#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_32
_____________________________
সেই কখন থেকে সং সেজে স্টেজে বসে আছি! না দেখা মিলছে ইলুর আর না দেখা যাচ্ছে ওই মন্ত্রী সাহেব এর। বিরক্ত হচ্ছি ক্ষনে ক্ষনে তার উপর মাথায় চলছে আরেক চিন্তা আদৌও কাজ টা ঠিক ভাবে করতে পারব তো? আজ কাজ টা যদি না পারি তাহলে হয়তো মরব নয়তো বাঁচবো। তবে ভাববার বিষয় আরেকটা, এই অনিশ্চিত কাজে ইলুকে নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হচ্ছে?
” হেইই বান্ধবী দেখ তো কেমন লাগছে আমাকে? ”
চেনা কোন কন্ঠ শুনতে পেয়ে আমার ধ্যান ভাঙ্গে সামনে তাকিয়ে দেখি কালো কাতান শাড়িতে নিজেকে জড়িয়েছে ইলু। মেয়েটা এমনি ই উজ্জ্বল ফর্সা তার উপর কালো টা যেন অন্ধকারের আলো। চুল গুলো স্ট্রেইট করে পিছনে ছেড়ে দেওয়া। অনুষ্ঠানে তেমন মানুষ দাওয়াত দেওয়া হয় নি এই টুকটাক ঘরোয়া আয়োজন।
” মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে আমার জানু পরীকে ”
আমার কথা শুনে মেয়েটা লাজুক হাসলো, কাঁধে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বলল,
” লজ্জা দিচ্ছিস কেন? আমি ফর্সা হলেও তোর মতো মায়াবতী নই, ফর্সা মেয়েদের অবজ্ঞা করা যায় তবে মায়াবতী কে না! ”
” হে হে বুঝছি তোর কবি গিরি, পাম মারার তো উস্তাদ আপনি, তবে রাতের কথা টা ভুলিস না যেন! যে করেই হোক আমাদের আজকেই যেতে হবে ”
” হুম ”
বলেই ইলু উঠে বাহিরে চলে গেলো, ইলু বাগানের মধ্যে বুকের উপর হাত গুজে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো ,
” কি ব্যাপার আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে? মন খারাপ? ”
ইলু হাসলো সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
” মানুষ তো একাই ভালো থাকে, একাকিত্বের মাঝে তারা নিজেকে খুঁজে পায় ”
” বাহ্ আজ বেশ আধ্যাত্মিক কথা বলছেন ব্যপার কি? ”
ইলু ভ্রু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকালো, যে ছেলের পেট থেকে বোমা মারলেও কথা বের হয় না সে ছেলে নিজে থেকে এসে কথা বলছে, ব্যপার টা অদ্ভুত!
” কি ব্যপার বেহাই মশাই, আজ মনে হচ্ছে মন টা বেশ ভালো, অন্য দিন তো বোমা মারলেও কথা বের হয় না আজ নিজে থেকে এসে কথা বলছেন! ”
রুদ্র অন্য দিকে তাকিয়ে হাসলো,
” হুমম আসলে দেখলাম, আমার দশ টা না পাঁচ টা না একটা মাত্র বেহাইন সাহেবা একা দাঁড়িয়ে গাছের পাতা গুনছে তাই ভাবলাম একটু সঙ্গ দেওয়াই যায় ”
” ভালো বলেছেন ”
বলেই ইলু আবার সামনে তাকালো,
” চলেন হাটি ”
ইলু মাথা দুলিয়ে সামনের দিকে হাটতে লাগলো , রুদ্র ও পাশাপাশি হাঁটছে..
__________________
” বউজান.. এই বউ জান ”
স্টেজে বসে তাহরিম পূর্ণার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ঝুঁকে তাকে ডাকলো,
আমি বিরক্তি তে ভ্রু কুচকে বললাম,
” কি সমস্যা আপনার? এমন ফিসফিস করে কথা বলছেন কেন? ”
” আরে শোনো না ”
তখন তাদের ফটোসেশান চলছে,
আমি তাহরিমের দিকে খানিকটা ঝুঁকতে ই তাহরিম ফটোগ্রাফার কে কিছু একটা ইশারা করে পূর্ণার দিকে এগিয়ে গিয়ে গালে একটা কিস করে বসে,
আর ফটোগ্রাফার ও সেই সুযোগে বেশ কয়েক টা ছবি ক্লিক করে নেয়,
এর থেকে খানিকটা দুরেই ইলু পূর্ণা আর তাহরিমের ফটোসেশান দেখছিলো হঠাৎ তাহরিমের এমন কাজে ইলু চোখ বড়ো বড়ো করে মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,
আমি হতবুদ্ধির ন্যায় বোকা হয়ে গেলাম৷ , পুরো ব্যপার টা আমার মগজে ঢুকতে বেশ কিছু সেকেন্ড সময় লাগলো,
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাহরিম এর দিকে তাকালাম , তাহরিম তখন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে বসে মোবাইল ঘাটছে ,
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
” আপনি কবে থেকে এমন নির্লজ্জ হয়েছেন মন্ত্রী সাহেব ? ”
তাহরিম মোবাইলের থেকে চোখ তুলে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,
