#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৪
#পুষ্পিতা_প্রিমা
লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি। মাথার চুলগুলো হাতখোঁপা করা। একগাছি চুল এসে পড়েছে মেয়েটির মুখের সামনে। রান্নায় ব্যস্ত সে। যদি ও ডক্টর, মিনু আর সগির ছাড়া কেউ সে রান্না খায়না। বাইরে থেকে আসা খাবার খায়। মেয়েটির রান্নার কাজে সাহায্য করছে মিনু। বয়স চল্লিশের দিকে হবে। মেয়েটি ভালোবেসে ডাকে মিনুমা। মেয়েটি যখন রান্নায় ব্যস্ত তখন রান্নাঘরের দরজার সামনে এসে থেমে যায় ছেলেটি। মিনুকে দেখে থমকে যায়। আর এগোতে চায়না। কিঞ্চিৎ রাগ উঠে তার। হাতে তালুতে থাকা মিনি ডাক দেয় ‘ মিষ্টি।
আদি মিনি থেকে চোখ সরিয়ে তাকায় রান্নায় ব্যস্ত মিষ্টির দিকে। মিনু চমকে ফিরে তাকায়। মিষ্টি ফিরে তাকায় না। সে না ফিরেই বলে, মিনি,,, ডক্টরকে একা রেখে চলে এসেছ?
মিনি ডাকে, আদি, আদি।
মিষ্টি এবার ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে তাকায়। আদি আর মিনিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসে। বলে, মিনুমা তোমাদের সবাইকে দেখলে ডক্টর রেগে যায় কেন?
মিনু ভয়ে ভয়ে জবাব দেয়, যাদের আগে চিনত তাদেরকে দেখলেই এমনটা করে। যাদের চিনত না তাদের আপন করে নেয়।
ইশা জোড়াল শ্বাস নিল। মিনুর দিকে তাকিয়ে বলল, ডক্টর যখন ভালো হয়ে যাবে তখন সবাইকে চিনতে পারবে তাই না ?
মিনু খুশিতে বলে, হ্যা,কেন চিনবে না।
ইশা চোখে নিচে নামিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে বলে, সবাইকে চিনবে, শুধু আমাকেই চিনবে না।
আদি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন দেখল মিষ্টি তাকে আসতে বলছে না তখন সে রেগে গেল। ধমক দিয়ে মিনিকে বলল, মিনি যাও তুমি। আমার কাছে আসবে না।
মিনি আদির রাগ বুঝে গেল। মিষ্টি বলে ডেকে উড়ে মিষ্টির কাছে চলে এল। মিষ্টির কাধেঁ বসে আদিকে বকা দিল, আদি ব্যাড বয়। ব্যাড বয়।
আদি আর ও রেগে এল। মিষ্টি তার দিকে ফিরল কিন্তু কিছুই বলল না। মিষ্টি কয়েকদিন ধরে তার সাথে কম কথা বলছে। কম হাসছে। কিন্তু কেন?
আদির পাগলাটে মাথায় কিছুই ডুকে না। তার প্রচুর রাগ হয়। তার চোখের কোণায় রাগের আভাস দেখে মিনু ভড়কে যায়। চলে যাওয়ার জন্য তো আদির পাশ ঘেঁষে যেতে হবে। তা ও সাহস হচ্ছে না তার। আদি রাগলে প্রচন্ড ভয়ংকর দেখায়। কি না কি করে বসে। মিনু ভয়ার্ত গলায় বলে, ইশা মা দেখ তোর ডক্টরকে। কেমন রেগে আছে মনে হয়।
ইশা খুন্তি হাতে নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আবার আদির দিকে তাকায়। আদির চোখে চোখ পড়তেই তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নেয়। আবার কড়াইয়ে খুন্তি চালাতে চালাতে বলে, তুমি কিচ্ছু না বলে চলে যাও। শান্ত হয়ে যাবে।
মিনু তাই করল। যদি ও ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেল। আদির কাছাকাছি যেতেই সে দৌড়ে পালাল। আদি চোখমুখ কুঁচকে চেয়ে রইল মিনুর যাওয়ার দিকে । তারপর ধীরে ধীরে এসে দাঁড়াল ইশার পাশে। মিনি ডানা ঝাপটাল। মুখ ফিরিয়ে নিল আদির দিক থেকে। ডাকল, মিষ্টি গুড গার্ল। আদি ব্যাড বয়।
আদি মিনির উপর রাগ করল। সে মিনির সাথে কথা বলবে না বলে প্রতিজ্ঞা করল। কিন্তু যার মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করল সে ফিরে ও তাকাল না। পিছু গিয়ে ও দাঁড়িয়ে থাকল। ইশা ফিরতেই ধাক্কা লাগার আগে নিজেকে সামলাল। কিন্তু চোখ তুলে তাকাল না। আদির চোখেমুখে অসহায়তা ফুটে উঠল। মিনি,মিষ্টি দুজনই কি তার সাথে রাগ করে আছে? সে কি করেছে?
