#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_১২
#পুষ্পিতা_প্রিমা
আইমির বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটি হাইস্কুল আর কলেজ। তারপাশেই একটি ছোটখাটো পার্ক। স্কুল কলেজের স্টুডেন্টদের বেশিই দেখা যায় সেই পার্কে । ছুটির দিন হওয়ায় স্টুডেন্ট নেই। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আছে। দ্রুত গতিতে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে আদি। মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে। আইমিকে দেওয়া কথা সে কি করে ভুলে গেল। এদিকওদিক তাকাতেই লম্বা একটি বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা গেল আইমিকে। আদির রাগ লাগল। এমন বৃষ্টির মাঝে কেউ এভাবে বসে থাকে। লম্বা লম্বা পা ফেলে সে এগিয়ে গেল আইমির দিকে। ধপ করে আইমির পাশে গিয়ে বসে পড়ল। আইমি তাকাল না। দাঁড়িয়ে পড়ে হাটঁতে লাগল। আদি ডাক দিল,
‘ আমি এসেছি আর তুমি চলে যাচ্ছ ইমি?
আইমি সরাসরি তাকাল আদির দিকে। আদি তার লাল হওয়া চোখ দেখে ভড়কে গেল। অসহায় হয়ে বলল,
‘ কাঁদার কি হলো ইমি? আমার ভুল হয়েছে। বলেছি কিন্তু একবার।
আইমি কন্ঠ ধরে এল। বলল,
‘ তুমি কোথায় গিয়েছ আদি? তুমি প্রায় দুইঘন্টা আগে আমাকে বলেছিলে তুমি মাঝরাস্তায়। তারপর উদাও। ম্যাক্সিমাম আধঘন্টা লাগে এখানে আসতে। আর তোমার আড়াই ঘন্টা। কোথায় ছিলে আদি?
আদি অবাক হয়। বলে,
‘ ইমি ব্যাপারটা অত সিরিয়াস কিছুনা। আমার কি হয়েছে আমি নিজেই জানিনা। এখানে আসার কথা মাথায় ছিলনা। যখন বাসায় ফিরে ফ্রেশ হতে গেলাম, তোমার মেসেজ দেখে মনে পড়ল। এগেইন সরি ইমি । এত সরি কিন্তু আমি কাউকে বলিনি কোনোদিন।
আইমি হিচঁকি তুলে কাঁদে। বলে,
এসেছ কেন? না আসলেই ভালো হত। আমি আজ রাতটা এখানেই কাটাতে পারতাম। ভালোই হতো।
আদি আইমির কথায় হেসে দেয়। বলল,
‘ বখাটেদের বখাটেপনা সহ্য করতে পারতে?
আইমি চোখ লাল করে তাকায়। বলে,
‘ পারতাম।
আদি হো হো করে হেসে উঠে। আইমির এতে দ্বিগুণ রাগ বাড়ে। বলে,
‘ তুমি হাসো ভালো করে। আমি যে বুড়ি হয়ে যাচ্ছি, সেদিকে তোমার খেয়াল নেই।
আদি আবার ও হাসে। বলে, ইমি টুয়েন্টি থ্রি হলে কেউ বুড়ি হয়ে যায়না। টুয়েন্টি ফাইভ হতে হবে। আমি পিচ্চি বউ সামলাতে পারব না।
আইমির প্রচন্ড রাগ লাগে। বলে,
‘ কিন্তু আমার বুড়া বর চাইনা। তুমি ও তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছ। বিয়ে হয়ে গেলে এতদিনে বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে যেতাম। আর তুমি বাবা।
আদি হাসতে সামনের দিকে ঢলে পড়ে। আইমি ধরে। বলে,
এভাবে হাসবে না আদি। রাগ হয়।
আদি তারপর ও হেসে যায়। বলে,
‘ ইমি তোমার বাচ্চাকাচ্চার মা হওয়ার এত শখ। আমি আর ও ভাবছি বিয়ের দুইবছর বাচ্চাকাচ্চার নাম নেওয়া যাবেনা। আর তুমি বিয়ে হওয়ার আগেই কিসব ভেবে আছ?
