#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_26( উচিত জবাব)
_______________________
” কিরে ছোটো , তাহরিম বাবা এইডা কাকে বিয়ে করে আনছে ! না আছে রুপ আর না আছে গুণ , দেখতে তো পুরা হিন্দু দেবী মা কালীর মতো , আদব কায়দা ও তো মনে হয় না আছে আর দেখ আমার মেয়ে নাতাশা কে , দেখতে যেমন মাশা আল্লাহ , গুণেও তেমন , এক কথায় রুপে লক্ষি আর গুণে স্বর সতী ”
তাহরিম বেশ অনেকক্ষণ আগেই উঠে নিজের রুমে চলে গেছে ,
রান্না ঘর থেকে চা নিয়ে আসতে আসতে ই কথা টা কানে ঠেকলো আমার , আমি সেকেন্ড এর জন্য থমকে গেলাম , পরবর্তী তে মুচকি হেসে ওনাদের সামনে গিয়ে টি টেবিলে ট্রে টা রেখে উঠে দাড়িয়ে বড় চাচি মানে ওই আন্টি কে উদ্দেশ্য করে বললাম ,
” আপনি ঠিক ই বলেছেন চাচি আম্মা সরি আন্টি , কি বলুন তো ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি মায়ের গুণে মেয়ে হয় , আর আপনি তো আমার চাচি মানে মায়ের মতো তাই আমি ও আপনার মতোই হয়েছি , এই যে দেখুন আপনার গায়ের রং আর আমার গায়ের রং এ পার্থক্য থাকলেও কিছু টা তো মিলে যায় ,
কিছু টা খেয়াল করে ,
এমা আন্টি আপনি তো দেখা যায় আমার থেকে ও বেশি কালো , আমি তো তাও ব্রাউন ব্রাউন শেড আসে আপনার তো ব্ল্যাক এন্ড ব্ল্যাক ”
বলেই মুখ টিপে হাসলাম , আমার কথা শুনে উনি চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন এই মুহূর্তে আমার মুখ থেকে এমন কিছু শুনবে বলে কল্পনা ও করে নি ,
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তানজিমের দিকে তাকালাম ,
ও আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে ,
” আর কি যেন বললেন , আপনার মেয়ে বাতাসা..
চাচি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালে আমি বেক্কেল মার্কা হাসি দিয়ে বললাম ,
” হে হে সরি নাতাশা , আপনার মেয়ে নাতাশা রুপে লক্ষি!
আমি নাতাশা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে বললাম ,
” কিন্তু আমরা তো মনে হচ্ছে আপনার মেয়ে মুখে কয়েক কেজি আটা ময়দা মেখে আসছে , কারা মেক আপ করে জানেন? যারা নিজের চেহারা নিয়ে সন্তুষ্ট না , তাদের মতে তাদের চেহারা আলাদা প্রলেপ দিলে হয়তো তাদের সুন্দর লাগবে , যার ফলে আসল সৌন্দর্য টাই মেক আপ এর আস্তরণের নিচে চাপা পড়ে যায় , আসলে তারা নিজেকেই ভালোবাসতে পারে নি , ন্যাচারাল সৌন্দর্য কি আটা ময়দা মেখে হয় চাচি আম্মা ? যা হোক পরে আসি গুণের কথায় , গুণের কথা আর কি বলব বলেন! আপনার মেয়ে বাতাসা আই মিন নাতাশার তো মিনিমাম ভদ্রতা টুকু ও নেই , যেখানে আপনি , আমার শাশুড়ী মা বসে আছে সেখানে একটা বয়সে ছোট মেয়ে কিভাবে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে পারে ? ”
কথা গুলো বলে আমি মুচকি হাসলাম ,
আমি ট্রে থেকে এক কাপ চা নিয়ে চাচি আম্মার সামনে গিয়ে দাড়ালাম ,
” আপনি যদি মনে করে থাকেন, আমাকে অপমান করে পার পেয়ে যাবেন তাহলে আপনার ধারণা টা সম্পুর্ন ভুল, আমার প্রতিটি জিনিস খুঁটিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা আছে ”
আমি চা টা নিয়ে চাচি আম্মার দিকে নিয়ে বললাম ,
” নেন চাচি আম্মা সরি আন্টি, আপনার মেয়ের হাতের চা টা খেয়ে দেখেন তো কেমন হয়েছে ? ”
উনি ঠাস করে দাঁড়িয়ে রাগে ফোস ফোস করতে করতে শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন ,
” ছোটো তোর সামনে বাইরের একটা বাইরের মেয়ে আমাদের এতো গুলো কথা শোনালো আর তুই কিছু ই বললি না! বসে বসে তামাশা দেখেছিস ? ”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকালাম , উনার ঠোঁটের কোনে সূক্ষ্ম হাসির রেখা বিদ্যমান, আর কেউ খেয়াল না করলেও আমি ঠিক ই খেয়াল করেছি ,
শাশুড়ী মা দাড়াতে দাঁড়াতে বলল,
” এখানে তোমার আর পূর্ণার মাঝে কথা হচ্ছে আমি কেন থার্ড পার্সোন হয়ে তোমাদের কথার মাঝে ঢুকবো আপা ? ”
বলেই উনি ফুল কলিকে ডাকতে ডাকতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো ,
চাচি আম্মা আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নাতাশার উদ্দেশ্যে বললেন ,