কন্ঠে বেশ আকুতি জানিয়ে সে ডাকল,মিষ্টি!
ইশা সাথে সাথে জবাব দিল,ঘরে যান আমি আসছি।
আদির মুখ কালো হয়ে গেল। সে তার জায়গা থেকে সরল না। দাঁড়িয়েই রইল। খানিকক্ষণ পর বেশ অভিমানী কন্ঠে বলল, মিষ্টি আমার রাগ উঠছে।
ইশা চুপ থাকল। কর্কশ কন্ঠে বলল, তো আমি কি করব? দেখছেন না কাজ করছি। আমি কি বসে আছি?
আদির এবার সত্যি সত্যি খারাপ লাগল। তার মুখটা দ্বিগুণ কালো হয়ে গেল। আর দাঁড়াল না। গটগট করে হেঁটে চলে গেল। ইশা একবার পিছু ফিরে দেখে আবার কাজে মনোযোগ দিল।
কিছুক্ষণ পর শোনা গেল জিনিস ভাঙচুরের আওয়াজ। ইশা স্টোভ বন্ধ করে দৌড় দিল। আলিয়ার মুখোমুখি হলো। আলিয়া ধমক দিল, আদির কি হয়েছে? তুমি কোথায় ছিলে?
ইশা আমতাআমতা করে বলল, ম্যাডাম আসলে আমি রান্নাঘরে,,,
আলিয়া আর ও জোরে করে বলল, তোমাকে আদির দেখাশোনার জন্য আনা হয়েছে। আদি যদি বাইরের খাবার না খায় তাহলে তার ব্যবস্থা আমাদের করতে দাও। এমন তো না যে আদি তোমার হাতের রান্না ছাড়া অন্যকারো রান্না খাবে না। রান্না করতে গিয়ে তুমি আদির দেখাশোনা করছ না। মনে রেখো এটা তোমার শ্বশুরবাড়ি নয়।
ইশা জবাব দিতে যাওয়ার আগেই আবার ও জিনিস ভাঙচুরের আওয়াজ ভেসে এল। ইশা দৌড়ে গেল। দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকতেই তার চক্ষুচড়কগাছ। পুরো রুমের বেহাল দশা। এই ছেলেটা আর কত জিনিস ভাঙবে?
ইশা দৌড়ে গিয়ে আদির হাত থেকে পানির জগটা কেড়ে নেয়। চিল্লিয়ে বলে, কি হয়েছে?
আদি লাল ফোলা চোখ নিয়ে তাকায় ইশার দিকে। চেয়ে থাকে শুধু। কিছু বলেনা। চোখের চাহনীতে খেলে যাচ্ছে একরাশ অভিমান আর অভিযোগ। ইশা দেখে ও যেন দেখল না। সে চাইছে না ডক্টরের জন্য আর মায়া বাড়াতে। চাইছেনা ডক্টরের মায়ায় জড়িয়ে যেতে। চাইছেনা আদি নামক ছেলেটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যেতে। তাই তো এত লুকোচুরি,এত অবহেলা। কিন্তু কাকে বুঝাবে সে? ডক্টর তো তার এত এত অবহেলা সহ্য করার ক্ষমতা রাখেনা। ডক্টর যে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়েছে মিষ্টির প্রতি। কে বুঝবে কার কথা?
ইশা ভাঙ্গা কাচগুলো কুড়িয়ে নেয়। আদির দিকে তাকায় না। রুম থেকে বের হওয়ার আগেই তার শাড়ির আচঁলে টান পড়ে। সে সাথে সাথে পিছু ফিরে। আদি তার শাড়ি হাতে পেঁচিয়ে মাথা নিচু করে দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ করে রেখেছে। ইশা শাড়ি ধরে টান দেয়। কিন্তু কোনো কিছুর নড়চড় হয়না। আদি বোধহয় তার সর্বশক্তি দিয়ে শাড়িটা টেনে ধরেছে। ইশা বিরক্ত হলো। সামনে চলে আসা এক গাছি চুল হাতের বাহু দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে ডক্টরের সামনে এসে দাঁড়াল। বলল, ছাড়ুন ডক্টর। এগুলো কি ধরণের বাচ্চামো?
আদির নাক কেঁপে উঠল। ইশা অবাক হলো। ডক্টর কি কাঁদবে?
