#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_43
_________________
” আপু, তাহরিম ভাইয়ার বিপদ হবার সম্ভাবনা আছে, কেউ হয়তো ভাইকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে, তুমি জলদি কিছু করো নয়তো বিপদ বাড়বে, যতটা সম্ভব ওরা গাড়ি তে কিছু একটা করেছে ”
কথাটা শোনা মাত্র ই বেশ বিচলিত হলাম। সামনে নির্বাচন, যদিও মন্ত্রী নির্বাচন হয়ে গেছে তবুও চাপ কম নয়। ফোন করেছে আমার জুনিয়র একজন অফিসার, আমাকে বোন বলে আমিও তাকে ভাই বলেই মনে করি। ওকেই বলেছিলাম মন্ত্রী সাহেব কোথায় যায় কি করে সব খবর আপডেট আমাকে দিতে।
আমি কানে ফোন রেখে ড্রয়ার থেকে গাড়ির চাবি টা নিয়ে বললাম,
” তুমি একটু দেখো উনি যেন গাড়ি তে না উঠতে পারে আমি আসছি, আর আমি উনাকে ফোন করছি, তুমি ও সাবধানে থাকো ”
” আচ্ছা ”
আমি দরজার কাছে আসতেই মাথা টা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো, কিন্তু তাতে বেশি একটা গুরুত্ব দিলাম না, বেরিয়ে গেলাম বাইরে, বাইরে এসে দেখি বাবার গাড়ি টা দাড় করানো। মাত্র ই বাবা বাসায় আসলো। আমি চটজলদি গাড়ি তে উঠে স্টার্ট দিয়ে উনার নাম্বারে কল করলাম, কিন্তু কল বাজছে কিন্তু উনি পিক করছেন না। টেনশনে আমার হাত পা যেন বরফ হয়ে যাচ্ছে।
গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে গাড়ি চালাতে লাগলাম পার্টি অফিসের উদ্দেশ্যে। লোক টা এতো কেয়ারলেস কেন? একটা মানুষ এতো কেয়ারলেস কি করে হতে পারে? বারবার ফোন করে ই যাচ্ছি অথচ ফোন পিক ই করছে না, মেজাজ টা একদিকে চরম খারাপ হচ্ছে আর আরেক দিকে টেনশনে হাত পা অবস হয়ে আসছে। কিছু হইনি তো? ঠিক আছেন তো উনি? বার বার নেগেটিভ চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রায় আধা ঘণ্টার রাস্তা পনেরো মিনিটের ভেতরে এসে পৌছালাম।
আশেপাশে অনেক খুঁজলাম, অফিসের ভেতরে গিয়েছিলাম উনিও নেই উনার গাড়ি ও নেই কোথাও। চিন্তাই আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। মানুষ টার কিছু হলো না তো। আরেক টু আগে কেন আসলাম না! হয়তো তাকে অক্ষত পেয়ে যেতাম। বেশ কান্না পাচ্ছে, কি করব বুঝতে পারছি না, ফোন টাও ধরছে না।
আমি মুখে হাত দিয়ে হাটু ভাজ করে নিচে বসে ফুপিয়ে উঠলাম। মনে মনে শুধু এটাই ভেবে যাচ্ছি কেউ যদি উনাকে মে’রে ফেলার প্ল্যান করে! কিছু হয় নি তো? আমি কি করে থাকবো এই মানুষ টাকে ছাড়া?
