#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৩
ইশান হন্তদন্ত হয়ে ইশার রুমে আসে ইশাকে ডাকতে ডাকতে। ইশা ভাইয়ের এমন ডাকাডাকি শুনে ঘুম থেকে উঠে তড়িৎ বেগে দরজা খুলে দেয়। ইশা সন্ধ্যার দিকেই বাড়িতে এসেছে নানা বাড়ি থেকে। এতোটা জার্নি করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হয়ে বিছানাতে গা হেলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়। ইশা এখন পর্যন্ত আজকের ঘটনার কিচ্ছু জানে না কি কি হয়েছে? ইশা দরজা খুলার সাথে সাথে ইশান ঘরে প্রবেশ করে চোখে মুখে রা’গ নিয়ে বলে।
–এক্ষুনি তীরের কাছে যা।
ভাইয়ের এমন আবদার শুনে ইশা ভ্রু-কুচ করে বলে।
–কোন দুঃখে আমি এখন তীরের কাছে যাবো?
–আমি বলছি তাই যাবি।
ইশা চোখ বন্ধ করে অসন্তোষজনক ভাব করে বলে।
–ভাইয়া দেখো আমি একটু আগে এতোটা পথ জার্নি করে এসেছি। এখন আমি তীরের কাছে যেতে পারবো না। শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে আমার।
ইশান বোনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে দেখে বোন তার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বলছে আর আজকের বিষয়ে যে কিচ্ছু জানে না সেটাও ভালো করেই বুঝতে পারছে। যদি আজকের বিষয়ে সব জানতো তাহলে এভাবে চিন্তা মুক্ত হয়ে থাকতে পড়তো না।বোনের ঘুম উবে দেওয়ার জন্য ইশান বলে।
–তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ইশা। আর ও এখন আমার ফোনও ধরছে না দেখেই তোকে বলছি তীরের কাছে যাওয়ার জন্য।
ভাইয়ের মুখে এমন অপ্রত্যাশিত কথা শুনে ইশার ঘুম সত্যি পালিয়ে গেছে। চোখে মুখে ভেসে উঠছে রাজ্যের সকল বিস্ময়কর চাপ। ইশানের কথাটা শুনে ইশা এতোটাই আশ্চর্য হয়েছে যে কথা বলার কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছে না। ইশার ঠিক হজম হচ্ছে না তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথাটা। ইশা তারপরও নিজেকে সামলে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–কি বলছো কি তুমি এসব ভাইয়া?
–ঠিকেই বলছি আজকে তীরকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো। আর এখন তীরকে আমি ফোন দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমার ফোন তো ধরছেই না বরং ফোনটা সুইচড অফ করে দিয়েছে।
–কিন্তু ভাইয়া তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কি করে?
–জানি না আমি কিচ্ছু। ওর নাকি আগে থেকেই বিয়ে ঠিক করা ছিলো আয়েশা আন্টির বান্ধবীর ছেলের সাথে। আর আজকে বিজি থাকার জন্য আমি ওর কলও ধরতে পারি নি তার জন্য হয়তো আমার উপরে রা’গ করেছে। তাই বলছি বোন প্লিজ তুই যা ওর কাছে আর গিয়ে বল আমি ছাদে ওর জন্য অপেক্ষা করছি। ওর সাথে আমার কথা বলা প্রয়োজন।
–এতো চিন্তা করো না ভাইয়া আমি যাচ্ছি এক্ষুনি তীরের কাছে।
ইশা চলে যায় নিচে আর ইশান চলে যায় ছাদে। ইশা নিচে নামতেই আয়েশা সুলতানার সাথে দেখা হয়। আয়েশা সুলতানাকে এমন সময় দেখে কিছুটা অবাক হয় ইশা। আয়েশা সুলতানা ইশাকে দেখে বলে।
–একি ইশা তুমি কখন আসলে?
