#ভালেবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_40
_________________
” মিস্টার রুদ্র তালুকদার! আপনি কি কিছু বলবেন নাকি এই ভর সন্ধ্যায় আমাকে সং সাজিয়ে বসিয়ে রাখার জন্য এখানে ডেকে এনেছেন? ”
রুদ্র নিজেকে প্রস্তুত করে ইলমীর দিকে তাকালো। আজ সে ভেবেই এসেছে আজ ইলমী কে তার মনের কথা বলবে কিন্তু কি দিয়ে শুরু করবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না। আজ সে নিজে থেকে ই একটা ক্যাফে বুক করে ইলমী কে আসতে বলেছে, কিন্তু এখন কোন কথায় সে বলতে পারছে না।
ইলমী আপাদমস্তক ভালো করে রুদ্র কে পর্যবেক্ষন করে নিলো, রুদ্র যে বেশ নার্ভাস সে বুঝতে পেরেছে।
মেয়েদের নাকি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বেশ একটিভ, কেউ তাকে পছন্দ করলে সেটা নাকি মেয়েরা চট করেই ধরে ফেলতে সক্ষম।
রুদ্র আমতাআমতা করে বলল,
” আআজকে ততোমাকে সুন্দর লাগছে ”
ইলমী ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিজের দিকে আজ যে আহামরি কিছু পরে এসেছে তা কিন্তু না, সচরাচর যা পরে আজও তাই পরেছে একটা টপস আর জিন্স সাথে স্কার্ফ।
নিজেকে পর্যবেক্ষন শেষে ভ্রু উচিয়ে বলল,
” আজ সুন্দর লাগছে তার মানে অন্য আর সব দিন সুন্দর লাগে না তাই তো? ”
রুদ্র চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো ইলমীর দিকে, সে তো এটা মিন করে কথা বলে নি তবে ইলু তো কথার উল্টো মিনিং বের করে ফেলল,
” আরে না না, আমি এটা বলি নি, আমি বলতে চেয়েছি তোমাকে সবসময় ই সুন্দর লাগে আজ কমপ্লিমেন্ট টা করলাম আর কি! ”
” হুম, বাট আপনি নিশ্চয়ই এটা বলতে আজ আমাকে ডাকেন নি, কি বলতে ডেকেছেন সেটা বলেন ”
রুদ্র আমতাআমতা করে বলল,
” আআসলে ইলমী.. ”
ইলমী ভ্রু কুঁচকে বলল,
” আসলে নকলে না করে তাড়াতাড়ি বলে দেন কি বলবেন ”
” আই থিংক.. ”
” ইউ থিংক? ”
” ইলমী আই থিংক আই লাভ ইউ ”
ইলমী পরিপ্রেক্ষিতে কোন রিয়েক্ট করলো না, সে ভেবেই রেখেছে রুদ্র তাকে এমন কোন কথায় বলবে।
রুদ্র উৎসুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে ইলুর দিকে, হয়তো ইলু কিছু বলবে কিন্তু তার আশায় এক বালতি পঁচা পানি ঢেলে দিয়ে ইলু হুট করে দাড়িয়ে বলল,
” আমি আজ আসি ”
বলেই ইলু গটগট পায়ে বের হয়ে আসতে লাগলো, ইলুর পিছনে পিছনে রুদ্র ছুট লাগালো,
” এই ইলমী শোনো, উত্তর তো দিয়ে যাও! ”
রুদ্র ইলমীর পথ আটকে দাঁড়ালো, ইলমী ভ্রু কুচকে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি সমস্যা? পথ আটকাচ্ছেন কেন? ”
” তুমি আমার কথার উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছো কেন? ”
” আপনি কি এমন বলেছেন যে আমাকে তার উত্তর দিতে হবে? ”
” ওই যে বললাম, আই লাভ ইউ! ”
ইলু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
” যেই ছেলে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতেই মাস পেরিয়ে যায়, সামান্য ভালোবাসি কথা টা মুখ দিয়ে বের করতে এতো নার্ভাসনেস, এতো সংকোচ! সেই ছেলের সাথে আমি রিলেশনে জড়াবো না, আর তাকে তো মোটেও ভালোবাসব না, যান তো “.
রুদ্র অসহায় দৃষ্টি তে ইলমীর দিকে তাকালো, সে তো চেষ্টা করেছে কিন্তু এতো নার্ভাস লাগে যা বলার বাহিরে, অন্য সব কাজ সে একা হাতেই সামাল দিতে পারে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই ভালোবাসা থেকে সেটা প্রকাশ করা সত্যি ই খুব কঠিন।
ইলু রুদ্র কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো রুদ্র মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো আসলে ইলুর করা প্রশ্নের একটার ও কোন উত্তর নেই তার কাছে,
রুদ্র আনমনে হাটতে হাটতে পাশেই একটা পার্কের বেঞ্চিতে বসলো গিয়ে, দৃষ্টি তার এখনো মাটিতেই নিবদ্ধ, হঠাৎ কেউ তার পাশে বসে মুখের সামনে পানির বোতল ধরতেই চমকে উঠলো সে,
ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ইলুর রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ খানি।
” একটা মানুষ কতটা হাঁদারাম হলে নিজের ভালোবাসার মানুষ রাগ করে চলে গেলে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে সেটা দেখে? ”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইলমীর দিকে, ইলমী কি তাকে ইনসাল্ট করছে?
