#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_30
__________________
” ভাবিমনি ঘরে আছেন নি? ”
দরজার বাইরে থেকে ফুলকলির ডাক শুনে এক পলক নিজেকে আয়নায় দেখে নিয়ে গিয়ে দরজা খুললাম ,
” কি হয়েছে ফুল? ”
ফুল আমার দিকে তাকিয়ে আপাদমস্তক ভালো করে দেখে বলল,
” মাশা আল্লাহ ভাবি আপনে রে না যা লাগদাছে , পুরা ওই ভারতের নাইকা কেট কেট আছে না ওর মতন”
আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম , এই কেট কেট মানে কি? হঠাৎ মনে হলো ও আবার নাইকা ক্যাটরিনার কথা বলছে না তো !
” কেট কেট আবার কি ফুল? ক্যাটরিনা কাইফ হবে !
” হয় হয় , ওই একই কথা , তয় আপনের বান্ধবী আইছে ওই যে কি যেন নাম ইলু মনে হয় ”
আমি আলতো হেসে বললাম ,
” ওর নাম ইলমী , তুমি ইলু আপু বলে ডাকতে পারো, আর ওকে একটু কষ্ট করে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও তো ”
” আইচ্ছা ভাবিমনি ” বলেই ফুল চলে গেলো ,
আমি গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হাতের চুড়ি গুলো পড়ছি যে গুলো কাল রাতে মা দিয়েছিলো ,
” বাহহ্ নতুন বউ , কি লাগছে রে তোকে , আসলেই মানুষ ঠিক ই বলে , বিয়ের পর নাকি মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এত দিন বিশ্বাস করি নাই আজ বিশ্বাস করলাম ”
পিছনে থেকে ইলুর কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে ঘুরে দরজার দিকে তাকালাম ,
ইলু মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে , আমি কয়েক কদম এগিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম ,
ওর আমার দিকে এগিয়ে এসে দুই বাহু তে ধরে বলল,
” মাশা আল্লাহ মাশা আল্লাহ কারো নজর না লাগুক ”
বলেই মুখ টা উঁচু করে থু থু বলে মাথার উপর হাত রাখলো,
আমি নাক মুখ কুচকে বললাম,
” ইয়াক! তুই আমারে থু থু দিলি কেন বেদ্দপ!
ও অবাক হয়ে বলল,
” থু থু কই দিলাম! আমি তো নজর না লাগার ট্রিক এপ্লাই করলাম , হুহ ভালো কাজের কোন দাম ই নাই এখন , ভালো মানুষের ই দাম নাই ভালো কাজের কেমনে থাকবো ”
আমি ওর দিকে টক পলক তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা টা ভালো ভাবে লাগিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে পিছনে তাকালাম ,
” আমার জিনিস কই ? ”
ইলু না জানার ভান করে বলল,
” তোর জিনিস! সেটা আবার কি ? ”
” ভাব নিস আমার সাথে? তাড়াতাড়ি ফাইল টা দে , আজ অফিস থেকে আসার সময় ট্রিট দিমু তোরে ”
” প্রমিস? ”
” হুম ”
ও দাঁত কেলিয়ে ব্যাগ থেকে একটা পেন ড্রাইভ বের করে আমার হাতে দিলো,
” কাল সারা রাত জেগে তোর জন্য ফাইলের সব তথ্য এটার মধ্যে সেইভ করেছি ”
আমি পেন ড্রাইভ টা হাতে নিতে নিতে বললাম ,
” থাংকুওও বান্তুপী ”
কিছু একটা মনে করে ,
” ওহ হ্যা তোকে যা বলেছিলাম সেটা করেছিস? ”
ইলু আমার কথা শুনে কিছু ভেবে বলল,
” তুই তো আমাকে কত কথায় বলেছিস! ঠিক কোন কথা টা মেনশন করছিস? ”
” আরে বলছিলাম না , এই তথ্য গুলো ভীষণ জরুরি তাই সব গুলোর কপি তুই নিজের কাছে এক সেট রাখবি আর আমাকে এক সেট দিবি! ”
” ওহ হ্যা , আরে রেখেছি রেখেছি, পেন ড্রাইভে ও আছে আর ফাইল গুলো তো আমার কাছে ই ”
” আর কাল রাতে আমার কাছে থাকা ছবি গুলো মেইল করেছিলাম , পেয়েছিস ”
ইলু বিছানায় বসতে বসতে বলল ,
” হুমম ”
আমি পেন ড্রাইভ টা আমার ব্যগে রেখে ইলুর পাশে এসে বসলাম ,
ইলু ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” জানিস পূর্ণ আমি না একটা জিনিস ভাবছি! ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম ,
” কি ভাবছিস? ”
” আরে তুই কি আজ অফিস যাবি? ”
” হুম কেন? ”
” এভাবে শাড়ি পড়েই যাবি? ”
” হুমম এভাবে ই যাবো ! কেন ভালো লাগছে না এভাবে ? ”
” আরে ভালো লাগবে না কেন? আমি বলছি অন্য কথা! ”
আমি ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই ও দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
” তোমার ওই পেয়ারের মৃদুল আজ তোমাকে দেখেই হার্ট অ্যাটাক করবে , আই ডেম সিউর”
” বাজে কথা কম বল ইলু , ওই ছেঁচড়া টার নাম ও মুখে আনবি না ”
ও মুখ টিপে হেসে বলল
” ঠিক আছে বাবা , বলব না ”
হঠাৎ ইলু তাহরিমের বুক শেলফ এর দিকে তাকিয়ে বলল,
” আরে আব্বাস, তোর মন্ত্রী জামাই তো হেব্বি জ্ঞানী রে , বইয়ে ভরপুর বুক শেলফ! ”
ইলু উঠে বুক শেলফ এর কাছে গেলো , আমি পিছনে থেকে ভ্রু কুচকে বললাম,
” সব ই বুঝলাম কিন্তু এই আব্বাস টা আবার কে? ”
ও ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,
” তোর এই মোটা মাথায় এসব লিজেন্ডারী কথা বার্তা ঢুকবে না , যা তো ”
আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললাম
” আর কিছু? ”
ও আমার কথার পাত্তা না দিয়ে খুশি মনে বুক শেলফ এ বই খুঁজে চলছে ,
আমি খাটের ওপর পায়ের উপর পা তুলে বসে ওর কান্ড দেখছি আর একটা চরম মোমেন্ট এর অপেক্ষা করছি ,
প্রায় ৫ মিনিটের মাথায় ও নাক মুখ কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” পূর্ণ রেএ আমি কি ভুলে কোন ইংরেজ বংশধরের বাড়িতে ঢুকে পড়লাম না কি রে! ছে ছে ছে এমন বই ও মানুষ পড়ে? ইয়াক!
