ভালোবাসিবো_খুব_যতনে #Ayrah_Rahman #part_33

0
606

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_33
_____________________________

” আমরা কোথায় যাচ্ছি পূর্ণ? ”

আমি বাইক চালাতে চালাতে উত্তর দিলাম,

” কাশিমপুর ”

ইলু বেশ অবাক হলো , এতো রাতে কাশিমপুর যাবার মানে টা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে , ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

” এই এতো রাতে কাশিমপুর তোর কি কাজ রে পূর্ন? ”

আমি বাইকের আয়না দিয়ে ওর দিকে তাকালাম যদিও অন্ধকারে ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না।

” কাশিমপুরে পুরনো বাংলো টা আছে যেটা একদম সমুদ্রের তীর ঘেষে আর জঙ্গলের শেষ প্রান্তে? ”

” হুমম ”

” ওখানে ই যাচ্ছি ”

ইলু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

” কেন? কেন যাচ্ছি সেটাই তো জিজ্ঞেস করলাম? ”

” আমি খবর পেয়েছি আজ রাতেই ওদের সবচেয়ে বড় ডিল টা কমপ্লিট করবে, আর তার প্রমান জোগাড় করার জন্য ই ওখানে যাওয়া ”

ইলু পুরো ব্যাপার টা শুনে বলল,

” কিন্তু পূর্ণ আমার না কেমন জানি খটকা খটকা লাগছে, তুই সিউর তো? যে তোকে এসব খবর দিয়েছে সে কোন ভুল ইনফরমেশন দেয় নি তো? এটা ফাঁদ পাতে নি তো আমাদের ধরার জন্য? ”

আমি হাসলাম,
মেয়েটা অল্পতেই খুব বেশি ঘাবড়ে যায়,

” যদিও আমি সব খবর নিয়েই এসেছি তবুও আমরা যেই পেশায় আছি সেটা মোটেও শান্তি জনক পেশা না, জীবন মরনের লড়াই হয় এখানে, আমি নিজের জীবন টাকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েই এসেছি ”

ইলু কিছু টা ভেবে বলল,

” আমরা তাহরিম তালুকদার কে না বলে এসে কোন ভুল করিনি তো? উনাকে কি জানানো উচিত ছিলো না পূর্ণ? ”

আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম,

” উনাকে জানালে কি হতো শুনি? সেই আসতে দিতেন না, হয়তো আসতে দিলেও টেনশনে হার্ট অ্যাটাক ই করে বসতেন, আর আমার পেশাটাই এমন ভয় পেলে চলবে না, সমাজের চোখে সত্যি টা প্রকাশ করতে হবে, এটাই তো আমাদের লক্ষ্য ”

” পূর্ণ? ”

” হুম বল, সাম হাউ তুই কি ভয় পাচ্ছিস? দেখ ইলু ভয় পেলে বল আমি এমনিতেও তোকে নিয়ে যেতে চাইছিলাম না, তবে দুজন যেতে ই হতো, শোন তোকে একটা কথা বলি! ”

” হুম বল ”

” ওখানে যাচ্ছি তবে কি হবে সেটা কিন্তু জানি না , শুনেছি শাফিন মিয়াজি লোকটা ভীষণ ধুরন্ধর, একবার যদি টের পায় কিংবা ধরতে পারে তবে কিন্তু আর রক্ষে নেয়, তোকে একটা কথা দিতে হবে! ”

ইলু ভ্রু কুচকে বলল,

” কি কথা? ”

” ধর কোন ভাবে আমি ধরা পরে গেছি তখন তুই আমাকে রেখেই পালিয়ে আসবি সব প্রমান সহ, আমার যা হয় হোক তুই নিরাপদে চলে আসবি! ”

ইলু থমকালো, চমকিত নজরে আমার দিকে তাকালো, থমথমে গলায় বলল,

” আমাকে দেখে কি কোন এঙ্গেল এ তোর কাছে সার্থপর মনে হয় পূর্ণ? মরলে দুজন একসাথে মরব আর বাচলে একসাথে, কিন্তু তোকে বিপদে রেখে আমি যেতে পারব না, সরি”

আমি খানিকটা রেগে বললাম,

” ইলু বোঝার চেষ্টা কর ইলু, এটা পাগলামির সময় নয়, আমি না পারলে তোকে যে পারতেই হবে ”

” না বললাম না, পরের টা পরে দেখা যাবে এখন সাবধানে বাইক চালা তুই ”

বুঝলাম মেয়েটাকে বুঝিয়ে কাজ নেই, সে যা বলবে তাই করবে তাই আর বেশি কথা বললাম না!

কাশিমপুর আমাদের শহর থেকে বেশি একটা দুর নয় এই মাইল ৪-৫। আমাদের পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টার মতো সময় লেগেছে, আমি ইলু বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছি ওই জঙ্গলের মাঝে কোন দিকে যাবো ঠিক বুঝতে পারছি না।

হঠাৎ মনে হলো বা দিকে দুরে কোথাও একটু আলোর রেস দেখা যাচ্ছে তাই আমি আর ইলু সেদিকেই এগুলাম,

কিছু দুর এগুতেই দেখলাম বেশ কিছু লোক একটা কাঠের তৈরি বাড়ির চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে, আমি আর ইলু লোক গুলোর ছবি তুলে নিলাম,

ইলু আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,

” কিরে পূর্ণ ভেতরে ঢুকবি কি করে? ”

” পিছন দিক দিয়ে ”

