#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_13
” কিরে মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে রাখছোস ক্যা ? কি হইছে? ”
ইলুর কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালাম , এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে র দিকে তাকালাম ,
এখন বিকেল পাঁচ টা , অফিস থেকে সরাসরি ই ধানমন্ডি লেকের পাড় আসলাম , জায়গা টা আমার বরাবরই ভালো লাগে , পড়ন্ত বিকেলে সূর্য টা যখন ডুবে ডুবে ভাব তখনকার রক্তিম আকাশ আমার বরাবরই প্রিয় , এই বেলায় এখানে অনেক মানুষ ই দেখা যায় ,
” কি হলো কথা বলছিস না কেন? কি হয়েছে তোর ? স্যার ডেকে নিয়া কিছু বলছে? ”
আমি সামনে র দিকে তাকিয়ে ই বললাম ,
” না , স্যার কি বলবে , ডেকেছিলো একটা কাজের জন্য , আর আমি ভাবছি সকালে র সেই বিষয় টা নিয়ে , বেশ ভাবাচ্ছে আমাকে বিষয় টা ! ”
আমার কথা শুনে ইলু কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে ব’লে উঠলো ,
” ওও হ্যা , আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম , তোর সেই সকালের গাঁজা খুরি কথা বার্তা , কি হয়েছিলো রে ? ”
ওর কথা শুনে আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকালাম ,
” আমি গাঁজা খুরি কথা বার্তা বলি ? ”
” হে হে হে , কে বলল তুই এসব কথা বলিস , এসব তো আমি বলি , তুই তো সদা সর্বদা সত্যি কথা ই বলিস , এখন বল তো কি হয়েছিলো ”
” আরে কাল সন্ধ্যা থেকে ই শরীর টা কেমন ম্যাচ ম্যাচ করছিলো , সিজন চেঞ্জ এ জ্বর আসবে আসবে ভাব , খারাপ লাগছিলো বিধায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলাম , হঠাৎ রাতে খুব খিদে পেয়েছিলো কিন্তু উঠে খাবো সেই সুযোগ বা শক্তি ছিল না , রাত তখন ১২ টা কি একটা , বেলকনি থেকে কিছু পড়ার শব্দে আমি চমকে যায় , কিন্তু কারো শরীরের পারফিউম এর গন্ধে অনেক টাই নিশ্চিত হই যে কেউ এসেছে আর এই বেলকনি দিয়ে আসার স্বভাব তো তোর ই আছে তাই আমি ভাবলাম তুই এসেছিস ”
আমার কথা শুনে ইলু কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করে চিন্তিত স্বরে বলল ,
” তারপর ? ”
” তারপর আমার মাথার কাছে এসে কপালে হাত দিলো , আমি ভাবলাম তুই তাই বললাম কিছু রান্না করতে খিদে পেয়েছে , সেও আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে , না না শুধু মাথায় না , চোখ সহ ভিজে কাপড় দিয়ে ঢেকে নিঃশব্দে রান্না করতে চলে গেলো , কিছুক্ষণ পর এক বাটি সুপ নিয়ে খাইয়ে দিলো , ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়ালো আর সারা রাত সেবা করলো , আমি ভোরের দিকে ও কপালে কারো স্পর্শ টের পেয়েছিলাম , সে হয়তো কানে কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলেছিলো আমি বুঝতে পারি নি , আমি তো ভাবছিলাম তুই , আর সকালে উঠে দেখি নাই কেউ ”
আমার কথা শুনে ইলু ভ্রু কুচকে খানিক টা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল ,
” তোর কথা আমি সবসময় ই বিশ্বাস করি কারণ তুই বানোয়াট কিছু বলিস না , তবে এই বিষয় টা আসলে ই রহস্য জনক ”
আমি ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে ব্যগ থেকে চিঠি টা বের করে ওর হাতে দিলাম , ইলু আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,
” এটা কি ? ”
” সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্লাসের নিচে থেকে পেয়েছি ”
ইলু পুরো টা পরে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো আমার দিকে ,