আদি চুপ থাকল। ইশার দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ পর বলল,মিষ্টি তোমার চুলগুলো বেঁধে দেই? তোমার আর রাগ উঠবে না আর।
ইশা অবাক হলো। এ ছেলেটা আসলে কি? সে না, না করে উঠল। বলল, দরকার নেই। শাড়ি ছেড়ে দিন।
আদি তাড়াহুড়ো করে শাড়ি ছেড়ে দিল । ইশার পিছু গিয়ে তার চুলে আটকে থাকা ক্লিপটা হাতে নিয়ে নিল। চুলগুলো ছেড়ে দিল। বলল,মিষ্টি নড়বে না।
ইশা বিস্ময় চোখে নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকল। আদি উলটপালট করে চুলগুলো মোচড়াল। ক্লিপ আটকে দিল। ইশাকে সামনে ফিরিয়ে চুলগুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুজে দিতে দিতে বলল, মিষ্টি তোমাকে সুন্দর লাগছে। কানের পেছনে আদির হাতের স্পর্শ পেয়ে শক্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল ইশা। সরাসরি তাকাল ডক্টরের চোখের দিকে। আদি খুশি হলো। ইশার চুলগুলো ভালোকরে কানের পেছনে গুজে দিতে দিতে বলল,মিষ্টি তুমি রাগ করে থেকোনা আর। আমার রাগ হয়। কষ্ট হয়। তুমি আমাকে ভালোবাসোনা মিষ্টি।
ইশা হঠাৎই চমকালো একটি শব্দে। সে শব্দটিতে আটকে গেল। আনমনে উচ্চারণ করল,ভালোবাসা? আদি তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মিষ্টি যাতে না সরে তাই চুলগুলো একবার সামনে আনল আরেকবার কানের কাছে গুজে দিতে লাগল। আনন্দে সে হেসে উঠল। কিন্তু ইশা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকল আদির দিকে। ডাকল, ডক্টর।
আদি জবাব দিল, হু।
ইশা চোখের কোণায় খানিকটা জল নিয়ে বলল, আপনি আমায় ভালোবাসেন ডক্টর?
আদি চুল নিয়ে খেলা করতে করতে জবাব দেয়,খুব।
ইশা নিঃশব্দে হেসে উঠে। যে ভালোবাসার সংজ্ঞাটা ও বুঝে না সে নাকি ইশাকে ভালোবাসে?
তারপর ও ইশার কেন জানি খুশি লাগল। পরক্ষণে সে চুপ হয়ে গেল,আদির প্রশ্নে।
‘ তুমি আমায় ভালোবাসো না মিষ্টি?
ইশা চোখ সরিয়ে নেয় তাড়াতাড়ি আদির চোখ থেকে। নির্বোধ চোখদুটোতে ও কেন সে চোখ রাখতে পারেনা? আদির প্রশ্নবোধক দৃষ্টি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করল ইশা। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ল রুম থেকে। আদির খারাপ লাগল। তারমানে মিষ্টি তাকে ভালোবাসেনা। সেজন্যই কথা বলেনা।
ইশা নীরবে কাঁদল কিছুক্ষণ। ডক্টরের প্রশ্ন তার কানে বাজতে লাগল। সে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল, আমি কি ভালোবাসি ডক্টরকে?
যদি ভালোই না বাসি তাহলে কিসের এত টান ডক্টরের প্রতি। কিসের এত মায়া। কিসের এত মুগ্ধতা। কিসের এত চিন্তা। কেন এত হারানোর ভয়? ইশা নিজেই নিজের উত্তর খুঁজে পায় না। ইশা চিন্তায় বিভোর। আর অন্যদিকে ডক্টর অভিমানে টুইটুম্বুর।
___________________
রাত পৌনে এগারোটা। লাইট অফ করলে ঘুমাতে পারে না আদি। অন্যদিকে লাইট অন থাকলে ইশার ঘুম আসেনা। বিছানার উপর এলোমেলো হয়ে ঘুমোচ্ছে আদি। ইশা নিচে বিছানা করে শুয়েছে মাত্র। নিচে ঘুমাতে তার কয়েকদিন অসুবিধা হলে ও এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। হঠাৎ তার কোনো একটা কাজের কথা মনে পড়ল। ধড়ফড়িয়ে সে বিছানা থেকে উঠে পড়ল। ধীর পায়ে হেঁটে সে লক করা ওয়ারড্রবের ড্রয়ারটার কাছে গেল। মিনুমাকে দিয়ে আলিয়া চৌধুরীর ঘর থেকে নিয়ে আসা চাবিটা দিয়ে লক খুলল। বহুদিন বন্ধ থাকায় ড্রয়ারটা খুলতে বেশ বেগ পেতে হলো তাকে। ড্রয়ার খুলতেই তার মুখে একটুখানি হাসির ঝলক দেখা দিল। হাত বাড়িয়ে নিল একটি অ্যালবামের