#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_46
_________________
” এই মন্ত্রী সাহেব কথা বলছেন না কেন আমার সাথে? এমন করছেন কেন হে? এখন মনে হচ্ছে মরে গেলেই ভালো হতো, এটলিস্ট এভাবে কাউকে কথা বলার জন্য রিকুয়েষ্ট করা লাগতো না! ”
পর পর দু দুটো থা*প্পড়ে গাল টা জ্বলে উঠলো আমার,
” আহহ্ ”
হুট করে ই আমার চিবুকে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” মানুষ মনে হয় না আমাকে তোর? মে’রে ফেলতে চাস আমাকে ? আর কত যন্ত্রণা দিবি বল তো আমাকে? পা’গল তো বানিয়েছিস এখন কি পা’গলা গারদে দিতে চাস?”
আমি ব্যাথা ভুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে, চোখ মুখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। কথা বলতে বলতে চোখ টা ছলছল করে উঠলো, কাঁদছেন উনি? কিন্তু কেন?
চোখের পানি আড়াল করে আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে চিবুক ছেড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে আমি পিছনে থেকে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলাম,
” কাঁদছেন মন্ত্রী সাহেব? এতো তুখোড় একজন রাজনীতি বিদ আর এতো শক্ত মনের মানুষ ও যদি কাঁদে তাহলে বাকিরা কি করবে? মরে তো যাই নি, বেঁচে আছি, ইন শা আল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবো! আপনার এমন মুখ দেখলে কি আমার ভালো লাগবে বলুন! ”
উনি পিছনে ফিরে তাকালেন, ততক্ষণে আমি উঠে বসলাম। আমার কাছে এসে হুট করে ই জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলো,
আমি মুচকি হেসে মাথায় হাত হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,
” হুররর কি করে এসব? বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন আপনি? ”
উনি আমার ঘাড় থেকে মুখ তুলে গালে আলতো হাতে স্পর্শ করে বলল,
” সসসরি বউজান! বেশি ব্যাথা লাগছে? ”
আমি ভ্রু কুঁচকে উনার হাতটা উপরে তুলে বললাম,
” নাআআ তো, ব্যথা কেন লাগবে! নিজের হাত টা দেখেছেন? এতো শক্ত! আমার গাল মনে হলো ফাটিয়ে দিলেন, দেখেন তো রক্ত বের হয়েছে কি না!”
উনি আমার গাল টা ভালো করে দেখে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বলল,
” উহুম রক্ত তো বের হয় নি, তবে এবার ঠিক আছে ”
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,
” আরেক গালে কে দিবে? আমার কি আরোও দশ বারোটা জামাই আছে নাকি যে ওদের দিয়ে দেওয়াবো? ”
উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে উঠলেন,
আমার নাক টায় টোকা দিয়ে বলল,
” বড্ড পেকে গেছো পূর্ণ! এতো পাঁকা পাঁকা কথা না বলে নিজের যত্ন নিবেন! আপনি কিন্তু এখন একা নন, বুঝলেন? ”
আমি ভ্রু কুঁচকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
” একা নই মানে কি? আরোও কেউ আছে নাকি আমার সাথে? ”
তাহরিম ভ্রু কুঁচকালো,
” তুমি জানো না? ”
” কি জানবো মন্ত্রী সাহেব? কিছু জানার কথা ছিলো নাকি? ”
তাহরিম অবাক হয়ে বলল,
” তুমি সত্যি ই জানো না? ”
আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম,
” কি জানবো টা কি? না বললে বুঝব কি করে? ”
তাহরিম দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, নিজের কপালে নিজে চাপড় দিয়ে বিরবির করে বলল,
” আমার ই বোঝা উচিত ছিল এটা আমার বউ সয়ং তাহরিম তালুকদার এর বউ! সবার বউয়ের সাথে তো আমার বউ এর একটু তো পার্থক্য থাকবেই! ”
আমি বিরক্ত হলাম, কাজের কথা কিছু ই বলছে না আজাইরা ফাউ প্যাচাল পারছে.
