#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪০
দশ দিন পার হয়ে গেছে তীর আর ইশার বোর্ড পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এই দশ দিনের মাঝে ফ্রেন্ডরা মিলে ঠিক করলো একদিনের ট্যুরে যাবে কারণ রেজাল্টের পরে কে কোথায় চলে যাবে কেউ তো জানে না তাই গ্রুপের সবাই একসাথে হয়ে মজা মস্তি করবে। যেহেতু একদিনের ট্যুরে যাবে তাই সবাই মিলে ঠিক করেছে “বালিয়াটি জমিদার বাড়ি” যাবে। ঢাকা থেকে “বালিয়াটি জমিদার বাড়ি” যেতে দুই আড়াই ঘন্টার বেশি সময় লাগে। তবে জ্যামের কথা মাথায় রেখে সকাল ছয়টার দিকে সবাই রওয়ানা দিবে। তারিখও ঠিক করা হয়ে গেছে মে’র পঁচিশ তারিখে যাবে মানে আগামীকাল রাওয়ানা দিবে সবাই মিলে “বালিয়াটি জমিদার বাড়ির” উদ্দেশ্যে। এ নিয়ে মেসেঞ্জার গ্রুপে কথাবার্তা হচ্ছে সকল ফ্রেন্ডদের মাঝে কে কি পড়ে যাবে তা নিয়ে।
ট্যুরে তো আর গার্জিয়ান ছাড়া যেতে দিবে না কারোর পরিবার। তাই ইশাও “ঝোপ বুঝে কো’প’টা মে’রে দিলো” ইশানের দিকে। ইশান কথা দিয়েছিলো বোনকে যদি তীরের জন্মদিনের দিন তীরকে ওর কাছে আনতে পারে তাহলে ইশান ইশার সব কথা মানবে। সেই কথা অনুযায়ী ইশানকেও বাধ্য হয়ে রাজি হতে হলো। প্রথমে তো ইশান রাজিই ছিলো না এই ট্যুরে যাওয়া নিয়ে কিন্তু বোন যখনেই এই শর্তের কথাটা মনে করিয়ে দিলো তখন রাজি হতেই হলো।
______
সকাল সকাল নীরা আর রাহুল এসে হাজির ফরাজী বাড়িতে। দশ দিন পর এক সাথে হয়েছে সকলে তাতে সবাই হই হুল্লোড় করে সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে এক প্রকার। কিন্তু এসবের মাঝে রাহুল তো ভ’য়ে ভ’য়ে আছে ইশানকে নিয়ে। ইশান না জানি আবার কি বলে দেয় ওই ঘটনাটার জন্য। যখন শুনেছে ইশান যাবে সাথে সাথে তখনেই না করে দিয়েছে ও যাবে কিন্তু পরে সবার কথা শুনে আসতে বাধ্য হলো।
মোট ছয় জন যাবে এই ট্যুরে। তীর, ইশা, নীরা, রাহুল, ইশান আর রিফাত। রিফাত নিজে থেকেই যাচ্ছে। যখনেই শুনেছে ট্যুরের কথা তখনেই খুশিতে লাফিয়ে উঠেছে যেমন। ইশানও মানা করে নি রিফাতকে না যাওয়ার জন্য। পিচ্চিদের মাঝখানে ইশান একা গিয়ে কি করবে তাই রিফাতকে সঙ্গি হিসেবেই নিয়ে যাচ্ছে।
ইশান শার্টের কলার ঠিক করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। ইশানকে দেখতে পেয়ে রাহুল নিজেকে আঁড়াল করার চেষ্টা করে। ইশানও রাহুলের অস্বস্তি টের পেয়ে ওই বিষয়ে কিচ্ছু বলে না। রাহুলকে চটপট করতে দেখে ইশা রাহুলের কানে কানে বলে।
–কিরে এমন বাইম মাছের মতো চটপট করছিস কেন??
