মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৮

0
304

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
ক্লাসের গ্যাপে নিজের অফিস রুমের ডেস্কে বসে কাজ করছিল মীরা। তখন পিয়ন এসে জানায়, কেউ তার সাথে দেখা করতে এসেছে। মীরা আসতে অনুমতি দিয়ে দেয়। সচরাচর এভাবে কেউ আসার অনুমতি চায় না। কে এসেছে তবে? মীরা বেশি একটা ভাবলো না। নিজের কাজে মন দেয়। দুইটা ক্লাসের কুইজের খাতা গুলো দেখে ফেলছিল। হঠাৎ তার কর্ণকুহরে বাচ্চা কণ্ঠ পৌঁছানো মাত্রই তৎক্ষণাৎ মাথা উঁচু করে তাকায়। সামনে মিসেস শাহিদা ও ফ্রিশা দাঁড়ানো। ফ্রিশার পড়নে স্কুল ইউনিফর্ম। ফ্রিশা ছুটে এসে মীরার কাছে দাঁড়ালে, মীরা আগলে নিয়ে অবাক কণ্ঠে শুধায়,

“তুমি স্কুল থেকে এখানে এসেছ, বাচ্চা?”

“ইয়েস, মামনি।”

এবার মিসেস শাহিদা মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসে বলেন,
“তোমার মেয়ের জোড়ালো বায়না, সে আজ তার ফেইরি আন্টি ওরফে মামনির ভার্সিটিতে যাবেই। আর ফ্রিশার জেদ মানে তো!”

মীরাও হাসে। তারপর ফ্রিশার গাল টেনে দিয়ে হাসি মুখে মিসেস শাহিদাকে বলেন,
“ওর জেদই যে আপনার দিনটা মাতিয়ে রাখে তা তো বুঝতেই পারছি।”

মিসেস শাহিদা হেসে অফিস রুমটার চারিপাশে নজর দেয়। রুমে আরও দুটো ডেস্ক আছে কিন্তু এখন এখানে তারা তিনজন বাদে কেউ রুমে নেই। মীরা পিয়নকে ডেকে চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলে সাথে ফ্রিশার জন্য ক্যান্টিন থেকে জুস ও বার্গার আনতে পাঠায়। ফ্রিশা আশেপাশে দেখে প্রশ্ন করে,

“মামনি, তোমার রুমে আর কেউ নেই কেনো? বাবার রুমে তো আরেকটা আঙ্কেল আছে।”

“আছে তো। উনারা ক্লাসে আছেন, বাচ্চা। চলে আসবেন।”

ফ্রিশার বিরামহীন প্রশ্ন,
“ফেইরি আন্টি, তোমার রেড ভালো লাগে?”

“রেড? উম.. হ্যাঁ। কেন? তোমার ভালো লাগে না?”

“লাগে কিন্তু অল্প।”

মীরার হালকা হেসে অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
“তাই? তা হঠাৎ তোমার রেডের কথা মনে পড়লো কেন?”

“জানো মামনি, কাল তোমার জন্য শাড়ি কিনেছে দাদুমনি। দাদুমনি শুধু রেড শাড়ি দেখছিল। কিন্তু আমার ভালো লাগছিল না। আমি একটা পিঙ্ক শাড়ি দেখালাম। দাদুমনি বলে, তোমার নাকি রেডটাই পছন্দ হবে।”

মীরা মিসেস শাহিদার দিকে তাকায়। মিসেস শাহিদা বলেন,
“ও আসলে এই জন্যই এসেছে। লাল বেনারসি ওর একটাও পছন্দ হচ্ছে না। হেবি ডিজাইন হলে তো আরও আগে না।”

মীরা হেসে বলে,
“তাহলে রেড বাদ। পিঙ্ক তো অনেক সুন্দর। ফ্রিশারটাই ফাইনাল।”

ফ্রিশা খুশিতে ডগমগিয়ে ওঠে। মীরাকে জড়িয়ে ধরে গালে তার আদরের বহিঃপ্রকাশ করে বলে,
“দেখেছ দাদুমনি, ফেইরি আন্টির আমারটাই পছন্দ হয়েছে।”

মিসেস শাহিদা ও মীরা একে-অপরের দিকে চেয়ে হাসে। মিসেস শাহিদা প্রশ্ন করেন,
“ফ্রিশা, তুমি তোমার মামনিকে একবার মামনি বলছ আবার ফেইরি আন্টি বলছ যে?”

“আমার কাছে ফেইরি ডাকটা ভালো লাগে। তাই দুটো মিক্স করে ডাকি।”

“তুমি তো ফেইরি মামনিও ডাকতে পারো?”

“পারব?”

প্রশ্নটা ফ্রিশা মীরাকে করলো। মীরা মাথা হেলিয়ে সায় দিলে ফ্রিশা কিঞ্চিত ভেবে বলে,
“ফেইরি মাম্মাম বলব? ইটস সো কিউট!”