” আপনি কি বলবেন মন্ত্রী সাহেব? ”
তাহরিম সোজা হয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলো,
” আচ্ছা পূর্ণ, তোমার কি বেশ কয়েকদিন যাবত নিজেকে অন্য রকম ফিল হয় না? এই ধরো নাকে উটকো গন্ধ টাইপ! ”
আমি খানিক্ষন বেক্কেল এর মতো তাহরিম তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নেড়ে বললাম,
” কই না তো, কোন গন্ধ ই লাগে না তবে বেশ কয়েক দিন যাবত মুড টা ভালো পাচ্ছি না, হুট করে ই রেগে যাচ্ছি তো হুট করে ই কান্না পাচ্ছে, তো তাতে কি হলো ”
মন্ত্রী সাহেব এবার নিজেও বিরক্ত হলো,
” এই তোমার কয় মাস যাবত পি*রি*য়ড অফ? ”
” আরে আর বইলেন না, এই নিয়া বেশ টেনশনে আছি, গত ২ মাস যাবত হচ্ছে না কি কর… ”
হুট করেই থেমে গেলাম আমি, অবাক চোখে মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকালাম,
উনি উৎসুক দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
আমার হাত চলে গেলো পেটে, আমি অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলাম, আমি যা ভাবছি তাই নাকি?
উনি হেঁসে উঠলেন, আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে, আমার এতো এতো কথার ঝুলি যেন মূহুর্তে ই ফাঁকা হয়ে গেছে, কথা গুলো যেন ভেতর থেকে দলা পাকিয়ে আসছে। বুকের মাঝে যেন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি এই কি তাহলে প্রথম মা হওয়ার অনুভূতি?
আমি মাথা নিচু করে আছি,
” কি হলো পূর্ণ কিছু বলো! খুশি হওনি তুমি? ”
আমি চোখ তুলে তাকালাম,
” কিছু বললেন? ” আমার শান্ত কন্ঠ,
” বললাম কিছু বলো! ”
” কি বলব? আচ্ছা আমি কি সত্যি ই প্রেগন্যান্ট? ”
” আগে শুনতাম কেউ মা হলে নাকি সে নিজেই বুঝতে পারে অথচ আমার বউ দেখো! পুরো দেশ জেনে বসে আছে যে তাহরিম তালুকদার এর বাচ্চা হবে, পুরো এলাকায় মিষ্টি বিতরণ শেষ এতোক্ষণে আমার বউ জিজ্ঞেস করে সে প্রেগন্যান্ট নাকি! সবই কপাল আমার! ”
” এই যে আসবো নাকি গর্ভবতী মহিলা? ”
দরজায় দাঁড়িয়ে কথা টা বলে উঠলো কেউ,
তাকিয়ে দেখি ইলমী দাঁড়িয়ে আছে,
আমি তাকাতেই ইলু মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকলো,
” কিরে গর্ভবতী নারী, তুই যে পোয়াতি আগে বললি না তো! ”
আমি কিছু বলতে নিবো হুট করে ই মন্ত্রী সাহেব বলে উঠলো,
” সে তো নিজে ই জানতো না, মাত্র জানলো তাও আবার আমাকে প্রশ্ন করছে সে প্র্যাগন্যান্ট নাকি! ”
ইলু হু হু করে হেঁসে উঠলো,
” বুঝতে হবে ভাইয়া এটা আমার বান্ধবী, পৃথিবীতে মাত্র এক পিছ ই আছে! ”
ওদের কথা বলার মাঝেই তানজিম মোবাইল হাতে কেবিনে ঢুকলো পাশে চোখে চশমা পড়া একটা মেয়ে,
” কেমন আছো আমার ভাতিজার আম্মু? ”
আমি তানজিমের দিকে তাকালাম,
” তুমি কি করে বুঝলে যে ভাতিজাই হবে? ভাতিজি ও তো হতে পারে! ”
তানজিন তাহরিমের হাতে একটা ভিডিও অন করে মোবাইল টা দিয়ে সিটে বসতে বসতে বলল,
” রক্তের টান বুঝো তো! আর বাচ্চার চাচার মন কখনো ভুল বলে না ভাবিজান! আমার ভাতিজা ই হবে, ওকে নিয়ে খেলব, ঘুরবো আর মেয়ে পটাবো দুই চাচা ভাতিজা মিলে! মেয়েদের পিছনে লাইন মারবো ”
