ভালেবাসিবো_খুব_যতনে #Ayrah_Rahman #part_41

0
574

#ভালেবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_41

_________________

” পূর্ণা আপু তোমার একটা নাম্বার ওদের হাতে চলে গেছে! ইমিডিয়েটলি তোমার নাম্বার টা বন্ধ করে দিতে হবে নয়তো ওরা তোমার লোকেশন বের করে ফেলবে ”

এইটুকু মেসেজ পড়ে তাহরিম ভ্রু কুঁচকালো। বিছানায় লেপটপ নিয়ে কাজ করছিলো তাহরিম আর আমি ওয়াসরুমে, হঠাৎ মেসেজ টোন বাজায় তাহারিম ঘাড় ঘুরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো, এমন একটা নোটিফিকেশন দেখে তাহরিম কৌতুহল বশত মেসেজ টা অপেন করলো। এটা ঠিক বিনা অনুমতি তে কারো পার্সোনাল জিনিস ধরা ঠিক না তবুও তাহরিম ধরলো।

তাহরিম তালুকদার আর কিছু না ভেবে রিপ্লাই মেসেজে লিখলো,

” কোন নাম্বারের কথা বলছো? আমার তো অনেক নাম্বার ই ”

তাহরিম এটা লিখে চুপ করে বসে রইলো, সে ভাবছে পূর্ণা কি তার কাছে কিছু লুকাচ্ছে? সে কি আদৌও জার্নালিস্ট তো? হাজারো অহেতুক প্রশ্ন এসে ভর করতে লাগলো তাহরিম।

প্রায় মিনিট দুয়ের মাঝেই পুনরায় মেসেজ টোন বেজে উঠলো, তাহরিম মেসেজ টা অপেন করে ভ্রু কুঁচকালো।

” আপু ওই যে আপনার হাইড নাম্বার যেটা ওইটা, 019******** এটা ”

তাহরিম ভ্রু কুচকে নাম্বার টাই দেখছে! কেন জানি তার নাম্বার টা ভীষণ পরিচিত মনে হচ্ছে, কোথায় যেন নাম্বার টা দেখেছে,

ভাবলো, যদি পরিচিত হয় তাহলে নিশ্চয় ই নিজের মোবাইলে সেইভ থাকবে।

কথা টা চিন্তা করে তড়িঘড়ি করে নিজের ফোন বের করে নাম্বার টা টুকে নিলো।

পুরো নাম্বার টা টুকতেই স্ক্রিনে ভেসে আসলো একটা নাম ” অপরিচিতা ”

তাহরিম ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগলো এই অপরিচিতা টা জানি কে? হঠাৎ মনে হলো ঠিক এই নাম্বার থেকেই তার ফোনে মেসেজ আসতো বিভিন্ন সতর্ক বার্তা। তার মানে এটা পূর্ণার কাজ, কিন্তু কথা হলো এসব কথা পূর্ণা জানতো কিভাবে?

পূর্ণা কি আসলেই জার্নালিস্ট নাকি অন্য কেন পেশায় আছে?

” আপনি আমার ফোন দিয়ে কি করছেন মন্ত্রী সাহেব? কেউ ফোন করেছিলো বুঝি? ”

ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে চুল মুছতে মুছতে কথা টা বললাম, উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ফোন টা খাটের উপর রাখলো,

আমি বারান্দায় গিয়ে তোয়ালে টা রেখে বিছানায় এসে বসলাম,

” কি হলো কথা বলছেন না কেন? কেউ ফোন দিয়েছিলো? ”

” নাহ্ ”

” ওহ আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি বসুন আমি নিচে গেলাম ”

কথাটা বলেই আমি উঠে দাড়িয়ে চলে আসতে নিলে হঠাৎ উনি আমার পিছনে থেকে ডেকে উঠলেন,

” পূর্ণা দাঁড়াও ”

আমার পা থমকে গেলো, তৎক্ষনাৎ পিছনে ফিরে তাকালাম।

” কিছু বলবেন? ”

” তুমি কি সত্যি ই জার্নালিস্ট নাকি অন্য কোন প্রফেশনে আছো? ”

তাহরিম তালুকদার এর কথা শুনে আমি খানিকটা চমকে উঠলাম,

আমতাআমতা করে বললাম,

” হহঠাৎ এই প্রশ্ন? আপনি তো জানেন ই আমি একজন সাংবাদিক তাহলে? ”

” হুম বুঝতে পেরেছি ”

উনি নিজের ফোন টা অন করে কিছু একটা বের করে আমার দিকে তাক করলো,

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখি একটা নাম্বার, কিন্তু যখন ই নাম্বার টা খেয়াল করলাম আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়লো, একটা বড়ো সরো ঢুক গিলে উনার দিকে তাকালাম,

উনি এক ভ্রু উঁচু করে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছে,

আমি তাকানো মাত্র ই উনি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

” কি? এই নাম্বার টা চেনো? ”

আমি চমকে উঠলাম, এখন কি বলব আমি? এটা যে আমার নাম্বার!