” কি রে পূর্ণ , এই দেখি তোর সিক্রেট লাভার , সেই পসেসিভ আর কেয়ারিং তো , হায়য়য় আমার যে কেন একটা সিক্রেট লাভার নাই ! ”
ইলুর কথা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করে বললাম ,
” ঢং বাদ দে , যে মনে চাই সে হবে , তার কথা কেন আমার শুনতে হবে আজিব , এখন চল তো কাল আবার একটা জায়গায় যেতে হবে কিছু ইনভেস্টিগেশন আছে আর কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো কোথাও পাঠাবে কতৃপক্ষ থেকে ”
আমার কথা শুনে ইলু বলে উঠলো ,
” মানে কি কোথায় যাবি কাল ? ”
” নন্দন পুর এলাকা আই মিন নন্দনপুর জমিদার বাড়ি ”
” নন্দনপুর জমিদার বাড়ি মানে কি ? তুই জানিস ওই জায়গা টা কত রিস্কি ? কম লোক তো আর পাঠানো হয় নি ওখানে , এক জন ও কি বেঁচে ফিরেছে ? কারো টিকি টি পর্যন্ত পায় নি কেউ , ভুতুড়ে এলাকা ওটা , তুই যাবি না , আমি বলছি তুই যাবি না ”
বেশ আতঙ্কিত কন্ঠে ইলু কথা গুলো বলে উঠলো ,
” আরে বোকা ভয় পাচ্ছিস কেন ? আমি তো কাল শুধু দিনের বেলাই যাবো ঘুরে সব কিছু দেখে রাতের মধ্যে ই ফিরে আসবো , চিন্তা করিস না তো ”
” আমি স্যারের সাথে কথা বলব , তুই একা একটা মেয়ে , তোকে কোন আক্কেলে ওখানে পাঠাচ্ছে হে ? তুই একদম রাজি হবি না ”
” আরে পাগল , আমি কি আগে কখনো এরকম পোড়া বাড়ি কিংবা পুরোনো রাজবাড়ী এসবে ইনভেস্টিগেশন করি নি নাকি ? আগেও তো কত আর্টিকেল করলাম এসব নিয়ে , কত রাত কাটালাম এসব বাড়িতে ”
” পূর্ণ তুই বুঝতে পারছিস না , ওসব পুরা বাড়ি আর নন্দনপুর জমিদার বাড়ি এক না , তুই জানিস না ওই এলাকায় কোন মানুষ থাকে না , রাত হলে কিসব শব্দ শুনা যায় আবার ইনভেস্টিগেশনের জন্য যারাই গিয়েছে এক রাতের বেশি তাদের তো দেখায় যেত না , একদম গায়েব , এখন তো ওখানে কোন ইনভেস্টিগেটর কিংবা পর্যটক ও যায় না , তুই প্লিজ না করে দে ”
আমি চারপাশে তাকিয়ে ব্যগ নিয়ে বসা থেকে উঠতে উঠতে বললাম ,
” মিফতাহুল পূর্ণা যখন একটা কাজ কাঁধে নিয়েছে সেটা সে করেই ছাড়বে আর সফল সে হবেই , এটাই পূর্ণার নিয়ম , আমি কোন কিছু তে পিছপা হওয়া শিখিনি তাই আজ ও হবো না , আমি এটা পারব বলেই সরকার এই কাজ টা আমাকে দিয়েছে আর আমি পারব ই , ইন শা আল্লাহ ”
আমার এমন দৃঢ প্রতিজ্ঞা দেখে কিছু ক্ষন চুপ করে থেকে বলে উঠলো ,
” ঠিক আছে তুই যখন যাবি ই যাহ , সাথে আমি ও যাবো , বিপদে পড়লে দুজন একসাথে ই পড়ব , আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না , চল সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাসায় যাবো ”
আমি কিছু বললাম না , পা চালিয়ে রাস্তায় আসলাম , সাথে ইলু ও , কারো মুখে কোন কথা নেই ,
রিকসা দিয়ে বাসায় আসতে আসতে প্রায় মাগরিবের আজান হয়ে গেছে ,
নামাজ পড়ে কিছু খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম , উদ্দেশ্য নন্দনপুর জমিদার বাড়ির সব তথ্য জানা,
তবে আর যাই হোক , জমিদার বাড়ি টা বেশ সুন্দর , ছবি তে যা দেখলাম ,
ল্যাপটপ থেকে বিভিন্ন তথ্য কালেক্ট করে ডায়েরি তে নোট করতে লাগলাম,
___________________________
” স্যার পূর্ণা মেম কে নন্দনপুর ইনভেস্টিগেশনের জন্য নোটিশ দিয়েছে ”
” নন্দনপুর ? ”
” স্যার ওই যে নন্দন পর জমিদার বাড়ি যে , আরে যেটা কে সবাই ভুতুড়ে বাড়ি বলে চেনে ওটা
কুশনের কথা শুনে তাহরিম খানিক টা উত্তেজিত হয়ে বলল ,
“What nonsense ! কি সব কথা বলছো ? ওটা র ইনভেস্টিগেশন না অফ করে দিয়েছিলো , গত কয়েক বছরে যাদের কেই পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ ই ফিরে আসে নি , এটা আবার চালু করেছে কে ?
