#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam
এগুলো সব ফিনিশ করো ফাস্ট বলেই নূরের পাশে এক বস্তা খাবার রাখে সৌন্দর্য। অবশ্য নূরের খাবার দেখে তাই মনে হচ্ছে। নূর খাবারের দিকে তো সৌন্দর্যের দিকে একবার তাকাচ্ছে।
আমার দিকে তাকাতে বলিনি ম্যাডাম খাবার খেতে বলেছি।আমাকে দেখার অনেক সময় পাবে এমনকি সারাজীবন আমাকে দেখে দেখে বোর ও হতে হবে। সো এখন যেটা করলে কাজে দিবে সেটা করো।খাবার গুলো ঠান্ডা হওয়ার আগেই খেয়ে নাও।
–” আ- আমি খাবো না খিদে নেই আমার।
–” সৌন্দর্য ব্রু কোচকে নূরের দিকে তাকিয়ে বলে,,, তুমি কি বললে? আবার একবার বলবে আমি আসলে শুনতে পাই নি।
–” আ-আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না স্যার আমি খাবো না।
তুমি কি চাও তোমাকে এখান থেকে চলে যেতে হোক,? নিশ্চয়ই চাও না তাই না? যদি না চাও তাহলে ফাতিহার বলা গুড গার্লের মতো খেয়ে নাও।
নূরের জোরাজোরি করতে বা কথা বলতে একটুও ইচ্ছে করছে না। সে ভিতর থেকে ভেঙে গুড়ে গেছে। না চাওয়া সত্তেও খাবার হাতে নেয় খাওয়ার জন্য।
নূর খাবার মুখে নিতে নিতে সৌন্দর্যের দিকে তাকায় সে এখন ফোন নিয়ে বিজি। শুকনো ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বলে,, আ- আপনি কিছু খাবেন না স্যার? অনেক বেলা তো হয়ে গেছে।
আমি কফি খেয়েছি আপাতত কিছু খাবো না। খিদে লাগলে পরে খেয়ে নিবো তোমাকে আমার খাওয়া নিয়ে ভাবতে হবে না।
এ-এখানে তো অনেক খাবার আছে। আপনি এখান থেকে নিয়ে খান।
সৌন্দর্য ফোন পকেটে ঢুকিয়ে নূরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর কিছু না বলে নূরের হাত থেকে আধ খাওয়া পাউরুটি টা নিয়ে কামড় বসায়।
আরে স্যার এটাতো আমার এঁটো। ভালো টা নিয়ে খান।
এতকিছু তোমাকে ভাবতে কে বলেছে? খেতে বলেছো খেয়েছি। এবার কথা কম বলে খাওয়া শেষ করো দেন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নূর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা শুনে তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করে।
ডাক্তারের ক্যাবিনে বর্তমানে নূর আর সৌন্দর্য বসে আছে। নূর ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার।হাত কচলাতে কচলাতে মনে হচ্ছে চা’মড়া উঠিয়ে ফেলবে হাতের।ডাক্তার রিপোর্টে চোখ বুলাচ্ছে।
পেশেন্টের কি হোন আপনারা? ডাক্তার জিজ্ঞেস করে।
পেশেন্ট আমার,,,,, কিছু বলতে গিয়ে সৌন্দর্য নূরের দিকে তাকায়, নূরের দিকে তাকিয়েই বলে আমার শ্বশুর আই মিন বাবা হয়।
-‘ ওহ আচ্ছা। (ডাক্তার)
-‘ জ্বি। (সৌন্দর্য)
দেখুন উনার কন্ডিশন যতটুকু মনে হচ্ছে ভালো না।
ডাক্তারের কথা শোনার সাথে সাথে নূর সৌন্দর্যের হাত খামচে ধরে ভীত দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাকায়।
সব খুলে বলুন ডাক্তার সৌন্দর্য সোজাসাপ্টা বলে।
ডাক্তার নড়েচড়ে বসে গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলতে শুরু করে,, দেখুন পেশেন্টের সব রিপোর্ট দেখে যা বোঝা যাচ্ছে উনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আর এটা সম্পর্কে আপনাদের নিশ্চয় কম বেশি ধারণা আছে। তবুও আমি খুলে বলছি সব।
ব্রেইন টিউমার (brain tumor) বা ইনট্রাক্রানিয়াল নিওপ্লাজম এমন একটি অবস্থা যখন মানুষের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হয়।
অপারেশন করতে হবে,,, কিন্তু চান্স খুব কম। খোলাখুলি বললেই ভালো আসলে,,,
কত পার্সেন্ট ডক্টর? সৌন্দর্য জানতে চায়।
ডাক্তার নিজের চশমা ঠিক করতে করতে বলে,, ৯৫% নেগেটিভ আর ৫% পজেটিভ। ডাক্তারের কথা শুনে নূর শব্দ করে কেঁদে উঠে। সৌন্দর্য নূরের দিকে তাকিয়ে ডাক্তারকে বলে,, ডক্টর আমরা এ বিষয়ে পরে কথা বলি?
