#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam
নূরের পেট ব্যাথার পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে। কি বড় ভুল করেছে এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। খালি পেটে মোটেও এতো ঝাল দিয়ে ফুচকা খাওয়া ঠিক হয় নি। এমনিতেই এসব বাইরের খাবার খেলে নূরের কেমন অস্বস্তি হয়।
সৌন্দর্য মন দিয়ে ক্লাস করছে।এইদিকে ইসরাত কিছুতেই ক্লাসে মন বসাতে পারছে না। নূরের জন্য চিন্তা হচ্ছে।
বার বার বাইরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে নূর কি করছে। মেয়েটার এমনিতেই নাজুক স্বভাব হয়তো সৌন্দর্য স্যারের এমন বিহেভের জন্য মনে মনে বেশ কষ্ট পেয়েছে। কান্না করছে কিনা কে জানে।
সৌন্দর্য বোর্ডে লিখতে লিখতে আড় চোখে বাইরের দিকে তাকায়।কিন্তু কোথাও নূর কে দেখতে পায় না। সকাল থেকেই আজ সৌন্দর্যের মোড ভালো নেই।তার উপর অফিসে একটা বিষয় নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। মেয়েটার সাথে একটুতেই বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছে। জিগ্যেস করা দরকার ছিলো আগে কোথায় গিয়েছিলো এতো সময় কেন লাগলো তা না করে।
এরমধ্যে ইসরাতের বাম পাশে বসা তিন্নি ইসরাতের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,কিরে কি শুরু করলি? স্যার দেখছিস না কি রকম শাস্তি দিচ্ছে?
আরে তুই চুপ থাক আমি তো নূর কে দেখার চেষ্টা করছি।(ইসরাত)
নূর কে এখন স্যার কিছুতেই ক্লাসে ঢুকতে দিবে না।তুই শুধু শুধু কেন নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনছিস? এখন কি তুই পারবি ইংরেজিতে ক্লাস করতে? চুপচাপ বসে থাক।(তিন্নি)
আমিতো একটু লুকিয়ে তাকাচ্ছি। আর তুই তো সাউন্ড করছিস কথা বলে,তোর জন্য ঠিক স্যার বুঝে ফেলবে তুই চুপ থাক। (ইসরাত)
হেই ইউ থার্ড বেঞ্চের থার্ড পার্সন স্ট্যান্ড আপ।(সৌন্দর্য)
ইসরাত বুঝতেই পারেনি তাকে বলেছে। সে দেখার চেষ্টা করছে কাকে দাঁড়াতে বলছে, ব’লির পা’ঠা কে হয়েছে।
রেড ড্রেস আপনাকেই বলছি।(সৌন্দর্য)
তিন্নি ইসরাত কে খোঁচা দিয়ে বলে,,কি অন্য দিকে তাকাচ্ছিস তুই? আজ কে ক্লাসে তুই ছাড়া কেউ রেড পরেনি। আর থার্ড বেঞ্চের থার্ড পার্সন তুই নিজেই।
ইসরাত শুকনো একটা ঢুক গিলে। মনে মনে তিন্নির গুষ্টি উদ্ধার করতে ভুলে না।
জ্বি – জ্বি স্যার।( ইসরাত)
কাম! এন্ড ক্লাসটা কমপ্লিট করেন। (সৌন্দর্য)
স-স্যার আ-আসলে,,,,(ইসরাত)
আমি আসলে নকলে শুনতে চাই নি মিস। এসে বাকি ক্লাসটুকু আপনি করান।
””””””””””””””””””””
কি হলো? আসুন।
স-সরি স্যার। ইসরাত বলেই মাথা নিচু করে ফেলে।
এসব দেখে ক্লাসের সকলে আরো গুটিয়ে যায়৷ সাবধান হয়ে যায় নয়তো নূর আর ইসরাতের মতো এরকম অবস্থায় পরতে হবে।
গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস। (সৌন্দর্য)
স-রি স্যার। (ইসরাত)
আমি আর আমার কথা রিপিট করবো না। ক্লাসের সময় নষ্ট হচ্ছে। (সৌন্দর্য)
