ভালোবাসিবো_খুব_যতনে #Ayrah_Rahman #part_45

0
549

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_45

_________________

মাথায় বেশ চিনচিনে ব্যথা অনুভুত হচ্ছে, যা ঘুমের মাঝেই অনুভব করতে পারছিলাম। হঠাৎ মনে হলো মন্ত্রী সাহেব এর কথা, উনি কোথায়? ঠিক আছেন তো?

কিছু মানুষের মাঝে মাঝে ই এমন অনুভব হয়, যা সে ঘুমের আগে দেখে ঘুমায়, কোন কাহিনি কিংবা ঘটনা, তার রেশ টা ঘুমের মধ্যে ও থাকে আবার ঘুম থেকে জাগার পর ও কিছু ক্ষন থাকে, পরবর্তী তে আস্তে আস্তে সবটা ঠিক হয়ে যায়।

উনি কোথায়?
কথাটা মাথার মাঝে প্রেসার পরতেই আরোও বেশি ব্যথা হওয়া শুরু হলো, কপালে কুঁচকে চোখ খোলার চেষ্টা করছি, শরীরে তো বিন্দু পরিমান শক্তি ও অবশিষ্ট নেই মনে হচ্ছে, তবুও মনের জোরে চেষ্টা চালালাম।

পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালাম। চোখের সামনে মন্ত্রী সাহেব কে এক ঝলক দেখেই মন শান্ত হয়ে গেলো। তবে উনাকে দেখা মাত্র ই মন যতটা না শান্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি অশান্ত হয়ে উঠলো।

এ কি অবস্থা তার! চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে ফুলে আছে, মনে হচ্ছে কত রাত অঘুম তার কেটেছে! আচ্ছা উনি কি কান্না করেছে? তাহলে চোখ ফোলা কেন? পাঞ্জাবির উপরের সবগুলো বোতাম খোলা, আর চুল! সেটা তো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে।

নিজের প্রতি এতো অযত্ন কেন তার!

নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে এদিক ওদিক তাকাতে গিয়ে খেয়াল হলো মাথা টা বেশ ভারি লাগছে, মনে হচ্ছে মাথার উপর দশ কেজি ভরের কিছু চাপানো। হাত নাড়াতে গিয়ে দেখলাম এক হাতে ক্যানুলা করা, সেলাইন চলছে।

অন্য হাতে মাথায় হাত দিতেই হাতেও ব্যন্ডেজ দেখতে পেলাম সাথে মাথায় ও ব্যান্ডেজ এর অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। চুল মনে হয় একটা ও নেই! তবে চুলের জন্য আফসোস হলো না কেন জানি!

বেঁচে আছি! এই ঢেরর, তার উপর আমার সামনে মন্ত্রী সাহেব জীবিত এবং সুস্থ আছে এর চেয়ে বেশি পাওয়ার কি আছে।

আমাকে চোখ খুলতে দেখেও উনি সোফাই বসে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, একটু নড়চড় ও করছে না, অবাক হলাম খুব।

আচ্ছা উনি কি রেগে আছেন আমার উপর?

মুখ খুললাম কথা বলার জন্য কিন্তু আফসোস অক্সিজেন মাস্ক লাগানো মুখে।

এক হাত দিলাম অক্সিজেন মাস্কের উপর সরাবো বলে, কিন্তু তখন ই কানে ভেসে আসলো কারো গম্ভীর কন্ঠ,

” খবর দার মাস্কে হাত দিবে না মিফতাহুল পূর্ণা ”

হাত থেমে গেলো আমার, ধীরে ধীরে তাকালাম তার দিকে, রাগে নাকের পাটা ফুলে আছে, পারছে না আমার বিছানা থেকে উঠিয়ে একটা ঢিল দিতে।

আমি ঢুল গিললাম।

” একদম মাস্ক খুলার চেষ্টা করবে না, নচেৎ খুব খারাপ হয়ে যাবে! ”

হঠাৎ দরজা দিয়ে একজন ডক্টর আর একজন নার্স প্রবেশ করলো ভেতরে..

তাহরিম কে দেখে ডক্টর কুশন বিনিময় করলো,

” গুড মর্নিং ডক্টর ”

” গুড মর্নিং ইয়াং ম্যাম, তোমার ওয়াইফ এখন কেমন? ”

উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে ডক্টরের দিকে তাকালেন,

” মাত্র ই জ্ঞান ফিরলো ”

ডক্টর হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ইন শা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তার কোন কারণ নেই ”

” হুম ”

উনি সোফায় বসে মোবাইল দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন,

ডক্টর আমার দিকে এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বলল,

” এখন কেমন লাগছে? ভালো? ”

আমি মাথা দিয়ে ইশারা করলাম, মানে ভালো লাগছে।

” গুডড ”

নার্সের দিকে ঘুরে তাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,

” যা যা মেডিসিন আছে সেগুলো ই খাওয়াও আর অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে ড্রেস টা চেঞ্জ করে দিও ”

নার্সটা মাথা দুলালো,

” ঠিক আছে স্যার ”

” আর উনার সকল দায়িত্ব আপনার, ভালো ভাবে যত্ন করবেন ”

নার্স এক পলক মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকিয়ে পুনরায় ডাক্তার এর দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

” আবব জি স্যার অবশ্যই ”

নার্সের অবস্থা দেখে ডাক্তার হাসলো, যা আমার চোখ এড়ালো না। বুঝলাম না কিছু! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নার্স টা মন্ত্রী সাহেব কে কোন ভাবে ভয় পাচ্ছে।

