ভালোবাসিবো_খুব_যতনে #Ayrah_Rahman #part_36

0
603

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_36
_____________________________

সকালের সূর্যের তীর্যক আলো চোখে পড়তেই পিটপিট করে চোখ খুললাম। আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে গভীর ঘুমে মগ্ন মন্ত্রী সাহেব। মনে হচ্ছে আমি তার কোলবালিশ! এত জোরে চেপে ধরে আছে। না আমি হাত ধরাতে পারছি আর না শরীর, কেমন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ!

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘড়ির কাটা ছয়টার ঘরে গিয়ে টিক টিক করে জানান দিচ্ছে এখন সকাল ছয়টা।

আমি খানিকটা নড়েচড়ে উঠতেই উনি আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, এখন সত্যি সত্যি ই নিজেকে বালিশ বালিশ ফিল আসছে।

আমি উনার হাত টা সরাতে যাবো কিন্তু উনি ঘুমের মধ্যে ই চেপে শক্ত হয়ে আছেন যার কারণে হাত সরাবো কি, নড়াতেও পারলাম না, অগত্যা ই চুপ করে শুয়ে রইলাম। কখন যে আবার ঘুমিয়ে গেছি বলতেই পারব না।

ফের আবার যখন ঘুম ভাঙ্গলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট, সাইডে তাকিয়ে মন্ত্রী সাহেব কে খুঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু আশে পাশে তাকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে উঠে বসলাম।

আশেপাশে নজর যেতে ই ওয়াসরুম থেকে পানির শব্দ আসছে মানে উনি গোসল করছেন কিন্তু ভাবনা তো এটা না, উনি গোসল করছেন ঠিক আছে কিন্তু পরবেন টা কি? কাপড় তো নাই!

আমি এটা ভাবতে ভাবতেই ওয়াসরুমের দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম। উনার দিকে চোখ যেতেই আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নাকে মুখে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কারণ উনার পরনে একটা সাদা টাওয়াল ছাড়া কিচ্ছু নেই। উনি কিছু ক্ষন ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা এগিয়ে এসে কাঁথা ধরে টান দিয়ে বলল,

” কি হয়েছে ঘুম শেষ হয়নি? আবার শুয়ে পড়লে কেন? তাড়াতাড়ি উঠো বাসায় যেতে হবে ”

আমি কাঁথা খিঁচে ধরে আছি, বিরবির করে বলতে লাগলাম,

” অসভ্য, নির্লজ্জ, লজ্জা টজ্জা আল্লাহ কিচ্ছু দেয় নি লোকটাকে”

উনি আরেকটু জোরে টান দিয়ে বলল,

” কি হলো যাচ্ছো না কেন পূর্ণ? আর কি বিরবির করছো আজব! ”

” আমি উঠবো না যান তো এখান থেকে, আর উ*লঙ্গ ঘুরছেন কেন নির্লজ্জ, আপনার লজ্জা নাই বা থাকতে পারে আমার আছে, যান তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করেন ”

আমার কথা শুনে তাহরিম নিজের দিকে তাকালো,

সে এতক্ষণে বুঝতে পারলো পূর্ণার এ অদ্ভুত বিহেভিয়ার এর কারণ,

সে বাঁকা হেসে কাঁথা ধরে আরেকটু জোরে টান দিলো, যার ফলে কাঁথা টা তাহরিমের হাতে চলে আসে,

” উফফ কি শুরু করছেন, যান তো আর চেঞ্জ করে আসেন ”

” তুমি এমন করছো কেন পূর্ণ? আমি তো তোমার হাসবেন্ড তাই না? দেখার অধিকার আছে তোমার, তুমি বললে টাওয়াল টাও খুলে দিতে পারি ”

বলেই টাওয়াল টা আমার মুখে ছুড়ে মারে,

আমি দুই হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে আছি,

” ছিইই, নির্লজ্জ মন্ত্রী সাহেব যান না এখান থেকে ”

তাহরিম বিছানার উপর বসে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,

” চোখ থেকে হাত সরাও”

আমি আরোও জোরে চেপে ধরে বললাম,

” না কিছুতেই না ”

তাহরিম এবার ধমকে উঠে বলল,

” সরাও বলছি! ”

আমি চোখ থেকে হাত সরিয়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম,

সামনে তাকিয়ে আমি হতবাক! এই লোক তো দেখি পুরো রেডি, ব্লু পাঞ্জাবি আর সাদা রঙের পাজামা আর চুল গুলো এলোমেলো, ফর্সা শরীরে নীল রঙ টা যাস্ট অসাধারণ লাগছে যদিও তাকে যেই রঙ পরে সেই রঙেই অসাধারণ লাগে!

আমি হতভম্ব হয়ে বললাম,

” আপনি? ”

উনি এক ভ্রু উঁচু করে বলল,

” কি আমি? ”

আমি আমতাআমতা করে বললাম,

” আপনি পাঞ্জাবি কোথায় পেলেন? ”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমাকে কি তোমার মতো মাথা মোটা মনে হয়? আর এমন মাথা মোটা থাকলে আমার আর রাজনীতি করতে হতো না, কাল রাতে আপনি যখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন আমি তখন বাইরে থেকে আপনার আর আমার ড্রেস আনিয়ে ছিলাম ”
বলেই আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ গুজে দিলেন,

আমাকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রু উঁচু করে বললেন ,

” কি? ”

আমি আমতাআমতা করে,

” আবব নাহ্ কিছু না ” বলেই শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে এক দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লাম। এই লোক এমন অদ্ভুত কেন? আর সব অদ্ভুত গীরি আমার সাথে ই কেন দেখাতে হবে? হুয়াই মি?

