#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_25
_____________________
” তাই তো বলি আপনি এমন নিরামিষ কেন ? এসব ছাইপাঁশ মোটা মোটা ইংরেজি বই পড়লে আমিষ টা আসবে কোথা থেকে , তাও যদি হতো ইংরেজি সাহিত্যের ! তাও তো না ”
তাহরিম ভ্রু কুঁচকালো , ভীষণ অবাক ও হলো অতঃপর বাঁকা হেসে এগিয়ে এলো বুক শেলফ এর দিকে , আমি তখন ও আপন মনে বই গুলো দেখছি , যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে একটা বই পেতাম পড়ার মতো , ছোট বেলা থেকে ই আমার বইয়ের প্রতি বেশ ভালো লাগা কাজ করে তবে পাঠ্যপুস্তক নয় , উপন্যাস টাইপ বই পড়তে বরাবর ই আমার ভালো লাগে ,
উনাকে কোন বাংলা উপন্যাসের বই আছে নাকি তা জিজ্ঞেস করার জন্য পিছনে ঘুরে কিছু বলব তার আগেই খেয়াল করলাম উনি আমার ভীষণ কাছে , আমাকে বুক শেলফ এর সাথে চেপে ধরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ,
আমার ভীষণ রাগ হলো , নাক ফুলিয়ে ফোসফাস করতে করতে বললাম ,
” এটা কি হলো ? ”
উনি কিছু না জানার ভান করে আমাকেই উল্টো প্রশ্ন করলো,
” কি হলো এটা ? ”
” আপনি কি আমাকে অকালে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে মেরে ফেলতে চান ? এভাবে যখন তখন গা ঘেঁষাঘেষির মানে কি ? এভাবে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন হে? ”
উনি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” তুমি না বললে আমি নিরামিষ, তাহলে নিরামিষ মানুষ কে এতো ভয় পাচ্ছো কেন ? আমি কোথায় তোমার গা ঘেঁষা ঘেঁষি করলাম ? তুমি ই না উল্টো আমার জায়গা দখল করে বসে আছো ”
” হ্যা তো নিরামিষ ই তো , নিরামিষ না হলে কি কেউ এমন উদ্ভট বই পড়ে! আর আমি আপনার জায়গা দখল করেছি মানে কি হে ? আমাকে কি মনে হয় আপনার ? ”
” এটা কার রুম ? ”
” কেন আপনার ”
” তুমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছো? ”
” রুমেই তো ”
” তাহলে কি বুঝলে , আমার রুমে তুমি দাঁড়িয়ে আছো, তার মানে তুমি আমার রুমের জায়গা দখল করো নি বলছো ? ”
আমি ভ্রু কুচকে কিছু বলতে নিবো তার আগেই কেউ ডাকতে ডাকতে রুমের ভেতরে ঢুকলো ,
” ভাবিজান ওও ভাবিজান ঘরে আছো নি ” বলেই সামনের দিকে তাকিয়ে আমাদের এভাবে দেখে দুই হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করতে করতে বলল ,
” সরি সরি সরিইইই , আমি বোধ হয় ভুল টাইমে এন্ট্রি নিয়েছি , যা হোক ভাইয়া কুটনা বুড়ি থুক্কু বড়ো চাচি এসেছে আর সাথে উনার চামচা না মানে তার মেয়ে নাতাশা আপু আসছে , আম্মু তোমাকে নিচে ডাকছে ”
বলেই চলে যেতে নিলে আমি পিছনে থেকে ডাক দিলাম , এতক্ষণে উনি আমাকে ছেড়ে দুরে সরে দাঁড়ালো ,
” তানজু দাড়াও তো কথা আছে ”
তানজিম পিছনে ঘুরে দাড়ালো ,
বলেই উনার দিকে তাকালাম , ভ্রু বেকিয়ে বললাম ,
” কি হলো আপনি এখানো দাঁড়িয়ে আছেন কেন ? আপনাকে না নিচে ডাকছে যান না কেন? ”
” কোন ভাবে কি তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছো না কি পূর্ণ ? ”
উনার কথা শুনে তানজিম লাফ দিয়ে উঠে আমার কাছে এসে বলল ,
‘ হে হে ভাই , তোমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে তাও যাচ্ছো না কেন ? ইসস কি লজ্জা কি লজ্জা ! ‘
বলেই দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো , আমি মুখ টিপে হাসলাম , উনি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে গটগট পায়ে রুম থেকে চলে গেলেন ,
উনি চলে যেতেই তানজিম মুখে হাত রেখেই চোখ থেকে দু আঙুল ফাঁক করে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো তাহরিম আছে না কি ,
অতঃপর মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমার দিকে তাকালো, দুজন ই খিল খিল করে হেসে উঠলাম ,
” বাহ্ বেশ দিয়েছো তো ভাবিজান , আর শুনো তোমাকে যা বলতে আসলাম ”
আমি ওর গাল টেনে বললাম ,
” হুম বলো শুনছি ”