ইসরাত আর কিছু বলেনি।বুঝতে পারছে বলেও কিছু লাভ হবে না। ব’দরা’গী লোক একটা বলে বেরিয়ে যায়। মনে মনে অবশ্য বেশ খুশি হয়েছে বের করে দেওয়ায়। নূর একা একা কিজানি করছে। ঐখানে গিয়ে দুইজন চুপিচুপি ফিসফিস করে গল্প করতে পারবে।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবেন।আশা করি গল্পের আসর জমাবেন না গিয়ে। নয়তো কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো।
সৌন্দর্যের এহেম কথায় ইসরাতের চলন্ত পা থেমে যায়। মনে মনে ভাবছে বান্ধবীর বজ্জাত জামাই টা কি করে মনের সব কথা বুঝতে পারে। নিজের বৌয়ের প্রতি ও একটু মায়া নাই। কি করে এতোগুলা মানুষের সামনে ভিতরে ঢুকতে দিলো না। ধূর বলেই ইসরাত বেরিয়ে যায়।
নূর পেট ধরে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। ব্যাথার পরিমাণ ভেবেছে ধীরে ধীরে কমে যাবে কিন্তু তা কমার বদলে বেড়েই চলেছে।
ইসরাত ক্লাসের বাইরে এসে নূর কে খুঁজতে গিয়ে এভাবে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে আসে।
এই নূর কি হয়েছে দোস্ত, এমন ভাবে বসে আছিস কেন?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
নূর?
নূর চোখ মেলতেই চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি পরতে থাকে।
কি হয়েছে তোর বল আমায় বলেই ইসরাত অস্থির হয়ে যায় জানার জন্য কি হয়েছে নূরের।
প-পেট,, আমার প-পেট,,,
হুম দোস্ত তোর পেট কি? কি হয়েছে পেটে?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
পেট ব্যাথা?
নূর উপর নিচ মাথা নাড়ায়।
আল্লাহ তুই এই পেট ব্যাথা নিয়ে এখানে বসে আছিস? আগে বলবি না তোর যে পেট ব্যাথা। অবশ্য বলতে দিলো কই তোর জামাই। উঠ দোস্ত বলেই ইসরাত নূর কে ধরে উঠাতে যাবে এমন সময় ঐখানে নাহিদ স্যার এসে উপস্থিত হয়।
কি করছো তোমরা এখানে ক্লাস রেখে? (নাহিদ স্যার)
ইসরাত নূর কে ধরে বলে,,স্যার ও একটু অসুস্থ তাই নিয়ে যাচ্ছি।
কি হয়েছে?
স্যার আসলে পেট ব্যাথা।(ইসরাত)
আচ্ছা আচ্ছা দেখে মনে হচ্ছে সিরিয়াস ওকে নিয়ে চলো। আমি যাচ্ছি তোমাদের সাথে।
ইসরাত নূর কে একটু মাত্র উঠিয়েছে এর মধ্যে নূর তার হাত পায়ের ভ’র নিজের পুরো শরীরই ছেড়ে দেয়। ইসরাত নূরকে ধরে রাখতে না পেরে জোরে চিল্লিয়ে উঠে নূর বলে।
নাহিদ স্যার এসে ধরতে নিবে এর আগেই কেউ একজন নূরকে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে আঁটকে নেয়।
ইসরাত খুব ভয় পেয়েছিলো নূরকে এভাবে পরে যেতে দেখে। নাহিদ স্যার এগিয়ে এসেও কয়েক কদম পিছিয়ে তাকিয়ে রয় সৌন্দর্য ও নূরের দিকে। সৌন্দর্য মাত্র ক্লাস শেষ করে বের হতে নিয়েছে। এদের সব কথাই কানে এসেছে। নূর কে নিজের সাথে আরেকটু মিশিয়ে নিয়ে গালে চা’পড় মেরে কয়েকবার ডাক দেয় সৌন্দর্য। কিন্তু নূরের কোনো সারা শব্দ নেই। সৌন্দর্য ইসরাত কে বলে,পানি আনার জন্য। ইসরাত দৌড়ে গিয়ে পানি এনে দেয়। নূরের কোনো সারা শব্দ নেই তাতেও।
