#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩২
তীর জড়োসড়ো হয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে। মাথাটা কেমন ভনভন করছে। বার বার ইশানের বলা কথা গুলা কানে ড্রামের মতো বাজছে। যখন ইশানের বলা কথা গুলার মানে বুঝতে পারলো তখন লজ্জায় দু’হাত দিয়ে মুখটা ঢেঁকে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে।
–ছিহ! কি অসভ্য আপনি ইশান ভাই।
তীর পড়ার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ফোনটা খুজতে লাগলো। ইশাকে ফোন করে তো সবটা জানাতে হবে। বেচারী হয়তো অধীর আগ্রহ হয়ে বসে আছে জানার জন্য কি হয়েছে? কিন্তু যখনেই মনে পড়লো ইশান তো ওর অনেক শখের ফোনটা ভেঙ্গে দিয়েছে তখনেই মনটা বিষন্নে পরিণত হলো। বেডে মনমরা হয়ে বসে বলে।
–ধ্যাত! এবার আমার কি হবে? বাবা মাকে বললে তো আমাকে জীবনেও নতুন ফোন কিনে দিবে না। উল্টো আমাকে মা লাঠি পিঠা করবে যখন শুনবে ফোনটা ভেঙ্গে গেছে। ভাল্লাগেনা!
বলে শুয়ে পরে কম্বল গায়ে দিয়ে। আজকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। না হলে এই টেনশনে ভালো করে ঘুমাতেই পারতো বেচারী তীর। ইশাকে না হয় সকালেই বলবে। এখন ঘুমানোর দরকার অনেক রাত হয়েছে।
____
এদিকে ইশান দশ মিনিট ধরে পুরো ছাদ জুড়ে চক্কর মেরেছে। রাগে ভাইকে কতো গুলা গা*লিও দিয়েছে। মন চাইছে ইহানকে ছাদে এনে বন্দি করে রাখতে এই ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে। শীতের প্রকোপ ভালো ভাবে কাটে নি এখনো। রাত গভীর হলেই হিম পড়া শুরু করে।
রাতে বেলা জীবনেও কোনো দিন ছাদের দরজা লাগানো হয় না আর আজকে লাগিয়ে গেছে। যত্তসব। ইশান অনেক বার ট্রাই করছে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামার জন্য। কিন্তু যখনেই নিচের দিকে তাকিয়েছে তখনেই ভয়ে পিছিয়ে এসেছে। ইশানদের বাড়িটা এক তলা তাই ছাদ থেকে লাফ দিলেও মা’রা টা’রা যাবে না। কিন্তু হাত পা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ইশান নিচের দিকে তাকিয়ে বলে।
–না বাবা! আমার দ্বারা এখান থেকে লাফ দেওয়া ইম্পসিবল। হাত পা ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে বেডে বসে থাকতে পারবো না। তার চেয়ে ভালো এই ছাদেই সারা রাত কাটানো।
ইশান দু হাত এক সাথে ঘসে বলে।
–ঠান্ডাও লাগছে। মনে হয় না সারা রাত এই ছাদে থাকতে পারবে। তার আগেই আমি বরফে জমে যাবো। উফ! কি যন্ত্রণা।
ইশান ফোল্ডার করা শার্টে হাত গুলা নামিয়ে নেয় তাহলে যদি ঠান্ডাটা একটু কম লাগে। গুটিগুটি পায়ে হেটে গিয়ে দোলনায় বসে ইশান। দোলনা বসতে না বসতেই লাফিয়ে উঠে। লোহার দোলনা পুরো ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে। ইশান রাগের বশে দোলানায় একটা লা’থি মারে। কিন্তু লাথি মেরে লাভটা কি হলো উল্টো নিজেই ব্যাথা পেলো। শীতের দিনে ব্যাথা উফ! ইশানের মন চাইছে গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার করতে। মনের অজান্তেই বলে উঠে।
–আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি মাইকার চিপায়।