আমি কোন কথায় বলছি না।

উনি মুচকি হেসে বললেন,

” জানো এই নাম্বার থেকে অনেক বার আমাকে সতর্ক বার্তা পাঠানো হ’য়েছে। আমি অনেক বার ট্রাই করেছি ব্যক্তি টি কে তা জানার জন্য কিন্তু তার হদিস আমি পাই নি, যদিও চাইলে আমি ঠিক ই বের করতে পারতাম কিন্তু আমি ইচ্ছে করে ই করি নি ”

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি,

আমাকে চুপ থাকতে দেখে তাহরিম তালুকদার হাসলো,

” আমি জানি এটা তোমার নাম্বার! আমি এও জানি তুমি শুধু নামে একজন সাংবাদিক, তবে তোমার আসল পরিচয় টা ও আমার কাছে অজানা নয়, মিস মিফতাহুল পূর্ণা ”

আমি আবারো চমকে তাকালাম উনার দিকে,
উনি জানতেন আমি কে?

আমার অবাক হয়ে তাকানো দেখে উনি হাসলেন,

” আমি কি ঘোড়ার ঘাস কেটে মন্ত্রী হয়েছি? ঘটে একটু তো বুদ্ধি আছে আর এতো এতো কুটনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে টিকে থাকতে হলেও তো বুদ্ধি লাগবে তাই না? ”

আমি মাথা নাড়ালাম।

উনি আবারও বলতে শুরু করলো,

” তোমার পেশা সম্পর্কে আমি অনেক আগে থেকে ই অবগত , প্রধান গোয়েন্দা অফিসার আপনি সেটা আমি জানি, কখন থেকে জানি বলুন তো? ”

আমি আনমনে ই বলে উঠলাম,

” কখন? “.

” যেদিন আপনি আর পূর্ণা মিস্টার মিয়াজি কে ধরতে গিয়েছিলেন ঠিক সেদিন থেকে, আপনার হাবভাবে আমার মোটেও একজন সাংবাদিক মনে হয় নি, কারণ একজন সাংবাদিক নিঃসন্দেহে সাহসী তবে তারা এসব দুঃসাহসিক কাজ করবে না, সেদিন খোঁজ নিয়ে ই জানতে পারি আমার বউ একজন গোয়েন্দা অফিসার। সেদিন বেশ অবাক হয়ে ছিলাম, এমন বাচ্চা একটা মেয়েকে এত বড় পদ কেন দিলো যেখানে এতো এতো সিনিয়র মানুষ আছে! পরে বুঝলাম আমার বউয়ের ঘটে সব টা এখন আর গোবর নেই এখন তা পঁচে জৈব সার হয়ে যাচ্ছে , সব ই আমার সাথে থাকার ফল,

একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য তাই না? ”

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম, লোকটা কি আমার প্রসংশা করলো নাকি অপমান করলো ঠিক বুঝতে পারলাম না।

আমি আঙুল উচিয়ে বললাম,

” শুনোন! আমাকে অপমান করার চেষ্টা ও করবেন না, ফলাফল ভালো হবে না বলে দিচ্ছি! ”

তাহরিম ভ্রু কুঁচকে বলল,

” তা কি করবে শুনি? ”

” দেখুওওন..

” দেখাও”

তাহরিমের শান্ত কন্ঠ শুনে আমি হকচকিয়ে উঠলাম,
পরবর্তী তে নাক মুখ কুচঁকালাম.

” ছিইই অসভ্য কোথাকার! ”

বলেই নাক মুখ কুঁচকে বের হয়ে গেলাম রুম থেকে, পিছনে থেকে শুনতে পেলাম, তাহরিম তালুকদার এর এতক্ষণ চেপে রাখা হাসির শব্দ।

আমার মুখে ও অজান্তেই ফুটে উঠলো হাসির রেখা,

আমি হাঁটতে হাঁটতে মা বাবার রুমের সামনে আটকে গেলাম,

” মা আসবো? ”

ভেতর থেকে উত্তর এলো,

” এসো ”

আমি ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম, মা বসে বসে বই পড়ছে, একটা মানুষ এতো বই কিভাবে পড়ে আমি ঠিক জানি না, সারাদিন ই কি কেউ পড়তে পারে না কি? হউক সে টা গল্পের বা উপন্যাস টাইপ তবুও তো।

আমাকে দেখা মাত্র ই মা বইটা অফ করে উঠে বসলো,

” বসো পূর্ণ ”

আমি গিয়ে মা এর সামনে বিছানার উপর আসন পেতে বসলাম,

” কি হয়েছে মুড অফ নাকি পূর্ণ? ”

আমি মুখ গোমড়া করে ই বললাম,

” নাহ্”

” উহুম আমার তো মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে! তাহরিম কিছু বলেছে? ”

” মা জানো তোমার ছেলে সারাক্ষণ আমার পিছনে লেগে থাকে আর খোঁচাতে থাকে, আমাকে খোঁচা দেওয়ার একটা অপশন ও সে মিস করে না, বলো তো কেমন ডা লাগে? ”

আমার কথা শুনে মা বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,

” ঠিক ই তো, কাজ টা একদম ঠিক হচ্ছে না, আচ্ছা আমি তাহরিম কে বলব নে যে আমার মেয়ের সঙ্গে আর এমন না করতে ”

আমি মুচকি হাসলাম।

” আমার নামে আর কি কি বিচার আছে সব বলো আম্মু কে ”

পিছনে থেকে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে আমি আর আম্মু পিছনে তাকালাম।

তাহরিম দরজার মধ্যে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকের উপর হাত দুটো ভাজঁ করে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি লাফ দিয়ে আম্মুর সাইডে চলে গেলাম, কখন জানি পিছনে থেকে এসে মাথায় ঠাস করে মারে,,,

চলবে….

[ গঠন গত মন্তব্য করবেন প্লিজ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here