” মিস পূর্ণা তুমি কি আমাকে কিছু বলছো? ”
আমি নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম,
” আপনি না এক কাজ করতে পারেন এসব রাজনীতি ফাজনীতি বাদ দিয়ে হলিউড, বলিউড, টলিউডে অভিনয় করতে পারেন, ট্রাস্ট মি হেব্বি হিট হবে ”
বলেই অন্য দিকে তাকালাম , আমার কথা শুনে তাহরিমের মনে হলো সে খুব ভালো একটা জোক্স শুনেছে , শব্দ করে হেসে বলল,
” তুমি চাইলে আমি বলিউড অভিনেতা হতেই পারি তবে তোমার আবার জ্বলবে না তো? ”
আমি ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলাম,
” আমার আবার জ্বলবে কেন? ”
” না মানে এত এত ফিমেল এক্ট্রেস এর সাথে কাজ করবো কত সুন্দরী সুন্দরী অভিনেত্রী তারা , কোথাও গিয়ে তোমার আবার জ্বলবে না তো? ”
আমি মুখ বেকিয়ে বললাম,
” ইসস কক্ষনো না , হুদাই ”
” আর ইউ সিউর ? ”
” ইয়াহ ”
” না থাক পরে তুমি মনে মনে কষ্ট পাবা মুখে না বললে ও আমি জানি আর আমি আবার মহান ব্যক্তিত্ত সম্পন্ন পুরুষ, নিজের বউ কে কষ্ট দেবার কথা চিন্তা ও করতে পারি না, যা হোক তোমাকে এ যাত্রাই বাচিয়ে দিলাম ”
” আমাকে বাচিয়ে দিলেন! হাউউ ফানি ”
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আয়োজন শেষ হলো৷, সব শেষ করে বাসায় ফিরতে বেশ অনেক টায় দেরি হয়ে গেছে , আমার ইচ্ছেতেই অনুষ্ঠান টা দিনের বেলায় হয়েছিল , যার ফলে শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে যায় ,
সবাই বের হতেই ইলু এসে আমার পাশে দাড়ালো, আমি ওকে ইশারা করতেই ও আমাকে ধরে ন্যাকা কান্না শুরু করলো ,
আমার পাশে ছিলো মা , ইলুর এমন কান্না দেখে মা বলল ,
” ইলমী কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন,? ”
ইলু আমার হাত ধরে নাক মুছতে মুছতে বলল ,
” দেখুন না আন্টি, আজ আমার জন্মদিন অথচ পূর্ণ বলছে ও নাকি যাবে না , ও যাবে না এটা কি কখনো হয়? ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড না? ওকে ছাড়া আমি কি করে কেক কাটি ? ”
ইলুর কথা শুনে মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” ও কি কথা পূর্ণ, তুমি ইলমীকে মানা করছে কেন? ওর সাথে যাও, বেচারী যখন এত আশা নিয়ে বলছে তুমি আর রিজেক্ট করো না যাও ”
” আপনি যখন বলছেন, ঠিক আছে মা ”
আমার কথা শুনে ইলু লাফ দিয়ে উঠে বলল,
” আন্টি আজ পূর্ণ একটু আমাদের বাসায় থাকুক! কাল সকালে আমি ওকে আবার দিয়ে যাবো, আন্টি প্লিজ না করবেন না প্লিজ আন্টি ”
মা অমত থাকা সত্তেও ইলুর এতো রিকোয়েস্ট ফেলতে পারলো না অগত্যাই সে মত দিয়ে দিলো , আমি আর ইলু দ্রুত পায়ে ক্যাব ভাড়া করে চলে এলাম একটা হোটেলে,
তখন ভাগ্যিস মন্ত্রী সাহেব ছিলো না, না হলে কিছু তেই আসতে দিতেন না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি,
হোটেলের রুমে গিয়ে সকল ফাইল, পেন ড্রাইভ এক জায়গায় রেখে ,
কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমের চলে গেলাম, ফ্রেস হয়ে ফরমাল ড্রেসআপ করে বের হলাম ,
একটা কালো লং স্যুট আর কালো প্যান্ট মাথায় ক্যাপ আর মুখে মাস্ক , পায়ে ক্যাডস , কেউ চেনার উপায় নেই, আমার মতোই সেইম সাজে ইলমী ,
” ইলু তুই সব জিনিস পত্র রেডি কর আমি বাইক নিয়ে আসছি , তারপর একসাথে বেরিয়ে যাবো , দশটার মধ্যে পৌঁছাতে হবে ”
“কোথায় যাবি সেটা তো বললি না”
” যেতে যেতে সব বলব ”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম ,
কাউকে ফোন করে বললাম বাইক টা যেন রেডি রাখে আমি আসছি সেটা নিতে,
বলতে বলতে বেরিয়ে গেলাম হোটেল থেকে ,
প্রায় আধাঘন্টার মাঝে পুনরায় ফিরে এলাম হোটেলে ,
বাইক টা পার্ক করে হোটেলের রুমে ঢুকলাম , ইলু সব কিছু রেডি করে বসে আছে ,
হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি নয়টা ত্রিশ বাজছে ,
দুজন মিলে বেরিয়ে গেলাম , সেই জায়গাটার উদ্দেশ্যে,
আদৌও জানি না কাজে কতটুকু সফল হতে পারব , আদৌ তেও কি বেঁচে ফিরতে পারবো কি না , এক অনিশ্চিত জীবন…
চলবে…
[ প্লিজ সবাই গঠন গত মন্তব্য করবেন 🥺]