” এতো অপমান সহ্য করে এখানে আর থাকা যাবে না , তুই এখনো বসে আছিস কেন উঠ , আজ তোর বাপের কাছে যদি না বলেছি তার ভাতিজার বউয়ের অপমান তাহলে আমার নাম ও নিলাশা না , চল ”
নাতাশা বসা থেকে উঠতে উঠতে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল ,
” মাম্মি , তাহরিম কোথায় ? ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাবো তো ”
চাচি আম্মা ওর হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলো ,
ওরা যাবার পর আমি নাতাশা কে কেপি করে বললাম ,
” মাম্মি , মাম্মি , তাহরিম কোথায় ? ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাবো তো , এহহহ নেকা ষষ্ঠী ”
” ওফফ ভাবি জান পুরা ফাটিয়েই ফেলেছো , তোমার তো ওইটা মুখ না আস্ত বুলেট ”
বলেই আমরা দুজন হেসে হাইফাইভ করে পিছনে তাকাতেই দেখি ,
তাহরিম বুকের উপর দু হাত গুজে ভ্রু বাঁকা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে ,
আমি আর তানজিম দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচু করে ইশারাই জিজ্ঞেস করলাম , ” কি? ”
আবার দুজন ই ঠোঁট উল্টে সামনে তাকালাম ,
তাহরিম এগিয়ে এসে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে চারদিকে গোল করে এক বার রাউন্ড দিয়ে বলল ,
” আর কি কি করার বাকি আছে আপনাদের? এক পাগলের জ্বালায় এত দিন হাফ পাগল ছিলাম এখন মনে হচ্ছে আমার নিজের ই পাবনা মানসিক হসপিটালে কেবিন বুক করা লাগবে কারণ আমার পুরো পাগল হতে বেশি সময় বাকি নেই ”
বলেই হাটতে হাটতে বাড়ির বাইরে চলে গেলো ,
” এতো রাতে তোমার ভাই কোন বউয়ের সাথে দেখা করতে বাইরে গেলো ? ”
আমার কথায় তানজিম হু হা করে হেসে বলল ,
” কুশন ভাইয়ের সাথে গেছে , কুশন ভাই বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো ”
” ওহ , কিন্তু এখন তো ডিনার টাইম ”
” আরে এসে যাবে , দেখলে না একটা থ্রি কোয়ার্টার পেন্ট আর টি শার্ট পড়ে গেলো , মেইবি ফাইল আনতে গেছে , ভাবি জান অনেক খুদা লাগছে , টেবিলে খাবার দাও না ”
আমি অবাক হয়ে বললাম ,
” আমি ? ”
” তা নয়তো কি , তুমি না বাড়ির বড় বউ আর আমার কিউট সুইট ভাবিজান , আচ্ছা তুমি একা করতে হবে না আমি আর ফুল কলিও হেল্প করছি , let’t gooo ”
বলেই তানজিম রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে ফুলকলি কে ডাকতে লাগলো,
কিন্তু মেয়েটা বোধ হয় শাশুড়ী মায়ের কাছে তাই আসতে পারছে না তাই আমি ই তানজিম এর পিছনে গিয়ে বললাম,
” ফুল মনে হয় শাশুড়ী মায়ের কাছে , চলো আমরা দুজন ই টেবিলে খাবার সাজাই ”
” ওক্কে ডিয়ার ভাবিজান ”
একে একে সব খাবার রেখে বললাম , তুমি ওয়েট করো আমি বাবা আর শাশুড়ী মা কে ডেকে নিয়ে আসি, খাবার সাজাতে সাজাতেই দেখেছিলাম বাবা অফিস থেকে এসে গেছে , হয়তো ফ্রেস হয়েছে ,
আমি ওনাদের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিলাম, ভেতর থেকে আওয়াজ এলো ,
” কে ? ”
” বাবা আমি ”
” আয় ভেতরে আয় ”
আমি ভেতরে ঢুকে দেখি শাশুড়ী মা বই পড়ছেন আর বাবা ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াচ্ছেন,
” বাবা মা টেবিলে খাবার সাজিয়েছি চলো খেতে চলো ”
” ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি ”
আমি চলে আসতে নিলেই শাশুড়ী মা বইয়ের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল ,
” তাহরিমের বাবা তুমি নিচে যাও পূর্ণার সাথে আমার কিছু কথা আছে ”
মায়ের গম্ভীর কন্ঠে বলা কথা আমার হৃৎপিণ্ড নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট ছিলো , আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে পিছনে তাকালাম , কেন জানি শাশুড়ী মা কে দেখলে ভীষণ নার্ভাস লাগে ,
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন, আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম , না জানি এখন কি বলে, টেনশনে আমার হাত পা অসার হয়ে আসছে, মনে মনে বিপদের দোয়া পড়তে লাগলাম ,
চলবে ..
[ কেমন হয়েছে জনগণ ? ]