#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_38
_____________________________
“আমার ভয় হই মন্ত্রী সাহেব! ভীষণ ভয় হয়! ”
কথাটা বলতে বলতেই আমার চোখ ছলছল করে উঠলো, বৃষ্টির ঝাপটায় হয়তো চোখের পানি গুলো দৃশ্যমান হয় নি তবুও যেন মন্ত্রী সাহেব বুঝতে পারলেন আমার মন খারাপের আভাস।
আমার মাথা টা আলতো হাতে চেপে ধরলেমন ঠিক তার বুকের মাঝে পারলে হয়তো ভেতরেই ঢুকিয়ে রাখতেন, আমি নড়চড় করলাম না আর না কোন কথা বললাম। ঘাপটি মেরে রইলাম তার বুকের মাঝে।
ক্ষনিক বাদে মন্ত্রী সাহেব চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালেন, আমি চোখ বন্ধ করে আছি।
” শোনো মেয়ে আমি তাহরিম তালুকদার বেঁচে থাকতে তোমার শরীর আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন সত্তা স্পর্শ করার সাহস করবে না, তুমি আমার মানে একান্তই আমার, যার বিন্দু পরিমাণ ও আমি কারো সাথে শেয়ার করবো না ”
” মন্ত্রী সাহেব বেশি বেশি সব কিছু ই বিষ, বেশি অবহেলা করলে যেমন মানুষ টা কে ধরে রাখা যায় না তেমনি বেশি ভালোবাসলে মানুষ টা আর নিজের থাকে না, জানেন মন্ত্রী সাহেব, আমার ভালোবাসা তে ভীষণ ভয় হয়, আমি যে অ*পয়া মেয়ে যাকে ভালেবাসি তারই ক্ষতি হয়, চলে যায় আমার থেকে বহুদূর, ছোট বেলা থেকে একাই বড় হয়েছি, একা থাকতে শিখেছি, জানেন কখনো হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে কেউ আসে নি ধরে উঠাবে বলে, বসে বসে সেভাবে ই কেঁদে কেটে উঠে দাঁড়াতাম। এতিম দের কেউ ভালোবাসতে চায় না মন্ত্রী সাহেব! ”
বলতে বলতেই হুরহুর করে কাদতে লাগলাম। মন্ত্রী সাহেব ও কিছু বললেন না আমাকে আরোও শক্ত করে চেপে ধরে আমাকে আমার মতো করে কাঁদতে দিলেন।
আমার কান্না কিছু টা কমে আসতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোমার অতীত হয়তো আমি মুছে দিতে পারব না, সেই ক্ষমতা খোদা আমায় দেয় নি, তেমন কোন ক্ষমতা থাকলে আমি সবার আগে তোমার অতীত টায় মুছে দিতাম! কিন্তু এটা সম্ভব না তবে আই প্রমিস ইউ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ এ তুমি আমাকে তোমার সঙ্গী হিসেবে পাবে, বর্তমান দিয়ে তোমার অতীত ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করব”
আমি কিছু বললাম না,
উনি আমার দিকে ঝুঁকে উনার ঠোঁট আমার কপাল স্পর্শ করে বলল,
” বউজান”
” হুম”
” এবার একটু হাসো না! ”
আমি চোখ উঁচিয়ে তার দিকে তাকালাম,
উনার করুন চাহুনি আমার দৃষ্টি গোচর হলো,
আমি ঠোঁট এলিয়ে হাসলাম, যা দেখে উনার ঠোঁট ও প্রসারিত হলো।
উনি আলতো হাতে আমার নাক টেনে বলল,
” এভাবেই সবসময় হাসবে বুঝলে টুনটুনি! ”
” টুনটুনি? আমি কি ছোট বাচ্চা যে টুনটুনি ডাকছেন? ”
” উহুম তুমি তো বাচ্চা নও, তুমি তো আমার বাচ্চার মা হবা বউজান!”