” স্যার এটা কতৃপক্ষের আদেশ ”
” পূর্ণা রাজি হয়েছে ? ‘
” জি স্যার , মেম কাল একবার দেখে আসতে যাবে ”
” হুয়াট ? এই মেয়েটা এমন কেন ? লাইফে এত রিস্ক নিতে হবে কেন ? কি দরকার এসব ? এত রিস্কি একটা জায়গায় কেন যেতে হবে , সাহস কি ওর ওভার লোড হয়ে গেছে নাকি ”
কিছু ক্ষন ভেবে তাহরিম বলে উঠলো ,
” কুশন , আমাদের কিছু লোককে কে নন্দন পুর জমিদার বাড়ি তে পাঠাবে , তার সব কিছু ইনভেস্টিগেশন করে আমাকে জানা তে বলো “..
তাহরিমের কথা শুনে কুশন মাথা নাড়িয়ে বলল ,
” ঠিক আছে ভাই ”
কুশন চলে যেতে নিয়েও হঠাৎ থেমে গেলো ,
পিছনে ফিরে তাহরিমের দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ভাই একটা কথা ! ”
” হ্যা বলো ”
” ভাই কাল ইন্টারভিউ তে যখন মেম আপনাকে প্রশ্ন করেছিলো যে , তানজিম ভাই এর এক্সিডেন্টের পিছনে কারো হাত আছে না কি ? আপনি তো জানতেন এটা বিরোধী দলের ইসতিয়াক সরকার এর কাজ , আর আপনি তো প্রমান ও পেয়েছেন ! তাহলে আপনি ওরকম কথা বললেন কেন যে আপনি জানেন না ? ”
কুশনের কথায় তাহরিম রহস্য জনক ভাবে হাসলো ,
” তোমার মাথায় এটা ঢুকবেনা বলেই আমি মন্ত্রী আর তুমি আমার এসিস্ট্যান্ট ”
তাহরিমের কথা শুনে কুশন মাথা চুলকাতে চুলকাতে হাসলো ,
তাহরিম সোফায় বসতে বসতে বলল ,
” বুঝলে কুশন , রাজনীতি বড় জটিল একটা জিনিস , বড্ড মাথা খাটাতে হয় নয়তো বাঁশ খাবে , এখন যদি আমি বলেই দিতাম যে আমি জানি কে ষড়যন্ত্র করেছে তাহলে তারা নিশ্চয়ই সাবধান হ’য়ে যেত , আর তাদের জব্দ করা টা বেশ টাফ হয়ে যেতো , তারা এখানো পর্যন্ত জানে যে আমি কিছু ই জানি না তাই বেখেয়ালি ভাবে অনেক ভুল ই করতে পারে , আর আমাদের সেই সুযোগের অপেক্ষা ই করতে হবে , বুঝলে ? ”
” জি ভাই ”
” হুম এখন যাও যা করতে বললাম , কর ”
” জি ভাই ”
কথা টা বলেই কুশন রুম থেকে চলে গেলো ,
তাহরিম কুশনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট কামড়ে হাসলো ,
মন্ত্রী সাহেব এর মনে চলছে আরেক অংক , অংকের সমাধান হয়তো খুঁজে পাবে খুব শীঘ্রই …
চলবে…
[ হেই জনগণ , আমার গল্প লিখা ছাড়াও কিন্তু পড়াশোনা আছে , আর এই মোবাইল বেশি ঘাটাঘাটি র জন্য কোন দিন জানি আমার মা , মোবাইল রে শিল পাটাই পিষে ফেলে এই চিন্তা ই আছি
তাই ভাই বোনেরা , ছোট বলে অবহেলা করবেননা🥺]