” এই মেয়ে তুমি কি আমাকে অপমান করছো? ”
ইলু চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,
” অপমান কোথায় করলাম? যাই হোক পানি টা খান ”
” তুমি না চলে গিয়েছিলে? ”
ইলমী ভ্রু কুচকালো,
” এখন কি আবার চলে যাবো? ”
রুদ্র বাচ্চাদের মতো মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো,
” না নাহ্ ”
ইলমী রুদ্রের দিকে আরোও চেপে বসলো,
” আপনি কি ছোট বেলা থেকে ই এমন? ”
” কেমন? ”
” কিছু না ”
” আমার উত্তর কিন্তু দিলে না তুমি! ”
ইলমী ঠোঁট এলিয়ে হাসলো,
” কেন আপনি বোঝেন না? মেয়েদের নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ ”
রুদ্র ইলমীর হাত চেপে ধরে হাসলো।
_________________________
” মন্ত্রী সাহেব? ”
” হুম বলো ”
” একটা কথা বলব? ”
” হুম বলো এতে আবার অনুমতি নেবার কি আছে? ”
” রাজনীতি ছেড়ে দিলে হয় না, বাবার সাথে ব্যবসা দেখা শুনা করবেন! ”
তাহরিম মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো।
বিছানায় হেলান দিয়ে উনি ফোন ঘাটছিলেন, মোবাইল টাকে বিছানায় ছুড়ে দিয়ে আমাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে বলল,
” হঠাৎ এই কথা? ”
আমি ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে লাগলাম,
” না মানে আমি এটা বলতে চাচ্ছি যে রাজনীতি জিনিস টা আমার কাছে কখনোই ভালো লাগে নি। রাজনৈতিক কারণে মানুষ পাখির মতো মানুষ মারে, এদের ভেতরে দয়া ভালোবাসা কিছু নেই আছে শুধু প্রতিহিংসা। আপনি রাজনীতি ছেড়ে দেন ”
আমার কথা শুনে উনি হাসলেন মনে হলো আমার কথা শুনে উনি মজা পেলেন,
আমাকে টেনে উনার কাছে নিয়ে মাথাটা উনার বুকে রাখতেই আমার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল,
” উহুম তোমার ধারণা ভুল রাজনীতি মোটেও খারাপ না। রাজনীতি তখনই খারাপ হবে সেটা যদি তুমি খারাপ কোন কাজে তা ব্যবহার করো।আর কে বলেছে রাজনীতিবীদদের মনে ভালোবাসা নেই? এই যে আমার কথাই দেখো না! আমি আমার বউজানকে কত্ত ভালোবাসি! ”
আমি কিছু বললাম না চুপচাপ মাথা এলিয়ে শুয়ে রইলাম উনার বুকে।
হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে উঠতেই আমি তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম, উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
” কি হয়েছে? ফোন ই তো বাজছে ট্রেন ছেড়ে দেয় নি তো! ”
আমি মোবাইল খুজতে খুজতে বললাম,
” কোন জরুরি দরকার ও তো থাকতে পারে ”
উনি কিছু বললেন না, আমি মোবাইল টা বের করে স্ক্রিনে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে গেলো। ফোনটা তৎক্ষনাৎ কেটে দিয়ে সোজা ফোন সাইলেন্ট করে আবার উনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।
উনি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি হলো এটা? ”
” কি হলো? ”
” আমিও তো সেটাই জিজ্ঞেস করলাম কি হলো? ফোন রিসিভ করলে না কেন? ”
” ইম্পর্টেন্ট কল তো তাই রিসিভ করলাম না, যা হোক কথা না বাড়িয়ে মাথায় বিলি কেটে দেন তো, ভালো লাগছিলো ”
” হ্যা সেটাই জামাইয়ের সেবা পেতে তো ভালোই লাগে তাই না? ”
আমি চোখ বন্ধ করে ই মুচকি হেসে বললাম,
” হুম সেটাই ”
” তোমার গর্ব করা উচিত পূর্ণ! ”
আমি ফট করে ই চোখ খুলে ঘাড় উচিয়ে উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
” কেন? ”
” এই যে তোমার স্বামী তোমাকে কত ভালোবাসে! এতো বড় নাম করা মন্ত্রী হয়েও বউয়ের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে, বউয়ের সব কথা মনোযোগ সহকারে শুনে!”
” হুম পরে? ”
” কিন্তু দুঃখ একটাই, আমার বউটা আমাকে ভালোবাসে ও না, ভালেবাসি বলেও না! ”
আমি মুচকি হাসলাম,
বুঝলেন জামাইজান, আপনাকে ভালোবাসতে আমার সাত জনমের দরকার নেই, আমার এই এক জনমেই আমি আপনাকে ভালোবেসে যেতে চাই”
চলবে,,
[ রেসপন্স করবেন ]