–এইতো আন্টি সন্ধ্যার সময় এসেছি।
–ওও।
নেহা বেগম মেয়েকে বলেন।
–কিছু খাবি মা।
–না মা কিছু খাবো না এখন একে বারে ডিনার করবো। আমি বরং তীরের সাথে দেখা করে আসি আসার পর ওর সাথে দেখা করা হয় নি আর ওর ফোনটাও বন্ধ।
আয়েশা সুলতানা বলেন।
–হুম যাও তো মেয়েটা যে ঘরের দরজা লাগিয়েছে তো লাগিয়েছেই খুলার নামেই নেই। এতো করে বললাম দরজাটা খুলার জন্য কিন্তু দরজা খুললো না। উল্টে বলল তার নাকি ভালো লাগছে না। এখন তোমার ডাকে যদি দরজাটা খুলে।
ইশা মেকি একটা হাসি দিয়ে বলে।
–চিন্তা করবেন না আন্টি ওকে আমি বন্ধ ঘর থেকে বের করবোই।
বলেই ইশা চলে যায় তীরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
______
বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইশা আর তীরকে ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে কিন্তু তীর সাড়া দিচ্ছে না ইশার ডাকে।
–তীর দরজাটা খুল এমন করিস না প্লিজ। তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে প্লিজ দরজাটা খুল।
কোনো লাভ হচ্ছে না ইশার কথায়। তীর যেন পণ নিয়ে রেখেছে আজকে আর এই বন্ধ দরজা খুলবেই না। তবে ইশাও ছাড়ার পাত্রী নয় এই বন্ধ দরজা সে তীরকে দিয়ে খুলিয়েই ছাড়বে। ইশা নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু একটা ভেবে গম্ভীর গলায় বলে।
–তীর তুই যদি এই মুহূর্তে দরজা না খুলিস তাহলে জেনে রাখিস তোর সাথে আমার পাঁচ বছরের যেই বন্ধুত্বের রিলেশন ছিলো সেটা আমি ভেঙে দিবো।
ইশার কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু তীরের দরজা খুলতে কোনো প্রকার বিলম্ব হলো না। তীর দরজা খুলার সাথে সাথে ইশা ঘরের ভেতরে ডুকে বলে।
–সমস্যাটা কি তোর তীর? এভাবে দরজা বন্ধ করার মানে কি? তুই জানিস কতোটা চিন্তায়…
থেমে যায় ইশা তীরের অসহায় মুখশ্রী দেখে। মেয়েটা এতক্ষণ ধরে এমন ভাবেই কেঁদেছে যে চোখের পানির দাগ পরে গেছে গালে। তীরের চোখের পানি ফুড়িয়ে গেছে কিন্তু ফুপানো থামছে না। ইশা তীরকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখে তীরের গায়ে এখনো খয়েরি রঙের কাতান শাড়িটা আছে। রেশমি কালো চুল গুলা এলোমেলো হয়ে আছে। দু চোখের কোণদ্বয় লাল হয়ে আছে অতিরিক্ত কান্না করার ফলে। ইশা প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর এমন অবস্থা দেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে তীরের কাছে দু কদম এগিয়ে এসে বলে।
–সামান্য একটা বিষয়ের জন্য নিজেকে কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস তীর?
তীর ভাঙ্গা গলায় বলে।
–এটা তোর কাছে সামান্য মনে হচ্ছে। মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে ইশু। আর মা যা বলে তাই করে ছাড়ে সেটা তোর অজানা নয়।
–শিসসসস। এতো উত্তেজিত হওয়ার কিচ্ছু হয় নি। ভাইয়া আছে তো ভাইয়া সব কিছু ঠিক করে দিবো।
তীর তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে।
–ওনি নেই। ওনি যদি থাকতো তাহলে আমার ফোনটা আজকে ধরতো। এভাবে আমার ফোনটা ইগনোর করতে পারতো না। আমি আজকে ওনাকে কতো গুলা ফোন দিয়েছি জানিস তুই।
–তীর তুই ভুল বুঝছিস ভাইয়াকে। ভাইয়া তখন একটা মিটিংয়ে ছিলো তাই তোর কল ধরতে পারি নি। আর ভাইয়া তোর বিয়ের খবরটা জানার পর থেকেই তোকে কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তুই কল না ধরে উল্টে ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছিস।
তীর অভিমানী কন্ঠে বলে।
–ওনার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই।
–দেখ তীর ভাইয়া তোর জন্য ছাদে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। এই কথাটা তোকে বলার জন্যই আমার এখানে আসে।
–ওনি কেন ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা করে ওনি ওনার ইম্পর্টেন্ট মিটিং নিয়ে পড়ে থাকুক। আমি মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে নিবো। মায়ের ইচ্ছেটাই আমি পূরণ করবো।
–সেই ইচ্ছেটা তোর মায়ের কোনো দিন পূরণ হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি চাইবো।
পরিচিত গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ শুনে দুই মানবী হতবাক হয়ে দরজা দিকে তাকাতেই চোখ দুটো রসগোল্লার ন্যায় আপনাআপনি বড় হয়ে যায়। ছাদে প্রায় ১৬ মিনিট যাবত ইশান তীরের জন্য অপেক্ষায় ছিলো কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া তীর ছাদে যাওয়ার কোনো নাম গন্ধই নেই। ইশানেরও সকল ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় তীরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে। এক পর্যায়ে রা’গের বশে কোনো দিক বেদিক না ভেবেই তীরদের ছাদের দরজা দিয়ে তীরের ঘরের সামনে এসে হাজির হয় ইশান। সশরীরের ইশানকে দেখে তীর আর ইশা চমকে উঠে। ইশা হতভম্ব হয়ে বলে।
–ভাইয়া তুমি এখানে কি করে?
