#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_28
__________________
রাত তখন এক টা কি দুটো , চোখে ঘুম নেই , মাথা ভর্তি টেনশন , মেয়েটাকে যে এত বড় একটা দায়িত্ব দিলাম , ওকি করতে পারবে? ভীষণ রিস্কের কাজ তো , ওকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করলাম না তো ? এতক্ষণে তো কাজটা করে ফেলার কথা , এখনো ফোন করছে না কেন? আমিও তো ফোন দিতে পারছি না , যদি বিপদ হয়? ইসস কেন যে ওকে দিতে গেলাম তার চেয়ে বরং আমি ই করতাম …
বিছানায় সুয়ে এপাশ ওপাশ করছি আর চিন্তা হচ্ছে , হঠাৎ বালিশের তলায় থেকে ফোন টা বায়োব্রেট মুডে বেজে উঠলো ,
আমি তড়িঘড়ি করে উঠে ফোন টা রিসিভ করে বেলকনিতে চলে গেলাম ,
” হ্যালো ইলু কই তুই? ”
ও মেইবি কিছু চিবুতে চিবুতে বলল ,
” কেন বাসায়! ”
” তুই বাসায় মানে কি ? যা কাজ দিয়েছিলাম পুরোটা করতে পেরেছিস তো ? ”
” হ্যারে বাবা করেছি , ইনফেক্ট ফাইট টাও রেডি বাট তোকে দেবো কি না ভাবছি ! ”
আমার ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে গেলো , বলে কি এই মেয়ে! তিলে তিলে যেই প্রমান গুলো জোগার করলাম , তা তো ফাইলের মধ্যে ই আছে , এটা হাত থেকে চলে যাওয়া মানে বিশাল লস…
” মাথা ঠিক আছে তোর? কি আবল তাবল বকছিস,? ”
ও কিছু একটা চিবুতে চিবুতে বলল ,
” ট্রিট দে , নাহলে পাবি না ফাইল ”
” এই তুই এমন ছেঁচড়া কেন সব কিছু তেই ট্রিট ট্রিট করিস , তোরে আংকেল আন্টি কিছু খাওয়ায় না? ”
” খাওয়াই তো বাট তোর টাকায় যেন আলাদা স্বাদ পাই , সেইইইই স্বাদ ”
বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো , প্রান খোলা সেই হাসি , অগাধ সরল মেয়েটা , আমি মুচকি হাসলাম ,
” ঠিক আছে আসিস কালকে, ট্রিট দিয়ে দিবো নে ”
” ওক্কে বান্তুপী , lavuuu so much ”
” lovuu? What is lavuu?
” আরে লাভ ইউ কে সংক্ষিপ্ত করে লাবুও বলে এটাও জানে অক্ষিশিত! ”
” অক্ষিশিত? মানে আমি অশিক্ষিত? ”
” এটা আমি কখন বললাম! বেশি কথা বলিস তুই বেদ্দপ মহিলা , ফোন রাখ ”
” এই কি বললি তুই ? আমি বেদ্দপ ? হ্যালো হ্যালো….. ”
ফোন কান থেকে নামিয়ে দেখি ও ফোন টা কেটে দিয়েছে ,
ফোন টা দোলনার উপর রেখে ঝুঁকে রেলিঙের উপর বসে দেয়ালে হেলান দিলাম , একটু উনিশ বিশ হলেই দোতলা থেকে ঠাস করে পড়বো এটা নিশ্চিত না মরলেও হাত পা আর আস্ত থাকবে না আর ভাগ্য খারাপ থাকলে সোজা উপরের টিকিট পেয়ে যাবো , আমি একটু নিচ দিয়ে ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করলাম আসলে নিচে আছে টা কি ?
