#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_37
_____________________________
“বড্ড বেশি পেঁকে গেছো মেয়ে তুমি! ”
তালুকদার বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে কথা টা বলল তাহরিম তালুকদার। আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম, সারাটা রাস্তা ঝগড়া করতে করতে এসেছে এখন আবার বাসায় এসেও খুচাচ্ছে!
আমি ঠোঁট বেঁকিয়ে বললাম,
” আমাকে কোন এঙ্গেলে ফল মনে হয় আপনার? যে পেঁকে যাবো? ”
উনি খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো, পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বললেন,
” আমি ফলের কথা বলি নি কথার কথা বলেছি ”
” হুম, কথা বলার আগে সাবধানে বলবেন, বুঝে শুনে বলবেন! ”
কথাটা বলে সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আমার পা দুটো থমকে যায়, ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার পিছনে পিছনে মন্ত্রী সাহেব মোবাইল দেখতে দেখতে এসে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি হয়েছে দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? ”
আমার থেকে কোন রুপ উত্তর না পেয়ে আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকালো,
উনি কাউকে সোফায় বসে থাকতে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে একজন বৃদ্ধ মহিলাকে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরলো,
” কেমন আছো সুইটহার্ট? ”
মহিলাটি পান চিবুতে চিবুতে বলল,
” ভালো আর থাকতে দিলে কই মন্ত্রী মশাই! বউ কে পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলে তুমি? ”
মহিলার কথা কানে যেতেই তাহরিম মুচকি হেসে উনার পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লো,
” কি যে বলো না জান! তোমাকে আমি ভুলতে পারি নাকি? তুমি তো আমার প্রথম ভালোবাসা, তোমাকে ভুলা তো অসম্ভব ! ”
” হে হে সেইই আর কি, পাম মারার জন্য তো তুমি উস্তাদ! তো আমার সতিন কোথায় তাকে দেখছি না যে! ”
বুড়ী মহিলার কথায় উনি আমাকে ইশারা করে ডাকতেই আমি বাদ্ধ মেয়ের মতো উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম,
বুড়ি মহিলা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর গলাটা ঝেড়ে বলল,
” তাহু তোমার বউ তো দেখি একেবারেই বাচ্চা! শেষ মেষ কি না বাচ্চা বউ বিয়ে করলে? ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে একবার মহিলার দিকে একবার আমার দিকে তাকালাম,
আমাকে কোন এঙ্গেল এ উনার বাচ্চা মনে হচ্ছে বুঝতে পারছি না, আর উনার সম্পর্ক তাহরিমের সাথে কেমন সেটাও বুঝতে পারছি না। সম্পর্কে উনি আমার কি হয়?
” দাদিমা, তোমার কাছে আমার বউ কে বাচ্চা মনে হচ্ছে? ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকালাম, বুড়ী মহিলা উনার দাদিমা? আগে বললে কি হতো? খচ্চর পোলা, না জানি দাদিমা আমাকে কি মনে করছে! প্রথম দেখায় না দাদি মা কে সালাম দিলাম না কুশলাদি বিনিময় করলাম, বোবার মতো দাঁড়িয়ে ই রইলাম।
আমি মুচকি হেসে দাদিমা কে বললাম,
” আসসালামু আলাইকুম দাদিমা, কেমন আছেন? ”
উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” হুম ভালো ”
” দাদিমা আমার নাম হচ্ছে মিফতাহুল পূর্ণা, আমি একজন সাংবাদিক, বাচ্চা নই ”
উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
” বাড়ির বউ কি এই বাচ্চাদের কাপড় পরে রাখে নাকি? তোমার শাশুড়ী তোমাকে শাড়ি দেয় নি? ”
আমি এক পলক নিজের দিকে তাকিয়ে বললাম,
” না দাদিমা, মা তো আমাকে শাড়ি দিয়েছে আমি পরতে পাড়ি না তো তাই”
” ঠিক আছে ঠিক আছে আর অজুহাত দিতে হবে না, বাইরে থেকে এসেছো বিশ্রাম নাও পরে কথা হবে ”
আমি আর কিছু না বলে দোতলায় চলে এলাম, আমার পিছু পিছু মন্ত্রী সাহেব,
রুমে এসে আমি চোখ ছোট ছোট করে তাহরিম তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে বুকের উপর হাত গুজে দাড়িয়ে বললাম,
” আপনার দাদিমা আসবে আপনি আমাকে বলেননি কেন? আমি কি আপনার দাদিমা কে চিনি? ”
উনি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বিছানার উপর বসে বলল,
” সেটা তোমার দায়িত্ব, বাসা তোমার, সংসার তোমার, এখানে কে আসবে না আসবে সেটা দেখার দায়িত্ব ও তোমার, আমি কেন বলব? ”
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ বিগড়ে গেল,
এটা কোন কথা! ফালতু যুক্তি আর ফালতু যুক্তি হবেই বা না কেন? ফালতু মানুষের ফালতু যুক্তি, কোন পাগলে যে উনাকে ভোট দিয়ে মন্ত্রী বানাইছে আল্লাহ ই জানে!