ইমি কিল দেয় জোরে। বলে,
‘ না আমার চাই। বিয়েটা কবে হচ্ছে? বাবা কিন্তু এবার সিরিয়াস।
আদি এবার নিশ্চুপ হাসে। বলে,
‘ এবার আমিও সিরিয়াস। বিয়ে করে সোজা এব্রোড। হানিমুনটা ও সেখানেই সেড়ে ফেলব। এক ঢিলে দুই পাখি। এই দেখো আমাদের বৃষ্টিবিলাস অলরেডি শেষের দিকে। জ্বর সর্দি বাধালে কিন্তু এই ডক্টর নিজেই মরবে সাথে আপনি পেশেন্টকে ও সামলাতে পারবে না।
আইমি নাক ফুলে তাকায়। বলে,
” এইটা কোনো বৃষ্টিবিলাস হলো আদি।
আদি আইমির নাকে টোকা দেয়। বলে,
‘ আচ্ছা এখন না। বিয়ের পর শিখিয়ে দিও।
আইমি আদির দুষ্টুমি বুঝতে পারে। বলে,
‘ তোমাকে আমি খুব মারব আদি।
আদির হাসি মুখোরিত হয় বৃষ্টির ঝুমঝুম আওয়াজের সাথে। আইমির রাগ ধীরে ধীরে শূন্যেতে নেমে আসে সেই হাসিতে মত্ত হয়ে।
__________________________
নীরা আর অর্পি দুইজনই ইশার বান্ধবী। ইন্ট্রোভার্ট হওয়ার কারণে বেশ জমকালো বন্ধুমহল নেই তার। কারো সাথে তেমন হুটহাট মিশে যেতে পারেনা। কারো সাথে তেমন যেচেপড়ে কথা ও বলতে জানেনা। নিজের এসব বাজে অভ্যাসের কারণে নিজের প্রতি সে বড্ড বিরক্ত। কেন সে অন্য দশজনের মতো হেসেখেলে কথা বলতে পারেনা। কেন কারো সাথে সহজে মিশতে পারেনা।
নীরা অর্পি দুজনই তার ভালো বন্ধু হলে ও তার অতীত জানা নেই তাদের। জানায়নি ইশা। তার জীবনে অতীত বলতে কিছুই নেই। যা আছে তাই তার অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যৎ। তার জীবনের এখন একমাত্র লক্ষ্য পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করা। যাতে কেউ তাদের ইচ্ছে, মর্জি তার উপর চাপিয়ে দিতে না পারে। যার কতদিন অন্যের দয়ায় বাঁচবে সে। আর কতদিন অন্যের কাধেঁর উপর বোঝা হয়ে থাকবে। রিপুদা আর কত করবে তার জন্য। তার ও তো ভবিষ্যৎ আছে।
রিকশায় তিন বান্ধবী কোনোমতে চেপে বসল। রিকশা চলতে লাগল। তিন বান্ধবীর কথা,হাসিতে পথ ফুরোতে লাগল। আচমকা বাইক এসে আক্রমণ করে বসল রিকশায়। রিকশাচালক পড়ে গেল মুখ থুবড়ে। লোকজন ছুটে এল। ইশা মাঝখানে বসায় অর্পির গায়ের উপর পড়ল। হাতে ব্যাথা পেল। তার পিঠের উপর পড়ল নীরা। পিঠে ও অসহ্য ব্যাথা অনুভূত হলো। অর্পি হাতে ভীষণ আঘাত লাগল। সে জ্ঞান হারাল। নীরার উপর পুরো রিকশা উল্টে পড়ায় সে ও মারাত্মকভাবে আহত হলো। মুহূর্তেই সেখানে এক অঘটন ঘটে গেল। লোকজন এসে বাইকের মালিককে গালিগালাজ করল। বাইকওয়ালা সহমর্মিতা না দেখিয়ে উল্টোসুরে বকাঝকা করতে লাগল রিকশাচালককে। রিকশাচালক তাতে কান দিল না। মেয়ে তিনটাকে তোলার চেষ্টা করল। ইশা আহত দুই বান্ধবীদের দেখে ডুকরে কেঁদে উঠল। নিজের ব্যাথা ভুলে দুই বান্ধবীকে ডাকাডাকি করল। নীরা আওয়াজ করলে ও অর্পি আওয়াজ করল না। তার নাক দিয়ে রক্ত বেরোলো। ইশা লোকজনের সাহায্যে কোনোমতে দুইজনকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করল। হাত ব্যাথায় ঠনঠন করে উঠল। রিপকে ফোন দিতে গিয়ে ও দিল না। মানুষটা শুধু শুধু টেনশনে পড়বে। নীরা আর অর্পির মা বাবাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিল।