কিন্তু ইশানের এখন মনে হচ্ছে ছোট বেলার কাজটাই করতে হবে। ছোট বেলায় যেভাবে গাছ বাইতো এখন মনে হচ্ছে সেই কাজটা করেই নিচে নামতে হবে নিচে না হলে সারা রাত এখানে থাকতে হবে এই ঠান্ডার মাঝে। ওলরেডি হাঁচি কাশি শুর হওয়ার পথে। ইশান আস্তে আস্তে করে ছাদের রেলিং এর কাছে আসে। রেলিং এর একে বারে পাশেই দুইটা আমড়া গাছ আছে। একটা অনেক বড় আরেকটা সামন্য বড়ো। কিন্তু এই আমড়া গাছে উঠতে ভীষণ ভয় করছে। আমড়া গাছের ডাল যেই নরম যদি ভেঙ্গে টেঙ্গে যায় তাহলে তো গেলো।
–পৃথিবীতে কি আর কোনো গাছ ছিলো না যে এই আমড়া গাছেই লাগাতো হলো।
কিন্তু কিচ্ছু করার নেই বেচারা ইশানের এখন একটা রিস্ক নিতেই হবে। ইশান নিজেকে রিলেক্স করার জন্য জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে শার্টের হাতা দুটো ফোল্ডার করে নেয় পুনরায়। পায়ের জুতো গুলা নিচে ফেলে দিয়ে রেলিং এর উপরে উঠে আমড়া গাছের একটা ডালে পা রেখে চেক করে দেখে ডালটা মজবুত আছে কিনা। নাহ ডালটা মুজবুতেই আছে। তাই আস্তে আস্তে করে শরীরের সমস্ত ভর দিয়ে দেয় ডালের উপর আর খুব সাবধানে গাছ বেয়ে নিচে নেমে আসে। ইশান মাটিতে পা রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে শার্টের গায়ে গাছের ময়লা গুলা পরিস্কার করে বলে।
–আমার জীবনের এই ঐতিহাসিক দিনটা না রাতটা সারা জীবন মনে থাকবে। জীবনেও ভুলবো না।
পায়ে জুতা পড়ে সদর দরজার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। সদর দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজায়। ইশার কানে বেলের শব্দ পৌঁছাতে ভ্রু-কুচকে নেয়। এতো রাতে কে এলো? বাড়ির সবাই মরার মতো ঘুমালেও ইশা জেগে আছে। তার একটাই কারন ভাই আর বেস্ট ফ্রেন্ডের মাঝে কি হয়েছে? সেটা জানার জন্য কিন্তু এতক্ষন হয়ে গেলো তীর ফোন করছে না দেখে নিজেই রাগে তীরের ফোনে ফোন দিচ্ছে কিন্তু বন্ধ আসছে। এর মাঝে কলিং বেল আবারো বেজে উঠে। ইশা নিজের মনে বলে উঠে।
–এতো রাতে কে এসেছে? বাড়ির সবাই তো আজ বাড়িতে আছে। তাহলে এ সময় কে এলো? বাবা মাকে ডাকবো না থাক ঘুমাক ওরা। বরং আমিই যাই, যেহেতু দরোয়ান চাচা আটকাই নি তার মানে পরিচিত কেউ হবে। যাই গিয়ে দেখে আসি কে এসেছে?
কলিং বেল দু তিন বার বাজার পরেই ইশা এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে ইশানকে দেখে ইশার মুখটা আপনাআপনি হা হয়ে যায়। ইশানকে দেখে এতটাই আবাক হয়েছে বেচারীর মুখ দিয়ে কথাই ফুটছে না। ইশান ইশার এমন চেহারা দেখে বলে।
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হচ্ছে যেন ভুত দেখেছিস।
ইশা তোতলিয়ে বলে।
–ভা.. ভা.. ভাইয়া তু… তুমি বাইরে কি করে? তুমি না…
–তোর এতো সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না আমি। দেখি সর সামনে থেকে।
ইশান ইশাকে নিজেই সরিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে যায়। ইশা তো বেচারী আবাকের চূড়ান্তে। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে উঠে।
–এটা কি করে সম্ভব? ভাইয়া তো ছাদে গিয়েছিলো তাহলে বাইরে কি করে? মানে কি হচ্ছে এসব?