হ্যা আপনাদের ইচ্ছে।
সৌন্দর্য পরে নিজে আলাদা করে ডাক্তারের সাথে কথা বলে। ডাক্তার জানায় উনার শরীরের কন্ডিশন ততোটা ভালো না কিছুটা উন্নত হলে করাতে হবে। আর যে ডাক্তার অপারেশন করবে উনি বর্তমানে দেশের বাইরে আছে। উনি সপ্তাহখানেক পরে আসবে।সবকিছু উনি আবার পর্যবেক্ষন করে উনি ডিসিশন জানাবে।
আপাতত দুই দিন নূরের বাবা কে হাসপাতাল রেখে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।এই দুই দিন সৌন্দর্য ও হাসপাতালেই ছিলো। নূরের বাবা এখন কিছু টা ভালো আছে তবে ততোটা ও নয়। সৌন্দর্য নিজে ওদের বাড়ি পৌঁছে সবকিছু বুঝিয়ে তারপর বাড়িতে যায়। এই দুই দিন না ভালো মতো ঘুম হয়েছে আর না খাওয়া দাওয়া। সৌন্দর্য নিজেও কেমন অসুস্থ বোধ করছে।তাই ভার্সিটি থেকে এক দিনের জন্য ছুটি নিয়েছে। সিধান্ত নিয়েছে এই একদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবে।কিন্তু নিজে ঘুম আর বিশ্রাম করার ফাঁকে ও একটু পর পর নূর কে কল দিয়ে তার বাবার খোঁজ খবর নিতে ভুলছে না।কিছু লাগবে কি না লাগলে যেনো সাথে সাথে কল করে। লজ্জা নিয়ে যেনো বসে না থাকে বা সৌন্দর্য কিছু মনে করবে কি না এই ধারণা নিয়ে যেনো বসে না থাকে। যখনই দরকার পরবে সেটা রাত দুটো হলেও যেনো তাকে ফোন করে জানানো হয় নয়তো পরে এর জন্য সৌন্দর্য দেখে নিবে বলে হু;মকি দেয়।
সৌন্দর্যের এরূপ কথায় নূর অবাক লোকটা তাদের ভালো করতে চাইছে তাও আবার হু;মকি দিয়ে।
নূর তার বাবার কাছ থেকে নড়ছেই না
।সব নিজের হাতে করছে। বাবার সাথে কতো কথা বলছে। এতোদিনের জমানো সব কথা যেনো ঢেলে দিচ্ছে। নূরের বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়ে শুধু তার করা পাগলামি গুলো দেখছে।ভিতর থেকে শক্ত মানুষ টা ভেঙে গেছে। খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে করে কিন্তু মেয়ে আর বউয়ের সামনে একবারে কাঁদা যাবে না নয়তো ওরা ভেঙে পরবে। মেয়েদের মন ভরে দেখে নিচ্ছে। কেন যেনো মন বলছে আর দেখতে পারবে না। মেয়েদের সাথে আর হাসি খুশি মুহূর্ত ও উপভোগ করতে পারবে না।
***********
নূর রাতের খাবার শেষ করে অনেকটা সময় বাবার সাথে গল্প করে কাটিয়েছে।অবশ্য নূর একা না সাথে তূর আর তার মা ও ছিলো। রাত প্রায় এগারোটা বাজে। নূরের বাবা কে ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। ঔষধের প্রভাবে ঝিমাচ্ছে দেখে গল্পের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেয়। বাবা কে সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দুই বোনই নিজেদের রুমে এসে পরে। নূর বিছানায় শুয়ে ছটফট করে কিন্তু কেন জানি চোখের পাতায় ঘুম ধরা দেয় না। উঠে বসে বই নেয় পড়ার জন্য কিন্তু এতেও মনোযোগ বসে না। শেষে ফোন হাতে নেয়। ফোন অন করতেই দেখতে পায় সৌন্দর্যের মেসেজ। ” ফোন হাতে নিলে মেসেজ দিও কথা আছে। ”
নূর হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে সৌন্দর্য কে মেসেজ দেয়,,জ্বি স্যার বলুন কি বলবেন।
মেসেজ দিয়ে নূর ইসরাতের সাথে কথা বলতে যায়।
মিনিট দুয়েক পরই মেসেজ আসে,,,
কাল সকাল এগারোটার দিকে তৈরি হয়ে থেকো এক জায়গায় যাবো।(সৌন্দর্য)
-” কোথায় যাবো স্যার?