ইতোমধ্যে নাস্তা চলে এসেছে। মীরা হেসে বলে,
“আচ্ছা সেসব বলবেনে। এখন খেয়ে নাও। চলো তোমাকে হাত-মুখ ধুইয়ে আনি।”

মীরা, মিসেস শাহিদা ও ফ্রিশা ওয়াশরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে আসলো। অতঃপর হাসি-কথাতে নাস্তা খেয়ে নিলো।

_______

এদিকে শেহজাদের কাছে রাদিবের নাম্বার থেকে অনবরত বানোয়াট মেসেজ আসছে। শেহজাদ শুধু দেখছে আর ভাবছে, একটা মানুষ কতোটা নিম্ন শ্রেণীর হলে এতোটা উঠেপড়ে লাগতে পারে। এবার শেহজাদ এসবের এক*শন নিতে সাইবার ক্রা*ই*ম (যদিও জানিনা) সেক্টরে যোগাযোগ করে। রাদিবের ঝামেলা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে।

এদিকে শেহজাদ আজ বর্ণকে ইউনিভার্সিটিতে দেখেছে। শেহজাদ তাকে দেখে স্বাভাবিক বিহেভ করলেও বর্ণ তা করেনি। কেমন একটা এড়িয়ে গেছে। শেহজাদও সেসব নিয়ে খুব একটা ভাবেনি। তার ফুফিজান তাকে জানিয়েছে, ফ্রিশাকে সাথে নিয়ে তিনি ফ্রিশার জেদে মীরার ভার্সিটি গিয়েছেন। মেয়ের জেদের কারণটাও সে বুঝে গেছে। হালকা হেসে নিজের কাজে মন দেয়। শেহজাদের ক্লাস আর আধঘণ্টা পর। আজকে সে একটা কুইজ নিবে। তার প্রশ্ন করা প্রায় শেষ। শুধু আর দুটো প্রশ্ন বাকি। এমন সময় দরজায় নক হলে সে উঠে গিয়ে লক খুলে। দেখে বর্ণ। বর্ণর চোখ-মুখে ফুটে আছে মলিনতা। শেহজাদ নিজের জায়গায় এসে বসে। বর্ণও চেয়ার টেনে বসে চুপ করে আছে। শেহজাদই প্রথমে প্রশ্ন করে,

“পিএইচডির মাঝে এলে?”

“জি স্যার।”

“কাজ শেষ? তিন বছরের তো স্কলারশিপ থাকে।” (আমার ধারনা থেকে)

“কিছুটা বাকি, স্যার। একটা কাজে এসেছিলাম। সেটা হলো না। তাই আবার চলে যাওয়ার আগে একটু ভার্সিটিতে আসলাম।”

“ওহ আচ্ছা।”

আবার দুজনেই নীরব। বর্ণ ইতস্তত করে খানিক সময় নিয়ে শুধায়,
“স্যার, আপনি নাকি আবার বিয়ে করছেন?”

“হ্যাঁ।”

“মীরা কে?”

শেহজাদ মাথা নুইয়ে হাসে। অতঃপর বলে,
“ইউ নো ইট ওয়েল, বর্ণ!”

বর্ণর সাথে শেহজাদের চোখাচোখি হয়। কেমন নিষ্প্রাণ তার আঁখিযুগল। শেহজাদ আবার বলে,
“তুমি নিজে সব নষ্ট করেছ। এখন মীরার লাইফে কী হলো তা নিয়ে না ভেবে নিজের ফিউচারে ফোকাস করো।”

“জি স্যার। থ্যাংকিউ স্যার।”

বর্ণ উঠে দাঁড়ায়। শেহজাদও উঠে দাঁড়িয়ে শুধায়,
“শুনলাম তোমার এক ছেলে আছে? আমি বলব, যদি সম্ভব হয় ছেলের মাকে ফিরিয়ে আনো। তোমাকে ভালোবাসার মানুষ শতশত আসলেও তোমার ছেলেকে ভালোবাসতে হয়তো কাউকে তুমি নিজের লাইফে নাও পেতে পারো। তোমাদের ডিভোর্স তো হয়নি?”

