#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫১
আজ থেকে শুরু হলো তীরের বিয়ের সকল আয়োজন। সকাল থেকে শুরু হয়েছে মেহমানদের আনাগোনা। তীর দু হাতে মেহেদী দিয়ে বসে আছে। মেহেদী আর্টিস্ট তীরের হাতে বরের নামের প্রথম অক্ষর লেখতে চেয়ে ছিলো কিন্তু তীর লিখতে দেয় নি। এই হাতে ইশানের নামের অক্ষর ছাড়া অন্য কারোর নামের অক্ষর লিখাবে সেটা কল্পনাতেও আনে নি। তার চেয়ে কারোর নাম না লেখাটাই শ্রেয় মনে করলো তীর। তাই মেহেদী আর্টিস্টকেও না করে দিয়েছে কোনো নামের অক্ষর না লেখার কোনো দরকার নেই।
তীর এক ধ্যানে মেহেদী রাঙা দু হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। এই দিনটা নিয়ে কতো শত স্বপ্ন ছিলো তীরের। সেই স্বপ্ন গুলা সত্যি হচ্ছে কিন্তু সেটা ইশানের সাথে পূরণ করতে চেয়েছিলো অন্য কারোর সাথে নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো না। ভাগ্য তো আর পরিবর্তন করা যায় না ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। এসব ভেবে তীরের চোখ থেকে দু ফোঁটা নোনা জল বেয়ে পড়লো মেহেদী রাঙা হাতের উপরে।
এমন সময় ইশা আর নীরা ঘরে প্রবেশ করলো ঘরে। তীর ওদেরকে দেখার সাথে সাথে মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে চোখের জলটা মুছে নিয়ে বলল।
–এতো লেইট করলি কেন তোরা আসতে?
ইশা মুচকি হেসে তীরের পাশে এসে বসে বলে।
–সরি রে ওদিকের সব কিছু সামলে আসতে আসতে লেইট হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম তোর বিয়েতে আসবো না কিন্তু পরে ভাবলাম আমার বেস্টুর বিয়ে আর আমার ভাইয়ের বিয়ে,,,,,,
তীরের ভ্রু কুচকে আসে ইশার কথা শুনে। ইশা তীরকে কিছু বলতে না দিয়ে বলা শুরু করে।
–না মানে আকাশ ভাইয়ের সাথে বিয়ে আর আমি আসবো না তা কি করে হয়? দেখি তোর মেহেদী পড়ানোটা কেমন হয়েছে?
ইশা মেহেদীতে নজর বুলিয়ে ভ্রু কুচকে তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।
–কি রে তোর হাতে বরের নাম লিখলি না কেন?
তীর অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে ভার গলায় বলে।
–এমনি লিখি নি।
ইশা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে হাসিহাসি মুখ নিয়ে বলে।
–বুঝেছি,, বুঝেছি যাতে বর নিজের হাতে ওনার নাম লিখে দিতে পারে তোর হাতে তার জন্য লিখিস নি তাই তো।
তীর বিস্মিত নয়নে তাকায় ইশার দিকে। এই মেয়ের কথাবার্তা কেমন জানি সন্দেহ জনক লাগছে তার কাছে। যে মেয়ের এই বিয়েতে কোনো আগ্রহ ছিলো না সে হঠাৎ করে এমন কথা বলছে কেন? মাথা টাথা কি খারাপ হয়ে গেলো নাকি? তীরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে দু ভ্রু নাচিয়ে ইশা বলে।
–কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
–তুই এভাবে কথা বলচ্ছিল কেন?
