , লোকটা দৌড়াচ্ছে আর ইলু অবাক দৃষ্টিতে তা দিকে তাকিয়ে আছে ,
” মুখ বন্ধ করো আর তাড়াতাড়ি পা চালাও গর্ধব মেয়ে এক্ষুনি ধরা পরে যেতে ! ”
কথাটা কানে আসতেই ইলু মুখ বন্ধ করে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল ,
” আপনি কে ? আর আপনি এভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন ? আপনাকে ও কি তাড়া করেছে ওরা ? ”
” এটা বোঝার ক্ষমতা যদি তোমার থাকতো তাহলে তো ভালো ই হতো , এখন কথা বলো না , আমার সাথে পা বাড়াও ”
দুরে কোথাও আলো দেখতে পেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল রুদ্র , নেহাত মেয়ে টা বিপদে পড়েছে নয়তো কোন মেয়ের হাত ধরা! সে তো ছায়া ও মারাতো না
দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকটা দুর চলে এসেছে রুদ্র আর ইলমি , আবাদত তারা হাটছে ইটের রাস্তার উপর দিয়ে , আশেপাশে কোথাও কোন বাড়ি নেই , আর না দোকান , সেই একটা বাতি দেখা গিয়েছিল তাও ওটা পরিত্যক্ত ল্যাম্প পোস্ট ,
” আপনি কে বললেন না তো ? ”
রুদ্র ইলুর কথার কেন উত্তর না দিয়ে সোজা হাটছে যেন মনে হচ্ছে তার আশেপাশে মানুষ বলে কোন শব্দ ই নেই ,
ইলু ভ্রু কুচকে এক পলক রুদ্র র দিকে তাকিয়ে বলল ,
“আপনি কি রোবট ? ”
এবার রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালো ,
” হে হে না মানে আপনি রোবটের মতো সোজা হাটছেন তো আর কেন কথা ও বলছেন না যেন রোবট ! আচ্ছা রোবট দের কি নির্দিষ্ট পরিমান শব্দ সেট করে দেয় নাকি ? যেন তারা সেই পরিমান থেকে এক অক্ষর ও বেশি বলতে না পারে? আপনি জানেন ? ”
রুদ্র তা ও কোন কথা বলছে না যেন কথা বললেই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে এমন ভাব ,
রুদ্র কে পাত্তা না দিয়ে ইলু বলতে লাগলো ,
” এখানে আমাকে এনেছেন কেন ? হায় পূর্ণ টা ও যে কোথায় ? না জানি ওরা ধরেই ফেলেছে না কি ? ছাতার মোবাইলে ও নেট নাই ঠিক এ জন্য ই না বাংলাদেশ আমার পছন্দ না যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলো ৭ জি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে সেখানে বাংলাদেশ ৪জি আর তাও যদি সব জায়গায় পাওয়া যেত , রাস্তায় যদি ৪ জি থাকে , বাড়িতে থাকে ৩ জি , বেডরুমে ২জি আর খাটের ওপর ইনসার্ট সিম ! কেমন ডা না লাগে ”
এবার রুদ্র বেশশ বিরক্ত হলো , হুট করে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,
” এই যে মিস ভীতু ভাঙা টেপ রেকর্ডার , আপনি যদি দয়া করে আপনার মহা মূল্য বান রেকর্ডার টা অফ রখতেন তাহলে আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকতাম ”
” মিস ভীতু ভাঙা টেপ রেকর্ডার ? এটা আবার কেমন নাম ? আর কে এটা ? ”
ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে খুজতে কথা টা জিজ্ঞেস করলো ইলু ,
এখন রুদ্রের নিজের কপাল দেয়ালে ঠুকতে ইচ্ছে করছে , কোন পাপে যে এই সেন্টি মেন্টাল কে সাহায্য করতে এসেছিলো !