প্রিয় দুই বান্ধবীর এমন মারাত্মক জখম নিজ চোখে দেখে সে কান্না আটকে রাখতে পারল না। কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে নীরবে সে চোখের জল ফেলল। আর্তনাদ শোনা গেল আর বেশ কিছু রোগীর পরিবার পরিজনদের। রিকশাচালক হাতে ব্যাথা পেয়েছে। ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। রিকশাচালককে দেখে ইশার কষ্ট লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যে অর্পির মা আর নীরার বাবা চলে এল। বেশ চিন্তিত হয়ে ডক্টরের সাথে কথা বলতে দেখা গেল। ইশার হাতের ব্যাথা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। ব্যাথায় সে চোখমুখ কুঁচকে রাখল। অর্পির মা এসে একদফা চেঁচামেচি করল ইশার উপর। ইশা ব্যাথা পায়নি অথচ অর্পির নাকমুখ হাতে জখম হলো। বিষয়টা অদ্ভুত না। ইশার মনে হলো অর্পির মতো আঘাত তার পাওয়া উচিত। তারজন্য তো এভাবে ভেবে দেখার কেউ নেই। তাই সে এমন ব্যাথা পেলে তেমন কিছুই হতোনা। সে কেন এমন আঘাত পেল না?
সূর্য হেলে পড়ল পশ্চিম আকাশে। সন্ধ্যা নামতে চলল। ইশাকে বাড়ি ফিরতে না দেখে জহির মিয়া বাড়িতে চিল্লাচিল্লি শুরু করল। রিপ বাসায় ফিরে ইশা ফিরেনি দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ল। মেয়েটি আবার কোনো বিপদে পড়ল না তো?
ইশার ফোনে কল দিতেই ইশা ফোন ধরল। বলল, আমি হসপিটালে রিপুদা। বান্ধবীর জন্য এসেছি।
রিপ চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করল, তোর কিছু হয়নি তো। তুই মিথ্যে বলছিস আমায়?
ইশা না না করে বলল। কিচ্ছু হয়নি আমার। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় ফিরছি। রিপ ধমক দিয়ে বলল, আসবি না আমি যাচ্ছি। চুপচাপ এক জায়গায় বসে থাক।
ইশা আর বারণ করতে পারল না। চুপচাপ কেবিনের সামনের রাখা লোহার লম্বা টুলের উপর বসে রইল। বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারল না। পিঠের যন্ত্রণা বেড়ে গেল। হাত আর পিঠের ব্যাথা মারাত্মক রূপ নিতে লাগল। সে উঠে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করল। কিছুক্ষণ পর সেই হাঁটাহাঁটি করার শক্তিটা ও যেন ফুরিয়ে এল। সে ক্লান্ত হয়ে টুলটায় বসে পড়ল। দেওয়ালে হেলান দিয়ে সে চোখ বুজল। চোখের জল গড়াল। সহ্যশক্তি এবার ফুরিয়ে আসল। যেন সে চেতন হারাল। নিজেকে আর খুঁজে পেল না।
_______________________
পিটপিট করে চোখ খুলে ইশা নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করল। হাত নাড়াতেই ব্যাথা অনুভব হলো। ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই হাতের উপর ভারী কিছু দেখতে পেল। একজন নার্স এসে ভারী জিনিসটি তুলে নিল। বলল, আপনার হাত মচকে গিয়েছে আপু। আপনি ট্রিটমেন্ট না নিয়ে বসেছিলেন কেন? আপনি জ্ঞান হারিয়েছেন।
ইশা তার ব্যাগ দেখতে পেল পাশে। ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল, বিলটা কিছুক্ষণ পর দিলে হবে?
