মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৫

0
315

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৫
শেহজাদকে নিরব দেখে ভীত হলো ফিওনা। মনের অভ্যন্তরের ঝড়ের বহিঃপ্রকাশ তার নেত্রকোণ বেয়ে সরু অশ্রুরেখা ও রক্তিম মুখাবয়বই প্রকাশ করে চলেছে অবিরত। কান্নার শব্দগুলো যেন কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করে রেখেছে। শত চেষ্টার পরও গলা দিয়ে একটা শব্দও বের করতে পারলো না সে। এদিকে শেহজাদ বুঝতে পারছে না, সে কী করবে? ৬ বছরের বেশি সময় যাবত পরিচয় কিন্তু কখোনো ফিওনার জন্য তার তেমন কোনো অনুভূতি হয়নি। সে নিজের মনকে শান্ত করতে রোড সাইডের উঁচু জায়গায় বসলো। অতঃপর ফিওনাকে প্রশ্ন করলো,

“আর ইউর ফাদার এন্ড গ্র্যান্ডমা এওয়ার অফ দিস? (তোমার বাবা আর দাদি কি এটা জানেন?)”

ফিওনা বড়োসড়ো ঢোক গিলে, কোনোমতে বলল,
“দে নোও, আই লাভ ইউ। বাট এবাউট রিলিজিয়ন, আই ডিডেন্ট ডিসকাস উইথ দেম।”

“ওহ!”

প্রত্যুত্তর করো শেহজাদ ফের ভাবনায় ডুব দিলো। ফিওনার কণ্ঠস্বর তার কাছে স্বাভাবিক শোনায়নি। ফিওনার মুখের দিকে তাকালে লক্ষ্য করে, মুখশ্রীতে রক্তিমাভাব ফুটে ওঠেছে। বিকেলের শেষ সময়, সূর্যের তেজ মিয়িয়ে আছে। তাছাড়া আমেরিকায় এখন বসন্ত ঋতু। শীতের মৃদু আমেজ ও বসন্তের স্নিগ্ধতায় ভরপুর। তাহলে এই র*ক্তিম আভার কারণ কি শঙ্কা? হবে তাই হয়তো! এই ভেবে শেহজাদ ফিওনাকে বলল,

“লেটস গো।”

ফিওনা হতবুদ্ধির মতো শুধায়,
“হোয়ার?”

শেহজাদ উত্তর দিলো না। নিজেই ফিওনার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফিওনাও নিরবে তাল মিলিয়ে চলতে লাগে। তারপর শেহজাদ ফিওনাকে নিয়ে নিজের বাড়ির কাছে আসে। ফিওনাকে বাড়ির ভেতরে যেতে বলে সে কোথাও একটা চলে যায়। ফিওনা দুরুদুরু হিয়ায় শেহজাদের বাড়ির ভেতরে ঢোকে। অদূর ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে তা সম্পর্কে ধারণা করতেও তার হৃদয় বারংবার কেঁপে ওঠছে। শেহজাদের বাবা-মা, ফিওনাকে দেখে খুশিই হয়। উনারা এখনও ফিওনার এখানে আসার কারণ জানেনা। ভেবেই নিয়েছে প্রত্যেকদিনের মতো আজও ফিওনা গল্প করতে এসেছে। প্রায় কিছু সময় পর হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠে। শেহজাদের মা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখেন, শেহজাদ ফিওনার বাবা ও দাদিকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। শেহজাদের মা উনাদের হাসিমুখে স্বাগত করেন। তারপর ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেন,

“আজ কোনো কিছু আছে নাকি? হঠাৎ স্যার ও আন্টিকে নিয়ে এলে।”

“ওয়েট করো, মা। এখনি জানতে পারবে।”

শেহজাদ মাকে নিয়ে সবার কাছে যায়। সেখানে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“ফিওনা চেইঞ্জড হার রি*লিজি**য়ন টু ম্যারি মি। নাউ ইউ গাইজ টেল মি, হোয়াট শুড আই ডু? আই ডোন্ট নো হাউ টু রিয়াক্ট। (আমাকে বিয়ে করার জন্য ফিওনা তার ধ*র্ম পরিবর্তন করেছে। এখন আপনারা বলুন, আমি কী করব? আমি বুঝতে পারছি না, কী প্রতিক্রিয়া দিব।)”