________________
এদিকে লোক গুলো এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজতে খুজতে চলে গেলো , আমি চোখ মুখ কুচকে দাঁড়িয়ে আছি , লোক গুলো চলে যেতেই সে আমার মুখ ছেড়ে দিলো ,
আমার মুখ ছাড়তেই আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম ,
” আপনি কি মানুষ ? এত জোরে কেউ ধরে ? আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক করতাম ”
আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে কিছু ক্ষন চুপ থেকে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল ,
” তোমাকে এখন আমার থাপড়াতে ইচ্ছে করছে ! কষিয়ে দুটো দেই ? বেশি না মাত্র দুটো ই ! ”
” কেন ? ”
” এমনি , আমার ইচ্ছে ! ”
” কেন মন্ত্রী সাহেব ? আমি কি করলাম ? ”
আমার কথা শুনে উনি বেশ হকচকিয়ে গেলেন , সাথে সাথে ই মুখে হাত দিয়ে দেখলেন মাস্ক ঠিক আছে কি না ! নাহ্ সব তো ঠিক ই আছে তাহলে ?
” এত ঘাবড়ানোর কিছু নেই মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার , আপনার মাস্ক ঠিক ই আছে , ইনফেক্ট পারফিউম টার গন্ধ টাও চেঞ্জ তবে কি বলুন তো , সাংবাদিক হতে হলে বুদ্ধি থাকতে হয় , আমি এত বেশি বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ না হলেও ঘটে কিছু টা বুদ্ধি আমার আছে , বেস্ট ইনভেস্টিগেটর হিসেবে ও নাম আছে আমার তাই মানুষ চিনতে আমার খুব একটা ভুল হয় না ! ”
আমার কথা শুনে উনি হালকা শব্দ করে হেসে উঠলো , মাস্ক খুলতে খুলতে বলল ,
” বাহ্ বেশ বুদ্ধি তোমার মিস মিফতাহুল পূর্ণা , আই এম ইমপ্রেস্ড ”
উনার কথা শুনে আমি মুখ বেকিয়ে বিরবির করে বললাম ,
” ঘোড়ার ডিমের ইমপ্রেস্ড ”
উনি আমার কথা শুনে হাসলেন তবে কিছু না বলে পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বের করে ফ্লাস লাইট টা অন করলেন ,
হঠাৎ আমার হাত ধরে গাছের শিকড়ে বসিয়ে উনি নিচে বসে আমার ডান পা টা উনার পায়ের উপর রেখে পায়ের নিচ টা দেখতে লাগলেন , ঘটনা টা এতো তাড়াতাড়ি হলো যে কিছু বলার আগেই ঝড়ের বেগে কাজ করে চলেছেন উনি ,
আমি পা টা সরাতে সরাতে কিছু বলতে যাবো , আমি কিছু বলার আগেই উনি আমার পা টা চাপ দিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,
” ডোন্ট , যা করতে চাচ্ছো তা করলে খবর আছে , আর কোন কথা আমার কানে আসলে কোলে তুলে ঠাস করে নিচে ফেলে দিবো পরে ভাঙা কোমড় দিয়ে বসে বসে রেললাইনের ধারে মুড়ি বিক্রি করতে হবে ”
উনি বেশ খানিকক্ষণ আমার পা টা ভালো ভাবে দেখে বলল ,
” হুম কাটা নেই তবে রক্ত পড়েছে আর বেশ খানিকটা কেটে গেছে রক্ত পরা যদিও এখন বন্ধ হয়ে গেছে , পানির বোতল টা দাও ”
” হুম ? ”
” কানে শুনতে পাও না , পানির বোতল দিতে বললাম ”
আমি কিছু না বলে পানির বোতল টা বের করে দিলাম ,
উনি পানি দিয়ে আমার পা ট পরিষ্কার করে , পকেটে থেকে একটা রুমাল বের করে আমার পায়ে বেধে দিলেন , বসা থেকে উঠতে উঠতে বললেন ,
” আবাদত ফাস্ট এইড নেই , হসপিটালে গিয়ে ড্রেসিং করে ব্যন্ডেজ করলেই হবে ! ”
উনার কথা ই আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম ,
” এই টুকু কাটায় ব্যান্ডেজ ? এটা তো এমনি ই ঠিক হয়ে যাবে ”
আমার কথা শুনে উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,
” গর্ধবের মতো আরেকটা কথা বলবে ! তখন কার অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করে দিবো তোমার দু গালে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় দিয়ে , সোও নিজের ভালো চাইলে চুপ থাকো ”
চলবে…..
[ কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু পরীক্ষা রেখে এত কষ্ট করে এত বড় একটা পর্ব দিলাম , ধন্যবাদ প্রাপ্য কিন্তু 😁
হ্যাপি রিডিং ]