#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_35
_____________________________
পূর্ণাদের গাড়ি টা আপাতত দাঁড়িয়ে আছে তালুকদার বাড়ির সামনে, তাহরিম এক পলক পূর্ণার দিকে তাকালো, পূর্ণার পরনে জ্যাকেট আর প্যান্ট, এই অবস্থায় কি করে বাসার ভেতরে নিয়ে যাবে সেটাই ভাবছে সে,
তাহরিম কিছু একটা ভেবে আমাকে গালে চাপড় দিয়ে ডাকলো,
” পূর্ণ? শুনতে পাচ্ছো? ”
আমি খানিকটা নড়েচড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে গেলাম,
তাহরিম আবার ডাকলো,
” এই পূর্ণ? ”
আমি খানিকটা সময় নড়েচড়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম,
উঠে বসতে বসতে বললাম,
” কি হয়েছে ডাকছেন কেন? ”
তাহরিম খানিকটা ভাবুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
” তুমি ড্রেস কোথায় চেঞ্জ করেছো? ”
আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালাম,
” মানে? ”
তাহরিম গাড়ির স্টেয়ারিং এ হাত রেখে আমার দিকে ঘুরে তাকালো,
“তুমি যে গোয়েন্দা গীরি করতে গেছো এই ড্রেস পরে, কোথায় চেঞ্জ করেছো? তোমার শাড়ি কোথায় ? হোটেলে? এই ড্রেস পরে তো আর শ্বশুর বাড়ি তে যেতে পারবে না! তাই আগে ড্রেস টা চেঞ্জ করে কাল সকালে বাসায় আসবো ”
আমি এবার নিজের দিকে তাকিয়ে পুরোপুরি কথার মানে টা বুঝতে পারলাম,
” আরে ওই নাম টা ভুলে গেছি, আপনি চলেন রাস্তা চিনি আমি! ”
তাহরিম ভ্রু কুচকালো,
” এই ব্রেইন নিয়ে তুমি গেছো রাজনৈতিক নেতাদের সাথে পাঙ্গা নিতে, হাউউ ফানি!”
উনার কথা শুনে আমি বেশ রেগে আঙুল উচিয়ে বললাম,
” দেখুন অপমান করবেন না বলে দিলাম, আমি কিন্তু সব প্রমান জোগাড় করে ফেলেছিলাম কিন্তু হঠাৎ হাত লেগে ফুল দানি টা পড়ে যেতেই সবাই বুঝে গিয়েছিল, এতে আমার কি দোষ ”
উনি স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন,
” নাআআ নাহ্ তোমার কি দোষ! তোমার কি কোন দোষ থাকতে পারে! এত এত মিথ্যা বলে তুমি বের হয়েছো, আবার এত রিস্কের একটা কাজ নিজের ইচ্ছে তে করেছো, এটা তো দোষ না! এটা একটা অন্যায়, এত মাতব্বরি করতে কে বলেছে তোমাকে? আমি বলেছি তোমাকে? এটলিস্ট আমাকে তো জানাতে পারতে! ”
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
” আপনাকে বললে আপনি যেতে দিতেন আমায়? কক্ষনও যেতে দিতেন না, আপনাকে আমি ভালো করেই চিনি! ”
আমি লোকেশন বলে দিচ্ছি উনি গাড়ি চালাচ্ছে আর ঝগড়া করছে।
গাড়ি এসে থামলো একটা ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে, উনি গাড়ি থেকে নামার পূর্বে মাস্ক টা ভালো ভাবে পরে নিলেন যাতে কোন সমস্যা না হয়,
রিসিপশন থেকে চাবি নিয়ে রুমে এসে আমি পূর্বের পরা শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলাম,
প্রায় মিনিট বিশের পর শাড়ি ঠিক করে বের হলাম,
উনিও ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় বসলেন, আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছিলো সারাদিনের ঝামেলায় ভীষণ ক্লান্ত আমি,
উনি আমার পাশে এসে বসে বললেন,
” তোমার শ্বাশুড়ি ফোন দিয়েছিলো আমাকে! তোমাকে ফোন দিয়ে পায়নি ”
আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
” কেন? ”
” কারণ টা তো জানি না, তবে তোমাকে বলেছে কাল তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে”
আমি উঠে বসলাম,
” কেন কাল কি কোন অনুষ্ঠান? ”
উনি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন,
” আমি কি জানি? ”
আমি আর কিছু না বলে শুয়ে পড়তেই উনি হঠাৎ করে বলে উঠলেন,
” পূর্ণ শোননা! ”
” হুম? ”
” কাল তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে মিট করাবো!”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
” গার্লফ্রেন্ড? ”
” হুমম, তোমাকে বলেছিলাম না আমার গার্লফ্রেন্ড আছে! কাল একবার সময় করে তোমার সাথে দেখা করাবো, তুমি রেডি হয়ে থেকো”
আমি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললাম,
” আপনার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করলে আমার আবার রেডি হতে হবে কেন আজব! যান সরেন তো, দেখানোর সময় দেখাইয়েন, এখন ডিস্টার্ব করবেন না ”
বলেই উনাকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে উঠিয়ে আমি কাথা নিয়ে শুয়ে পড়লাম,
আমার বুকের মধ্যে কোথাও না কোথাও জ্বলন অনুভব করছি, আর জেলাস হবো না কেন, প্রথমত তাহরিম তালুকদার আমার হাসবেন্ড, দ্বিতীয়ত আমি তাকে ভালেবাসি আর ভালেবাসার মানুষের মুখে অন্য কোন মেয়ে মানুষের কথা শুনতে কার ভালো লাগে তার উপর তাকে যদি নিজের গার্লফ্রেন্ড দাবি করে!
