#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_44
_________________
” আমাদের জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন আমাদের শক্ত থাকতে ভীষণ কষ্ট হয় তবুও থাকতে হয়। জীবনে সবসময় সব কাজে মিরাক্কেল হয় না, ভাগ্য কে মেনে নিতে হয় আর উপর ওয়ালার উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। এটা বিশ্বাস রাখা দরকার সবসময় মিরাক্কেল হবে না, অবশ্যই খোদা তায়ালা সর্বোত্তম পরিকল্পনা কারী, সে নিশ্চয়ই সব কিছু ভেবে ই করছেন এবং যাতে তোমার মঙ্গল সেটাই করবেন উনি, বিশ্বাস রাখো তাহরিম, ভেঙে পড়ো না ”
তাহরিমের কাঁধে হাত রেখে ধীরে ধীরে মেহেরিন তালুকদার কথা গুলো বলল। তাহরিম মাথা নিচু করে হসপিটালের করিডরে বসে আছে, মাথায় তার ব্যান্ডেজ। গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় বেশ আঘাত পেয়েছিলো সে , জ্ঞান হারিয়ে ছিলো তখন ই।
জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হসপিটালের বেডেই আবিষ্কার করে তাহরিম। হাতে পায়ে ও চোট লাগে তার, জ্ঞান ফিরতেই শুরু হলো তার পাগলামি, বারবার একই প্রশ্ন, ” পূর্ণ ঠিক আছে তো? তার পূর্ণ কোথায়? কেমন আছে তার পূর্ণ ? ”
যার উত্তর ডাক্তার রা দিতে পারছিলো না যার দরুন আরো বেশি পাগলামি শুরু হয়েছিলো তার , পুরো হসপিটালের সমস্ত ডাক্তার আর নার্স, রোগীরা পর্যন্ত ছলছল চোখে তাকিয়ে ছিলো তাহরিমের দিকে, তার করা পাগলামির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, কে না চেনে তাকে। সদ্য হওয়া তরুন মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার। ডাক্তার রা এক প্রকার বাধ্য হয়ে ই তাহরিম কে অটির সামনে নিয়ে এসেছে। একজন শক্ত সামর্থ্যবান রাজনীতিবীদ, যার কন্ঠে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায় হাজার তরুনের। বড় বড় পদস্থ কর্মকর্তাদের ও চোখের ইশারায় বসিয়ে রাখে আজ সেই তরুন মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার কে যেন চেনার উপায় নেই। মিনমিনে কন্ঠ আর অসহায় চাহুনি ই বুঝিয়ে দিচ্ছে আজ সে কতটা অসহায় তাও একজন নারীর জন্য।
একজন নারী, কি না পারে! এত গাম্ভীর্য পূর্ণ একজন পুরুষ কেও এক নিমিষেই অসহায় বানিয়ে দিলো! পাগল বানিয়ে দিলো এক নিমিষেই। যার পাগলামির সাক্ষী সাধারণ জনগণ।
তাহরিম কে অটির সামনে বসাতেই সে একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেলো সে, একটা কথাও বলল না, এক পলক অটির দরজার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসলো। একদম নিস্তব্ধ সে, নিস্তব্ধতা যেন ঘিরে ধরলো চারপাশ থেকে।
তাহরিমের ভেতরে কি পরিমাণ ঝড় বয়ে যাচ্ছে একমাত্র সেই জানে, পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে নেই, তবে আজ তাহরিমের ইচ্ছে করছে তার পূর্ণর হাত টা জড়িয়ে কাঁদতে ভীষণ ভাবে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। অসহায়, আজ সে বড্ড অসহায়।
তালুকদার বাড়ির প্রায় সবাই ই উপস্থিত হসপিটালে।
নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকালো তাহরিম। তানজিম কে দেখে আবার নিচের দিকে ই তাকালো তাহরিম। তানজিম কিছু টা হলেও বুঝতে পারছে তাহরিম এর মনের অবস্থা!