–তুই ঘরের বাইরে যা ইশু। ওর সাথে আমার কথা আছে।
তীর ইশাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
–ইশু বলে দে ওনাকে ওনার সাথে আমি কথা বলতে ইচ্ছুক নই। আর এটাও বলে দে ওনি যেন আমার ঘর থেকে এক্ষুনি চলে যান। ওনাকে আমার পরিবারের কেউ দেখলে সমস্যা হতে পারে।
ইশান দাঁতে দাঁত চেপে বোনকে বলে।
–ইশু কি বলছি তোকে শুনতে পাস নি বাইরে যা আর খেয়াল রাখ যেন কেউ এই ঘরের আশেপাশে না আসে।
–ভাইয়া তুমি আমার কথাটা….
–বাইরে যা।
ইশা মাথা নিচু করে ঘর থেকে চলে যায়। আর এদিকে তীর ক্ষো’ভে সাপের মতো ফুঁসছে। ইশা যেতেই ইশান ঘরের সিটকানি লাগাতেই তীর চেঁচিয়ে বলে।
–আপনি দরজা আটকাছেন কেন?
ইশান তীরের দিকে ফিরতেই দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিললো দুজনের। ইশান শীতল দৃষ্টি নিয়ে তীরের দিকে তাকিয়ে। তীর বেশিক্ষণ ইশানের দিকে তাকিয়ে তাকতে পারলো না অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে।
–কি সমস্যা আপনার? এভাবে একটা মেয়ের ঘরে চোরের মতো কেন এসেছেন? মিনিমাম আত্মসম্মানটুকু কি আপনার মাঝে নেই।
তীরের মুখে এমন কথা শুনে ইশানের দাঁতের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে রা’গে। কয়েক কদম তীরের কাছে এগিয়ে এসে কিরিমিরি করে বলে।
–বুঝতে পারছিস না! কেন এভাবে চোরের মতো তোর ঘরে এসেছি। নাকি না বুঝার ভান করছিস।
–আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না আপনি এই ঘর থেকে এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাবেন।
ইশানের রা’গের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। যতো চেষ্টা করছে তীরের সাথে রা’গ না দেখানোর জন্য ততোই যেন তীর ইশানকে রা’গিয়ে দিচ্ছে। মানুষ এর জন্যই বলে পুচকে মেয়েদের সাথে প্রেম করতে যেও না তারা অল্পতে একটু বেশি বুঝে ফেলে। ইশানকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তীর পুনরায় বলে।
–কি হলো এভাবে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ঠিক আছে আপনি এই ঘরে থাকুন আমি বরং এই ঘর থেকে চলে যাই।
তীর দরজার কাছে গিয়ে সিটকানি খুলতে যাবে ওমনি ইশান তীরের দু হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরে গম্ভীর কন্ঠে বলে।
–আমার উপরে রা’গ করেচ্ছিস ভালো কথা। কিন্তু এই নয় যে আমাকে তুই ইগনোর করে এই ঘর থেকে চলে যাবি। আমি এতোটা রিস্ক নিয়ে তোর সাথে কথা বলতে এসেছি আর তুই আমাকে ইগনোর করে এই ঘর থেকে চলে যাবি সেটা তো হবে না।
ইশানের তপ্ত নিঃশ্বাস তীরের সারা মুখে আছড়ে পড়ছে তাতে যেন তীরের শরীর অসাড় হয়ে আসছে। তীর গলার স্বর নিচু করে বলে।
–ছাড়ুন।
–ছাড়বো না। আগে আমার কথা শেষ হোক তারপর ছাড়াছাড়ি।
–আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই।
–কিন্তু আমার তোর সাথে কথা আছে আর তুই শুনতে বাধ্য।
তীর কোনো কথা বলে না নজর অন্য দিকে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। ইশান তীরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে বলে।
–ফোন বন্ধ করেছিস কেন?