–সন্দেহ হচ্ছে তো তোর, হওয়ারেই কথা আমি হঠাৎ এভাবে কথা বলছি কেন? আসলে কি বলতো গতকাল রাত্রে আমি শুয়ে শুয়ে অনেক চিন্তা করলাম তোর সাথে আমার বজ্জাত ভাইটার বিয়ে না হয়ে ভালোই হয়েছে।
তীর চমকে ইশার দিকে তাকায়। এই যেন অন্য এক ইশা বসে আছে তার সামনে। ইশা আবারও বলা শুরু করে।
–শোন এটা তো তুই স্বীকার করতে বাধ্য আমার ভাই একটা হিটলার। আর এই হিটলার নামটা তো তুই দিয়েছিস ভাইয়াকে। তাই এখন দেখ তোর সাথে যদি ভাইয়ার বিয়ে হতো তাহলে তোর জীবন ভাইয়া একেবারে ত্যনাত্যানা বানিয়ে ফেলতো। তার চেয়ে ভালো তুই আকাশ ভাইয়াকেই বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার কর। আকাশ ভাই এতো ভালো ছেলে তুই জীবনেও খুজি পাবি না।
তীর অবিশ্বাস্য স্বরে বলে।
–হে..
–হে না হুম।
ইশা তীরের কদোকাদো মুখটা দেখে খুব হাসতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোনো মতে হাসিটা চাঁপিয়ে রাখছে। এর মাঝে নীরা বলে উঠে।
–এই তুই চুপ করবি। আর যে কাজটা করতে এসেছিস সেই কাজটা কর চুপচাপ এতো কথা না বলে।
–আরে বাবা করছি তো এভাবে বলার কি আছে আজব।
তীরের কষ্টে বুকটা ফাইট্ট যাইতাচ্ছে। শেষে কিনা ইশাও তাকে এই বিয়ে করতে বলছে। তীর মুখ যতোই বলুক না কেন ইশানকে সে তার জীবনে আর আসতে দিবে না। কিন্তু এই অবাধ্য মনটাকে এই অবাধ্য নি’ষ্ঠু’র মনটাকে তো সে কোনো মতেই বুঝাতে পারছে না। বার বার ইশানের স্মৃতি বেহায়া মস্তিষ্কটা মনে করিয়ে দিছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে তাদের সুন্দর মুহূর্তগুলো। তীরের এখন মন চাইছে এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যেতে। তাহলে যদি একটু শান্তিতে থাকতে পারে অসহ্য।
তীরকে সুন্দর করে আটপৌরে ভাবে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে ইশা। তীরের পায়ে আলতা পরিয়ে দিচ্ছে নীরা। আজকে পার্লার থেকে কোন লোক আনা হয় নি। একে বারে বিয়েতে সাজাতে আসবে তারা তীরকে। তাই ইশা আর নীরা মিলে তীরকে হলুদের সাজে সাজানোর দায়িত্ব নিলো। কাঁচা গাঁদা ফুল দিয়ে তীরকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো। সম্পূর্ণ সাজ কমপ্লিট হওয়ার পর তীর আয়নার দিকে তাকাতেই নিজেকে দেখে নিজেই চমকে যায়। অন্যরকম এক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। ইশা তীরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে।
–আজকে ভাইয়া তোকে দেখলে নিশ্চিত টা’সকি খেয়ে পড়ে যাবে।
তীর ইশার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। ইশা আমতা আমতা করে বলে।
–না মানে আকাশ ভাইয়ার কথা বলচ্ছিলাম আর কি। এখন তাড়াতাড়ি নিচে চল সবাই ওয়েট করছে হয়তো আমাদের জন্য।