আমার কথা শুনে ইলু ভ্রু কুঁচকে বলল,

” মানেহ ”

” মানে হলো এখন আমরা ঠিক বাড়ি টার পিছনে দিকে যাবো,”

” তারপর? ”

আমি ব্যাগ থেকে একটা ছোট বোমা টাইপ কিছু বের করে বললাম ,

” তারপর এটা ঢিল দিয়ে সামনের দিকে ফেলব, তখন আওয়াজে সবাই যখন সামনের দিকে যাবে আমি ভেতরে ঢুকবো, বুঝলি? ”

” হুম বাট ইলু আমার টা কেমন জানি লাগছে! আমরা কি পারবো? ”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

” তোকে কে ভেতর যেতে বলল? যাবো তো আমি আর তুই এভাবে এখানে লুকিয়ে থাকবি আমি যা প্রমান জোগার করব সাথে সাথে ই তোর ফোনে আর আমার লেপটপে চলে আসবে ”

” মানে কি? তুই একা যাবি মানে? আমি ও যাবো ”

” না ইলু তুই এখানে থাকবি! আমার কসম এক পা ও নড়বি না”

বলেই আমি আর ইলু বাড়ি টার পিছনে দিকে এসে সামনের দিকে বোমার পিন খুলে তা ছুড়ে মারি,

আর প্রচন্ড শব্দে তা বিস্ফোরিত হয়, আর পিছন দিকের যত লোক ছিল সবাই দৌড়ে সামনে চলে যায় কিসের আওয়াজ তা দেখার জন্য, এই সুযোগে আমি বাড়ির পিছনে দিকের একটা ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই, যদিও পিছনে থেকে ইলু হাত ধরে রাখছিলো তাই পর হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে চলে এলাম, এছাড়া আর যে কোন উপায় ছিলো না ,

আমি হাটতে হাটতে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম, বেশ অনেক গুলো মশাল জ্বলানো, একটা ঘর থেকে বেশ অনেক মানুষের আওয়াজ আসছে, আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম সে দিকে,

ক্যামেরা সেট করে এক ফাঁক দিয়ে বেশ অনেক গুলো ভিডিও করলাম আর ছবি ও তুললাম তাদের। শাফিন মিয়াজি লোকটা থেকে টাকা নিচ্ছে, তাদের কথা বার্তা, দাম দর সব কিছুই প্রমান জোগার করলাম, যা পেয়েছি তাতেই হয়ে যাবে , এর থেকে বড় প্রমান দরকার নেই।

ক্যামেরা ঠিক করে পিছনে ঘুরে আসতে যাবো অমনি আমার ধাক্কা লেগে একটা ফুল দানি পরে যায় সাথে তাল সামলাতে না পেরে আমি ও,

শব্দ শুনে ভেতর থেকে শাফিন মিয়াজি সহ সবাই চলে এলো, আমি পালাতে গিয়েও পারলাম না সবাই এসে ঘিরে ধরলো আমায়! আমার যেন নিঃশ্বাস টা আটকে আসছে!

আমাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে সামনে শাফিন মিয়াজি বসা,

” তুই কে হে মাইয়া? এত সাহস তোর? এই ডেরার ভিতরে ঢুকলি কিবা কইরা? মানতে হইবো তোর বুদ্ধি আছে ”

শাফিন মিয়াজি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে উঠে এক টানে আমার মুখের মাস্ক খুলে ফেলল,

কিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,

” আয় হায় তুই মাইয়া আমাগো নতুন মন্ত্রী সাহেবের সাংবাদিক বউ টা না? এতো দেহি মেঘ না চাইতেই জল! ”

আমি শব্দ করে হেসে দিলাম,

শাফিন মিয়াজি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” মরার শুকে পাগল টাগল হইয়া গেলি নাকি মাইয়া? হাসতাছোস কেন? ”

” হাসছি না ভাবছি! ”

” কি ভাবতাসোস? ”

” ভাবছি.. পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে, তুই শাফিন মিয়াজির ও একই দশা আর কি ”

” তুই মেয়ে কি আমারে ভয় দেখাইতাছোস? ”

আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম,

” তুই কি ভয় পাচ্ছিস? এমা কি কথা এসব? ভয় পাচ্ছিস কেন? ”

শাফিন মিয়াজি আমতাআমতা করে বলল,

” কোথায় ভয় পাচ্ছি ”

বলেই উঠে একজন লোককে বলল,

” ওই কালুও আমার হাড্ডি কোপানোর ছু*ড়ি টা নিয়াই তো, আজ এট চামড়া ছিলামু আমি, আমার সাথে লাগতে আসার ফল ভোগ করবি মেয়ে তুই ”

কালু বলে লোকটা একটা ধারালো ছু*ড়ি এনে দিলো শাফিন মিয়াজির হাতে,

শাফিন মিয়াজি এক পলক ছু*ড়ির দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো আমার দিকে ,

আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম, চোখের সামনে ভেসে উঠলো মন্ত্রী সাহেব এর মুখ, হয়তো আর কখনোই দেখা হবে না আমাদের!

বিরবির করে বলতে লাগলাম,

” আপনাকে বলা হলো না সেই কথাটা যেটা নিজে উপলব্ধি করতে পারছি হয়তো আর কখনো বলা হবে না আপনাকে ভালোবাসি মন্ত্রী সাহেব, খুব বেশি ভালোবাসি,

আমি যা লিখতে পারি না, তার সমান আপনাকে ভালোবাসি…

চলবে..

[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবা বাচ্চারা! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here