“না স্যার। হয়নি। সেপারেশনে আছি। আপনার কথাটা আমি ভেবে দেখব। আসি, স্যার।”

শেহজাদ মুচকি হাসে। বর্ণ সালাম দিয়ে চলে যায়। শেহজাদ চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর তাড়াহুড়ো করে নিজের কাজ শেষ করে ক্লাসে চলে যায়।

______

দেখতে দেখতে আজ বৃহস্পতিবার। মীরা সকালে ক্লাস শেষ করে বেরিয়েছে মাত্র। এদিকে রাইমা তাকে কল করেছে যাতে এয়ারপোর্ট থেকে তাকে রিসিভ করে। জীবনে প্রথমবার সে বাংলাদেশে আসছে। মীরা তাকে কতোবার বলেছে আগে আগে আসতে, কিন্তু রাইমার তো স্বভাবেই নেই সেটা। ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মীরা উবার ডেকে উঠে পড়েছে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। ঋতুভেদে গ্রীষ্মকাল যায় যায় হলেও আদোও কি যায়! তীব্র গরমে ও ক্লান্তিতে শরীর নেতিয়ে যায় যায় অবস্থা। মীরা এই সামান্য পথেও বারকয়েক ঘুমে ঢলে পড়েছে! অবশেষে এয়ারপোর্টে পৌঁছে। এয়ারপোর্টে গিয়ে রাইমাকে খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। রাইমা ও কুঞ্জ একসাথে এসেছে। কুঞ্জ আগে একবার বাংলাদেশে এসেছিল বলে তার কিছুটা ধারনা ছিল।
অতঃপর তিনজনে উবারে বসা। ড্রাইভার সহ তিন জন মনোযোগী শ্রোতার উদ্দেশ্যে চলছে রাইমার বিরামহীন কথার ফুলঝুরি। মীরা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছে। ঘাড়ের কাছে কম্ফি কুশন দেওয়া ছিল বলে ঘুম যেন আরও ঝেঁকে এসেছে। কুঞ্জ বলে,

“রাই, মেয়েটা টায়ার্ড। সন্ধ্যা থেকে ওকে এক্টিভ থাকতে হবে। ঘুমাক।”

“উপস সরি। কতোদিন পর সামনাসামনি দেখছিলাম তো। তাই কথাগুলো আর কন্ট্রোল রাখতে পারিনি।”

“বুঝলাম। এখন ভালো মেয়ের মতো বসে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনো। মীরার ফোনের ম্যাপ বলছে আর বেশি সময় লাগবে না।”

এমনিতে হলে রাইমা ইচ্ছে করে কথা প্যাঁচাতো। কুঞ্জর সাথে কথার ভুল ধরে সে খুব মজা পায়। এরপর যখন কুঞ্জ মাফ চায় তখন অট্টোহাসিতে ফে*টে পড়ে। কিন্তু আজ মীরার ক্লান্ত ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে আর ইচ্ছে হলো না। নিজেও এক হাতে মীরার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

_______

বাড়ি ফিরে মীরা ফ্রেশ হয়ে, নামাজ পড়ে, খেয়ে ঘুমাতে চলে গেছে। এদিকে মলি জাহানের সাথে রাইমার বেশ সখ্যতা হয়ে গেছে। রাইমা নিজের কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে। তাতে শারমিন, নিধি সহ মীরার চাচি, ফুফি, মামি, খালারাও যোগ দিয়েছে। দুপুরের খাবার খেয়ে যেন তাদের আড্ডার আসর বসেছে।
সন্ধ্যার আধঘণ্টা আগে মীরা ঘুম থেকে উঠে দ্রুত আসরের নামাজ পড়ে নিলো। তারপরেই দরজায় অনবরত ঠকঠক আওয়াজে বুঝে গেল কে এসেছে! দরজা খুলে দেখে তার সন্দেহই সত্যি। রাইমা হাতে বড়ো একটা প্লেটে করে কয়েক ধরনের ফ্রুট কে*টে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। আম, কলা, আঙুর, ড্রা*গ*ন, লিচু, তরমুজ, জাম, আপেল ও নাশপাতি। মীরা দরজা খুলতেই প্লেটটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

“ফিনিশ দিস।”

মীরা অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,
“মানে!”

“মানে সিম্পল। লক্ষী মেয়ের মতো প্লেটের সব ফ্রুট তোকে খেতে হবে।”

মীরা হা করে রাইমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। রাইমা ওর মুখে এক টুকরো আপেল পু*ড়ে দিয়ে মুখটা বন্ধ করে দিলো। অতঃপর বলল,
“ফ্রুটে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। তোর স্কিনের জন্য বেস্ট। দুই-তিন দিন ধরে যা যাবে! সো ফিনিস দিস। বায়!”

এই বলে রাইমা রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাহির থেকে দরজার শিটকিনি সিস্টেম দিয়ে লাগিয়ে দিলো। মীরা অলস ভঙ্গীতে ফলভর্তি প্লেটগুলোর দিকে চেয়ে আছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
দুইদিন ধরে আমি খুব ক্লান্ত। ভার্সিটি থেকে ফিরে সন্ধ্যা হলেই ঘুমিয়ে গিয়ে সাড়ে আটটার পর উঠি। দুইদিন মিলিয়ে এর থেকে বেশি লিখা সম্ভব হলো না। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here