#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_23
____________________
” তাহরিম তালুকদার আপনি কি সত্যি বিয়ে করেছেন ? যদি করে থাকেন তাহলে লুকিয়ে কেন ? আপনি কি কোন কারণে আমাদের জানাতে চাচ্ছিলেন না? তবে কারণ টা কি? সাথে যিনি রয়েছেন উনি কি আপনার ওয়াইফ ? ”
গাড়ি থেকে নামা মাত্র ই এক ঝাঁক সাংবাদিক এসে জড়ো হলো আমাদের সামনে , তাদের হাজার টা প্রশ্নে আমি মনে হচ্ছে তলিয়ে যাচ্ছি
আমি তাকিয়ে আছি উনি তাদের কি উত্তর দেয় তা শুনার অপেক্ষায় ,
” আপনারা আস্তে ধীরে প্রশ্ন করুন , আমি সবার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো ”
উনি কথাটা বলা মাত্রই পিছনে থেকে একজন জার্নালিস্ট প্রশ্ন করলো ,
” আপনি কি সত্যি ই বিয়ে করেছেন মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার ? ”
উনি মুচকি হেসে আমার হাত ধরে খানিকটা উঁচু করে বললেন ,
” জি আমি বিয়ে করেছি এবং এই যে মেয়েটি কে দেখছেন সে আমার বিবাহিত স্ত্রী মিফতাহুল পূর্ণা ”
” আপনি যদি বিয়ে ই করেন তবে এমন লুকিয়ে কেন করলেন মন্ত্রী সাহেব ? ”
” আসলে আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো আমি পালিয়ে বিয়ে করব , অনেকে র তো অনেক ধরনের শখ থাকে আমারো এমন অদ্ভুত শখ ছিলো আর সেটা পুরন করতেই এভাবে বিয়ে করা ”
” শুনলাম আপনারা নাকি বেশ কয়েক বছর লুকিয়ে প্রেম করেছেন ! এও শুনা যাচ্ছে আপনারা প্রেমে থাকা কালিন লুকিয়ে বিয়ে করেছেন এবং সংসার ও করছেন , কথা টা কত টুকুন সত্যি ? ”
” না এটা পুরোপুরি বানোয়াট , আমরা প্রেম করেছি মাত্র ৯ মাস এবং আজ ন’ মাস পূর্ণ করে বিয়ের পিরিতে বসলাম , প্রশ্ন টা যদি আর কিছু দিন পরে করতেন যে বিয়ের পরে সংসার করেছি কি না তখন উত্তর টা হ্যা বোধক ই আসতো আপাতত সংসার বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর টা না বোধক ”
এমন হাজার টা প্রশ্ন তারা করেছে এবং তার উত্তর এভাবে সত্যি মিথ্যা মিলিয়ে খুব সুন্দর কম্বিনেশন করে উত্তর দিয়েছে মিস্টার তাহরিম তালুকদার ,
অবশেষে সাংবাদিক রা চলে যাওয়ার পর আমি আর তাহরিম তালুকদার মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম , উনাদের বাড়ির সামনে অনেক বড় একটা ফুলের বাগান আছে , যতটুকু দেখা যায় দেশি বিদেশি প্রায় কয়েকশ প্রকারের ফুল গাছ দেখতে পেলাম ,
” আচ্ছা এই বাগান টা কার ? আপনার ? ”
আমার কথা শুনে উনি পিছনে ঘুরে ভ্রু বাঁকিয়ে বললেন ,
” হুমম বাগান টা আমার তবে পরিচর্চা করে তানজিম ”
হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে আমার সামনে এসে দাড়ালো ,
আমার ওরনা টা ঘাড় থেকে তুলে মাথায় উঠিয়ে স্কার্ফ এর মতো করে পেচিয়ে দিলো ,
” হুমমম এই বার ঠিক আছে , একদম বউ বউ লাগছে , এবার চলো ”
বলেই আমার হাত ধরে সদর দরজা র দিকে এগিয়ে গেলো , দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দু বার ক্রলিং বেল বাজানোর সাথে সাথে ই একজন মেয়ে এসে দরজা খুলে দিলো , আমি খেয়াল করলাম মেয়েটার হাতে ঝাড়ু , হয়তো ঝাড়ু দিচ্ছিলো ,
পড়নে ধুসর রঙের শাড়ি মেয়েটার , উনার সাথে আমাকে দেখে খুশিতে চোখ মুখ ঝলমল করে উঠলো তার , খুশিতে গদগদ কন্ঠে বলল ,
” সেলামালেকুম ভাইজান , এই আপা টা বুঝি আমাগো নতুন ভাবি ? ”
উনি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে এদিকে সেদিকে তাকিয়ে বলল ,
” ওয়ালাইকুম সালাম, হুম তোর ভাবি , আর মা বাবা কই রে ? ”
” খালু তো উপ্রে ওই , আপনে বইন আমি ডাকতাছি ”
বলেই মেয়েটা যেই না উপরে যেতে নিবে ঠিক তখন ই উপর থেকে সিড়ি বেয়ে মিস্টার তাপস তালুকদার নেমে সোজাসুজি আমার সামনে এসে দাড়ালো , আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না , তাই আর কিছু না ভেবে আঙ্কেল কে সালাম দিলাম ,
” আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল ”
আঙ্কেল আমার মাথায় হাত রেখে বলল ,
” ওয়ালাইকুম সালাম মা , কেমন আছো ? ”