উপস্থিত সকলের চোখে মুখে বিস্ময়ের রেশ। সবাই একযোগে ফিওনার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। ফিওনা ভীত অবস্থায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। ফিওনার বাবা প্রফেসর হ্যারি লম্বাশ্বাস নিয়ে বললেন,

“ইটস হার চয়েজ। সি ইজ ম্যাচিওর এনাফ টু মেইক হার অওন ডিসিশন। এন্ড আই রেসপেক্ট দ্যাট। (এটা তার পছন্দ। সে তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ম্যাচিওর। আর সেটাকে আমি সম্মানও করি।)”

ফিওনা অশ্রসিক্ত নয়নে ছুটে এসে নিজের বাবার বুকে আ*ছ*ড়ে পড়ে। ফিওনার দাদিও ছেলে ও নাতনীর কাছে এসে নিজের সাথে আগলে নিয়ে চোখের জল ছেড়ে বললেন,
“আই অলসো রেসপেক্ট হার ডিসিশন।”

শেহজাদ প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে নিজের বাবা-মায়ের দিকে তাকায়। উনাদের থেকে ইশারায় উত্তর জানতে চাইলে শেহজাদের মা জবাবে বলেন,
“ফিওনাকে পুত্রবধূ করতে আমার কোনো প্রবলেম নেই। নাউ ইটস ইউর চয়েজ। ডু ইউ একসেপ্ট হার এজ অ্যা ওয়াইফ? অর নট? বিকজ ইউ আর সাপোসড টু লিভ উইথ হার ফর লাইফ।”

শেহজাদের বাবাও, নিজের স্ত্রীর সাথে সহমত পোষণ করেন। শেহজাদ খানিক সময় নিয়ে উপরের দিকে চেয়ে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

“ওকে। আই উইল ম্যারি হার।”

শেহজাদ ছাড়া সবার মাঝে এক আনন্দ অনুভূতি খেলে গেল। শেহজাদের বাবা, এখনি বিয়ে পড়ানোর জন্য চেনা এক হুজুরকে ফোন করতেও চলে গেছেন। সবার উৎসুকতা ও খুশি দেখে শেহজাদ হালকা হাসে। তারপর একটু একা থাকতে নিজের ঘরের দিকে যায়। বিয়ে করার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব কোনো পছন্দ ছিল না। পরিবার যাকে ঠিক করবে, তাকেই বিয়ে করতো। এখানে তার পরিবার রাজি এবং সে একটা মেয়ের পছন্দকেও গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু তার খারাপ লাগছে এই কারণে যে, এই বিয়েটা হওয়ার পেছনের ঘটনাটা। সত্যি কি তার জন্য ফিওনার ডিভোর্স হয়েছিল? সে কারও জীবন নষ্ট হওয়ার কারণ হয়েছে, এটাই তার মনকে বারবার ক্ষ*ত-বিক্ষ*ত করে চলেছে।

রাত ৯টার পর হুজুর এসে বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে যায়। রেজেস্ট্রি আগামীকাল হবে। ফিওনা পুরোটা সময় খেয়াল করছিল, শেহজাদের মধ্যে কোনো উচ্ছাস নেই। তাই ফিওনা নিজ থেকে এসে শেহজাদের পাশে বসে হাত ধরে বলে,

“টেক ইউর টাইম। ওয়ান ইয়ার, টু ইয়ার অর মোর। কিন্তু এট লাস্ট, বি মাইন। আই লাভ ইউ।”