ওর এক্সপ্রেশন দেখে আমি শব্দ করে হেসে দিলাম ,
” তোর প্রথমে বুক শেলফ এ এত এত বই দেখে যেমন মনে হয়েছিলো আমার ও ঠিক এতোটাই খুশি লেগেছিলো পরে যখন বই গুলো খেয়াল করলাম আমিও ঠিক একই এক্সপ্রেশন দিয়েছিলাম ”
বলেই হু হু করে হেসে দিলাম , আর ও মুখ গোমড়া করে ধুম করে বিছানার উপর বসে পড়লো টেবিল থেকে খবরের কাগজ টা মুখের ওপর ধরে জোরে জোরে পড়তে লাগলো ,
আমি রুম থেকে বের হতে হতে বললাম ,
“আচ্ছা তুই খবরের কাগজ পড় আমি বরং চা নিয়ে আসি ”
বলেই বেরিয়ে গেলাম,
_____________________
” পূর্ণা রুমে আছো নাকি? ”
কোন পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে ইলু খানিকটা নড়েচড়ে বসলো , মুখের সামনে তখন ও খবরের কাগজ টা মেলে ধরা ,
রুদ্র রুমে ঢুকেই ভ্রু কুচকে ফেলল , কেউ মুখের ওপর এমন ভাবে খবরের কাগজ মেলে ধরে আছে চেহারার অংশ ও দেখা যাচ্ছে না ,
” কেমন আছো পূর্ণা? তাহরিম আমার ছোট বিধায় তোমাকে ভাবি বলে সম্বোধন করলাম না, ডোন্ট মাইন্ড”
কিন্তু বসে থাকা মেয়েটা না কেন নড়চড় করছে আর না কোন কথা বলছে যা দেখে রুদ্র খানিকটা অবাক হলো৷,
” তুমি আমাকে চিনবে না , আমি রুদ্র তালুকদার , সম্পর্কে তোমার ভাসুর হই , আমি তাহরিম থেকে তিন দিনের বড় ”
” আপনি কে? ”
হঠাৎ পিছন থেকে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো রুদ্র ,
পিছনে তাকিয়ে ই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে কারণ তার পিছনে শাড়ি পরিহিত সয়ং পূর্ণা দাঁড়িয়ে , যেহেতু তাহরিমের মোবাইলে আগে পূর্ণার ছবি দেখেছে তার উপর ওই ভুতুড়ে বাড়ি তে ও পূর্ণাকে দেখেছে তাই তার চিনতে মোটেও ভুল হচ্ছে না, তবে পিছনে যদি পূর্না হয় তাহলে এতক্ষণ সে কার সাথে কথা বলছিলো ,
মনে মনে এটা চিন্তা করে ই পুনরায় সামনের দিকে তাকালো ,
সামনের দিকে তাকাতেই আবার আরেকটা ঝটকা খেলো রুদ্র বাবাজি ,
কারণ তার সামনে ই দাঁত কেলিয়ে ইলমী দাঁড়িয়ে আছে , রুদ্র তার দিকে তাকাতেই ইলমী তার হাসি টা আরেকটু প্রসস্থ করে হাত নাড়িয়ে বলল ,
” হ্যালোওও বেহাই সাব থুক্কু সাহেব ”
” হুয়াট ননসেন্স , তুমি এই রুমে কি করো ইডিয়ট! আর কে বেহাই? কার বেহাই? কিসের বেহাই ”
চলবে ,
[ সরি বাচ্চারা দুদিন যাবত সেইই লেভেল এর বাঁশ খাচ্ছি তো তাই মোবাইল ধরার সাহস হচ্ছে না , কাল আর আজ মিলিয়ে এত টুকুই লিখতে পারলাম 🥺]