ইশান নিজের ঘরে ডুকতে নিলে আবারও ফিরে আসে। ইশান জানে তার আদরের ছোট বোন যে এখন বাড়ির দরজা খুলে আকাশ কুসুম ভাববে এটা সে নিশ্চিত। তাই সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে থেকে বলে।
–ইশু তোর যদি কল্পনা জল্পনা করা শেষ হয়ে থাকে তাহলে দরজাটা বন্ধ করে ঘরে আয় প্লিজ।
বলেই নিজের ঘরে চলে যায়। ভাইয়ের ডাকে ইশা নিজের সম্মতি ফিরে পেয়ে দ্রুত দরজা লাগিয়ে দিয়ে দৌঁড়ে ভাইয়ের দরজার সামনে এসে দরজায় টুকা দেয়। ইশার টুকা দিতে দেরি কিন্তু ইশানের কথা বলতে দেরি হলো।
–ইশু আমাকে এখন এই রাত বিরাতে ডিস্টার্ব করবি নিজের ঘরে যা।
ভাবুক ইশা ভাইয়ের কথা শুনে নিজের ঘরে চলে যায়। ওদিকে তীরের ফোন বন্ধ আসছে আর এদিকে তার ভাই বাইরে থেকে এসেছে। মানে এতো কিছু ভাবতে ভাবতে ইশা যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে।
_______
ইশা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই আহমেদ ভিলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সারা রাত বেচারী দু চোখের পাতা এক করতে পারি নি নানা রকমের চিন্তায়। আয়েশা সুলতানা ইশাকে এতো সকালে দেখে অবাক হয়ে বলে।
–একি ইশা! তুমি এতো সকালে?
–আসলে আন্টি আমি তীরের সাথে দেখা করতে এসেছি।
–ও তো মনে হয় এখনো ঘুমাচ্ছে।
–সমস্যা নেই আন্টি আমি গিয়ে ডেকে তুলছি।
বলেই চলে যায় তীরের রুমে। তীরের রুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো। তাই ইশা জোরে জোরে দরজায় শব্দ করতে শুরু করে। তীর এমন হাঁকডাক শুনে আর ঘুমাতে পারলো না ঘুমঘুম চোখ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
–উফফ মা। এভাবে এভাবে দরজা ধাক্কাধাক্কি করছো কেন এতো সকাল সকালে? তুমি না একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দেয় না।
বলে দরজা খুলার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে ইশা ঘরে ডুকে দরজা বন্ধ করে বলে।
–ওই তোর ফোন ওফ কেন?
ইশাকে এতো সকালে দেখে তীর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে।
–তুই এতো সকালে এখানে।
–না এসে পরলাম না। যা সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে আমার সাথে।
তীরের ঘুম যেন উবে যায় ইশার কথা সাথে। অবাক হয়ে বলে।
–তোর সাথে আবার কি ঘটনা ঘটলো?
–ওই তোকে বলেছিলাম তোর আর ভাইয়ার কি কি হবে সব আমাকে বলবি ফোন করে। কিন্তু তুই তো তুই তোর ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিলি।
তীর আফসোসের সুরে বলে।
–আর ফোন! ফোনটা আস্তো থাকলে তো তোকে ফোন করে সবটা বলব নাকি।
–মানে তোর ফোনের আবার কি হলো?
–তোর ভাই আমার শখের ফোনটাকে রেগে আছাড় মেরে ভেঙ্গে দিয়েছে।
–মানে! কি করে?
তীর ইশাকে গতকাল রাতের সবটা ঘটনা খুলে বলে। ইশা বিস্ফোরিত নয়নে তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।
–গতকাল রাতে এতো কিছু হয়ে গেলো।
–হুম এতো কিছু হয়ে গেছে। তার মাঝে আমার ফোনটা।
বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলো। ইশা তীরকে জড়িয়ে ধরে বলে।
–কান্দিস না আমার মেরি জান। ভাইয়াকে বলে নতুন একটা ফোন কিনে দিতে বলবো।
–হুম তুই বলবি আর তোর ভাই ফোন কিনে দিবে আমাকে।
–আরে দিবে দিবে মিলিয়ে নিস আমার কথা।
–আচ্ছা বাদ দে এবার বল তোর সাথে আবার কিসব অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে?
ইশা তীরকে রাতের ঘটনাটা বলতে তীর বাজখই কন্ঠে বলে।
–কি বলছিস এসব?
–হুম আমার স্পষ্ট মনে আছে ভাইয়া ছাদে যাওয়ার পরে ভাইয়াকে নিচে নামতে দেখে নি। তাহলে বাইরেই বা কখন গেলো? মাথা কাজ করছে নারে আমার।
–আমারোও না তোর ভাই কি ভুত টুত হয়ে গেলো নাকি রে।
#চলবে________
আজকে গল্প দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু আমার অল্প সংখ্যক পাঠকরা অপেক্ষা করবে তাই অসুস্থ শরীরের নিয়েই দিলাম। আজকের পার্টটা হয়তো তেমন ভালো হয় নি তার জন্য ক্ষমা প্রাপ্তি।