শেহজাদ মুচকি হেসেছিল শুধু। সেদিনের পর সময় অনেক দ্রুত বইতে শুরু করলো। শেহজাদ পিএইচডির জন্য এডমিশন নেয়। প্রফেসর হ্যারিই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ফিওনা ও শেহজাদের বিয়ের পাঁচ মাস পর, হঠাৎ প্রফেসর হ্যারির হার্ট অ্যা*টা*কে মৃ*ত্যু হয়। ওই সময়টাতে ফিওনা ও তার দাদি ভিষণ রকমের ভেঙে পড়েন। শেহজাদ, উনাদেরকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে। বিয়েটা আরও চার মাস আগে হলেও সেদিন থেকেই শেহজাদ ও ফিওনার সংসার জীবন শুরু হয়। পিতৃবিয়োগের শোক কাটিয়ে ফিওনা আগের মতো নিজের ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্সে যোগ দেয়। আস্তে আস্তে সময়ের সাথে সব স্বাভাবিক হতে থাকে। বছর ঘুরতেই শেহজাদের বাবাও না ফেরার দেশে চলে যান। তখন অবশ্য আরেকটা দুর্ঘটনাও ঘটেছিল। যা তখন শেহজাদকে জানানো হয়নি। ফিওনার ২ মাসের প্রেগন্যান্সির মি*সক্যা*রেজ হয়ে গিয়েছিল। এমন একটা দিন যে শেহজাদ পিতৃবিয়োগের বেদনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে নিজের অনাগত সন্তানকেও হারিয়েছে। তাছাড়া শেহজাদ ও ফিওনা জানতোই না প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে। হসপিটালে শেহজাদের বাবার মৃ*ত্যু ও লা*শ নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে শেহজাদ শুধু ফিওনাকে পেটে ব্যাথার জন্য হসপিটালে ভর্তি করিয়ে বাবার দিকটার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেদিনই ফিওনার মিস*ক্যা*রেজ হয়! এবং ফিওনা সবার মনের অবস্থার কথা চিন্তা করে ডাক্তারদের অনুরোধ করে যেন এই খবর আর কাউকে না জানায়।
সময়ের পরিক্রমায় আরও তিন বছরের মতো পেরিয়ে যায়। শেহজাদ পিএইচডি শেষ করে সবে একটা ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিয়েছে। এরইমধ্যে ড: আকবর রেহমান ও মিসেস শাহিদা, শেহজাদকে কয়েকবার পরিবারসহ বাংলাদেশে আসতে বলেছেন। শেহজাদ প্রথমে এই বিষয়ে তেমন ভাবেনি। কিন্তু হঠাৎ একদিন একটা শপিংমলে ফিওনার এক্স হাজবেন্ড মাইকেলের সাথে দেখা হয়। মাইকেল নিজের পূর্বের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চায়। তখন সে মাইকেলের থেকে জানতে পারে, মাইকেল ফিওনার সাথে কোনো রুড বিহেভিয়ার বা চি*ট প্রথমে করেনি। বরং ফিওনাই মাইকেলের প্রতি উদাসীন ছিল। ওদের বিয়ের কয়েকদিন পর যখন মাইকেল লক্ষ্য করেছিল, ফিওনা ঘ*নিষ্ঠ মুহূর্তে আবেগহীন থাকে। তখন মাইকেল কারণ জিজ্ঞাসা করলে ফিওনা বলে দিয়েছিল যে, সে ঝোঁকের বশে বিয়েটা করেছে এবং সে মাইকেলকে ভালোবাসে না। তাই তার থেকে ভালোবাসা আশা না করতে। মাইকেল তারপরেও প্রায় অনেকদিন চেষ্টা করে ফিওনার মনে তার জন্য ভালাবাসার সৃষ্টি করতে। কিন্তু শেষে হার মেনে নিজেও ভালো থাকার উপার খুঁজে নেয়। মাইকেল এটাও বলে যে, ফিওনা যাকে মন-প্রাণ দিয়ে প্রথম থেকে ভালোবেসে এসেছে, সে কেউটা শেহজাদ। তাই মাইকেল শেহজাদের প্রতি একটা ক্ষোভ মনে পুষে রেখেছিল। এজন্যই সেদিন নিজের এরেঞ্জ করা পার্টিতে শেহজাদ ও ফিওনাকে দেখে প্রচণ্ড রে*গে গিয়েছিল। তারপর সেই পোস্টটাও রাগের বশেই দিয়েছিল। মাইকেল তো মাফ চেয়ে চলে যায় কিন্তু রেখে যায় শেহজাদের মনে প্রশ্নদের মূল। শেহজাদ বাড়ি ফিরে প্রথমেই ফিওনাকে নিজের সামনে বসিয়ে প্রশ্ন করে,

“হু ওয়াজ দ্যা হোস্ট অফ দ্যা পার্টি দ্যাট নাইট?”