মুখে হাত দিয়ে ই ফুপাতে লাগলাম।
” পূর্ণ? ”
আমার কান পর্যন্ত ডাক টা না পৌছালেও মনে হলো কেউ আমাকেই ডাকছে।
” পূর্ণ কি হয়েছে তোমার? এভাবে বসে আছো কেন? ”
আমি চমকে তাকালাম সামনের দিকে, আমার থেকে কিছু টা সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছে।
উনাকে অক্ষত দেখে যেন আমার দেহে প্রান এলো, আর কোন দিকে না তাকিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম তার বুকে, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না গুলো যেন দলা পাকিয়ে আসছে। গাল বেয়ে নেমে আসছে অঢেল বর্ষন।
উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
” কি হয়েছে পূর্ণ? তুমি এভাবে কাঁদছো কেন? আর তুমি পার্টি অফিসের সামনে কি করো? তোমার তো এখন বাসায় থাকার কথা ”
আমি নাক টানতে টানতে মাথা তুলে তাকালাম, হুট করে ই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো, উনাকে ধাক্কা দিয়ে আমি সোজা হয়ে দাড়ালাম।
হুট করে ধাক্কা টা উনি সহ্য করতে পারে নি, তাই ধপ করে বসে পড়লো, উঠে দাড়িয়ে পাঞ্জাবি ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
” কি ভুত চাপলো মাথায় আজ? এমন অদ্ভুত বিহেভিয়ার করছো কেন পূর্ণ? ”
আমি চোখ গরম করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
” ফোন কোথায় আপনার? ”
আমার কথা শুনে তাহরিম দ্রুত পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করে অন করে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে পূর্ণার নাম্বার থেকে প্রায় ২০+ মিসড কল।
তাহরিম জিভে কামড় দিয়ে মিনমিনে কন্ঠে বলল,
” সররি বউ, হাতের চাপ লেগে কখন যে সাইলেন্ট হয়ে গেছে বুঝতেই পারি নি, কিন্তু এতো জরুরি কি হলো যে এতো গুলো ফোন করলা? ”
আমি চোখ গরম করে তাকিয়ে বললাম,
” দরকার অদরকার সেটা পরের বিষয় আগে আপনি বলেন, ফোন ব্যবহার করেন কেন? ফোন যদি সাইলেন্ট ই রাখতে হবে তাহলে কাল থেকে আর ফোন আনার ই দরকার নেই, অযথা বোঝা বাড়িয়ে লাভ নেই, ঠিক বলি নি মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার? ”
উনি খানিকটা এগিয়ে এসে মিনমিনে কন্ঠে বললেন,
” সরি তো বউ, আর করবো না এমন! এই যে কানে ধরছি ”
বলেই কানে ধরতে যাবে আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি অনেকেই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে,
আমি তাহরিম এর হাত ধরে বললাম,
” ভুলে যাবেন না এটা পাবলিক প্লেস আর আপনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি , এসব বাচ্চামি পাবলিক প্লেসে আপনাকে মানায় না মন্ত্রী সাহেব! ”
কথা টা বলে ঘুরে গাড়ির দিকে যেতে নিবো কি জানি কি হলো তখন হুট করেই ভীষণ কান্না পেলো। এমন শুধু আজ নয় বেশ অনেক দিন যাবত ই মুড সুইং হচ্ছে। হুট করে ই রেগে যাচ্ছি তো আবার হুট করে ই কান্না পাচ্ছে, মানে কোন কারণ ছাড়াই।
আমি ফুপিয়ে উঠলাম,
তাহরিম দৌড়ে এসে আমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল,
” কি হয়েছে বউ জান? তুমি এমন করছো কেন হুম? কি হয়েছে বলো আমাকে? কি জন্য কান্না করছো? কষ্ট হচ্ছে কোথাও? ”
উনি আমাকে নিয়ে গাড়ি তে উঠতে যাবে আমি বললাম,
” এটায় না, আমি আমার গাড়ি তে যাবো! ‘
উনি পাল্টা আমাকে কোন প্রশ্নই করলেন না, আমার মুড অফ দেখে হয়তো কিছু ই বললেন না, আমাকে জরিয়ে ধরে আমার আনা গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে স্টার্ট দিলো আর ড্রাইভার কে বলল গাড়ি টা ভালো ভাবে চেক করে বাসায় নিয়ে আসতে।
উনি গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ আমার কেন জানি মনে হলো আমাদের গাড়ি টা কেউ ফলো করছে পেছনে থেকে।
” মন্ত্রী সাহেব? ”
” হুম বউ ”
” আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আমাদের গাড়ি টা পিছনে থেকে কেউ ফলো করছে ”
উনি আমার কথা শুনে লুকিং মিরর দিয়ে পিছনে তাকালো, একটা কালো মাইক্রো আমাদের পিছনে।
উনি বাসার গলিতে না ঢুকে অন্য একটা রাস্তায় ঢুকলো কিন্তু মাইক্রো টা তো পিছনে পিছনে ই আসছে।
” বলছিলাম না, মাইক্রো টা ফলো করছে! ”
উনি স্পিড বাড়িয়ে একটা রাস্তায় উঠলো,
গাড়ি ব্রেক করতে গিয়ে মনে হলো ব্রেক টা যেন কাজ করছে না, তাহরিম বারবার ব্রেক চাপছে কিন্তু কোন ভাবেই কাজ করছে না। তাহরিম বুঝতে পারলো কেউ হয়তো ওদের অনুপস্থিতিতে গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে দিয়েছে।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি তাহরিম তালুকদার এর দিকে, এমন নয় যে আমি বুঝি নি ব্রেক নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পেরেছি, আমার বেঁচে থাকা থেকে উনার বেঁচে থাকা টা বেশি জরুরি তাই উনাকে যে করেই হোক গাড়ি থেকে ফেলতে হবে নয়তো উনি যদি আমার মনোভাব বুঝতে পারে তাহলে কখনোই আমি আমার কাজটা করতে পারব না।
” কি হয়েছে আপনার? মুখ টা এমন পাংশুটে করে রেখেছেন কেন? ”
উনি আমার দিকে কাতর চোখে তাকালেন,
” বউজান… ”
” হুম বলেন”
” তোমার সাথে হয়তো এই জীবনে আমার আর কথা নাও হতে পারে কিন্তু জেনে রেখো খোদা তায়ালা যদি সাত টা জনম আমাকে দেয়, সেই সাত জনমেই প্রিয়তমা হিসেবে আমি তোমাকেই চাইবো, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি পূর্ণ, ভীষণ ভালোবাসি ”
আমি নিজের সিট বেল্ট খুলে উনার দিকে খানিকটা ঝুঁকে দরজার সাইড দিয়ে মাথা হেলিয়ে জরিয়ে ধরলাম উনাকে,
এক হাত দিয়ে দরজার বাটন চাপ দিয়ে দরজা খুললাম অপর হাত দিয়ে উনাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে আলতো হাসলাম,
” এমন করে বলছেন কেন মন্ত্রী সাহেব? আমি আপনার, সাত জনমে ও আপনার ই থাকবো, আমি ছাড়া অন্য কারো কথা মাথায় আনবেন তো আপনার পিন্ডি চটকাবো, এই বলে দিলাম”
কথা বলতে বলতে উনার সিট বেল্ট ও খুলে দিলাম, উনি সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, রাস্তা টা বেশ নির্জন তাই সমস্যা হচ্ছে না। সামনেই বেশ ঢালু একটা জায়গা আর নিচ দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত, এটাই হয়তো কাজ করার সঠিক সময়,
” ভালো থাকবেন মন্ত্রী সাহেব, আর আমাকে ভুলে যাবেন না কিন্তু.. ”
উনি কিছু বলার আগেই দরজা খুলে উনাকে বেশ জোরেই ধাক্কা দিলাম, উনি কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি পরে যায় গাড়ি থেকে। আমি সিটে বসে গাড়ি টান দিলাম, মোবাইল বের করে ক্যাবলাকান্তের নাম্বারে কল করতেই দু এক রিং হবার পর ধরলো,
” কুশন তুমি শহর থেকে উত্তর দিকের গ্রাম সাইডে একটা নারিকেল বাগান আছে তার পাশের রাস্তার ধারে তোমার স্যার পরে আছে দ্রত আসো ”
গাড়ি তখন আউট অফ কন্ট্রোল, সামনেই একটা বড় বট গাছ,
আর হয়তো আমার কাছে সময় বেশি নেই, ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পিছনে তাকালাম যদি উনাকে একটি বার দেখতে পাই! কিন্তু আফসোস শেষ দেখা টা হয়তো আর হবে না।
ভাবতে ভাবতে ই গাড়ি এসে স্ব জোরে আঘাত করলো বট গাছ টার দেহে, সামনের কাচ ভেঙে গেলো, মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগাই মনে হলো গরম কিছু ঘাড় বেয়ে নেমে আসছে, আবছা চোখে হাত দিলাম ঘাড়ের পেছনে, সামনে আনলাম হাত টা, লাল রঙে রাঙা হয়ে গেলো হাত..
ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো দুটি চোখের পাতা, হয়তো এটাই আমার জীবনের অন্তিম মূহুর্ত…
চলবে..
[ কেমন হয়েছে জানাবেন, আর হে এটা যাস্ট কল্পনা, কেউ বাস্তবের সাথে মিলাতে যাবেন না ]