নার্স মাথা দুলিয়ে চলে গেল। ইশা কাঁপাকাঁপা পায়ে বেড থেকে নেমে এল। অর্পি আর নীরার কেবিনের দিকে যেতেই সেখানে তাদের পরিবার পরিজনের ভীড় দেখতে পেল। নিজের অজান্তেই হাসল সে। বাইরে বের হয়ে দেখতে পেল,পুরো অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। রাস্তার পাশে রিকশার জন্য সে দাঁড়িয়ে থাকল। ফোনে চার্জ শেষ। রিপকে ফোন ও দিতে পারল না।
পুরো হসপিটালে তন্নতন্ন করে খু্ঁজল রিপ ইশাকে। দুইটি কেবিনে অর্পি আর নীরাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেল। নার্সকে জিজ্ঞেস করতেই নার্স জানাল, ওনি আবার বিল পে করার জন্য আসবেন বলেছিলেন। রিপের মেজাজ বিগড়ে গেল । মেয়েটা তাকে আজ আবার ও মিথ্যে বলল? একটু ও আপন মনে করেনা মেয়েটা তাকে। এতটা পর সে। এতটা।
সামনে কালো কার এসে থামাতেই ইশা খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ল। সরে অন্যদিকে দাঁড়াল। ড্রাইভিং সিটে বসা ছেলেটি কাচ ভেদ গলা বের করে দিল। বলল,’ কোথায় যাবেন মিস?
ইশা মাথা তুলে তাকাল না। বলল,
‘ কোথাও না।
কিন্তু পরক্ষণে কন্ঠটি চেনা মনে হতেই সে চমকে চোখ তুলে তাকাল। হাত পা অনবরত কাঁপাকাঁপি শুরু করল। সে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলল। খেয়াল করল,তরতর করে তার ঘাম ঝড়ছে। সে ছেলেটির চোখ থেকে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিল। কিছুই বলল না। দাঁড়িয়ে থাকল।
ছেলেটি আবার বলল, আমি কিন্তু কোনো কিডন্যাপার নয়। একজন ডক্টর। বলতে পারেন আপনার।
ইশা কেঁপে উঠল। সরাসরি ছেলেটির দিকে তাকাল। বলল,
‘ আমার?
ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে হাসল। বলল,
‘ উঠে বসুন। বুঝিয়ে বলি।
ইশা উঠতে চাইল না। বলল,
‘ আমি রিকশায় যাব।
ছেলেটির কেন জানি রাগ উঠল। বলল,
‘ এজন্যই বলে কাউকে যেচে পড়ে সাহায্য করতে নেই। অসহ্য।
ইশার হাসি পেল। আদি গাড়ির হর্ন বাজানোর সাথে সাথে বলল,
‘ যাচ্ছি।
আদি চুপ করে বসল। ইশা তার পাশে এসে বসতেই হাত নেড়ে বলল,
‘বাহ গুড জব। আমি তো ভেবেছিলাম পেছনে গিয়ে বসবেন?
ইশা চুপ থাকল। ডক্টরের পাশাপাশি কতদিন পর,কতমাস পর বসল সে। গাড়ি চলতে লাগল। দুজন নীরব সময় কাটল অনেকক্ষণ। আদির ফোনে কল এল । ওপাশের মেয়েটি জানতে চাইল,
‘ কি করছ?
আদি তার পাশে বসে থাকা নীরবচারীকে একবার দেখে নিয়ে বলল,
‘ বেহুশ হয়ে পড়ে থাকা রোগীকে কোলে ছড়াচ্ছি। তারপর সেবা করছি। আবার ড্রাইভার সেজে ড্রপ দিচ্ছি। ব্যাপারটা কেমন হচ্ছে ইমি?
ইশা নড়েচড়ে বসল। ফোনের ওপাশে মেয়েটি আদিকে বলল,
” এত ফাজিল তুমি আদি? রাখছি এখন। ফ্রি হয়ে কল দিও।
ইশা বুঝল না। লোকগুলো এসব কি বলেছে? মাথা ঠিকঠাক আছে তো? নাকি আগের চাইতে ও পাগল বেশি হয়ে গেল?
আদি গাড়ি চালাতে মনোযোগ দিল। গান ছেড়ে দিল। ইশা শুধু সামনে তাকিয়ে থাকল। নড়ল না চড়ল না। আদি বিরক্ত হলো। এই মেয়েটি কি গুণে গুণে কথা বলে নাকি? অসহ্য?