মনে তো বলছিলো ঠাস ঠুস করে কয়েকটা কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলি, বউ থাকতে তোর কিসের গার্লফ্রেন্ড রে? বেদ্দপ পোলা,!
কিন্তু আফসোস কিছু ই বলতে পারলাম না!
_____________________
” ভাইয়া শুনছেন? ”
রুদ্র বিরক্ত, ভীষণ বিরক্ত এই মেয়েটার উপর, প্রতিটি লাইনে পাঁচ বার ভাইয়া না ডাকলে মনে হয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে এমন ভাব,
রুদ্র রাগী দৃষ্টি তে ইলুর দিকে তাকালো,
” তোমাকে না বললাম চুপচাপ সিটে বসে থাকতে, এত কথা বলো কেন? আরেকটা কথা বলবে তো মাইর ও খেতে পারো!”
ইলু তো ইলুই, ইলু হঠাৎ খেয়াল করলো রুদ্র ইলুদের বাড়ির রোডে না গিয়ে তার বিপরীত দিকে যাচ্ছে, ইলু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
” এইই রুদ্র ভাইয়া কি করছেন? আপনি বামে যাচ্ছেন কেন? আমার বাসা তো ডানে! ”
রুদ্র নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
” আমি তো তোমার বাসায় যাচ্ছি না যে তোমার ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী যাবো! আমি যাচ্ছি আমার ইচ্ছে মতো, চুপচাপ বসো আর দেখো কোথায় যাই! ”
” দেখুন রুদ্র ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু আমি নামবো, নামান আমাকে! ”
রুদ্র না কোন কথা বলছে আর না ইলুর কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে,
ইলু নিজের করা একটা প্রশ্নের উত্তর ও না পেয়ে বেশ হতাশ। হতাশ হয়ে চুপচাপ বসে রইলো, রুদ্র আড়চোখে এক পলক ইলুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,
রুদ্র দের গাড়ি এসে থামলো একটা বিলের পাশে,
রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ইলুর দিকের দরজা খুলে দিলো,
” নামো”
ইলু হাত গুটিয়ে বসে আছে মানে সে কিছু তেই গাড়ি থেকে নামবে না..
” আপনার ইচ্ছে হলে আপনি যান আমি যাবো না, আমি বাসায় যাবো”
রুদ্র ভ্রু কুচকে কিছু ক্ষন নিরব দৃষ্টিতে ইলুর দিকে তাকিয়ে, খানিকটা ঝুঁকে ইলুকে হুট করে ই কোলে তুলে নেয়,
হঠাৎ এমন হওয়াতে ইলু বেশ চমকে উঠলো,
” এইই কি করছেন নামান আমাকে! নামান আমি যাবো আপনার সাথে তাও নামান আমাকে”
রুদ্র সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে বলল,
” সুন্দর ভাবে বলেছিলাম নামতে, নামো নি তাই আমি আমার টেকনিক টা এপ্লাই করলাম, এখন তুমি মুখ টা বন্ধ রাখো নয়তো আমি আমার টেকনিক এপ্লাই করে তোমার মুখ টা বন্ধ করবো! নাউ ইউর উইস!”
রুদ্রের কথা শুনে ইলু চুপ করে গেলো আর মনে মনে নিয়ত করলো কেয়ামত হয়ে গেলেও সে কথা বলবে না আর না মুখ থেকে একটা শব্দ ও বের করবে, একদম চুপপ!
রুদ্র ইলুকে নিয়ে বিলের তীরে এসে ইলুকে বসিয়ে প্যান্ট টা একটু উপরে তুলে পানিতে পা দিয়ে নিজেও বসে পড়ল,
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো আজ আকাশে অর্ধচন্দ্রিমা, আর আকাশ ভরা তারার মেলা,
ইলুর বেশ ভালো লাগলো এখন, তার কাছে কেন জানি অর্ধ চন্দ্র টাই বেশি ভালো লাগে, সবার তো পূর্ণিমা ভালো লাগে কিছু ইলুর আলাদা, সবার পছন্দ যে এক রকম হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই!
আকাশ টা পরিষ্কার হওয়ায় চারপাশে মৃদু আলোটা ভালোই লাগছে, তার সাথে হালকা ঝিরঝিরে বাতাস.
” ভালো লাগছে? ”
” হুমম ”
ইলু চারপাশে নজর বুলিয়ে পাশে রুদ্রের দিকে তাকালো,
রুদ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে, ইলু ভ্রু কুচকে বলল,
” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কিছু বলবেন? ”
” হুমম আজকের চাঁদ টা ভীষণ সুন্দর তাই না? ”
ইলু মুচকি হেসে বলল,
” হুমম অর্ধ চন্দ্র আমার ভালো লাগে ”
” তোমাকেও আমার ভালো লাগে ”
ইলুর কথার প্রেক্ষিতে হঠাৎ রুদ্রের এমন কথায় ভ্রু কুচকে বলল,
” আমাকে কিছু বললেন? ”
রুদ্র হকচকিয়ে উঠে বলল,
” নাআআ নাহ্ বললাম আজকের ওয়েদার টা ও খুব সুন্দর ”
ইলু মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,
“হুম”
তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
” গর্ধব কোথাকার! ”
চলবে…
[ কেমন হয়েছে বাচ্চারা? তোমরা কি কিছু বুঝতে পারছো? আমাদের ইলুরাণী ও কিন্তু প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে! ]