প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩৬

0
509

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩৬

তীর বেলকনির ঝুলন্ত দোলনায় বসে আছে মনমরা হয়ে। দৃষ্টি তার টবে ফুটে থাকা ফুটন্ত সাদা গোলাপের দিকে। এই সাদা রংয়ের গোলাপের কলি যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকে এক্সাইটেড হয়ে আছে কবে তার বেলকনির ছোট্ট বাগানটায় এই সাদা গোলাপ ফুলটা ফুটবে। আজকে সেই দিনটা এসেছে কিন্তু মনে এক ফোঁটাও আনন্দ নেই। বার বার দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস বের হয়ে আসছে বুক‌ ছিঁড়ে আর ক্ষণে ক্ষণে চোখ বন্ধ করে নিচ্ছে।

এর মাঝেই ইশা কখন যে এসে তীরের পাশে এসে দাঁড়ায় সেটা টেরেই পায় নি। তীরকে এমনভাবে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ইশার। মন চাইছে রেগে গিয়ে ভাইয়ের মাথা ফাঁটিয়ে ফেলতে। যত্তসব। ইশা তীরকে ডাক দেয়। তীর চমকে পাশ ফিরে ইশাকে দেখে বলে।

–তুই! তুই কখন এলি?

–অনেক্ষণ হয়েছে এসেছি কিন্তু আপনি এতক্ষণ আপনার ভাবনায় ব্যস্ত ছিলেন। তাই টের পান নি।

তীর আগের ন্যায় গোলাপ‌ ফুলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে।

–সরি রে! বুঝতে পারি নি।

–ঠিক আছে সরি বলতে হবে না। এখন চল।

তীর ইশার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে বলে।

–কোথায় যাবো?

–এটা না হয় সারপ্রাইজ থাক।

তীর এতক্ষণ ইশাকে ভালো করে লক্ষ্য করে নি। কিন্তু এবার ইশার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে।

–তুই হঠাৎ এভাবে সাজু্গুজো করেছিস কেন?

–শুধু আমি না এখন তুইও সাজবি।

তীর ভ্রু-দ্বয় কিঞ্চিৎ কুচ করে বলে।

–মানে! আমি কোন দুঃখে সাজবো?

ইশা তীরের হাত ধরে টানতে টানতে বলে।

–কোন দুঃখে সাজবি নাকি কোন সুখে সাজবি সেটা পরে বুঝা যাবে। এবার উঠ তৈরি হতে হবে তোকে হাতে বেশি সময় নেই।

তীর ইশার কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে।

–আমি সাজতে টাজতে পারবো না। এমনেই মন মেজাজ ভালো নেই। তাই প্লিজ বিরক্ত করিস না তো।

ইশা হার মেনে নেয় তীরের জেদের কাছে। এই মেয়েকে এভাবে মানাতে পারবে না অন্যভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে। সেটা “ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল” একমাএ এটার মাধ্যমে তীরকে রাজি করানো যাবে না হলে কিচ্ছু হবে না। ইশা ঠোঁট দুটো গোল করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে।

–বুঝতে পেরেছি তোর কাছে আমার কথার কোনো ভেলুই নেই তাই তো।

তীর দোলনা থেকে সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।

–তুই আমায় ভুল বুঝছিস ইশু এমনটা নয়।

–তাহলে কেমনটা শুনি একটু?

–দেখ অবুঝ হোস না। আমার মুড এমনেই ভালো নেই তাই‌ এখন এসব সাজ…

তীরের কথার মাঝেই ইশা মন খারাপের ভাব ধরে বলে।

–বুঝতে পেরেছি তোকে আর এক্সপ্লেইন করতে হবে না আমাকে।

তীর ভেবে পাচ্ছে না কি করবে এখন? ইশার কথা না মানলে মেয়েটা হয়তো মন খারাপ করবে। কত্তো আশা নিয়ে সাজুগুজো করে এসেছে ওর কাছে সব কিছু তো ওর জন্যই। হয়তো কোনো সারপ্রাইজ দিয়ে তার মনটা ভালো করতে চায় মেয়েটা। কিন্তু! তীর মাথা দুলিয়ে চারপাশটায় নজর বুলিয়ে মুখ দিয়ে “চ” উচ্চারণ করে।

অন্য দিকে ইশা চোরা চোখে বান্ধবীর দিকে তাকায় আর মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে যেন তীর রাজি হয়ে যায়। তীর যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে তো কেল্লাফাতে। ও যা চাইবে তাই পাবে উফফ। ইশা মনে মনে বিরক্ত নিয়ে বলে।