” আলহামদুলিল্লাহ , আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল ? ”
আমার কথা শুনে আঙ্কেল বেশ মন খারাপ করে বলল,
” এতক্ষণ তো ভালোই ছিলাম রে মা , তবে এখন তো আর ভালো লাগছে না ”
” কেন আঙ্কেল ? ”
” কোন মেয়ে যদি তার বাবা কে আঙ্কেল ডাকে তাহলে কেন বাপের ভালো লাগবে বলো তো মা ? ”
আঙ্কেল এর কথা শুনে আমি আমতাআমতা করে বললাম ,
” আসলে হয়েছে কি…. ”
” জানো তো মা , আমার একটা মেয়ের ভীষণ শখ ছিলো কিন্তু আল্লাহ কি ভালো মনে করে আমাকে একটা মেয়ে ও দেয় নি , তবে আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার দু দুটো পুত্র বধু কে আমার বউমা নয় আমার মেয়ে বানাবো, যেমন একজন বাবা আর মেয়ের মাঝে বন্ডিং থাকে ঠিক সে রকম , হবা তো আমার মেয়ে ? ”
উনার কথা শুনে আমার ঠিক কি অনুভূতি হচ্ছিল আমি ঠিক বোঝাতে পারব না , ভীষণ ভাবে কান্না পাচ্ছিলো , নিজের বাবাকে তো কখনো দেখি নি , তাই হয়তো এমন মনে হচ্ছে ,
আমাকে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাপস তালুকদার মন খারাপ করে বলল ,
” এই বুড়ো টাকে বাপ হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না মা ? ”
আমি হাত দিয়ে চোখের কোনে জমে থাকা পানি মুছে এক গাল হেসে বললাম ,
” উহুম মেনে নেওয়া যায় না তো ”
” কেন মা? ”
” কারণ আমার বাবা তো এখনো দিব্বি ইয়াং আছে, তাকে তো বুড়ো লাগেই না , আর আরেকটা কারণ আছে , তা হলো কোন বাবা কি তার মেয়েকে তুমি তুমি বলে নাকি , আমাকে যদি তুই বলে সম্বোধন করতে পারেন তাহলে আমিও বাবা বলে মেনে নেবো , নয়তো না ”
আমার কথা শুনে উনি বেশ মজা পেলেন মনে হলো৷, হু হা করে হেসে উঠলেন অগত্যায় ,
” ঠিক আছে ঠিক আছে আমি তোকে তুই ই সম্বোধন করব আর তুই আমাকে তুমি করে বলবি কেমন পূর্ণ মা ”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
” ঠিক আছে ”
উনি আমার কাছ থেকে সরে তাহরিমের কাছে গেলো৷ উনি সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছে , বাবা তার কাছে গিয়ে খপ করে কান ধরে টেনে তুলে বলল,
” ওই হাঁদারাম , তুই এত বড় একটা কাজ করে এ ভাবে নিশ্চিন্তে বসে আছিস কিভাবে ”
” ওফফ বাবা কান ছাড়ো , মাত্র ই আসলাম , অত্যাচার শুরু করে দিলে , তাও বাড়িতে নতুন মানুষের সামনে ইজ্জত টা পান্চার করো না তো ”
বাবা উনার কান ছাড়তে ছাড়তে বলল ,
” ঠিক আছে এ বারের মতো মাফ করে দিলাম , এক মাত্র আমার মেয়ের কথা চিন্তা করে নয়তো আজকে তোর একদিন ছিল কি আমার যত দিন লাগতো ”
উনি কান ডলতে ডলতে বললেন ,
” হে হে বুঝছি বুঝছি , মা কোথায় ? ”
বাবা হেসে সোফায় গা হেলাতে হেলাতে বললেন ,
” তোর মা আর বাদর টা কোথায় যেন গিয়েছে , আমাকে কি আর বলে যায় না কি , আমি তো পুরান হয়ে গেছি তো তাই আর ভাল্লাগে না , হুহ ”
” কার কাকে ভালো লাগে না শুনি একটু ? ”
হঠাৎ কারে কন্ঠ শুনতে পেয়ে সবাই পিছনে ফিরে সদর দরজা র দিকে তাকালাম ,
তানজিম দাঁড়িয়ে আছে হাতে বেশ অনেক গুলো শপিং ব্যগ , পাশে দাঁড়িয়ে আছে মিসেস তালুকদার ,
তানজিম আমার দিকে এগিয়ে এসে একটা হাসি দিয়ে বলল,
” হুয়াট’স আপ ভাবি ? তুমি জানো তোমাকে যেদিন প্রথম দেখলাম সেদিন ই তোমাকে আমার ভালো লেগেছিল , আমি নিজেই ভেবে রেখেছিলাম আমার এক মাত্র ভাইয়ের বউ আমি তোমাকেই বানাবো , দেখছো আল্লাহ ও আমার কথা শুনে ফেলছে , সেই তোমাকেই আমার ওয়ান এন্ড ওনলি ভাবি বানিয়ে দিলো ”
তানজিমের কথা শুনে আমি মুচকি হাসলাম , খুব বেশি ই বাচ্চা স্বভাবের ছেলেটা ,
” তাহরিম তুমি পূর্ণা কে নিয়ে রুমে যাও ফ্রেস হও, রেস্ট নাও , পরে এ বিষয় নিয়ে কথা হবে , এখন সবাই রুমে যাও ”
মিসেস তালুকদার বেশ গম্ভীর কন্ঠে কথা টা বলে গটগট পায়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো , উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে সবাই যার যার রুমে চলে গেলো ,,
চলবে…
[ কেমন হয়েছে জানাবেন , আর গঠন গত মন্তব্য করবেন
হ্যাপি রিডিং ]