” ভাইয়া? ”
তাহরিম কোন রেসপন্স করলো না।
” ভাইয়া তুমি চিন্তা করো না, পূর্ণা আপু সুস্থ হয়ে যাবে, দেখো তুমি! কিছু হবে না আপুর”
তাহরিম তানজিম এর দিকে তাকালো।
তানজিম জোর পূর্বক হেসে বলল,
” ভাইয়া চল একটা প্ল্যান করি, পূর্ণ আপু সুস্থ হলে আমরা সবাই মিলে রাঙ্গামাটি যাবো নাকি কক্সবাজার যাবে? কোন টা? আচ্ছা ভাইয়া বলো তো আপু কোথায় চয়েস করবে,? রাঙামাটি নাকি বান্দরবান আর নাকি কক্সবাজার? আমার তো মনে হচ্ছে রাঙামাটি! ”
তাহরিম ছলছল চোখে তানজিম এর দিকে তাকালো,
” জানিস তানজু, তোর আপুর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী! সব আমার জন্য হয়েছে। আমি যদি ফোন টা ঠিক মতো পিক করতাম তাহলে হয়তো এটা হতো না, ও না আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে গাড়ির ভেতরে ই রয়ে গেল, আমি না একদম বুঝতে পারি নি ও আমার সাথে এমন টা করবে, এতো খারাপ কেন বল তো ও? পূর্ণ কি জানে না, ওকে ছাড়া আমি অসহায়! আমি বাঁচতে পারব না ওকে ছাড়া! ও তো জানতো এটা বল! তাহলে কেন আমাকে এভাবে মারার প্ল্যান করলো? আমাকে যদি সরাসরি ই বলতো তাহলে আমি হাসতে হাসতে মৃত্যু কে বরণ করতাম, এতো বড়ো শাস্তি কেন আমাকে দিলো, বল না তানজু? ওকে আমি ক্ষমা করবো না কক্ষনো ক্ষমা করব না ”
তানজিমের কাঁধে মুখ ঘষে কথা গুলো বলতে বলতে চোখ দিয়ে অঝোর পানি পড়তে লাগলো, কাঁধে ভিজা ভিজা অনুভব হওয়ায় তানজিম ঢের বুঝতে পারলো তার ভাই আজ বড্ড বেশি ই ভেঙে পড়েছে। এমন অসহায় ভাবে সে কখনো তার ভাই কে দেখে নি কাঁদতে তো দুরর, মন খারাপ ও করে ও কথা বলে নি তাহরিম কোনদিন।
কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করার পর তানজিম বলে উঠলো,
” হুসস ভাইয়া এভাবে কেউ কাঁদে? ঠিক হয়ে যাবে তো আপু ”
” তানজিম ঠিক ই বলেছে ভাইয়া, পূর্ণা খুব স্ট্রং , ও ঠিক ই সুস্থ হয়ে যাবে,, আপনি শুধু শুধু ই টেনশন করছেন! ”
পরিচিত কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় উঁচিয়ে তাকালো সেই দিকে,
ইলমী দাড়িয়ে আছে, পাশেই রুদ্র অবাক চোখে ইলমীর দিকে তাকিয়ে আছে।
তাহরিম ইলমীর দিকে তাকালো, মেয়েটার চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে, বোঝাই যাচ্ছে কেঁদে কেটে বন্যা বানিয়ে ফেলেছে, তবুও একটা জিনিস তাহরিমের ভালো লাগলো, ইলমী নিজের অবস্থা ই করুন তার উপর সে আবার তাহরিম কে শান্তনা দিচ্ছে।
রুদ্র অবাক, রুদ্র পূর্ণার এক্সিডেন্টের কথা জানার সাথে সাথে ই ইলমী কে বলেছিলো কারণ সে তখন ইলমির সাথে ই ছিলো, কথাটা শোনার সাথে সাথে ই ইলমী এই যে কান্না শুরু করলো হসপিটালে পৌছানোর আগ পর্যন্ত সেই কান্না বহাল ছিলো।
হসপিটালে ঢুকতে ঢুকতে ই চোখের পানি মুছে তাহরিমের সামনে এসে শান্তনা দেওয়া তে রুদ্র বেশ অবাক।
তাপস তালুকদার আর মেহেরিন তালুকদার গেছেন বাসায়, রাতের খাবার রেডি করতে। সে জানে আজ কেউ ই হসপিটাল ছেড়ে কোথাও যাবে না তাই, হসপিটালে ই খাবার নিয়ে আসতে হবে।
অপারেশন শুরু হবার প্রায় ঘন্টা ৩ পর অটির লাইট অফ হলো, দরজা খুলে ডক্টর বেরিয়ে আসলো,
ডক্টর বের হতেই ইলমী ছুটে ডক্টর এর কাছে গিয়ে দেদারসে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়তে লাগলো ,
” ডক্টর পূর্ণ কেমন আছে? কি হয়েছিলো? কোথায় ব্যথা পেয়েছে? ঠিক আছে তো ও? আমি কি ভেতরে যেতে পারব? নাকি অবজারভেশনে রাখবেন? ”
” মিস, আপনি একটু চুপ করুম আমি বলছি ”
ডক্টরের কথায় ইলমী চুপ করে গেলো,
” জি বলুন ”
” মিসেস পূর্ণার অপারেশন টা সাকসেসফুল হলেও এই মুহূর্তে কিছু ই বলতে পারছি না আমরা কারণ উনি আঘাত টা মাথায় পেয়েছে, আমাদের ধারনা উনি হয়তো সাময়িক স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে পারে কিংবা প্যারালাইসড ও হতে পারে, কিন্তু এটা শুধু ই আমাদের অনুমান, এমন টা না ও হতে পারে তবে খোদার অশেষ রহমতে দুই জন ই বেঁচে আছে! ”
রুদ্র খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,
” দুই জন মানে? ”
ডক্টর ভ্রু কুঁচকে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কেন আপনারা জানেন না? মিসেস তালুকদার প্রেগন্যান্ট ”
রুদ্র চোখ বড়ো বড়ো করে ইলমীর দিকে তাকালো, ইলমী যেন ডক্টর এর কথা শুনতেই পেলো না এমন ভাবে রুদ্রের দিকে তাকালো,
রুদ্র পিছনে তাকিয়ে দেখে তাহরিম এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, আর তানজিম মুখে হাত দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে রুদ্রের দিকে তাকালো,
তাহরিম কে ধাক্কা দিয়ে বলল খুশিতে চিৎকার দিয়ে বলল,
” ভভভাই শুনেছিস! আমি চাচ্চু হবো! ছোট ছোট হাত পা নাড়িয়ে খেলবে আর আমি কাঁধে তুলে দৌড়াবো।
তানজিম লাফিয়ে উঠে বলল,
” আমি চাচ্চু হবোওও ”
চলবে….
[ আজকের পর্ব টা কেমন হ’য়েছে জানাবেন! ]