হঠাৎ দরজার দিক থেকে কেউ আমার নাম নিয়ে চিৎকার করতেই আমার অন্তরাত্তা যেন কেঁপে উঠলো ,
এই মাঝ রাতে হঠাৎ এমন চিৎকারে কে না ভয় পাবে , তাল সামলাতে না পেরে পা টা পিছলে বাইরে পরে যেতেই আমি বাইরের দিকে ঝুকে গেলাম , ইনফেক্ট পরে যাবো আমি হঠাৎ এক জোড়া হাত এসে আটকে দিলো আমার বাহু , আমি চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়তেছি , হঠাৎ হেঁচকা টানে আমাকে বেলকনির ভেতরে নীচে ফেলে দিলো , পড়তে পড়তে বেঁচেছি আমি তখনও চোখ মুখ কুঁচকে দোয়া পড়ছি,
হঠাৎ মনে হলো গাল টা আমার জ্বলে উঠলো , কোন শক্ত হাতের দাবাং মার্কা থাপ্পড়ে , আমি খানিকটা পাশে ঝুকে গেলাম ,
থাপ্পড়ের রেস কাটিয়ে উঠে গালে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম , এখন আমার কি কষ্ট পাওয়া উচিত নাকি অবাক হওয়া উচিত সেটা বুঝতে পারছি না তাই চেষ্টা করছি দুই এক্সপ্রেশন ই প্রদর্শন করার ,
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে অবাক দৃষ্টিতে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টার দিকে ,
ভীষণ অস্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রস্বাস আনা নেওয়া করছেন , উনার বুকের ধুকপুকানি আমি কয়েক ইঞ্চি দুর থেকে ও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি,
আচ্ছা উনি কি কোন কারণে ভয় পেয়েছেন?
” মিফতাহুল পূর্ণা! সুইসাইড এটেম্প করার এত শখ? আমাকেই বলতে পারতে আমি নিজেই তোমাকে বাজারের সেরা বি*ষ কিংবা মোটা দড়ি এনে দিতাম ! এই মাঝ রাতে এসব নাটকের মানে কি? ”
দাঁতে দাঁত চেপে কথা টা বললেন , আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে , এই রাত দুপুরে কি হাবিজাবি কথা বলছেন আমি কেন অযথা সুইসাইড করতে যাবো!
কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম ,
” আপনি আমাকে মারলেন কেন? আর কি হাবিজাবি কথা বলছেন আমি কেন সুইসাইড খাইতে যাবো? ”
” তাহলে এই এতো রাতে তুমি বেলকনিতে রেলিঙের উপর ঝুলে করছিলে কি? ভুতের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলে? ”
আমি আমতাআমতা করে বললাম,
” আড্ডা দিবো কেন? ঘুম পাচ্ছিলো না তাই তারা গুনতে এসেছি ! ”
” তোমাকে এখন ওই গালে আরেকটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে আমার, ইডিয়ট ”
আমি রেগে গাল থেকে হাত সরিয়ে বললাম ,
” আমার গাল টা কি রিলিফের মাল পেয়েছেন? নাকি সরকার কতৃক প্রতত্ত সরকারি সম্পদ ? যে যখন ইচ্ছে ঠুস ঠাস থাপ্পড় মারবেন! , এই সরেন তো সরেন , আমি ঘুমাবো ”
বলেই গটগট পায়ে রুমে এসে বিছানায় সুয়ে পড়লাম ,
কিছু ক্ষন পর উনি এসে আমার পাশে বসে বললেন,
” বেশি ব্যথা করছে গাল? ”
আমি ঘুরে অপর পাশ ফিরে শুলাম , এহহ নিজে মেরে এখন আদিক্ষেতা দেখাচ্ছে , বলব না কথা !
আমাকে পাশ ফিরে শুতে দেখে উনি আমার দিকে গিয়ে বললেন ,
” আচ্ছা বাবা সরি, আমি আসলে হঠাৎ ওভাবে তোমাকে দেখে মাথা ঠিক ছিলো না তাই রেগে গিয়েছিলাম ”
আমি আবার অপর পাশ ফিরে শুলাম , বাছাধন যত কিছু ই করো আমি তোমার সাথে কথা বলব না ”
” এই পূর্ণ শোননা! ”
আহা কি সুন্দর ডাক , তবুও গলছি না, হুহ!
