পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) #পর্বঃ১৩ #Jhorna_Islam

0
454

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১৩
#Jhorna_Islam

সৌন্দর্য প্রথমে ভেবেছিলো ইচ্ছে মতো কথা শুনাবে মা মেয়ে কে। কিন্তু তার সব ভাবনা চিন্তায় জল ঢেলে দিয়েছে মা মেয়ে মিলে।এখন মনে হচ্ছে এখানে এই মুহুর্তে না আসলে অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখা মিস হয়ে যেতো। চোখ দুটো কেমন মুগ্ধতায় ছেয়ে গেছে।

ফাতিহা নূরের কাধে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। নূর খুব যত্ন সহকারে ফাতিহার মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম মুছে দিচ্ছে তাও আবার নিজের গায়ে জড়ানো উড়না দিয়ে। ফাতিহার চোখে মুখে কি সুন্দর প্রশান্তির ছাপ মনে হচ্ছে এই প্রথম মেয়ে টা কে সৌন্দর্য এতো প্রফুল্লিত দেখছে। মায়ের ভালোবাসার আর আদর যত্নের কি কোনো তুলনা হয়? উহুু কিছু দিয়ে হয় না সে যতোই বাবা,দাদা,দাদি আদর ভালোবাসা দেখ না কেনো।সৌন্দর্যের এতো সুন্দর মুমেন্টটা কেন জানি স্মৃতি হিসেবে ক্যামেরা বন্দী করে রাখতে ইচ্ছে হলো।যেই ভাবা সেই কাজ পকেট থেকে ফোন বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি ক্লিক করে নেয় সৌন্দর্য। পকেটে আবার ফোনটা ঢুকিয়ে ঐখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।

নূর কি যেনো বলছে ফাতিহা কে ফাতিহা হেঁসে হেঁসে জবাব দিচ্ছে। মাঝে মাঝে উচ্চ স্বরে ও হাসির শব্দ এসে প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে। ব্যাপারটা মোটেও মন্দ লাগছে না সৌন্দর্যের কাছে। কিন্তু বেশি সময় এই সুন্দর অনুভূতি উপভোগ করতে পারলো কই?
নূর যে বারবার ফাতিহার মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে উড়না দিয়ে এতে করে সামনের দিক থেকে নূরের উড়নাটা সরে যায়। জামার গলা টা একটু বড় হওয়ায় সামনের দিকে অনেকটাই দৃশ্যমান। নূরদের টেবিলের সামনেই কয়েকজন ছেলে বসে আছে। এরমধ্যে একজন নূরকে যেনো নিজের দৃষ্টি দিয়েই নিজের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। হাতে তার ফোন হয়তো ছবিও তুলছে।সৌন্দর্য এটা দেখে নিজের মাথায় যেনো রক্ত উঠে যায়। হাতের মুঠি শক্ত করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।

দুইজন বসে খাবার খাচ্ছে আরেকজন খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে হা করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে একজন ওয়াশরুমের কথা বলে উঠে চলে যায়। ছেলেটা চলে গিয়ে যেনো সৌন্দর্য কে জায়গা করে দিলো। সৌন্দর্য গিয়ে যেই ছেলেটা উঠে চলে গেছে ঐ ছেলেটার জায়গায় শব্দ করে বসে পরে। সৌন্দর্য শব্দ করে বসায় যেনো নূরের দিকে তাকিয়ে থাকা ছেলেটা কিছুটা বিরক্ত হলো।চোখ মুখ কোচকে নূরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,, আহ্ বাশার ডিস্টার্ব করছিস কেন বলতো? শান্তি মতো বসতে পারিস না নাকি? আমার মনোযোগ হটাচ্ছিস কেন?

“দেখতে পাচ্ছিস না এক ফুল পরির সুন্দর রূপ দেখছি?” ছেলেটা বলে।

-‘ ঐ ফুল পরির সুন্দর রূপ দেখার জন্য সৌন্দর্য আছে। তুই কেন অন্যের জিনিসে নজর দিয়ে নিজের চোখ হারাতে চাচ্ছিস বলতো?