-” গেলেই তো দেখতে পাবে। তুমি তৈরি হয়ে থেকো আমি তোমাকে পিক করবো।
-” কিন্তু?
-” কোনো কিন্তু না।বেশি সময় লাগবে না। আর দরকার আছে বলেই তো বলছি।
নূর কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে যায়। আচ্ছা জানিয়ে ফোন রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
**********
পরের দিন যথাসময়ে নূর তৈরি হয়ে থাকলেও বাইরে না দাঁড়িয়ে বাড়িতেই থাকে। একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন যেনো আনইজি ফিল হচ্ছিল।
সৌন্দর্য নূরদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে দাঁড়ায়। মেয়ে টা কে টাইম দিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখনও আসার নাম নেই।
ঘড়ি ধরে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে সৌন্দর্য। মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে তার। সময়জ্ঞান হীন মানুষদের একদম পছন্দ না। আর এই মেয়ে টা অপছন্দের কাজগুলো ই করছে। সৌন্দর্য ফোন হাতে নিয়ে নূরের ফোনে কল দেয়।
নূর সৌন্দর্যের ফোন দেখে রিসিভ না করে মা বাবা কে বলে বের হয়।
এইদিকে কল রিসিভ না করায় সৌন্দর্য রাগে ফুঁসতে থাকে। এইদিক ওইদিকে তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু হুট করে সামনের দিকে তাকিয়ে নিজের রাগ যেনো সব নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়, এক সাদা পরির স্নিগ্ধ মুখ দেখে।
নূর ধীর পায়ে হেঁটে এসে সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়ায়। নিচের দিকে তাকিয়েই বলে,, আসলে আমি আগেই তৈরি হয়ে ছিলাম। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার আনইজি লাগছিলো তাই আসিনি বাড়িতেই ছিলাম। আপনি কি অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছেন স্যার?
সৌন্দর্য এখনও নূরের দিকেই তাকিয়ে আছে। নূরের কথা গুলো শুনেছে কি না বোঝা গেলো না। নূর সৌন্দর্যের সারা শব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকায়। তারপর সৌন্দর্য কে আবার ডাক দেয়,,,, স্যার?
নো রেসপন্স।
এইবার একটু জোরেই ডাক দেয়। সৌন্দর্য নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,হ-হ্যা?
— যাবেন না?
সৌন্দর্য মনে মনে বলে যাবো কি করে? আমিতো আঁটকে গেছি।
হুম চলো বলেই সৌন্দর্য গাড়িতে উঠে বসে। সৌন্দর্যের সাথে নূর ও গিয়ে গাড়িতে উঠে।
সৌন্দর্য নূরকে নিয়ে ফাতিহার স্কুলে যায়।ফাতিহার স্কুলে কিছু কাজ আছে আর তারমধ্যে নূরের মন টা যেনো একটু ভালো হয় তার ই চেষ্টা।
স্কুলে এসে সৌন্দর্য প্রথমেই অফিসে ঢুকে স্যার ম্যাডামদের সাথে কিছু সময় কথা বলে তারপর প্রিন্সিপাল ম্যাম একটা খাতা এগিয়ে দেয় সাইন করার জন্য। সৌন্দর্য সাইন করে নূরের দিকে খাতা এগিয়ে দেয়। তারপর আস্তে করে নূরের কানের কাছে গিয়ে বলে,, আমি ফাতিহার কাছে যাচ্ছি তুমি সাইনটা করে এসো।
নূর বুঝলোনা কি হচ্ছে সৌন্দর্যের কথা মতো সাইন করতে গিয়ে থমকে যায় ফাতিহার বাবার নামের জায়গায় মি. রূপ ওয়াহিদ নাম দেখে।
#চলবে,,,,,?