–আমার ইচ্ছে তাই ফোন বন্ধ করেছি।
–দেখ তীর তুই যদি আমার উপরে প্র’তি’শো’ধ নেওয়ার জন্য তোর ফোন অফ করে থাকিস তাহলে তুই একটা বোকা।
তীর অবাক চোখে ইশানের দিকে তাকায়। নিজে ফোন অফ করে রাখলে কিছু না তীর ফোন অফ করলেই যত বোকামি।
–দেখ তীর তুই যখন ফোন দিচ্ছিলি আমি তখন মিটিংয়ে ছিলাম তাই আমি তোর কল ধরতে পারি নাই। আর আমি যদি এটা জানতাম তুই কেন আমাকে কল দিচ্ছিস তাহলে আমি অবশ্যই কল পিক করতাম তোর।
তীর মৃদুস্বরে বলে।
–মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
ইশান ছোট্ট করে উত্তর দেয়।
–জানি তো।
–আমি অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে চাই না। আমি তো আপনাকে ভা…
থেমে যায় তীর ইশানের দিকে থেকে নজর ফিরিয়ে নিয়ে মেঝেতে তাকায়। তীরকে থেমে যেতে দেখে ইশান বলে।
–আমাকে কি?
–আপনি জানেন সেটা।
ইশান তীরের দু হাত ছেড়ে বাম হাত তীরের কোমড়ে রেখে তীরের দিকে ঝুঁকে কানের কাছে নিজের মুখ নিতেই থরথর করে কেঁপে উঠে তীর। অন্য দিকে ইশান কন্ঠে মাদকতা মিশিয়ে বলে।
–জানি না আর জানলেও তাতে কি! সেটা তুই মুখে বল আমি শুনতে চাই।
তীরের গলা শুকিয়ে আসছে। দুরুদুরু করে কাঁপছে বুকের ভেতরটা। সেই কম্পনের আওয়াজ নিশ্চিত ইশানের কানে পৌঁছৈ গেছে। তার সামনের লোকটা যে অন্য রকম আচরণ করছে তার সাথে। মনে হচ্ছে যেন অন্য এক ইশান দাঁড়িয়ে আছে তার সম্মুখে। তীর ইশানকে নিজের সত্ত্বার মাঝে ফিরিয়ে আনার জন্য অস্পষ্ট স্বরে বলে।
–ইশান ভাই আপনি এখন যান কেউ যদি জানে আপনি এখানে তাহলে…
তীরের কথা আটকে যায় ইশানের এক অদ্ভুত কান্ড ঘটানোর জন্য। বড় বড় চোখ করে ইশানের ঘাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে তীর। বা কানের লথিতে এখনো হালকা ব্যথা অনুভব করছে। একটু আগেই ইশান তীরের মুখে ভাই ডাকটা শুনে রে’গে তীরের কানের লথিতে কাঁ’ম’ড় বসিয়ে দেয়। ইশান তীরকে নিজের সান্নিধ্যে এনে গম্ভীর কন্ঠে সুধায়।
–আমি তোর কোন কালের ভাই লাগি যে তুই আমাকে ভাই বলে ডাকিস।
তীর কা’পা’কা’পা গলায় বলে।
–না মানে আমি আসলে।
–নেক্সট টাইম তোর এই শ্রুতি মধুর কন্ঠে যেন এই তিক্ততা ময় শব্দটা না শুনি মনে থাকবে।
তীর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। ইশান সোজা হয়ে তীরের মুখোমুখি হয়ে দু হাত দ্বারা তীরের মুখটা আগলে ধরে উঁচু করে বলে।
–আর রইলো তোর বিয়ে। তোর বিয়ে এই ইশান ফরাজীর সাথে হবে। যতোই বাধা আসুক না কেন তোকে এই জীবনে আমি ছাড়ছি না। তাই এতো কান্নাকাটি করে নিজেকে আর কষ্ট দিবি না মনে থাকবে আমার কথা।