উনি বেশ খানিক্ষন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
” কিছু বলবে? ”
” আপনি কি? ”
” আমি কি? ”
আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না, ফোসফাস করতে করতে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেলাম, রাগের মাথায় একবার ফিরে ও দেখলাম না! উনি ভ্রু কুচকে আমার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করছিলেন। করুক তাতে আমার কি! হুহ।
বিকেলের দিকে,
আজ মন টা বেশ একটা ভালো না, কেন ভালো না ঠিক বুঝতে পারছি না, মানে মন খারাপ এর কোন কারণ ই খুঁজে পাচ্ছি না।
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি, বেশ কালো করেছে আকাশ, মেঘের ঘর্ষনের আওয়াজ দুর আকাশের থেকে শোনা যাচ্ছে হয়তো কিছু ক্ষনের মাঝে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে মাটি, সেটার ই অপেক্ষা করছি,
শাড়ির আঁচল টা ছেড়ে দেওয়া , দুপুরে মূলত দাদিমার কথায় শাড়ি পরেছি, গাঢ় নীল রঙের শাড়ি, নীল টা আমাকে কেমন লাগে আমি ঠিক জানি না, আসলে শ্যাম রঙের মেয়ে তো আমি, কোন রং ই যেন খাপ খাওয়াতে চায় না।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কেউ পিছনে থেকে এসে জরিয়ে ধরলো, আমি বেশ চমকে উঠলাম,
” কি ব্যপার মন খারাপ? ”
” নাহ্ ”
” তাহলে একা দাঁড়িয়ে কি ভাবছো? ”
” কিছু না ”
উনি আমাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে, আমার হাত টেনে ধরে বলল,
” চলো”
” কোথায়? ”
উনি আমাকে টেনে নিচে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
” আরে চলোই না, আজকে রিকসা দিয়ে ঘুরবো”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
” এখন বৃষ্টি হবে, বাইরে যাওয়াটা ঠিক হবে না মন্ত্রী সাহেব! ”
উনি আমাকে টেনে রাস্তায় এনে দাড় করিয়ে বললেন,
” বৃষ্টি হবে বলেই তো বাইরে আনলাম তোমাকে,
বৃষ্টির মাঝে ই রিকসা দিয়ে ঘুরবো ”
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি একটা রিকসা দাড় করানো, বুঝলাম উনি সব প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে, অগত্যা ই আমাকে রিকসায় উঠে বসতে হলো, উনিও বসলেন আমার পাশে,
রিকসা কিছু দুর সামনে এগুতেই ছন্দময়ী বৃষ্টি তে ভিজে উঠলো চারপাশ,
আমি রিকসার হুড তুললাম, সামনে থেকে বৃষ্টির ঝাপটা এসে চোখে মুখে পড়ছে, অনুভতি ভিন্ন রকম!
আমি মুচকি হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছে।
আমি মুখে হাসি বিদ্যমান রেখে উনার দিকে আরেকটু চেপে বললাম,
“মন্ত্রী সাহেব? ”
” হুম? ”
” আপনি নাকি খুব ভালো গান করেন? ”
উনি ভ্রু কুচকে বলল,
” কে বলল তোমাকে? ”
” জানি আমি ”
উনি হেসে মাথা চুলকে বললেন,
” ওই আর কি একটু আকটু, তেমন ভালো পারি না ”
” বেশি ভালো লাগবে না, একটু আকটু হলেই হবে”
উনি বাঁকা হাসলো, আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম, কিন্তু উনার বাঁকা হাসার মানে না বুঝলাম না।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলেন,
_______________
“”হতে পারে কোনো রাস্তায়
কোনো হুড তোলা এক রিকশায়
আমি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে, তুমি দেখলে না
রোদে পোড়া এ রোমিও চেহারা
তুমি বুঝলে না আমার ইশারা
মন বলে যদি থামতে, তুমি থামলে না
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
যদি ডাকতে ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকানোর সাহস পেতাম না
আমার জড়সড় এই শরীরে
তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে
প্রেম নাকি পাগলামি, বলতে পারব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না
কোনো কাক ডাকা এক সকালে
তুমি বারান্দা এসে দাঁড়ালে
আমি ছিদ্র খুঁজছি দেয়ালে
তোমায় দেখব বলে
তুমি অদ্ভুত এক খেয়ালে
গাঢ় লাল টিপ দেখি কপালে
হঠাৎ আমার দিকে তাকালে
আজ আমি ভয় পেলাম না
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
যদি ডাকতে ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকানোর সাহস পেতাম না
আমার জড়সড় এই শরীরে
তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে
প্রেম নাকি পাগলামি, বলতে পারব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না
নামি চলো আজ পথে
হাত রাখো এই হাতে
দু’জনে চলো যাই বহুদূর
আমার গিটারের সুরে
দোলা লাগে তোমার নূপুরে
উত্তাল ঢেউ তোলে, দোলে হৃদয়-সমুদ্দুর
তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
ডাকো একবার ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকাব, পলক পড়বে না
আজ আমার প্রেমিক শরীরে
তোমার হাওয়ায় উড়ছি ফুরফুরে
প্রেম আর পাগলামি, তাকে লুকাব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না
তোমার পিছু ছাড়ব না””
____________
” বেশ ভালো গান তো আপনি বাট বর্তমানের সাথে পুরোপুরি মেলেনি গান টা”
” কেন কেন? ”
” ওই যে আপনি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি দেখলাম না! ”
” আরে ওইটা তো প্রেমিকার জন্য গাওয়া কিন্তু আমার তো বউ আছে তাই একটু ডিফারেন্ট তো থাকবেই ”
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
” আমাকে ভালোবাসেন মন্ত্রী মশাই? ”
আমার কথাটা কর্ন গোচর হতেই উনি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন, হয়তো এই মূহুর্তে আমার কাছ থেকে এমন প্রশ্ন আশা করেন নি,
আমি সামনে তাকিয়ে আছি,
উনি আমার দিকে আরোও চেপে বসে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরলেন, আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“”শূন্যতা অনুভব করা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে, আমি তোমাকে প্রতিটা মূহুর্তে ভালোবাসি বউজান !'””
চলবে….
[ সরি জনগন… ]