–উমমম! মনে হচ্ছে যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করার প্লান করছে। আরে বাপ তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যা না। নাহ মনে হচ্ছে আরেকটু ড্রামা করতে হবে।

ইশা উচ্চস্বরে হতাশ কন্ঠে বলে।

–ঠিক আছে তাহলে আমি আসি এখন। আগেই তোর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমার রেডি হওয়া উচিত ছিলো। আসলে‌ আমারেই ভুল‌ ভেবেছিলাম আমার কথা তুই ফেলতে পারবি না কিন্তু না তুই আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিলে।

বলেই মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নিলে তীর বলে উঠে।

–দাঁড়া।

থেমে যায় ইশা। ইশা নিচের ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে, প্ল্যান তাহলে সাকসেসফুল একদম মেইন পয়েন্টে ধনুকের তীরটা লেগেছে। ইশার মুখে কুটিল হাসি ফুটে উঠে কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে ইন্নোসেন্ট রুপে নিয়ে আসে। তীর ইশার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে।

–আর ভাব ধরতে হবে না তোর এই এই‌ন্নোস্টেন মার্কা মুখটা ঠিক কর। আমি সাজবো খুশি এবার।

ইশা খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে।

–সত্যিই।

–কিন্তু কোন সাজবো? আর যাবো কোথায়?

–এটা সারপ্রাইজ থাকে। তুই বরং জলদি রেডি হো গিয়ে।

ইশা সোজা গিয়ে বেডে বসে পা দুটো দুলাতে থাকে মনের খুশিতে আর তীর আলমারি খুলে ড্রেস কোনটা পড়বে সেটা ভাবচ্ছে। তীরকে লক্ষ্য করে ইশা বলে।

–তীর সাদা গোলাপি রং মিশ্রিত কোটি সিস্টেম লং ড্রেসটা পড় এটাতে তোকে খুব সুন্দর লাগে।

তীর ড্রেসটা বের করে বলে।

–এটা পড়বো!

–হুম যাহ পড়ে আয় জলদি।

তীর সোজা ওয়াসরুমে চলে যায়। তীর ওয়াসরুমে চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইশা কাউকে কল করে বলে।

–প্ল্যান সাকসেসফুল। একটু পরেই আমরা আসছি সব কিছু রেডি করে রাখো।

কথাটা বলেই ইশা কল কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পর তীর ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে‌ আসে। ইশা তীরের কাছে এসে বলে।

–চল আজকে আমি তোকে নিজের হাতে সাজিয়ে দিবো।

তীর অবাক নয়নে ইশার দিকে তাকায়। এ মেয়েকে আজকে বরই অদ্ভুত লাগছে। কিছু তো একটা ঘপলা আছে এই মেয়ের মাঝে নিশ্চিত। তীরকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশা বলে।

–কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আচ্ছিস কেন?

তীর চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে।

–কি খিচুড়ি পাকাচ্ছিস তুই?

ইশা মেকি হাসি দিয়ে বলে।

–কি যে বলিস না তুই! আমি আবার কি খিচুড়ি পাকাবো।

–আমি সিউর তোর মনে কিছু একটা চলছে।

–উফফ! এতো কথা না বলে চল তো রেডি হবি।

ইশা তীরকে ড্রেসিং টেবলের টুলে বসিয়ে দিয়ে নিজের মতো করে সাজাতে শুরু করে। তীরের সাজ কমপ্লিট করে তীরকে দাঁড় করিয়ে ইশা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে।

–উফ! তোকে যা লাগছে না আজকে ভাইয়া তো পুরা পাগলেই হয়ে যাবে তোকে দেখে।

ইশার এমন কথা শুনে তীরের ভ্রু-কুচকে আসে আর বলে।

–কি বললি? ভাইয়া পাগল হয়ে যাবে মানে।

ইশা শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে বলে।

–এই সেড়েছে কি বলতে কি বলে ফেললাম। উফ ইশা কন্ট্রোল ইওর সেলফ।

ইশাকে নিরব থাকতে দেখে তীর ইশার বাহু ধরে বলে।

–কি হলো কথা বলচ্ছিস না কেন?

ইশা মুচকি হাসি দিয়ে বলে।

–না মানে আসলে ভাইয়া যদি তোকে দেখতো তাহলে হয়তো পাগল হয়ে যেত এটা বলচ্ছিলাম আর কি। কিন্তু ভাইয়া তোকে দেখবে কি করে ভাইয়া তো অফিসে।

–কিছু কি লুকাচ্ছিস আমার কাছ থেকে ইশু তুই।

ইশা তীরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে।

–কোনো কিচ্ছু লুকাচ্ছি না আমি তোর কাছ থেকে। তবে হে তোকে যে সারপ্রাইজটা দিবো সেটা লুকাচ্ছি।

–সারপ্রাইজটা কি?

