#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৮
ইশান চোখ দুটো ছোট ছোট করে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে সারা রাজ্যের বিস্ময়ের চাঁপ। ভ্রুদ্বয়ের মধ্য স্থানে ভাঁজ পড়ে আছে। ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে আছে। নিজের চোখকে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে স্বয়ং তীর তার দু চোখের সামনে একটা ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
ইশান সবে ফরাজী ভিলার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে সিকিউরিটি গার্ডকে গেইট খোলার জন্য বলে। আর ঠিক সেই সময়ে একটা বাইক ইশানের গাড়ি পাশ কাটিয়ে গিয়ে আহমেদ ভিলার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ইশান তখন ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু যখনেই তীরকে দেখলো বাইকে দেখে নামছে তখনেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ইশান চাইলেই এক্ষুনি গিয়ে ছেলেটার কলার চেঁপে ধরতে পারতো কিন্তু না ইশান এই ড্রামার শেষটা দেখতে চায়।
অন্য দিকে তীর রাহুলের মাথায় হেলমেট পরিহিত ভয় ভয় চেহারাটা দেখে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে।
–কি হলো? আমার হাতে গোলাপের গাজরাটা পরিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি।
রাহুল শুকনো ডোক গিলে বলে।
–দোস্ত ভয় করছে খুব! হাত কাঁপছে দেখ।
তীর রাহুলের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই হাতটা মৃদু কাঁপছে। তীর দাঁত কেলিয়ে বলে।
–বেশি ভাব না ধরে তাড়াতাড়ি পড়া।
–পিছনে ইশান ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাদের দিকে ভয়ংকর এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। আমি বরং চলে যাই।
তীর দাতে দাত চেঁপে বলে।
–একদম না যে কাজটা করতে এসেছিস সেই কাজটা কমপ্লিট করে তারপর যাবি। ভয়ে পিছুপা হলে এখন চলবেে না। তাই চুপচাপ আমার হাতে গাজরাটা পরিয়ে কেঁটে পড় এখানে থেকে।
–ঠিক আছে চেষ্টা করছি।
রাহুল একবার বাইকের লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে ইশানের গাড়িটা দেখে চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ করে বুকের বা পকেট থেকে গোলাপ ফুলের গাজরা বের করে তীরের বা হাতে পরিয়ে দেয়। তীরও হাসি হাসি মুখ করে লজ্জা পাওয়ার ভান করে।
কিন্তু অন্য দিকে এটা দেখে ইশানের মাথায় আগুন জ্বলে উঠেছে। চোখ দুটো লাল বর্ণের আকার ধারন করছে। ইচ্ছে করছে সব কিছু ধ্বং*স করে দিকে। বিশেষ করে তীরের এমন রুপ দেখে। তীরের জীবনে যে কেউ আছে সেটা ইশান টেরেই পায় নি।
এ দিকে ইশানের পাশে বসা ইশা চোরা চোখে একবার ভাইয়ের দিকে তো একবার সামনে থাকা তীর আর রাহুলের দিকে তাকাচ্ছে। ইশার আর বুঝতে বাকি নেই যে তার ভাইয়ের মনে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। সেই আগুনের উত্তাপ যে আগ্নেয়গিরি লাভার থেকেও বেশি তাপ তা আর বুঝতে বাকি নেই। এখন শুধু অপেক্ষা করার পালা এর পর কি কি কান্ড ইশান ঘটাতে চলেছে তা দেখার।
তীর বা হাতে পরিহিত গাজরাটা ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করতে করতে ডান দিকে গাড়টা কাত করে ইশানকে দেখে ভয় পাওয়ার ভান করে। এমন একটা ভান ধরছে যে ওরা দু জনে বুঝতেই পারে নি ইশানের গাড়ি যে এতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো। তীর একটা মেকি হাসি দিয়ে রাহুল দিকে তাকিয়ে জোরে বলে।
–আমি এখন আসি। তুমি চলে যাও এখান থেকে তাড়াতাড়ি।
বলেই দৌঁড়ে বাড়ির ভেতরে ডুকে পরে। রাহুল হতভম্ব হয়ে যায় তীরের এমন আচরণ দেখে। কিন্তু এখন আর তীরের আচরণ নিয়ে ভাবলে চলবে না তাকে এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যেতে হবে না হলে একটা দু*র্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। “একটা দু*র্ঘটনা সারা জীবনের কান্না”। সে সারা জীবন কান্না করতে পারবে না। তাই তাড়াতাড়ি করে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।
অন্য দিকে ইশান বাজখাই কন্ঠ ইশাকে বলে।
–গাড়ি থেকে নাম কুইক।
ইশাও তাড়াতাড়ি করে নেমে যায়। আগে থেকে ইশা নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিলো কখন ইশান এই কথাটা বলবে আর কখন ও নামবে। ইশা নামতেই ইশান হাই স্প্রিডে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
ইশানের গাড়ি চলে যেতে তীর বের হয়। এতক্ষন তীর গেইটের ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো কি হয়? ইশা তীরের কাছে গিয়ে বলে।
–দোস্ত ভাইয়ার মনে আগুন লেগে গেছে।
তীর ভ্যাবলার মতো বলে।
–কতটুকু আগুন লেগেছে?