রাহুল ঢোক গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলে।
–তোর ছোট ভাই যদি আমাকে কিছু বলে ওই বিষয়ে তাহলে কিন্তু আমি রকেটের গতিতে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো এই আমি বলে দিলাম। পরে আর জীবনেও আর তোর ভাইয়ের মুখো হবো না।
ইশা এই কথাটা শুনে কুনুই দিয়ে রাহুলকে গু’তো মে’রে বলে।
–চুপচাপ বসে থাক ভাইয়া কিচ্ছু বলবে না।
–যদি কিছু বলে তাহলে।
–পরেরটা পরে দেখা যাবে এখন তুই তোর মুখটা বন্ধ কর।
ওদের দুজন এমন কানে কানে কথা বলতে দেখে নীরা প্রশ্ন করে।
–কিরে তোরা দু জন কি নিয়ে কথা বলচ্ছিস।
ইশা নীরার দিকে ফিরে বলে।
–ও কিছু না। এই গাদাটাকে বোঝাচ্ছি উল্টাপাল্টা কিছু যেন না করে।
রাহুল হতভম্ব হয়ে বলে।
–কিহ আমি গাদা।
–না তুই….
ইশানের কন্ঠস্বর শুনে ইশা থেমে যায়।
–তো কেমন আছো তোমরা?
নীরা মুচকি হাসি দিয়ে বলে।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া আর এখন তো আরো বেশি ভালো কারণ সবাই মিলে ট্যুরে যাবো তার জন্য।
ইশান এবার রাহুলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে।
–তা রাহুল তুমি ভালো আছো তো।
রাহুলের ভ’য়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে। কোনো মতে তোতলিয়ে জবাব দেয়।
–জি… জি ভাইয়া আমি ভালো আছি।
–ওকে তাহলে বেরুনো যাক সময় তো বয়ে যাচ্ছে।
ইশানের মুখে এই কথাটা শুনার সাথে সাথে রাহুল কাঁধে ব্যাগ তুলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। রাহুলের কর্মকান্ডে সবাই অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। নেহা বেগম ইশার দিকে তাকিয়ে বলে।
–কিরে ছেলেটা এভাবে চলে গেলো কেন?
–ও কিছু না মা। ও ট্যুরে যাওয়ার জন্য খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে তো তাই এমন চটপট করছে।
–ওও আচ্ছা। শোন এই ব্যাগে আমি খাবার দিয়ে দিয়েছে ক্ষিধে পেলে খেয়ে নিবি বাইরের খাবার খাওয়ার কোনো দরকার নেই।
ইশা নাক মুখ কুচকে বলে।
–উফফ মা তুমিও না বাইরে যাচ্ছি বেড়াতে আর বাইরের খাবারেই খাবো না এটা কোনো কথা হলো।
–একদম বাইরের খাবার খাবি না। পরে অসুস্থ হলে এর দায়ভার তো আমাকেই নিতে হবে তাই বাইরের খাবার খাবি না।
কথাটা বলে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।
–ইশান বাবা এই বি’চ্চু গুলোকে নজরে রাখিস যেন আজেবাজে কর্মকান্ড না করে বসে।
ইশান ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলে।
–ঠিক আছে তাহলে আসি না হলে দেরি হয়ে যাবে।
–হুম সাবধানে যাবি।
______
সবাই গাড়িতে উঠে বসেছে কিন্তু এখনো দুজন এসে পৌঁছায় নি। একজন তো এতো কাছে থেকেও লেইট করছে আরেক জন পচিঁশ মিনিটের রাস্তা আসতে এক ঘন্টা লাগিয়ে ফেলছে। ইশা ভাইয়ের রাগ বুঝতে পেরে ফোন দিয়ে যাচ্ছে তীরকে আর ইশান দিচ্ছে রিফাতকে। কিন্তু কারোর কোনো রেসপন্স নেই। ইশানের মন চাইছে এই দুটোকে সময়ের মানে ঘাড় ধরে বুঝিয়ে দিতে। তীরের গতকাল রাতে লেইট হয়ে গেছে ঘুমাতে। কি পড়ে যাবে আর ওখানে গিয়ে কি কি করবে এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে দেরিতে ঘুমিয়েছে তার জন্য এখন এই বেহাল অবস্থা। ইশান রেগে গিয়ে ইশাকে বলে।