খান বাড়ির সামনে আসতেই ইশা হাত নাড়াল। বলল, নামব। আদি তাকাল সরাসরি তার দিকে। বলল,
‘ আমি নামব বললে কি হয়?
ইশা নীরবে হাসল। গাড়ি দরজা খুলতে গিয়ে খুলতে পারেনা। আদি নিঃশব্দে হেসে লক খুলে দেয়। ইশা ততক্ষণে চেপে থাকে গাড়ির সিটের সাথে। এই লোকটা সব মেয়ের সাথে এমন করে। সব মেয়ের গায়ে ঝুঁকে পড়ে নাকি? আদি লক খুলে দেয়, কিন্তু সরেনা। চোখ ঘুরিয়ে তাকায় ইশার দিকে। এত কাছাকাছি। একে অপরের নিঃশ্বাসের আওয়াজ আদানপ্রদান হচ্ছে যেন। ইশা চোখবন্ধ করে চেপে রইল। বিড়বিড় করে কি যেন বলল। আদি ও চোখবন্ধ করে রাখল। ইশা কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ মেলে দেখল। আদিকে এভাবে চোখবন্ধ করে থাকতে দেখে ভড়কে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই আদি হাতের আঙুল দেখিয়ে বলল,
‘ এইট
তারপর পরই সরে গেল। ইশা জোরে জোরে শ্বাস নিল। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। বলল,
‘ নাইন।
আদি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ইশার দিকে। ইশা চোখ সরিয়ে নিল। বলল,
‘ ড্রাইভার সাজার জন্য থ্যাংকস ডক্টর আদি চৌধুরী।
আদি দ্বিতীয় বার অবাক হলো। বলল,
‘ নাম ও জানা আছে?
ইশা শুধু হাসল। ঘাড় ঘুরিয়ে চলে গেল।
আদি অবাক হলো। বলল,
‘ নাইন হয় কেমনে? গুনে গুনে আটবার দেখা হয়েছে। নয় কিভাবে হয়?
ইশা গেইটের ভেতর ডুকে পড়ল। গেইট বন্ধ করে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।
আদি গাড়ির কাচ ভেদ করে গলা বের করে দিল। বলল,
‘ চলে গেল? নাইন কিভাবে হয় বলল না কেন? এমন মেয়ে আদি চৌধুরীর বড্ড অপছন্দ। অসহ্য। ইমির মতো হতে হবে। অপ্রয়োজনে না বললে ও প্রয়োজনে কথা বলতে হবে।
সে আওয়াজ করে গাড়ির দরজা ধপ করে বন্ধ করে দিল। গাড়ি যে পথে এসেছে সেইপথে আবার ঘুরিয়ে নিল।
ইশা গেইট সামান্য আলগা করে দিল। গলা উঁচিয়ে দেখল গাড়িটা ঠিক যে পথে এসেছে সেই পথে আবার ও ফিরে যাচ্ছে। সে অবাক হলো। বলল, আপনি কি সত্যিই আমার ডক্টর? মিষ্টির এত কাছে থেকে ও চিনতে পারলেন না? মিষ্টি কি তাহলে আইমির কাছে হেরে গেল? আইমি কি আপনাকে মিষ্টির চাইতে ও বেশি ভালোবাসে? এ প্রথম আপনার সাথে আমার মন কেমনের সন্ধ্যায় দেখা হলো। এই সন্ধ্যাটি আমার কাছে সবসময় স্পেশাল হয়ে থাকবে। আপনার ও কি থাকবে ডক্টর?
আদি গাড়ি চালাতে চালাতে ফোন বের করল। ফোন দিল আইমিকে। আইমি ফোন ধরার সাথে সাথে বলল,
‘ মিস করছেন নাকি ডক্টর আদি চৌধুরী?
আদি রাগ দমন করে হাসল। বলল,
‘ হ্যা। এই মন কেমনের সন্ধ্যায় আদির ইমিকে খুব বেশি মনে পড়ছে। খুব বেশি মিস করছে। তাই ফোন দেওয়া।
চলবে,
( আপনাদের মতামত জানাবেন)