ডক্টর চলে যেতেই নার্স টা আমার কাছে আসলো, আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম তাকে। বয়স টা কত আর হবে! এই পঁচিশ – ছাব্বিশ, চোখে মুখে একটা চটপটে ভাব। এটা ভালো লাগলো কিন্তু পরবর্তী সোফায় বসে থাকা মন্ত্রী সাহেব এর দিকে চোরা চোখে বেশ কয়েক বার তাকালো যা আমার মোটেও ভালো লাগলো না।

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম তার দিকে। মেয়েটা এগিয়ে এসে অক্সিজেন অফ করে আমার অক্সিজেন মাস্ক টা খুলার সাথে সাথে ই বলে উঠলাম,

” বিয়ে হয়েছে তোমার? ”

মেয়েটা চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,

” হে? ”

আমি ধীরে ধীরে বললাম,

” বিয়ে হয়েছে তোমার? ”

মেয়েটা অবাক হয়েই উত্তর দিলো,

” হুমম ”

” বিয়ে হয়েছে যখন আরেকজনের জামাইয়ের দিকে চোরা চোখে তাকাও কেন? ”

মেয়েটা অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে বলল,

” হে? ”

আমি বেশ বিরক্ত হলাম, মেয়েটা কি হে ছাড়া কিছু বলতে পারে না নাকি? আজব..

” আরে কি হে হে করছো? বললাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক দিন পর হালি হালি বাচ্চার মা হবে, এখনো অন্যদের জামাইর দিকে কু দৃষ্টি দাও কেন? এটা মোটেও ভালো না আর না আমি ভালো মেয়ে! আমার জামাইর দিকে আরেকবার যদি তাকাও আমার পাশের বেড টা তোমার নামে করে দেবো বলে দিলাম, যদিও এখন আমি অসুস্থ বেশি কথা বলতে পারি না ”

কথা গুলো বলতে বেশ বেগ পেতে হলো তবুও কথা গুলো না বললেই নয়, আমার জামাইর দিকে কু দৃষ্টি দেয়, কত বড়ো সাহস!

মেয়েটা আমার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো কিন্তু কিছু ই বলল না।

মন্ত্রী সাহেব তো এক ধ্যানে ফোন ঘাটছে চারপাশে কি হচ্ছে তাতে আর বিন্দু মাত্র ধ্যান নেই। কেয়ামত হলেও তার কিছু যাবে আসবে না।

মেয়েটি মন্ত্রী সাহেব এর সামনে গিয়ে আমতাআমতা করে বলল,

” স্যার আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন! ”

কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে চোখ তুলে তাকালো তাহরিম, ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কেন? ”

” আবব না মানে, আপুর ড্রেস চেঞ্জ করাবো তো তাই ”

” তো করান চেঞ্জ! আমি কি আপনার হাত বেঁধে রেখেছি? ”

মেয়েটা বেশ হকচকিয়ে উঠলো, আমতাআমতা করে বলল,

” নননা মানে, না গেলে চেঞ্জ করাবো কি করে ”

” বউ আমার, তারমানে বউয়ের সব আমার। আমার সামনে চেঞ্জ করাতে প্রবলেম এর তো কিছু দেখছি না ”

নার্স মেয়েটা এবার কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো,

নার্স বি লাইক :- ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি! এই দুই পাগলের মধ্যে আমি ই কেন পড়লাম? দুনিয়ায় কি আর কোন নার্স ছিলো না! হুয়াই মি?

মেয়েটার অবস্থা দেখে এখন আমার ই হাসি পাচ্ছে। আহারে বেচারী!

মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে থাকতো দেখে তাহরিম তালুকদার উঠে বাহিরে চলে গেলো।

আর যাওয়ার আগে গম্ভীর কন্ঠে বলে গেলো,

” যা করবে সাবধানে, ওর একটু কিছু হলে আজকের অটি টা তোমার নামে করে দেবো, মাইট ইট! ”

মেয়েটা ঢুক গিলল,
একজনে পাশের বেড আর আরেকজনে অটি! তাকে মারার এতো ষড়যন্ত্র করে কেন এরা!

মেয়েটা আমার কাছে এসে মাথা টা আলতো হাতে ধরে উঠে বসিয়ে চেঞ্জ করে আবার সুইয়ে দিলো।

মেয়েটা আমার পাশে দাঁড়িয়ে উসখুস করতে করতে বলল,

” আপু একটা কথা বলি? ”

আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম,

” আমি না এতো ক্ষন যাবত ভাবছিলাম এমন একটা হাফ পাগল আর সাইকো মানুষের সাথে একটা মেয়ে কি করে থাকতে পারে আর উনি কি না বর্তমান তরুণ সমাজের আইডল!

আপনার স্বামী একখান মানুষ ই আপু, বাপ রে বাপ, আপনাকে যখন হসপিটালে নিয়ে আসছিলো তখন উনি হুসে ছিলেন না, মাথায় হালকা চোট পেয়েছিলেন, যখন ই উনার জ্ঞান ফিরলো তখন থেকে ই শুরু হলো উনার পাগলামি!

একবার কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাবার দশা আবার রাগে হসপিটাল জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি। আমাদের ডাক্তার রা ও ভয়ে ভয়ে ছিলো কখন জানি পুরো হসপিটাল টাই জ্বালিয়ে দেয় কারণ উনার একটা ইশারাই যথেষ্ট।

কিন্তু যখন ই আপনাকে দেখেছি আমার ধারণা পুরোপুরি ভাবে পাল্টে গেলো, আসলে আল্লাহ বুঝে শুনেই জুরি মেলান! ”

বলেই মেয়েটা চলে গেলো, আর আমি শুয়ে শুয়ে মেয়েটার কথা ভাবছি,

আচ্ছা, মেয়েটাকে কি কোন ভাবে আমাকেও অপমান করে গেলো?..

চলবে….

[ হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here