ছেলেটা অন্য কারো কন্ঠে এমন হু’মকি মূলক কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।
আপনি কে? আর আমাকে এসব কথা বলছেন কোন সাহসে? আর আমাদের বেঞ্চে কি করছেন আপনি?

সৌন্দর্য ছেলেটার কথায় নিজের হাত দিয়ে ঘাড় ডলতে ডলতে বলে,,প্রথমত আমার সাহস একটু বেশিই।আর দ্বিতীয়ত তুই ভাবতে পারছিস না তোর সাথে কি হতে চলেছে।

পাগল নাকি আপনি? কিসব আবোল তাবোল কথা বলছেন বলুন তো? ছেলেটা একটু রাগ নিয়েই বলে কথাগুলো সৌন্দর্য কে।

কেন আমি কে সেটা তোর জানতে হবে কেন? সৌন্দর্য জিজ্ঞেস করে।

কারণ আমি অচেনা লোকের সাথে এতো কথা বলি না বলেই ছেলেটা গ্লাস নিয়ে পানি খেতে থাকে।

সৌন্দর্য হাসতে হাসতে বলে, অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলিস না,কিন্তু অপরিচিত মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে পারিস।অন্যর জিনিসে নজর ও দিতে পারিস তাই না?

সৌন্দর্যের এহেম কথায় ছেলেটার নাকে মুখে পানি উঠে যায়।অনবরত কাশতে থাকে। কিন্তু সৌন্দর্য কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। পারলে যেনো চোখ দিয়েই ভ/স্ব করে দেয়।

ছেলেটা কাশি থামিয়ে আমতা আমতা করতে করতে বলে,,মা-মানে?

‘- মানে জানিস না তাই না? এটা কানের নিচে পরলে জানতে পারবি বলেই ঠাস করে চড় লাগিয়ে দেয় সৌন্দর্য।

ছেলেটা চ’ড় খেয়ে আহাম্মক হয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পাশের ছেলেটা বলে আরে ভাই হচ্ছে কি? আপনি এভাবে একজন লোককে বিনা কারণে মারতে পারেন না।আমরা কিন্তু থানায় কমপ্লেইন করবো বলে দিলাম।আপনি এভাবে অচেনা লোকের গায়ে কোনো অন্যায় ছাড়া মেরে ভুল করছেন।

সৌন্দর্য গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে তোর থেকে আমি ন্যায় অন্যায় শিখবো না।আর প্লিজ এসব নীতি কথা শুনাতে আসিস না আমাকে।নিজে না খেতে চাইলে চুপ করে বসে থাক।এতক্ষন চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখে যখন কিছু বলিস নি এখনও কিছু বলার দরকার নেই। আমাদের দুইজনের বিষয় টা আমাদের দুইজনকেই সামলাতে দে ব্রো।

ছেলেটা এবার দ’মে যায় সৌন্দর্যের কথায়। এইদিকে ওরা নতুন। সৌন্দর্যের কথা শুনে মনে হলো এইদিকের কোনো প্রভাবশালী লোকই হবে। ছেলেটা মনে মনে চ’ড় খাওয়া ছেলেটা কে কয়েকটা গা/লি দিয়ে নেয়। কতো করে বলেছে নিজের চরিত্র ঠিক কর, এসব ভালো না একবার ধ/রা খেলে জীবন রফাদফা কে শুনে কার কথা। নে এবার বোঝ ভালো করে।

কিরে একটায় হয়েছে নাকি আরো কয়েকটা লাগবে? সৌন্দর্য কুটিল হেসে বলে।

ছেলেটা তার বন্ধুর দিকে তাকাতেই চোখের ইশারায় সৌন্দর্যের কাছে যেনো ক্ষমা চায় দেখিয়ে দেয়। ছেলেটা কি যেনো ভেবে বলে,,সরি বস ভুল হয়ে গেছে। চোখের সামনে সুন্দর কিছু পরলে চোখ তো যাবেই তাই না?