–ইশু মহারাণীকে ডেকে নিয়ে আয়। কি এমন সাজুগুজো করছে যে এতো দেরি হচ্ছে ওর।
ইশা ভ’য় পেয়ে যায়। না জানি কখন ইশান রেগে গিয়ে বলে তদের ট্যুরে যেতে হবে না যা। ইশা মনে মনে তীরকে বকতে বকতে গাড়ি থেকে নেমে তীরদের বাড়িতে যায় সাথে নীরাও পিছু পিছু যায়। নীরা আর ইশা চলে যেতে রাহুলের মনে আবারো ভ’য় হানা দিতে শুরু করে কিন্তু ভাগ্যক্রমে ভ’য়টা বেশিক্ষন ধরে রাখতে হলো না তার আগে রিফাত এসে হাজির। রিফাত রিক্সাওয়ালা মামার ভাড়ার মিটিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে ইশানের কাছে এসে বলে।
–সরি দোস্ত লেইট হয়ে গেছে রে। প্লিজ রাগ করিস না। আসলে কি বলতো যখনেই বাসা থেকে বের হতে নিবো তখনেই ইয়ে ধরে ফেলে আর ইয়ে করতে গিয়েই লেইট হয়ে গছে। এটা কি আমার দোষ বল প্রকৃতিক ডাকে সাড়া না দিয়ে কি ভাবে থাকবো আমি বল।
ইশান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন টিপতে টিপতে বলে।
–তোর কাছে কি আমি কোনরকম কৈফিয়ত চেয়েছি!
রিফাত মেকি হাসি দিয়ে বলে।
–না তুই তো কোনো কৈফিয়ত চাস নি আমার কাছে।
–তাহলে আমাকে এসব বলছিস কেন?
–আচ্ছা বাবা আর কোনো কৈফিয়ত দিবো না তোকে। এবার চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
–আর একজন এখনো আসার বাকি আছে।
রিফাত গাড়ির ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে শুধু রাহুল বসে আছে আর কেউ নেই। রিফাতের চোখে চোখ মিলতে রাহুল মুচকি একটা হাসি দেয়। রিফাতও মুচকি হাসি দিয়ে ইশানের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে।
–কই একজন বাকি আরও তিন বাকি আছে তো।
–ওই একজনকেই দু জন মিলে আনতে গেছে।
রিফাত কিছুটা ভেবে বলো।
–ও আপনার জনকে আনতে গেছে বুঝি।
ইশান রিফাতকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় চোখের সামনে হেটে আসতে থাকা তীরকে দেখে। মনে হচ্ছে যেন সদ্য ফুটা নীল পদ্ম ফুলটা তার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। মাথায় নীল ওড়না দিয়ে ঘোমটা টানা, ঠোঁটে লাজুক হাসি। তীরের একেকটা পায়ের ধ্বনি মনে হচ্ছে যেন ইশানের বুকে ধনুকের তীরের ন্যায় বিঁধছে। ইশান জিভ দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে চারপাশটায় কয়েক পালক তাকিয়ে তীরের দিকে আবারও তাকায়। আজকে এই মেয়েটা মনে হয় ইশানের সকল ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবেই দিবে নিশ্চিত।
রিফাত নিজের কাঁধ দ্বারা ইশানের কাঁধে ধাক্কা দিতেই ইশান থতমত খেয়ে রিফাতের দিকে তাকাতেই রিফাত দু ভ্রু নাচিয়ে বলে।
–কি রে এবার কে দেরি করছে?
ইশান নিজেকে সামলিয়ে বলে।
–কে দেরি করছে মানে তোরাই তো এতক্ষণ দেরি করছিলি।
–হুম হুম সেটা তো দেখতেই পারছি। আচ্ছা যাই হোক এতো কথা বলে লাভ নেই সবাই গাড়িতে উঠো।
কথাটা বলে রিফাত ইশার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলে।
–সুন্দর লাগছে ম্যাডাম আজকে আপনাকে।
ইশা লাজুক হাসি দিয়ে ইশারা করে ধন্যবাদ জানায় রিফাতকে। এক এক করে সবাই গাড়িতে উঠে বসে। ইশানও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
#চলবে_____
জ্বর নিয়ে এই পর্বটা লিখছি তাই এতোটাও ভালো হয় নি। আর কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।