” আচ্ছা ঠিক আছে, কি করতে হবে বলো আমি করব তাও এমন বিহেভ করো না প্লিজ ”
আমি পিটপিট করে চোখ খুললাম , মৃদু সবুজ রঙের লাইটের আলোতে উনার চেহারা টা দেখে কেন জানি ভীষণ মায়া হলো তাই উঠে বসলাম ,
” আমি যা বলব তাই করবেন তো? ”
” হুম ঠিক আছে ”
আমি কোলের উপরে বালিশ নিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে বললাম ,
” কানে ধরেন ”
আমার কথা শুনে উনি দু পা পিছিয়ে গেলেন ,
” হুয়াট! আমি কানে ধরবো? ”
” হুম বেশি না মাত্র পঞ্চাশ বার কানে ধরে ওঠবস করতে হবে ”
” আমি তাহরিম তালুকদার ধরবো কানে? নো নেভার , কাভি নেহি ”
” ওকে , গুড নাইট ” বলে যেই না শুতে যাবো উনি কিছু একটা ভেবে বললেন ঠিক আছে করছি কিন্তু এত গুলো না ,
” আচ্ছা যান ৩০ বার করেন ”
” ত্রিশ বার! ”
” এটলিস্ট বিশ বার তো করেন, নূন্যতম ডিসকাউন্ট এর চেয়ে কম পারবো না সরি ”
উনি আমতাআমতা করে বললেন ,
” ওকে , করছি ”
বলেই কানে হাত দিয়ে উঠ বস করতে লাগলো আর আমি গালে হাত দিয়ে বসে বসে সেই বিখ্যাত দৃশ্য উপভোগ করছি , বেটা বোঝ এবার এই পূর্ণা কে থাপ্পড় মারার ফল! তুই জামাই৷ জামাইয়ের মতো থাক , মারতে কেন যাবি ! জামাই বলে কি সাত খু*ন মাফ নাকি , ইটের বদলে ইট নাই বা দিতে পারি পাটকেল তো দেওয়ায় যায়!
হুয়াট অ্যা দৃশ্য ভাই রে ভাই , মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার নাকি বউয়ের কথায় কানে ধরে ওঠবস করছে ভাবা যায়! উনার ভক্ত গন দেখলে তো চোখ খুলে বেরিয়ে আসবে, মনে মনে কথা টা ভেবেই মুখ টিপে হাসলাম ,
উনি আমার দিলে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওঠবস করছে , বেচারা কে দেখে ভীষণ মায়া হলো তাই ১০ বারের মতো হতেই বললাম ,
” ঠিক আছে ঠিক আছে আর করতে হবে না , মাফ করে দিলাম , পরবর্তী তে যেন এমন না করেন , অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন ”
বলেই শুয়ে পড়লাম ,
উনি ও আমার পাশে চুপচাপ শুয়ে পড়লেন , কোন কথায় বললেন না ,
আমি উনার দিকে ফিরে মাথার নিচে হাত দিয়ে শুলাম ,
” এই শুনছেন? ”
“…………….”
” আপনি কি রেগে আছেন? ”
“…………… ”
” কথা বলছেন না কেন? ”
উনি সোজা হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে কোন নড়চড় নেই ,
আমি আধশোয়া হয়ে উনার ওপর ঝুকে নাকের কাছে আঙুল দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি আসলে কানে ধরার কষ্টে হার্ট অ্যাটাক করে মরে টরে যাননি তো ?
হঠাৎ উনি আমার হাত ধরে নিজের দিকে টান দেওয়ায় আমার মাথা সোজা গিয়ে ঠেকলো উনার বুকে , আমি চমকে উঠলাম
উঠতে নিবো উনি এক হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছেন ,
” কি হলো এটা, ছাড়ুন আমাকে ”
” যেভাবে আছো চুপচাপ সেভাবে ই থাকো উঠার চেষ্টা করবে আর নড়চড় করবে , সোজা বেলকনিতে নিয়ে গিয়ে ঢিল মেরে ফেলে দিবো একদম উপরের টিকিট পেয়ে যাবে , সোও চুপ করে থাকো আর আমাকে ঘুমুতে দাও ”
বলেই দুহাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘটনা ঘটে গেলো , আমি বেক্কেল এর মতো শুধু তাকিয়েই রইলাম..
চলবে..
[ কেমন হয়েছে বাচ্চারা? ]