ফিওনা আঁতকে ওঠে। নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রেখে বুঝতে না পারার মতো করে শুধায়,
“হুইচ পার্টি?”

শেহজাদ চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“আই নো, ইউ আর ওয়েল এওয়ার অফ দ্যাট। সো প্লিজ। টেল দ্যা ট্রুথ। আমাদের নিয়ে যেদিন কথা উঠলো। মাইকেল সিন*ক্রি*য়েট করলো। সেই পার্টির হোস্ট কে ছিল?”

ফিওনা অন্যদিকে ঘুরে অস্থির হয়ে কম্পনরত স্বরে জবাব দিলো।
“আই ডোন্ট নো। ইট ওয়াজ অ্যা রেনডম পার্টি। লেট ইট বি।”

“নো। আই অ্যাম নট, ফিওনা।”

শেহজাদ, ফিওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। একহাতে ফিওনার হাত ও আরেক হাতে ফিওনার থুতনিতে ধরে মুখ উঁচু করে চোখে চোখ মেলায়। ফের শুধায়,
“আই ওয়ান্ট টু নো দ্যা ট্রুথ থ্রো ইউর ভয়েস। (আমি তোমার মুখ থেকে সত্য জানতে চাই।)”

ফিওনা শেহজাদের চোখে স্পষ্ট ক্রোধ দেখতে পেলো। এটাও বুঝতে পারলো যে শেহজাদ জেনেই তাকে প্রশ্ন করছে। সে হতাশা মিশ্রিত নিঃশ্বাস ছেড়ে মাথা নিচু করে বলে,

“সরি। ইয়াহ, ইট ওয়াজ মাইকেল’স পার্টি, এন্ড আই নিও ইট। সরি, শেহজাদ।”

শেহজাদ ফিওনার হাত ছেড়ে বিছানায় মাথা নিচু করে বসে। হাতের আঙুল গুলো একবার মুষ্টিমেয় করছে তো আবার খুলছে। এমন অবস্থাতেই প্রশ্ন ছুঁ*ড়ে দেয়,

“কেন করলে এটা? টু ম্যারি মি? এজন্য আমার ক্যারেক্টারে আঙুল তুলে?”

ফিওনা ব্যকুল হয়ে শেহজাদের পায়ের কাছে বসে। মায়াভরা চাহনিতে বলে,
“নো নো শেহজাদ। তুমি ভুল জানো। আই জাস্ট ওয়ান্টেড হিম টু নো দ্যাট আই ওয়াজন্ট স্যাড বিকজ অফ দ্যা ডিভোর্স। আই অ্যাম হ্যাপি। ইউ আর অলওয়েজ বাই মাই সাইড। দ্যাটস ইট। (আমি চেয়েছিলাম সে জানুক যে বিবাহবিচ্ছেদের কারণে আমি দুঃখে নেই। আমি খুশি। তুমি সব সময় আমার পাশে আছ)”

শেহজাদ তাচ্ছিল্য হাসে। অতঃপর বলে,
“ঝোঁকের বশে বিয়ে করলে। দেন সাডেনলি ইউ রিয়েলাইজ, ইউ আর নট এভেল টু লাভ হিম। তারপর ডিভোর্স! এই সবকিছুর মধ্যে আমি কেন মাইকেলের কাছে কা*ল*প্রি*ট হলাম?”

ফিওনা শঙ্কা ও লজ্জায় মুখ হাত দিয়ে আড়াল করে নেয়। এসবকিছু শেহজাদের জানার কথা না। তাহলে কী শেহজাদ তার ডায়েরি পড়লো। সে দ্রুত ড্রয়ার চেক করে দেখলো, ডায়েরি তার স্বস্থানেই আছে। এটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই শেহজাদ ছোঁ মে*রে ডায়েরিটা নিয়ে বলল,

“এখন আমি সব দেখব। আর কি কি তুমি লুকিয়েছ।”

“প্লিজ, শেহজাদ। নো। গিভ ইট ব্যাক টু মি। প্লিজ।”