দিকে । অ্যালবামে উপর লেখা আদি চৌধুরী। ইশা কৌতূহলবশত অ্যালবাম হাতে নেয়। কয়েক পাতায় যে ছেলেটার ছবি দেখল সে চিনল না। তাড়াহুড়ো করে আর ও কয়েক পাতা উল্টাতেই আজিজ চৌধুরীর পাশে পান্জাবী পড়া ছেলে দুটোকে দেখতেই হুশ ফিরল ইশার। তারমানে একটা ডক্টর আরেকটা ডক্টরের ভাই। ইশা আবার ও প্রথম পৃষ্ঠার ছবিগুলো দেখল। চোখে সানগ্লাস দেওয়া বেশ অন্যরকম ভঙ্গি নিয়ে সমুদ্রসৈকতে, বাইকে, জিপে বসা ছেলেটি ডক্টর। ছবির ডক্টর আর এই ডক্টরের মাঝে আকাশপাতাল তফাত। ইশা ছবিগুলো দেখে ঘুমিয়ে থাকা ছেলেটির মুখের দিকে একবার তাকাল। বহুকষ্টে একটু হাসল। অ্যালবামের পাতা উল্টাতে উল্টাতে তার চোখ আটকে গেল আর ও একটি ছবিতে। সে চেয়ে রইল অশ্রুসিক্ত নয়নে সেই ছবিটার দিকে। সে টের ও পেলনা, কখন তার চোখ থেকে টুপ করে জল পড়ে গেল আ্যালবামের পাতায়। ছবিটাতে মেয়েটি মাথা রেখেছে ছেলেটির কাঁধে। ছেলেটি হাসিমুখে কোথাও যেন ঢিল মারতে ব্যস্ত। ইশা চট করে চোখমুছে নিল। হাসিমুখের ছেলেটির ছবির দিকে তাকিয়ে জবাব দিল, এ তো আমার ডক্টর নয়। মেয়েটা তাহলে আইমি। আর ওনি আইমির আদি। আমার ডক্টর নয়।
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল ইশা। আলব্যামটি তার জায়গায় রেখে আওয়াজ করে ড্রয়ারটি বন্ধ করল সে। কাগজ কলম নিল ওয়ারড্রবের উপর রাখা কলমদানি থেকে। কাগজটি চারটুকরো করল, তিন টুকরো ফেলে দিল। অন্য এক টুকরোটিতে লিখে ফেলল, কাঁচা হাতের কিছু অভিমান্য শব্দমালা। কি লিখল সে নিজেই জানেনা। লিখে কাগজের টুকরোটি সে ড্রয়ার থেকে ওই আলব্যামটির নিয়ে একটি ছবির নিচে রেখে দেয়। তারপর আবার আগের মতো রেখে দিয়ে ড্রয়ারটি লক করে দেয়। জোড়াল শ্বাস নিয়ে সাথে সাথে তাকায় ঘুমন্ত ছেলেটার দিকে। এতক্ষণে জমে থাকা চোখের খানিকটা জল দুফোটা হয়ে গড়াল তার । পাশে বসে ছেলেটির ঘুমন্ত মুখটার দিকে চেয়ে রইল সে নির্নিমেষ। কি সুন্দর তার মুখশ্রী। কি মায়া জড়ানো তাতে। এই মায়াতে তো ডক্টরের মিষ্টি বহু আগেই জড়িয়ে গিয়েছিল। সে কি বিয়েতে এমনএমনি রাজী হয়েছে? একটা পাগলকে কি কেউ এমনিএমনি বিয়ে করতে রাজী হয়? এক মন কেমনের বৃষ্টির সময় ডক্টরের সাথে তার প্রথম দেখা। এই পাগলা ডক্টরটির গায়ে সেদিন ছিল সাদা শার্ট। ডক্টর ভিজে চুপচুপে হয়ে গিয়েছিল সেদিন। কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চুলগুলো। চোখেমুখে তখন প্রগাঢ় গাম্ভীর্য। তার চোখের ভাষা মন কেমন করা। আর সাথে ডক্টরের মিষ্টির ও একই অবস্থা । বিষয়টা কাকতালীয় হলে ও পরপর ছয়বার দেখা হয়েছিল তার সাথে ডক্টরের। কয়েকবার সে বাসা থেকে বের হওয়ার পর ও দেখেছে। কিন্তু তখন লুকিয়ে থেকেছে। ডক্টরের সাথে কেন সবসময় মন কেমন করা বৃষ্টির সময় দেখা হয়? কেন মন কেমন করা অনুভূতিতে তলিয়ে যেতে হয়? ডক্টরের চোখে কি কোনো যাদু আছে, সেই চোখে চোখ রাখলেই কেন মন কেমনের বৃষ্টিরা ঝুপ করে নেমে আসে। বৃষ্টিরা কি তখন খুশি হয়? নাকি কোনো এক হারিয়ে যাওয়া প্রেমকাহিনী রচিত করতে আসে? হারিয়েই যখন যাবে এত রচনা করতে কে বলে?
এই রচিত প্রেমকাহিনীতে যে মিষ্টি বড্ড বাজেভাবে ফেঁসে গিয়েছে। সে অনুভব করতে পারছে এই সপ্তম দেখায় ডক্টরের প্রেমে সে আটকে গিয়েছে। সে সত্যি সত্যি ডক্টরকে ভালোবেসে ফেলেছে। নাহলে অন্য একটা মেয়ের সাথে ডক্টরকে দেখলে কি তার কষ্ট হয়? তার বুকে জ্বালাপোড়া করে? তার চোখের নোনাজল বেয়ে পড়ে। মিষ্টি কি অতটাই নরম মনের? মিষ্টির চোখের জল কি অতটাই সস্তা?