–বোকা মেয়ে! সারপ্রাইজের কথা বলে দিলে কি আর সেটা সারপ্রাইজ থাকে। এটা আমার তরফ থেকে তোর বার্থডে সারপ্রাইজ বুঝলি। এবার চল তাড়াতাড়ি লেইট হয়ে যাচ্ছে।

প্রয়োজনীয় জিনিস গুলা ব্যাগ ভরে নিয়ে ওরা নিচে যায়। বাড়িতে শুধু তীরের মা আর দাদু আছে। তীরের ছোট ভাই স্কুলে আর বাবা অফিসে চলে গেছে। তীরকে আসতে দেখে আয়েশা সুলতানা মেয়েরে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে।

–মাশআল্লাহ! আমার মেয়েকে তো আজকে ভারী সুন্দর লাগছে।

পাশ থেকে ইশা বলে উঠে।

–দেখতে হবে না কে সাজিয়েছে!

আয়েশা সুলতানা ইশার কথায় মুচকি হাসি দিয়ে বলে।

–আমার দুই মেয়েকেই খুব মিষ্টি লাগছে আজকে। কারো নজর যেন না লাগে।

–ঠিক আছে তাহলে আন্টি আমরা এখন আসি না হলে দেরি হয়ে যাবে। আর তোমার মেয়ের মন ভালো করার দায়িত্ব যখন আমার উপর দিয়েছো। তাহলে দেখে নিও বাইরে থেকে এসে তোমার মেয়ের মন একদম ফুরফুরে হয়ে যাবে।

–ঠিক আছে দু’জনেই সাবধানে যাবে।

তীর ঘর থেকে বের হতে হতে বলে।

–কোথায় যাচ্ছি আমরা ইশু?

–উফফ! কখন থেকে বলছি এটা সারপ্রাইজ তাও তুই এক কথা বার বার বলেই যাচ্ছিস।‌ আর তুই তো দেখতেই পারবি কোথায় যাবো আমরা।

–কিন্তু…

–আর একটা কথাও নয়।

তীর চুপ হয়ে যায়। গেইটের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখে রিফাত তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রিফাত ওদেরকে দেখার সাথে সাথে কিছুটা এগিয়ে এসে বলে।

–এতক্ষণ লাগলো তোমাদের আসতে।

তীর অবাকের চূড়ায় পৌঁছে গেছে রিফাতকে দেখে। রিফাতকে একদমেই আশা করেনি এখানে এই মুহূর্তে। কি হচ্ছে এসব কেন হচ্ছে কিচ্ছুই বুঝতে পারছে না। কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। তীর রিফাতকে প্রশ্ন করে।

–ভাইয়া আপনি এখানে কেন?

রিফাত মুচকি হাসি দিয়ে বলে।

–সাহায্য করতে আসলাম তোমাদের।

–সাহায্য! কিন্তু কিসের সাহায্য?

রিফাতকে ইশা কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তীরকে বলে।

–আসলে‌ কি বলতো আমরা যেখানে যাবো সেখানে তো একাএকা যেতে পারবো না। তাই ওনি আমাদের পৌঁছে দিয়ে আসবে।

–কোন দেশে যাবো যে ভাইয়াকে দিয়ে আসতে হবে আমাদের?

–এতো কথা না বলে গাড়িতে উঠ।

রিফাত হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলে।

–হে হে গাড়িতে উঠো এমনিতে অনেকটা লেইট হয়ে গেছে। আরো লেইট হলে হয়তো খবর করে ছাড়বে আমার।

তীর সন্দেহের দৃষ্টিতে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে।

–কে খবর করে ছাড়বে আপনার?

রিফাত ঢোক গিলে কি বলতে কি বলে ফেলেছে। টেনশনে থাকলে যা হয় আর কি! রিফাত আমতা আমতা করে বলে।

–ও কিছু না তুমি গাড়িতে বসো।

সকলে গাড়িতে উঠে বসে। তীরের মনে সন্দেহের বীজটা যেন গাঢ় হচ্ছে ক্রমশ। কিছু তো একটা গন্ডগোল আছেই যেটা ওর কাছ থেকে লুকানো হচ্ছে। কিন্তু সেটা কি বুঝতে পারছে না? তীর ইশার দিকে তাকায়। ইশার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি লেগে আছে। কি এমন সারপ্রাইজ দিবে যে এতো সব আয়োজন!

#চলবে______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here