সৌন্দর্য রাগী লুক নিয়ে তাকায়।

ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বলে না ইয়ে মানে সরি সরি বলেই বিল টা টেবিলে রেখে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

সৌন্দর্য ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিলেক্সে বসে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। নূরদের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে তারা তাদের মতো সময় কাটাচ্ছে।এইদিকে যে এতোকিছু হয়ে গেছে তারা জানতেও পারলো না।

সৌন্দর্য নূর আর ফাতিহার দিকে কিছু সময় নিয়ে তাকিয়ে রয় তারপর গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলে,,আরে এমন ভাবে কেবল সময় উপভোগ করে? আশে পাশে ও তো নজর রাখতে হয় নাকি? কে জানে কখন আশে পাশে ঝড়,তুফান, সাইক্লোন বয়ে যায়।

হুট করে এহেম কথায় নূর ইসরাত ফাতিহা আর আশেপাশের কয়েকজন সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। সৌন্দর্য আশেপাশের লোকদের দিকে তাকিয়ে সৌজন্যে মূলক হেসে বলে সরি গায়েজ ফর ডিস্টার্বিং ইউ ইনজয়। সকলে যে যার মতো আবার ব্যস্ত হয়ে যায়। ফাতিহা সৌন্দর্য কে দেখে খুশিতে হাত তালি দেয়। পরে আইসক্রিম খেয়েছে মাথায় আসতেই নূরের উড়নার নিচে মুখ লুকায়। সৌন্দর্য ফাতিহার কান্ড দেখে ও কিছু বলল না। ঐখান থেকে উঠে এসে নূরের অপর পাশের সিটটায় বসে পরে।

নূর কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। চোখ ঘুরিয়ে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মনের আনন্দে খেয়ে চলেছে। নূরের খুব অস্থির লাগছে।নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে বসে। উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। এটা দেখে সৌন্দর্য নূরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,আই ওয়ার্নিং ইউ নূর নেক্সট টাইম যেটা আমার দেখার কথা একমাত্র আমার হক আছে ঐটায় অন্য কেউ ভাগ বসালে বা নজর দিলে,,নূরের চোখে চোখ রেখে বলে আই উইল কি’ল ইউ! বলেই নূরের মুখে ফু দিয়ে দূরে সরে যায়। নূর এমন হুমকি শুনে ফ্রিজ হয়ে বসে রয়। কি করেছে লোকটা এমন কথাই বা কেন বলছে কিছুই মাথায় প্রবেশ করলো না নূরের।

সৌন্দর্য ওয়েটার কে ডেকে বিল পরিশোধ করে ফাতিহা কে কোলে তুলে নেয়। ওদের চোখের ইশারায় আসতে বলে বেরিয়ে যায়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
সৌন্দর্যের সেই হুমকি মূলক কথা নূরের কানে বার বার এসে যেনো বারি খাচ্ছে। কি এমন করলো সে যে এমন ভাবে কথাগুলো বলল। নূর সারারাত এসব ভেবে ঘুমাতে পারে নি।ইচ্ছে করেছিলো ফোন করে জিজ্ঞেস করতে কেন বলেছে ঐ কথা গুলো। পরোক্ষনে নিজের জড়তার কারণে বলতে পারে নি।সারা রাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে সকালের দিকে নূর ঘুমায়।এরমধ্যে ফোনের বিদঘুটে রিংটোনে আরামের ঘুমের বারোটা বেজে যায়।উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ইসরাত কথার ঝুলি নিয়ে বসে। এখনো বাড়ি থেকে বের কেন হচ্ছে না। ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। কতক্ষন ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। নূর ইসরাতের কথা ঘুমু ঘুমু চোখে শুনে ঘড়ির দিকে তাকায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ চড়ক গাছ। দশ মিনিটের মধ্যে আসছি বলে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পরে নূর।

ইসরাত যখন অপেক্ষা করে হাঁপিয়ে গেছে তখন এসে নূর উপস্থিত হয়।

সরি দোস্ত আজ যে ক্লাস আছে একদম ভুলে গেছি। ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে। কি করবো বল কাল রাতে তো,,, আর কিছু না বলে চুপ হয়ে যায় নূর।

ইসরাত নূরের দিকে তাকিয়ে বলে ঠিক আছে চল যাওয়া যাক।

দুইজন তারাতাড়ি ভার্সিটিতে এসে উপস্থিত হয়। গেইট পেরিয়ে ভিতরে খেয়াল না করে ঢুকতে গিয়ে কিছু একটার সাথে বারি খেয়ে নিচে পরে যায়।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here