এলোমেলো ভাবনার সুতো ছিড়ে ছেলেটির গরম নিঃশ্বাস তার হাতে পড়ায়। ছেলেটি তার হাত চাপা দিল মাথার নিচে। ঘুমোনোর ভঙ্গি দেখে তার মনে হলো ডক্টর বেশ আরামে ঘুমোচ্ছে? ইশা বেশ মিষ্টি করে হাসল। আস্তে করে ডাকল, ডক্টর?
রাতের নৈঃশব্দ্যে আওয়াজটি মিনির কানে চলে গেল। সে তার নীরবতা ভেঙ্গে ডেকে উঠল, ডত্তর?
ইশা চমকে উঠল। তার হাসি পেল। বলল, মিনি তুমি শুনে গিয়েছ?
মিনি ডাকল, মিষ্টি, আদি।
ইশা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মিনির দিকে তেড়ে এল। বলল, শাটআপ মিনি। ডক্টর ঘুমোচ্ছে।
মিনি যেন রাগ করল। ঠোঁট দিয়ে পায়ে ঠোকর দিয়ে আস্তে করে বলল, মিষ্টি ব্যাড গার্ল।
ইশা হাসল। ঘুমন্ত ছেলেটার মুখপানে একবার চেয়ে তারপর নিজের বিছানায় এসে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল । নানান কল্পনা জল্পনায় সে নিজে নিজেই আনমনে হেসে উঠল। ডক্টরের ছোঁয়া হাতটার দিকে তাকিয়ে বলল, হাতটা ধরে রাখলে খুব ক্ষতি হতো না ডক্টর।
সে চোখবন্ধ করে অনুভব করে ডক্টরের
প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসের মৃদু মৃদু আওয়াজ। ডক্টরের প্রত্যেকটা স্পর্শের মৃদুমন্দ অনুভূতিগুলো নাড়াচাড়া দিয়ে তার ছোট্টমনে। ভুলে যায় সে একজন রক্ষিতা। নতুন করে তার মনে বাসা বাধেঁ ভালোবাসা নামক ছোট্ট দুষ্টু পাখিটি। যে প্রতিনিয়ত ডাকে, ডক্টর,ডক্টর ।
ইশা হেসে কুটিকুটি হয়ে ঘুমাতে গিয়ে ও ঘুমোয় না। মাঝরাতে মেঝেতে পড়ে থেকে তার ঘুম আসেনা। কাঁথা গায়ে দিতেই সে ভয়ে চমকে উঠে। ওমাগো বলে চিৎকার দেওয়ার আগেই তার দিকে বালিশ ছুড়ে মারে ছেলেটি। ঝিমুতে ঝিমুতে বসে থাকে মেঝেতে। ঘুম ঘুম জড়ানো কন্ঠে ডাকে, মিষ্টি।
ইশা অবাক হয়ে উঠে বসে। বলে,ডক্টর আপনি এখানে কেন? আজকে ও কি শুরু করেছেন?
আদি শোনেনা ইশার কথা। চোখবন্ধ অবস্থায় রাগ নিয়ে বলে, সরো।
ইশা ভয়ে চট করে সরে পড়ে। চাদর পেরিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। ইশা সরতেই আদি ধরাম করে শুয়ে পড়ে। তার একজনের জন্য করা বিছানায় আদি পুরোটা জুড়ে শুয়ে পড়ে। আবার ও জড়ানো কন্ঠে বলে,মিষ্টি ঘুমাও।
ইশার কান্না পেল। সে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,আপনি নরম বিছানা ছেড়ে এখানে কি করছেন ডক্টর? আমি কোথায় ঘুমোবা?
আদি উত্তর দিল না। ইশার রাগ দ্বিগুণ হলো। বলল, ডক্টর উঠুন,এই ডক্টর।
ডক্টর তৎক্ষণাৎ ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে বোধহয়। ইশা আদির মুখের কাছে গিয়ে ডাকল, ডক্টর উঠুন।
তারপর ও আদি উঠেনা। ইশা এবার গায়ে ঠেলে ডাকে,ডক্টর খাটে উঠুন। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
আদি কান্না কান্না ভাব নিয়ে উঠে বসল। অসহায় হয়ে চেয়ে রইল ইশার দিকে। বলল,মিষ্টি আমার ও খুব ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু তুমি ঘুমোতে দিচ্ছ না।
ইশা চোখ ছোট ছোট করে বলল,আমি কিভাবে?