–যত টুকু লাগা দরকার ছিলো তত টুকুই লেগেছে। তুই যখন রাহুলে হাত ধরে ছিলি যখন যদি তুই ভাইয়া চেহারাটা দেখতি তাহলে বুঝতে পারতি ভাইয়া কি পরিমাণ রেগে ছিল।
–এবার কি হবে? ওনি তো রাহুলের পিছু নিয়েছে।
–কিচ্ছু হবে না রাহুলের। তুই দ্বিতীয় প্ল্যানটা বাস্তবায়ন করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখ।
–আগে প্রথম প্ল্যানটা সাকসেসফুল হোক তারপর দ্বিতীয় প্ল্যানটা নিয়ে ভাববো।
–দাঁড়া রাহুলকে একটা কল করি দেখি কি কন্ডিশনে আছে ও।
এ দিকে রাহুল নিজের আপন মনে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা দুরে চলে এসেছে তাই এখন ও নিশ্চিন্ত হয়ে আছে। কিন্তু যখন ফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠে তখনেই ভয় পেয়ে যায়। রাহুল বাইকটা থামিয়ে এক সাইডে রেখে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ইশার ফোন। ফোনটা পিক করে বলে।
–হে বল।
ইশার চিন্তিত কন্ঠ ফোনের ওপর পাশ থেকে ভেসে আসে।
–কোথায় তুই এখন?
–রাস্তার আছি কেন? কি হয়েছে?
–আরে গা’ধা ভাইয়া তোর পিছু নিয়েছে।
রাহুলের চোখ দুটো ভয়ে যেন খোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
–কি বলছিস’টাকি তুই?
–হে সত্যি বলছি ভাইয়া তোর পিছু নিয়েছে।
–এরে ইশা রে এবার আমার কি হবে রে?
–আরে কিছু হবে না ভয় পাস না।
রাহুল পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ইশানের গাড়ি তার দিকে পাকিস্তানের সিটা গু*লির মত তেরে আসছে। রাহুল কল কাটার আগে বলে।
–ভাই আমি তর সাথে পরে কথা বলি আগে নিজের প্রান বাচাই। “নিজে বাচঁলে বাপের নাম”।
রাহুল হাই স্পিডে বাইক স্টার্ট দেয়। রাহুল নিজের প্রানটা হাতের মুঠোয় রেখে বাইক চালাচ্ছে। কিন্তু রাহুলের মনে হচ্ছে এত জোরে বাইক চালালে নির্ঘাত ও মা’রা যাবে। তাই ইশার বলা বুদ্ধিটাই কাজে লাগাতে হবে। কোনো চি’পা রাস্তাই ডুকতে হবে ইশানের হাত থেকে বাঁচতে চাইলে। যেই ভাবা সেই কাজ একটা চি’পা রাস্তায় ডুকে পড়ে রাহুল।
অন্য দিকে ইশানও হাই স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু দু চাকার সাথে কি আর চার চাকা পেরে উঠে। যখনেই বাইকটা রাস্তার পাশের চিপা গলিতে ডু’কে যায় তখনেই ইশান হারিয়ে ফেলে বাইকটা। ইশান গাড়ি থামিয়ে স্টিয়ারিং জোরে একটা আ*ঘাত করে অকথ্য ভাষায় একটা গা*লি দেয়। রাগে মাথাটা ফেঁটে যাচ্ছে মন চাইছে সব কিছু নিঃশেষ করে দিতে। বার বার চোখের সামনে ছেলেটা তীরের হাতে গাজরাটা পরিয়ে দেওয়ার মুহূর্তটা ভেসে উঠছে। গাড়ির হর্নের আওয়াজে ইশান নিজের সম্মতি ফিরে পায়। তার গাড়ি এভাবে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করাতে অনেকটা রাস্তা জুড়ে জ্যাম লেগে গেছে। ইশান তাড়াতাড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
________
তীর বাড়িতে ডুকে সোজা গোসল করতে ডুকে যায়। তার মেজাজ খুব ফুরফুরে রাহুল ধরা পড়ে নি ইশানের হাতে ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। ইশানকে এভাবে জ্বলতে দেখে তীরের মনে যেন একটা পৌ’শাচিক আনন্দ কাজ করছে। গোসল করে মনের আনন্দ ভিজা চুল গুলা হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। যখনেই সিঁড়ির প্রথম ধাপে আসে তখনেই চোখ যায় সোফায় বসে থাকা ইশানের দিকে। ইশানকে দেখে তীরের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে, চোখ দুটো রসগোল্লার মতো ইয়া বড় বড় হয়ে যায়। ইশানকে এই মুহূর্তে এই জায়গাতে একদমেই আশা করে নি। তবে কি ইশান মাকে আজকের সব ঘটনা বলে দিতে এসেছে। এটা ভাবতে তীরের গলা শুকিয়ে আসে। ইশান যদি সবটা বলে দেয় তাহলে আজকে তার জীবনে কি’য়ামত নেমে আসবে কি’য়ামত।