বেশ অনেক ক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু পূর্ণা এখনো ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে না দেখে তাহরিম গিয়ে ওয়াসরুমের দরজাই টোকা দিলো,

” পূর্ণা তোমার হয় নি? এতক্ষণ লাগে নাকি? আমরা বের হবো না? লেট হয়ে যাচ্ছে তো!”

তৎক্ষনাৎ ওয়াসরুম থেকে উত্তর এলো,

” আপনার এতো তাড়া থাকলে আমি চলে যান। আমি রাস্তা চিনি, বাসায় যেতে পারব ”

তাহরিম ভ্রু কুচকে এক পলক ওয়াসরুমের দরজার দিকে তাকালো,

বিরবির করে বলতে লাগলো,

” মেয়েটা এমন ঘাড় ত্যাড়া! এই ঘাড় ত্যাড়া মেয়েকে কিভাবে সামলাবো আল্লাহ ই জানে! কোন সুখে যে এই মেয়েকে ভালোবাসতে গেলাম! ”

দরজা খুলার আওয়াজে তাহরিম সেদিকে তাকালো,

নীল রঙের কুর্তি সাথে সাদা রঙের প্যান্ট আর ম্যাচিং ওরনা বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে।

তাহরিম এগিয়ে আসলো আমার দিকে,

আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাতেই সে হাসি মুখে বলল,

” সুন্দর লাগছে তোমাকে ”

উনার এটুকু কথায় কি ছিলো জানি না তবে আমার মন ভালো করতে যথেষ্ট ছিলো…

_________________________

ঘুৃমের মাঝে ই ইলুর মনে হচ্ছে সে কারো পেট জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে , ইলু ঘুমের মধ্যে ই ভাবতে লাগলো তার ঘরে তো সে একাই থাকে তাহলে কে আসলো তার রুমে? তার ভাই?

তবে নিশ্চিত হবার জন্য পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো ইলু, মুখ উঁচু করে উপরের দিকে তাকাতেই রুদ্রের চোখে চোখ পড়ে তার। রুদ্র তার দিকেই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

ইলু হুট করে উঠে বসলো, সে দেখলো এতো ক্ষন রুদ্রের কোলে মাথা রেখে তারই কোমড় জরিয়ে শান্তি তে ঘুমিয়ে ছিলো, বেচারা রুদ্র না পেরেছে হেলান দিতে আর না পেরেছে শুইতে। সারারাত বসে বসে মশা মেরেছে।

ইলু মাথা চুলকে আমতাআমতা করতে লাগলো,

” আবব সসরি, কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি, আপনি ডাকতে পারতেন! ”

রুদ্র কিছু ক্ষন ভ্রু কুঁচকে ইলুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুমি কি ঘুমের মাঝে ফুটবল খেলো? নাকি সাইকেল চালাও? ”

” হ্যা? ”

” মানে ইলমী আই কান্ট বিলিভ দিস, একজন মানুষ ঘুমের মাঝে কত ছটফট করতে পারে? সারাদিন যে পাগলামী করো ঘুমের মাঝে সেগুলো ই ফের রিপিট করো! ওহ মাই গড! ”

ইলু চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,

” মানলাম আমি ওই একটু চুর দৌড়াই, তাই বলে এভাবে অপমান করা ঠিক না ”

ইলমীর কথা শুনে রুদ্র চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,

” কি? কি করো? ”

ইলু ভাবলেস হীন ভাবে বলল,

” চুর দৌড়াই! ”

ইলুর কথা শুনে রুদ্র কিছু ক্ষন বোকার মতো ইলুর দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে ই হু হা করে শরীর কাপিয়ে হেসে উঠলো,

বেচারা হাসতে হাসতে চোখ থেকে পানিই বের হয়ে গেছে ,

ইলু এক নজর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকালো , মনে মনে ভাবতে লাগলো, সে কি এমন হাস্যোকর কথা বলেছে যে এভাবে ভ্যাবলার মতো হাসতে হবে আজব তো!

” এইই আপনি এভাবে হাসছেন কেন আজব! আমি কি কোন হাসার কথা বলেছি? ”

রুদ্র কোন ভাবে তার হাসি টা থামিয়ে বলল,

” উহুম একদম না, তুমি কেন হাসির কথা বলবে? আমি তো এমনি হাসছি, চলো বাসায় যাবে, অনেকটা সময় হয়ে গেছে ”

রুদ্র কথা টা বলতে দেরি হয়েছে ইলুর উঠে যেতে দেরি হয়নি, ইলু ডানে বামে না দেখেই সোজা গাড়ির দিকে হাটতে লাগলো ,

রুদ্র বেচারা তার পিছনে পিছনে গেলো।

চলবে….

[ সরি বাচ্চারা আমি রেগুলার দিতে পারছি না, দুটো গল্প কন্টিনিউ করছি তো আর সাথে পড়াশোনা তো আছেই, সামনে আবার এইচএসসি পরীক্ষা, আর কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ মানে তো জানোই, প্যারা আর বাঁশ! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here