” ওহহ আচ্ছা এই ব্যসপার! কিন্তু আমি তো মেয়ে চাই, ঠিক আমার মতো শান্ত, নম্র-ভদ্র, রুচিশীল, ইনোসেন্ট একটা মেয়ে ”
আমার কথা শুনে ইলমীর কাশি উঠে গেলো, কোন ভাবে কাঁশি থামিয়ে বলল,
” তুই ইনোসেন্ট! আর এটাও বিশ্বাস যোগ্য তুই শান্ত? হাউ ফানি ইয়ার! টুডে’স বেস্ট জোক্স! ”
আমি বিরক্তি দৃষ্টিতে ইলুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
” তুই চুপ থাক! বেশি কথা বলিস তুই ”
আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালাম,
” ও কে? ”
” তোমার ভবিষ্যত জা ”
তানজিম কিছু বলার আগেই তাহরিম মোবাইলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বলল।
আমি মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
” এই যে হবু জা এদিকে এসো ”
মেয়েটা আমার কাছে এলো,
” নাম কি তোমার? ”
মেয়েটা এক হাতে চশমা ঠিক করতে করতে বলল,
” মেহবুবা রহমান ”
মেয়েটার শান্ত এবং ধীর কন্ঠ।
” কোন ইয়ার? ”
” সেকেন্ড ”
” কোন সাবজেক্ট এ আছো? ”
” ইংরেজি লিটারেচার ”
” বাহ্ বেশ ভালো। আমার জা হিসেবে তোমাকে পছন্দ হয়েছে, তুমি পাশ ”
তানজিম মেহবুবার উদ্দেশ্যে বলল,
” ঘরের কর্তী যখন তোমাকে পাশ মার্ক দিয়েছে তার মানে তোমার চাকরি কনফার্ম ”
বলেই হেসে উঠলো, সাথে আমি আর ইলমী ও। মেয়েটা বেশ লজ্জা পেলো, বোঝাই যাচ্ছে বেশ লাজুকে স্বভাবের।
আমি উকি দিয়ে তাহরিম তালুকদার কি ভিডিও দেখছে তা দেখার চেষ্টা করলাম,
উনি খবর দেখছেন যেখানে ঐ দিনের চক্রান্তের কাহিনি টা সুস্পষ্ট ভাবে দেখানো হচ্ছে আর আনোয়ার হোসেন এর জবান বন্দি যেখানে সে নিজেই স্বীকার করছে ঐ দিনের এক্সিডেন্ট এর কাজ টা উনার ই, আদালতের ঘোষণা অনুযায়ী এটেন্ড টু মাডার কেইসে তার উপর একজন স্ব নাম ধন্য রাজনীতি বিদ আর বর্তমান মন্ত্রী কে মারার ইচ্ছা পোষণ করার কারণে যাবত জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
উনি ভিডিও অফ করে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে উনার দিকে ই তাকিয়ে আছি,
” কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ”
” আনোয়ার হোসেন এতো সহজে নিজের দোষ স্বীকার করলো কিভাবে? ”
উনি মুচকি হেসে বললেন,
” ঘাস কেটে তো আর মন্ত্রী হই নি! ঘটে বুদ্ধি তো আছেই ”
___________
হসপিটালে থাকতে হয়েছে দশ দিন, মন্ত্রী সাহেব এর মতে পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে বাড়ি যাওয়া যাবে না।
ডাক্তার শুধু একদিন বলে ছিলো,
এই সময় মাকে একটু বেশি খেতে হবে, তার উপর এতো বড়ো একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো, শরীর দুর্বল তাই খাবারের পরিমান টা বাড়াতে হবে।
ব্যস হলো আর কি, খাবারের অত্যাচার তো আছেই। একটা খেতে না খেতেই আরেকটা নিয়ে হাজির! জামাই খাইয়ে গেলে আছে মা তারপর উনি খাইয়ে গেলে আসে বাবা! এক গাধা ঠেসে খাইয়ে যায় তার কিছু ক্ষন পর আসে আমার পরানের বান্ধবী! আর আমার দেবর মহাশয় বসে বসে এদের অত্যাচার দেখে আর মজা নেয়।
বুঝলাম না একটা মেয়ের উপর এতো খাবারের অত্যাচার কি নারী নির্যাতনের মধ্যে পড়ে না? পুলিশ কি এসব দেখে না নাকি!
চলবে…
[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবেন! ]