” ওই যে বললাম না নিচে কুটনা বুড়ি আসছে ওনি আমার বড় চাচি আর তোমার সতিন না মানে নাতাশা বাতাসা থেকে দুরে থাকবা , সব সময় মানুষের খুঁত ধরতে ব্যস্ত থাকে ”
আমি মুচকি হেসে বিছানায় বসতে বসতে বললাম ,
” ও নিয়ে তুমি ভেবো না ভাইজান , আমি ঠিক সামলে নেবো ”
তানজিম আমার পাশে ধপ করে বসে বলল,
” আরে ভাবি তুমি এতো হালকা ভাবে নিও না , তোমার উপর তো ওই কুটনা বুড়ির আলাদা নজর আছে , তোমাকে অপমান করতে এক বিন্দু ও ডিসকাউন্ট দিবে না ”
” কেন কেন ? ”
” আরে বুঝলে না! চাচি চেয়েছিলো ওই নাতাশা বাতাসা রে এই তালুকদার বাড়ির বড় বউ করতে কিন্তু ভাইয়ার তো এক কথা সে ওই ঢঙ্গি কে বিয়ে করবে না , আর চাচি ও ছাড়বার পাত্রী না , এখন যখন শুনছে ভাইয়া বিয়ে করে ফেলছে অমনি চলে এলো কুটনামি করতে , এক্ষুনি তোমার ডাক পড়বে দেইখো ”
” ওকে দেখা যাক , আজ পর্যন্ত পূর্ণা কে অপমান করে কেউ পার পায় নি আজও পাবে না , দেখো কি হয় ”
ওমনি ফুল এসে আমায় বলল
” ভাবিজান খালাম্মা আপনারে নিচে যাইতে কইছে ”
” আচ্ছা ফুল তুমি যাও আমি আসছি ”
ফুল মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো ,
” আচ্ছা ভাবি তুমি ফুলকলি রে শুধু ফুল ডাকো কেন? ”
” ফুল নাম টা আমার ভালো লাগে তাই ডাকি ”
আমি উঠে দাড়ালাম , ওরনা টা ভালো ভাবে মাথায় দিয়ে নিচে নেমে এলাম , আমি পিছনে পিছনে তানজিম ,
নিচে নামতেই চোখে পড়লো ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে থাকা একজন মহিলার উপর , গড়ন তার হালকা পাতলা, গায়ের রং কালো না হলেও বেশ একটু চাপা , চুল গুলো স্ট্রেইট করা , বুঝলাম বয়স হলেও মহিলার মনের রঙ এখনো যায় নি, না হলে এই বুড়ো বয়সে কেউ ভ্রু প্লাক , চুল স্ট্রেইট করে নাকি ! যা হোক আমি তার সামনে গিয়ে লম্বা একটা সালাম দিলাম ,
” আসসালামু আলাইকুম চাচি আম্মা ”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে নাক কুঁচকে বললেন ,
” ওয়ালাইকুম সালাম , তুমি আমাকে চাচি আম্মা ডাকছো কেন? এসব খ্যাত সম্বোধন প্লিজ আমাকে করবে না বুঝতে পেরেছো ? কল মি আন্টি ”
উনার কথা শুনে আমি বিরবির করে বললাম ,
” ভাগ্যিস আপু ডাকতে কয় নায় ”
কথা টা বলেই বেক্কেল মার্কা একটা হাসি দিলাম, আমার পাশে তানজিম দাঁড়িয়ে থাকায় আমার বিরবির করা কথা গুলো ও স্পষ্ট শুনতে পেলো , উল্টো দিকে ঘুরে হাসি আটকানোর চেষ্টায় আছে সে ,
আমি এবার ওই ঢঙ্গি আন্টির পাশে বসে থাকা তার মেয়ের দিকে তাকালাম ওই নাতাশা না বাতাসা ,
মিনিমাম কয়েক বস্তা আটা ময়দা মেখে আসছে , আটা ময়দার নিচে চাপা পরে আছে চেহারা , যেমন মা তার তেমন মেয়ে , যা হোক এসব চিন্তা করে আমার লাভ নাই ,
মনে মনে কথা গুলো চিন্তা করে ই এক সাইডে সরে গেলাম , আমার পাশে এসে দাড়ালো তানজিম ,
তানজিমের মা আই মিন আমার বর্তমান শাশুড়ী মা বসে ওদের সাথে কথা বলছে তাহরিম তালুকদার তো এই পৃথিবীতে ই নাই , এক পাশে সোফায় বসে মোবাইলে গেইম খেলায় ব্যস্ত ,
তানজিম আমার কানে ফিসফিস করে বলল ,
” ভাবিজান দেখছো ওই কুটনা বুড়ি টা তোমাকে কিভাবে স্ক্যান করছে , মানে কি বুঝতে পারছো? ”
আমিও মজা করে ফিসফিস করে বললাম ,
” উহুম বুঝলাম না তো , মানে কি? ”
” মানে তোমার খুঁত ধরার চেষ্টা করছে , দেইখো একটা না একটা খুঁত তো বের করবেই ”
আমি মুচকি হেসে মজা করে বললাম ,
” আমি মানুষ , তাই আমি কখনোই নিখুঁত হতে পারব না , তাহলে চলো আমরা ও উনার খুঁত ধরার চেষ্টা করি , যখন উনি বলবে তখন আমি ও বলব , আইডিয়া টা কেমন দেবর জি ? ”
আমার কথা শুনে তানজিন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
” ঝাক্কাস ভাবি জান , Let’s Start ”
বলেই ও মুখ টিপে হাসলো সাথে আমিও , আমি মুচকি হেসে সামনে তাকাতেই দেখি তাহরিম তালুকদার আমাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে হয়তো কিছু চিন্তা করছে ,
Tahrim be like : পুরান পাগলের ভাত নাই নতুন পাগলের আমদানি !
চলবে …
[ বাচ্চারা কেমন হয়েছে জানাবা আর নিশ্চয়ই গঠন গত মন্তব্য করবা ,
হ্যাপি রিডিং ]