আয়েশা সুলতানা রান্না ঘর থেকে ইশানের জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসার সময় চোখ যায় তীরের দিকে। তীরকে এমন মূ’র্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে।
–কি রে! এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আয়েশা সুলতানার কথা শুনে ইশান চোখ তুলে তাকায় সামনের দিকে। এতক্ষন ইশান নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা নিয়ে ভাবছিলো তাই তীরকে খেয়াল করে নি। যখনেই তীরের দিকে নজর যায় তখনেই ইশানের বুকটা ধ্বক করে উঠে। সদ্য স্নান করা তীরের সিগ্ধ, মায়াবী মুখটা দেখে যেন ইশানের হার্টবিট দ্বিগুন বেড়ে গেছে। ভেজা লম্বা রেশমি চুলগুলা থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। এ যেন এক মায়াবীনি দাঁড়িয়ে আছে ইশানের চোখের সামনে। ইশান ডোক গুলে সাথে সাথে নিজের নজর অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ছাঁড়ে। এই মেয়ে একদিন ইশানকে #প্রনয়ের_দহন এ পু’ড়িয়ে তার সবকিছু ছাঁরখার করে দিবে। আয়েশা সুলতানার কথা কর্ণগোছর হতেই ইশানের ঘোর কাটে।
–তা ইশান কি বলতে চেয়েছিলে তুমি এখন বলো?
মায়ের কথা শুনে তীর চমকে উঠে। তার মানে ইশান আজকের ঘটনাটা বলতে এসেছে। না না তা কিছুতেই হতে পারে। এটা জাস্ট একটা অভিনয় এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু এটা তো এখন বলাও যাবে না। তাই কিছু একটা করে আটকাতে হবে। তীর কয়েক কদম এগিয়ে জোরে বলে।
–মা আমাকে কিছু খেতে দাও ভিষন খুদা পেয়েছে।
ইশান চকিতে তীরের দিকে তাকায়। তীরের এই অস্থিরতা কিসের জন্য ইশান বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। চোখে মুখে ভয়ের চাপ স্পষ্ট ফুটে উঠছে। দু হাত বারবার কচলাছে। ইশান তীরের ভয়ের মাএাটা আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাঁকা হেসে বলে।
–আন্টি আগে আমার কথাটা শুনন তারপর ওর কথাটা শুনবেন।
তীর আবারও চিৎকার করে বলে।
–না মা ওনার কথা তোমার একদমেই শুনতে হবে না। তুমি বরং আমাকে কিছু খেতে দাও আমার খুব খিদে পেয়েছে।
আয়েশা সুলতানা মেয়ের দিক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে।
–তুই এমন করছিস কেন? সবসময় তো খিদে পেলে নিজে কিছু বানিয়ে খাস তাহলে আজকে আমাকে বলছিস কেন?
তীর বিরবির করে বলে।
–বলছি কি আর সাধে।
আয়েশা সুলতানা বলেন।
–ইশান তুমি কি বলবে বলো।
–আসলে আন্টি হয়েছে কি…
ইশানের কথার মাঝেই তীর বলে।
–মা আমার কথাটা আগে শুনো।
আয়েশা সুলতানা এবার রেগে বলেন।
–একটা দিবো খিদে পেয়েছে নিজে বানিয়ে গিয়ে খা। আর একবার যদি তোর বা হাত ডুকিয়েছিস কথার মাঝে তাহলে খবর আছে তোর।
তারপর ইশানের দিকে তাকিয়ে বলেন।
–হে ইশান তুমি বলো কি বলবে?
ইশান তীরের দিকে তাকায় তীর মাথায় নাঁড়িয়ে না করে যাতে ইশান কিচ্ছু না বলে মাকে কিন্তু ইশান তো ইশানেই।
#চলবে________