আদির সগতোক্তি, ‘ তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় কোথায় চলে যাচ্ছ তাই আমার ঘুম আসছে না।
ইশা মাথায় হাত দিল। বলল, আমি এখানেই আছি। এই রুমে। আদি আবার ধপ করে বালিশে মাথা রাখল। বলল,তুমি ও এই বালিশে আমার মত মাথা রাখো।
ইশা অবাক হলো আবার। সে খানিকটা উঁচু আওয়াজে বলল, এসব কি কথা ডক্টর? একবালিশে দুজন ঘুমাতে পারে নাকি? আপনি উপরে উঠুন। আমি এখানেই ঘুমোবো।
আদি নাছোড়বান্দা। ইশাকে টেনে বালিশে ফেলে দিল। বালিশে মাথাটা রেখে বলল, এভাবে থাকো মিষ্টি। আই প্রমিজ তোমাকে আমি আর ডিস্টার্ব করব না।
ইশা বাকরুদ্ধ। আর কিছু তাকে বলতে দেয়না আদি। নিজেও কিছু বলেনা। ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়। হাতে পেঁচিয়ে রাখে ইশার শাড়ির আঁচল। ইশা আদির বোকা বোকা কাজ দেখে লুকিয়ে হাসে। কনুইয়ে ভর দিয়ে খানিকটা গলা উঁচিয়ে আদির মুখের দিকে তাকায়। আদি ঘুমোচ্ছে ভ্রু কুঁচকিয়ে। রেগে। ইশার সত্যি হাসি পেল। মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে রইল আদির ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে। নিজে নিজে হাসল। ছেলেটির কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কপালের একপাশে আনমনে একেঁ দিল এই প্রথম ভালোবাসার স্পর্শ। এই প্রথম। তারপর নিজে নিজেই লজ্জায় লাল নীল হলো। পাশ ফিরে ঘুমানোর জন্য চোখ বুঝল। কানে বেজে উঠল ছেলেটার মৃদুমন্দ হৃৎস্পনন্দের আওয়াজ। এক মন কেমন করা অনুভূতিতে তলিয়ে তলিয়ে যেতে যেতে তার পুরো রাতটাই নির্ঘুম কাটল। পুরো রাতটায়।
_______________
সোফায় হেলান দেওয়া ছেলেটি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ইশার দিকে। তাদের বাড়িতে নতুন মেয়েটি কে হতে পারে তার ভাবনার বাইরে। ছেলেটি আদির বড় ভাই। বড়লোক বাপের ছেলে দাম্ভিক, অহংকারী। মদ খেয়ে পড়ে রয়েছে সোফায়। আজিজ চৌধুরীর কোনো কথায় তার কান নেই। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে দেখা মেয়েটি কে? আজিজ চৌধুরী ধমকে জিজ্ঞেস করলেন, বাড়িতে আসার সাথে সাথে তুমি মাতলামি শুরু করেছ আফি?
আফি হেসে উত্তর দিল, বাবা প্লিজ আমি ছোট নেই। এভাবে ধমকাবে না।
আজিজ চৌধুরী আবার জিজ্ঞেস করলে,তুমি রাইনার গায়ে হাত তুলেছ?
আফি এবার হো হো করে হাসল। বলল, মেরে ফেলিনি এটাই বেশি।
আজিজ চৌধুরী এবার বেশ রেগে গেলেন। বললেন, তোমার জন্য আদি মদ খাওয়া শিখেছে। এখন ও যদি আবার এসব মদ খাওয়ায় অভ্যস্ত হয় চিরদিনের জন্য হারাব আমরা ওকে। ভাইয়ের জন্য এতটুকু দরদ তোমার নেই আফি?
আফি রাগ দেখিয়ে বলল, কে আমার ভাই? আদি আমার ভাই নয়। আমি আদির ভাই নয়
আমি কেউ নয় এ বাড়ির। পালিত সন্তান আমি। তোমাদের সন্তান হচ্ছেনা দেখে আমাকে দত্তক নিয়েছ। আর যখন ছেলে হয়েছে আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছ। বেশ হয়েছে আদি পাগল হয়ে গেছে। এটাই হওয়ার ছিল।
আজিজ চৌধুরী গর্জন করে ডাকে, আফি? মুখ সামলে কথা বলো। তোমাকে কখন ছুড়ে ফেলেছি আমরা। তুমি যা পেয়েছ আদি ও তা পেয়েছে। আদিকে এর চাইতে বেশি কিছু দিই নি আমি। আমার পুরো মালিকানার উপর তোমাদের দুইজনেরই সমান সমান অধিকার। তারপরে ও তুমি কি করে ওসব কথা বলতে পারো?
আফি কান দেয় না আজিজ চৌধুরীর কথায়। বলে, ওই মেয়েটা আদির বউ নাকি?