তীর মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বলে। কিন্তু আজকে যেন তীরের অবাক করার দিন হয়ে গেছে। সকলে আজকে তাকে একে একে চমকে দিচ্ছে। এবার হুট করেই ইশান তীরের গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় শব্দ করে চু’মু বসিয়ে দেয়। কাজটা এতোটাই দ্রুততার সাথে ঘটেছে যে তীর অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে আছে ইশানের মুখ পানে। ইশানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। ইশান মাথাটা চারপাশে ঘুড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে তীরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু জোড়া নাচিয়ে পুনরায় বলে।
–কিহ? শকড হয়ে গেছিস নাকি! এখন থেকে মাঝে মাঝে এমন শক খাওয়াবো তোকে ভাবছি।
ইশানের কথা শুনে তীর লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয়। এখনো অপ্রত্যাশিত চু’মুর শব্দটা যেন তার কানে বারি খাচ্ছে বার বার। ইশান প্রিয়তমার লজ্জা রাঙ্গা মুখশ্রীতে কিছুক্ষণ নজর রেখে বলে।
–আমাকে এখন যেতে হবে তীর। না জানি তো হিটলার মা কখন চলে আসে আমাদের বাড়ি থেকে।
তীর ছোট্ট করে উত্তর দেয়।
–হুম।
–আসি তাহলে।
তীর দরজার সামন থেকে সড়ে দেয়। ইশান মুচকি হেসে দরজার সিটকানি খুলার জন্য উদ্যত হলেও কিছু একটা মনে পড়ে থেমে গিয়ে হঠাৎ করেই তীরের দিকে ঝুঁকে যায়। ইশানের এমন কান্ডে তীর দু কদম পিঁছিয়ে গিয়ে ইশানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। ইশান তীরের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বলে।
–শাড়িতে তোকে অনেক বড় বড় লাগে জান একে বারে….
থেমে যায় ইশান অন্য দিকে তীর ভ্রু কুচ করে ইশানের দিকে তাকিয়ে। ইশান বাঁকা হসে বলে।
–না থাক কথাটা না হয় বিয়ের পরেই তোকে বলবো।
বলেই ইশান দরজা খুলে দ্রুত চলে যায় আর বেশিক্ষণ এখানে থাকা যাবে না। আর কিছুক্ষণ থাকলে একটু আগে যা ঘটেছে এর থেকে বেশি কিছু ঘটে যেতে পারে। তীর চিন্তিত মুখে ইশানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। তাকে শাড়িতে কেমন লাগে সেই চিন্তাই করছে। ইশান চলে যেতেই ইশা ঘরে ডুকে বলে।
–কিরে সব ঠিকঠাক হলো তদের মাঝে। তদের নিয়ে পড়েছি আমি এক মহা জ্বালায়। দুজনেরেই রা’গে’র সীমা এক। কারো থেকে কারো কম নয় বাবাগো।
ইশা তীরকে চিন্তিত দেখে বলে।
–কিরে কি হয়েছে তোর এমন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
–কিছু হয় নি তুই এখন তোর বাড়ি যা।
–হুম এখন তো বলবেই চলে যেতে সব ঠিক হয়ে গেছে না। ঠিক আছে আমিও বরং যাই এখন।
ইশা চলে যেতেই তীর নিজের ঠোঁটে হাত রাখে। ইশানের ঠোঁট তার ঠোঁট ছুঁয়েছে ভেবেই দু হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ডেকে নেয়। একি হয়ে গেলো আজকে তার সাথে। লজ্জায় তো মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
#চলবে_________
2000+ শব্দ তাই ছোট বলে শরম দিবেন না। আর কি মনে হয় ইশান তীরের বিয়ে শান্তিতে হবে নাকি দুজনের মাঝে বিচ্ছেদ হবে।