সৌন্দর্য কিছু না বলে নূর কে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। কোলে তুলে হাঁটা দেয়। ইসরাত ও সৌন্দর্যের পিছনে পিছনে ছোটে। নাহিদ স্যার পিছন থেকে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সৌন্দর্য খুব দ্রুত নিচে নেমে পার্কিং লটে আসে। নূর কে আস্তে করে গাড়ির সামনে বসিয়ে দেয়। নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে। ইসরাত বুঝতে পারে সৌন্দর্য ওকে রেখেই চলে যাবে তাই তারাতাড়ি গিয়ে গাড়ির পিছনে উঠে বসে।
সৌন্দর্য নূর কে সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়ির ঝাঁকুনিতে নূরের মাথা হেলে পরে যেতে নেয়। সৌন্দর্য এক হাত দিয়ে আগলে ধরে তারপর নূরের মাথাটা নিজের কাঁধের উপর রাখে।
ইসরাত দেখে বলে,,স্যার নূর কে পিছনে দিয়ে দিন না আমি ধরে বসি না হয়।এমনিতে তো আপনার ও সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।
নো ঠিক আছে। খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে সৌন্দর্য নূর কে হসপিটাল নিয়ে আসে। কোলে করেই ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার দেখে তারাতাড়ি বেডে শোয়াতে বলে। সৌন্দর্য নূর কে শুইয়ে দিলে ডাক্তার বলে সবাই কে বের হয়ে যেতে ডাক্তার দেখছে বিষয় টা।
আমি বের হচ্ছি না যা করার আমার সামনে করুন বলেই সৌন্দর্য বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিন্তু?
কোনো কিন্তু না যা করার তারাতাড়ি করেন।
ডাক্তার বলেও সৌন্দর্য কে ক্যাবিন থেকে সরাতে পারে না। ডাক্তার এবার ইসরাতের দিকে তাকায়। ডাক্তারের সাথে সাথে সৌন্দর্য ও তাকায় ইসরাতের দিকে।
ইসরাত ওদের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যায়।
নূরের বাড়িতে এখনও খবর দেওয়া হয় নি। ইসরাত দোটানায় আছে জানাবে নাকি জানাবে না। এখানকার পরিস্থিতি বুঝে তারপরই জানাবে বলে ঠিক করে নেয়। নয়তো ওরা শুধু শুধু টেনশন করবে।এখানে তো সৌন্দর্য আছেই তাই আর ইসরাত নূরের বাড়িতে ফোন দেয় না।
ডাক্তার সব দেখে নূর কে স্যালাইন দেয়। সৌন্দর্য কে জানায় ঘন্টা দুয়েকের মাঝে জ্ঞান ফিরে আসবে। ফুড পয়জনিং হয়ে গেছে তাই এমন হয়েছে। আর শরীর বেশ দূর্বল। নিজের উপর মনে হয় বেশ প্রেসার দেয়।খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না। অতিরিক্ত রাত জাগে চোখ মুখ দেখেই বোঝা যায়। সৌন্দর্য কে আলাদা ভাবে যত্ন নেওয়ার জন্য বলে কিছু ঔষধ লিখে দেয়।
ঘন্টা দুয়েক পর নূরের জ্ঞান ফিরে আসে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই কারো গরম নিশ্বাস মুখে এসে বারি খায়। নূর চোখ বন্ধ করে আবার ধীরে ধীরে খুলে। চোখ খোলাই যেনো নূরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সৌন্দর্য রাগী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে ফোসফাস করছে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। হিসহিসিয়ে বলে,,, সবকিছু এই বিয়ের জন্য তাই না? সবকিছু এই বিয়ে কে কেন্দ্র করে।
ডু ইউ ওয়ান্ট ডিভোর্স????
#চলবে,,,?