বলতে না বলতেই হো হো করে হাসে সে। আজিজ চৌধুরী বলে, বউ নয় রক্ষিতা।
আফি বাঁকা হেসে উঠে। হাতের তালু একটি অপরটির সাথে ঘষতে ঘষতে উঠে দাঁড়ায়। বলে,দেখতে হবে তো ।
আজিজ চৌধুরী শান্ত কন্ঠে রাগ দেখিয়ে বলে, মেয়েটার কোনো ক্ষতি করবেনা। আদিকে না হয় সুস্থ করে তোলা যাবে না। তুমি নোংরামি বাসার বাইরে গিয়ে করো।
আফি হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে। রাইনা তাকিয়ে দেখে আফির হাসি। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে বলে,ছিঃ।
হাসির আওয়াজ শুনে ইশা উপর থেকে তাকায় আফির দিকে। মিনুকে বলে,মিনুমা উনি এভাবে হাসছে কেন? ডক্টরের মতো ওনার ও কি কোনো রোগ আছে?
মিনু ঘৃণা নিয়ে বলল, মদ গিলেছে তাই অমন করছে। তোর ডক্টরকে সাবধানে রাখবি এই ছেলের থেকে,কখন না মদ ছোঁয়ায়।
ইশা না বলে উঠে। ডক্টর যদি মদ ছুঁই তাহলে ব্ল্যাক আউট হবে। আবার নেশা হবে। না পেলে পাগলামি করবে। উত্তেজিত হবে। ডক্টরের বারণ আছে এসব খাওয়ার। উনি কয়দিন থাকবে মিনুমা?
মিনু দায়সারা ভাবে বলে, বাড়ি তার, তার মর্জি। বাড়ির বড় ছেলে বলে কথা?
ইশা চিন্তায় পড়ে গেল। মনে পড়ল ডক্টরের ঔষধ খাওয়ানোর সময় হয়েছে। সে গিয়ে দেখল আদি বিছানায় মিনিকে নিয়ে বকবক করতে ব্যস্ত। ঔষধ খাওয়াতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয় ইশাকে। তাই সে ডক্টরেরর বিপরীত দিকে বসে পড়ল। ডক্টরের মতো মুখে দুহাত দিয়ে বসে রইল। বেশখানিক্ষণ পর আদি তাকাল ইশার দিকে। আবার মাথা নামিয়ে মিনিকে খাওয়াতে লাগল। ইশা ডাকল, ডক্টর?
আদি জবাব দিল,হু।
ইশা আবার ও ডাকল, ডক্টর?
আদি মাথা নামানো অবস্থায় জবাব দিল, হু।
ইশার দুষ্টুমি করতে ভালোই লাগল। সে আবার ডাকল, ডক্টর?
আদি মিনিকে খাওয়াতে খাওয়াতে আবার জবাব দিল, হু।
ডক্টর?
হু
ইশা হো হো করে হেসে দিল। আদি জবাব দিল,
হু।
ইশা হাসি থামাতে পারল না। আদি চেয়ে রইল ইশার হাসির দিকে। আদির চোখে চোখ পড়তেই কমতে লাগল ইশার হাসি। ডক্টরের তাকানো দেখে মনে হচ্ছে, একদম একজন সুস্থসবল স্বামী তার স্ত্রীকে দেখছে। ইশার লজ্জা লাগল হুট করে। বলল,কি?
আদি ইশার নাক ছুঁয়ে দেই। বলে, তোমার হাসিটা খুব সুন্দর। তুমি আবার হাসবে মিষ্টি?
ইশা চোখ সরিয়ে নিচে তাকায়। লজ্জা কাটাতে চিৎকার দিয়ে উঠে। বলে, ডক্টর ঔষধ খাবেন এখন। কেমন?
আদির মুখ কালো হয়ে গেল সাথে সাথে। বলল, মিষ্টি আমার কষ্ট হয় ঔষধ খেতে। তুমি কষ্ট দেবে?
ইশার হাসি পেল। মনে মনে বলল, বাহঃ ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল?
ইশা বলল, আমি রাগ করব আপনার সাথে। ঔষধ খেয়ে নিন। দেখবেন মিনি ডাকবে গুড বয়। সাথে আমি ও। আদি মাথা নেড়ে বলে, না, না মিনি গুড বয় ডাকবে। তুমি গুড বর ডাকবে। ঠিকআছে মিষ্টি?
ইশা অবাক হয়ে হাসল। বলল, ব্রিলিয়ান্ট ডক্টর!