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে ঠোট কামড়ে হাসে,
আমি বেশ লজ্জায় পড়ে গেলাম।
আমরা দুজন ই ভিজে জুবুথুবু অবস্থা। প্রায় এক ঘন্টা যাবত ভিজছি এখন বেশ শীত শীত করছে উনি আমাকে রিকসায় নিয়ে ঠিক কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। রিকসা টা একটা আধা পাকা রাস্তা দিয়ে চলছে চারপাশে তাকিয়ে দেখি
বেশ গাছপালা আছে, হঠাৎ একটা ফার্ম হাউস এর সামনে এসে রিকসা টা থেমে যায় , আমি অবাক হয়ে তাকালাম ফার্ম হাউস টার দিকে।
উনি রিকসা থেকে নেমে আমাকে হাত ধরে নামালেন। আমি ফার্ম হাউস টা দেখছি, বিশাল বড় ফার্ম হাউস। উনি আমার হাত টেনে ধরে গেইটের সামনে দাড় করালেন,
আমার নজর গেলো গেইটের পাশে বড়ো বড়ো অক্ষরে ফার্ম হাউস টার নাম লেখা ” তালুকদার কটেজ ”
আমি অবাক হয়ে মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকালাম, আমার দৃষ্টি লক্ষ্য করে উনি বললেন,
” এটা আমার দাদাজানের ফার্ম হাউস, উনি এখানেই বেশি সময় ব্যয় করতেন, উনি মারা যাবার পর আমাদের সচরাচর এখানে আসা হয় না ”
বলেই উনি আমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলেন, তখন অবশ্য ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছিলো তবে আকাশ টা বেশ কালো, হয়তো আবারো বৃষ্টি নামবে।
উনি আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই একজন লোক ছাতা হাতে দৌড়ে এলেন,
” একি গোও বাবা ভিজ্জা গেছো গা দি, আমারে ডাক দিতা আমি ছাতা লইয়া আইতাম ”
উনি চাচার দিকে তাকিয়ে বলল,
” না না চাচা সমস্যা নেই আমি আর পূর্না ইচ্ছে করে ই ভিজেছি, তুমি এতো ব্যস্ত হইও না ”
উনার কথা শুনে চাচা আমার দিকে তাকালো,
” একি গো বাবা, ও বুঝি আমাগো বউমনি? মাশা আল্লাহ মাশা আল্লাহ চান্দের লাহান বউ পাইছো বাবা, তয় তুমি ভিজজো ভিজজো! বউ মনিরে কেন ভিজাইছো ঠান্ডা লাগবো তো, তাড়াতাড়ি আহো ভিতরে আহো ”
বলেই চাচা আমাদের টেনে নিয়ে ভেতরে গেলেন,
উনি একটা রুমে গিয়ে কিছু শপিং ব্যাগ এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন,
” নাও তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নাও নয়তো ঠান্ডা লাগবে ”
আমি নাক টানতে টানতে বললাম,
” ঠান্ডা লাগবে না অলরেডি লেগে গেছে আর সব দোষ আপনার, আপনার জন্য ই ঠান্ডা লাগছে ”
উনি আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
” ওকে সমস্যা নেই ঠান্ডা লাগলে, রাতে সব হঅঅটট করে দিবো জানন”
বলেই প্যাকেট গুলো আমার হাতে গুজে দিয়ে নিজে চলে গেলেন চেঞ্জ করতে,
আমি প্যাকেট গুলে হাতে নিয়ে ভ্যাবলার মতো কিছু ক্ষন দাঁড়িয়ে কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করলাম, কথা গুলো বুঝতে পেরে একটা বড়ো সড়ো একটা ঢুক গিলে বিরবির করে বললাম,
” কি বলে গেলো এটা! অসভ্য ছিইই”
আমি দ্রুত অন্য রুমে ঢুকে গেলাম, প্যাকেট খুলে দেখি একটা সাদা রঙের ফিনফিনে পাতলা শাড়ি, সাথে সাদা ব্লাউজ আর সব জুয়েলারি ”
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম শাড়ির দিকে এটা ঠিক কোনটা আচল বুঝতে পারছি না সব দিক দিয়ে একই,
সারা রুম খুজেও অন্য কিছু পেলাম না পরার জন্য অগত্যা ই গোসল শেষ করে এই বদ মার্কা শাড়ি পরতে হলো, বদমার্কা এই জন্য যে যতকিছু ই করি না কেন এতো পাতলা শাড়ি ঠিক সব দিক দিয়ে সামাল দেওয়া যাবে না। তবে একটা সাদা রঙের ব্লেজার আছে, সেটাই গায়ে জরালাম।
আমি শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম, উহুম খারাপ লাগছে না আবার সেইই ভালো ও লাগছে না!
ঠিক তখন ই বাইরে থেকে চাচা ডেকে বললেন,
” বউমনি তোমাদের খাবার টা টেবিলে দিলাম , আমি বাড়ি তে চলে যায়, বাড়িতে বউ একলা আছে ”
বলেই চাচা চলে গেলেন,
আমি দরজা খুলে বের হয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আট টা বাজতে চলল,
খুব বেশি তাড়াতাড়ি যে এটাও না তবে এতো সময় চলে গেলো টের ই পেলাম না,
আশেপাশে তাকিয়ে ও মন্ত্রী মশাই এর কোন পাত্তা পেলাম না, একদম লা পাত্তা। কি আর করার আবার রুমে গিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতে পারলাম না ।
হঠাৎ একটা বিকট শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো, আমি ধীরে ধীরে উঠে বসলাম, আশেপাশে তাকিয়ে এখনো মন্ত্রী সাহেব এর কোন পাত্তা নেই, এবার বেশ অবাক লাগলো, হলো টা কি এই মন্ত্রীর?
আমি ধীরে ধীরে বাইরে এলাম, বেশ খিদে ও পেয়েছে , বাইরে এসে প্রথমেই নজরে এলো দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১ টা বেজে ২৫ মিনিট।
আমি অবাক হয়ে আশেপাশে তাকালাম,
হঠাৎ ই সব লাইট অফ হয়ে গেলো, চারপাশে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না, সব যেন আধারে ডুবে গেছে, সব নিকষ কালো, অন্ধকার! আমার অন্তরাত্মা হুট করেই কেঁপে উঠলো! মনে হতে লাগলো খারাপ কিছু হবে না তো?
চলবে….
[ কেমন হ’য়েছে জানাবা কিন্তু সবাই!]