শেহজাদ শুনলো না। ফিওনা আরও কয়েকবার বলল, ছি*নিয়েও নিতে চাইলো। কিন্তু শেহজাদ আজ নিজের সিদ্ধান্তে অটল। সে ডায়েরি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। ফিওনা ব্যর্থ হয়ে সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে। তাদের চার বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথমবার সে শেহজাদকে রাগ করতে দেখছে। তাও যেন রাগের স্ফুলিঙ্গ বেড়েই চলেছে। ফিওনা খোলা বারান্দা দিয়ে আকাশপানে চেয়ে উপরওয়ালার কাছে আর্জি জানালো,

“প্লিজ, আল্লাহ। হেল্প মি। আমি শেহজাদকে ভালোবাসি। রিয়েলি ভালোবাসি।”

শেহজাদ, তার বাবার স্টাডি রুমে ঢুকে ডায়েরিটা পড়তে শুরু করলো। ফিওনা এখানে শুধু নিজের ইচ্ছা ও সিক্রেট গুলোই লিখে রাখে। দৈনন্দিন সব লিখে না।
রাত দশটায় শেহজাদ নিজের রুমে আসে। শেহজাদের মা ও ফিওনা দুজনেই সেখানে ছিলেন। শেহজাদের মা উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালেন,

“শেহজাদ, তুমি ঠিক আছ? দেখ যা হয়েছে, ভুলে যাও। চার বছর তো তোমরা ভালোই ছিলে। কিছু সত্য আমরা কেউ জানতাম না। তারপরও তো ভালো ছিলাম, বলো? কিছু সত্য সামনে না আসাই ভালো।”

শেহজাদ রো*ব*টের মতো বলে,
“জানো মা, আমার ইউনিভার্সিটিতে এই সেমিস্টার আজকে শেষ হলো। তাই শপিংমলে গিয়েছিলাম, তোমাদের জন্য শপিং করতে। কিন্তু যা জানতে পারলাম তাতে আমার কাছে… মা, তোমার ছেলের বউয়ের যে মি*সক্যা*রেজ হয়েছে, এটা জানতে?”

শেহজাদের মা অবাক হয়ে ফিওনার দিকে তাকায়। তারপর অবাকমিশ্রিত কণ্ঠে জবাব দেয়,
“মি*সক্যা*রেজ? কবে? ও প্রেগন্যান্ট হলো কবে?”

“ও নিজেও জানতো না যে প্রেগন্যান্ট। বাবার মৃত্যুর দিন মি*সক্যা*রেজ হয়েছিল। আমিই তো ও-কে পেটব্যথা নিয়ে হসপিটালে এডমিট করেছিলাম। তখন ডাক্তার বলেছিল, ফুড প*য়জ*নিংয়ের জন্য পেইন হচ্ছে। এতকিছু আমার থেকে লুকানোর মানে কী? বেবিটাতো আমারও ছিল।”

শেহজাদের মা ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে পাশ থেকে আগলে নিলেন। শেহজাদ ফের বলল,
“মা, আমি স্পেস চাই। আমি ফুফিজানের কাছে যাব। নিজের দেশে যাব। প্লিজ আমাকে আটকাবে না। এখানে থাকলে ওর সাথে সম্পর্ক আরও তিক্ত হবে। আমি পরশু ফ্লাইটেই চলে যাব। টিকিট বুক করাও হয়ে গেছে।”

ফিওনা ও শেহজাদের মা হতবাক হয়ে শেহজাদের দিকে চেয়ে আছে। ফিওনা কাঁদতে কাঁদতে শেহজাদের পায়ে পড়তে নিলে শেহজাদ সরে যায়। ফিওনা বলতে থাকে।
“প্লিজ, ডোন্ট গো। অাই অ্যাম সরি। আমি ভুল করেছি। লাস্টবার মাফ করে দাও।”

শেহজাদ কিছু না বলে ড্রয়ার থেকে নিজের পোষাক নিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
এই পর্বে কাউকে ধ*র্মীয় দিকে আ*ঘা*ত করার জন্য লেখা হয়নি। এতোদিন সত্যি বলতে কফের সাথা ব্লি*ডিং হচ্ছে। নিজের জন্মদিনের দিন সকাল থেকে কফ ও স*র্দির সাথে ব্লি*ডিং শুরু হয়। এখনও কফের সাথে সামান্য হয়। দোয়ায় রাখবেন।
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here