আদি মাথা চুলকে বলল,কিন্তু আমি ঔষধ খাব না মিষ্টি। কিছুতেই না।
ইশা জেদ ধরল। বলল, খেতেই হবে। না খেলে আপনি সুস্থ হবেন কি করে? আর সুস্থ না হলে আপনি আমাকে মনে,,,,
ঘন কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায় ইশার মুখ। আর কিছুই বলতে পারেনা সে। মনে হলো তার দুচোখ হঠাৎ ভিজে উঠল। এক অনির্বচনীয় যন্ত্রণায় সে কাতর হলো। টলমলে চোখ নিয়ে তাকাল আদির দিকে। আদি ততক্ষণে বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটি ফেলে দিল, চেঁচিয়ে বলল, আমি ঔষধ খাব না মিষ্টি।
ইশা তাকাল আদির মুখের দিকে। থমথমে গলায় বলল, আমি ও চাইনা আপনি সুস্থ হন। আপনি আমায় ভুলে যাবেন সুস্থ হলে। আমি ডক্টরকে হারিয়ে ফেলব। আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলব ডক্টর।
খুশিতে আদির চোখ চকচক করে উঠল। বলল,আর কখনো ঔষধ খাব না মিষ্টি। তুমি বলবে না আর প্রমিজ করো।
ইশা অবাকচোখে তাকায়। খুশিতে ঝলমল করে উঠা আদির মুখপানে চেয়ে হঠাৎই ডুকরে কেঁদে উঠে সে । আদি অবাক হয়। ইশা কান্না চেপে রাখতে গিয়ে আবার ও কাঁদে। আদি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,কেন কাঁদছ মিষ্টি? তুমি রাগ করেছ? ঠিক আছে আমি ঔষধ খাব।
ইশা কাঁদতে কাঁদতে মুখের বেহাল দশা বানায়। আদি চেয়ে থাকে ইশার মুখের দিকে। দৌড়ে গিয়ে অন্য গ্লাস নিয়ে এসে বলে,ঔষধ দাও মিষ্টি।
ইশা চমকে চোখ তুলে তাকায় ডক্টরের দিকে। আদি তার সামনে এসে বসে। দুহাত দিয়ে মুছে দেই ইশার ভেজা গাল। ইশার গাল আবার ও ভিজে উঠে। শব্দহীন পড়তে থাকে জল। আদি মুছে দিতে দিতে বলে,আমি আর রাগ দেখাব না মিষ্টি। তুমি আর কেঁদো না।
ইশা তার মুখ আগলে ধরা আদির হাত নিজের হাত দিয়ে ধরে বলে,ডক্টর আমি এজন্য কাঁদছিনা।
আদি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। ইশা আবার ও কেঁদে দিল। বলল,আপনি আমাকে ভুলে যাবেন ডক্টর। আমাকে তখন দূরে ঠেলে দেবেন। মিষ্টি নামক কোনো মেয়ের চিহ্ন থাকবে না আপনার জীবনে।
আদি কিছুই বুঝল না। ইশা তার পেছন থেকে ঔষধের বক্স থেকে ঔষধ বের করল। টপটপ জল পড়ল ঔষধের পাতায়। ইশা কোনোমতে আদির সামনে ঔষধ বাড়িয়ে দিল। ক্ষীণ কন্ঠে কান্নামাখা কন্ঠে আওয়াজ করে বলে, খেয়ে নিন।
আদি ইশার মুখের দিকে তাকিয়ে ঔষধ খেয়ে নিল। গ্লাসটি রেখে দিল। ইশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি এখন ও কাঁদছ মিষ্টি?
ইশা হিঁচকি তুলে কাঁদল। আচমকা জড়িয়ে ধরল আদিকে। কান্নায় ভাসাল বুক। কেঁদে কেঁদে বলল, আপনি জানেন ডক্টর আমি আপনাকে কিসের ঔষধ খাইয়েছি?
আদি ইশাকে দুহাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে জানতে চাইল। ইশা বহুকষ্টে এক নিঃশ্বাসে বলে দিল, আমাকে ভুলে যাওয়ার ঔষধ খাইয়েছি ডক্টর। আপনি ধীরে ধীরে আমায় ভুলে যাবেন। মিষ্টি নামক মেয়েটি আপনার স্মৃতির পাতায় ধোঁয়াশা থেকে যাবে। ধোঁয়াশা হতে হতে হয়ত একদিন চিরতরে মুছে যাবে । আপনার মনে, হৃদয়ে, জীবনে আইমি নামক মেয়েটি ছিল,আছে ও, থাকবে ও। আমি খানিকক্ষণের জন্য এসেছি আপনার জীবনে। আবার চলে যাব।
আদি ইশার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল। জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ইশার পিঠের কাছে তার হাতে শাড়ির আচঁল পেঁচিয়ে ফেলল। খুশিতে বাকুমবাকুম হয়ে বলল,কেঁদো না মিষ্টি। আমি তোমার শাড়ি আমার হাতে পেঁচিয়ে রাখব। তুমি কোথাও যেতে পারবে না। ঠিক বলেছি না?
ইশা তার চোখ মুছে দিল আদির পান্জাবীতে। চোখদুটো চেপে ধরল আবার ও আদির কাঁধে। আদি চুপটি মেরে বসে রইল। শাড়িটা আর ও ভালোভাবে আঙুলে পেঁচিয়ে বলল, আমি তোমাকে ছাড়ব না মিষ্টি। তুমি ছেড়ে দিলে মেরে ফেলব তোমাকে। আমি ও মরে যাব তোমার সাথে। ভালো হবে না?
চলবে,
( আপনাদের মতামত জানাবেন)