______
তীর নিচে নামার সাথে সাথে পা জোড়া থেমে যায় হেঁটে আসা হলুদ পাঞ্জাবি পড়া এক মানবকে দেখে। তীর যেমন ভাবে থেমে গিয়েছে অন্য দিকে সেই মানবটাও তীরকে দেখার সাথে সাথে পা জোড়া থেমে যায়। চোখ আটকে যায় সামনে দাঁড়ানো হলুদ রঙে মোড়ানো মানবীটাকে দেখে। বুকের ধকধক শব্দটা ইশান স্পষ্ট শুনতে পারছে। বার বার মনে করিয়ে দেয় এই সেই রমণী যাকে দেখলে তার দিন দুনিয়া ওল্টপাল্ট হয়ে যায়। তখন বুকের ধকধক শব্দটা এই সম্মোহনী নারীর নাম ঝপ করে। অন্য দিকে তীরও এক ধ্যানে তার সুদর্শন প্রেমিক পুরুষটার দিকে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছে। হলুদ পাঞ্জাবিতে যেন আরো সুদর্শন লাগছে শ্যামবর্ণের পুরুষটাকে। দু হাতের পেশি গুলো দৃশ্যমান হয়ে ফুলে আছে। তীর বেশিক্ষণ ইশানের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে কিন্তু ইশানকে দেখার ইচ্ছেটা যেন কমছে না বরং বাড়ছে। আবারো তীর মাথা তুলে ইশানের দিকে তাকালো। ইশানের স্থির চোখে আবারোও নজর আটকে গেলো। বরা বারের মতোই ইশানের চোখের চাওনি তীরকে কিছু বলতে চায় কিন্তু বোকা তীর কিচ্ছু বুঝতে পারে না কিচ্ছু না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেই হয় না সেই চোখের ভাষাও পড়তে হবে।
ইশা বান্ধবী আর ভাইয়ের চোখাচোখির চাওনি দেখে বাঁকা হেসে চিৎকার করে ভাইয়া বলে ডেকে উঠে। ইশার এমন ভ’য়ংক’র চিৎকার শুনে তীর আর ইশান দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সাথেসাথে নজর ফিরিয়ে নেয়। তীর এলোমেলো ভাবে চারদিকে নজর বুলায়। এখন নিজেকে নিজেরেই চ’ড় মারতে ইচ্ছে করছে এভাবে বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকার জন্য। এটার কি কোনো মানে আছে যত্তসব আজাইরা? ইশানও পাঞ্জাবির উপরের বোতামটা খুলতে খুলতে চলে যায় শাপলা বেগমের রুমে। হঠাৎ করেই কেন জানি ইশানের প্রচুর গরম লাগছে। মন চাইছে কারোর শীতল স্পর্শ সারা গায়ে মাখতে তাহলে যদি এই গরম অনুভুতিটা একটু হলেও কমে। কিন্তু সেই শীতল স্পর্শ পেতে হলে যে ইশানকে আরো কয়েক প্রহর অপেক্ষা করতে হবে।
______
ইশান মাথা নত করে শাপলা বেগমের রুমে বসে আছে। শাপলা বেগম অবাক স্বরে বলেন।
–তুমি যা বলছো তা কি সত্য নানা ভাই।
ইশান ঘাড় বাঁকিয়ে বলে।
–হুম নানু সব এভিডেন্স পাওয়ার পরেই আমি আপনার কাছে এসেছি। চাইলে আন্টির কাছে গিয়ে এসব বলতে পারতাম আমি কিন্তু আন্টিকে এসব বললে হয়তো এক্ষুণি বিয়েটা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি চাই না এই বিয়েটা এক্ষুণি থেমে যাক।
বলেই থেমে যায়। ইশানকে থেমে যেতে দেখে বলে।
–তুমি এখন কি চাও নানা ভাই?
ইশান নিঃশব্দে হেসে বলে।
–ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পেতে হলে একটু বেহায়া,,,না একটু নয় অনেকটাই বেহায়া হতে হয় জানেনেই তো। তাই আমিও বেহায়ার মতো আপনার কাছে আসলাম আপনার নাতনীকে সারা জীবনের জন্য নিজের করে পাওয়ার জন্য।
শাপলা বেগম বিস্মিত নয়নে তাকায় ইশানের দিকে। তবে কি তার মনের আশা পূরণ হতে যাচ্ছে। এসব ভেবে শাপলা বেগমের কুচকে যাওয়া ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। ইশান তা দেখে অবাক হয়ে বলে।
–কি হয়েছে নানু আপনি হঠাৎ হাসচ্ছেন কেন?
–হাসছি তার কারণ হলো আমার মনের বাসনাটা যে এভাবে তুমি পূরণ করবে তা কখন ভাবে নি।
ইশান ভ্রু কুচকে বলে।
–কি বাসনা নানু আপনার?
–তোমার সাথে তীরের বিয়ে দেওয়া এটা আমার বসনা। কিন্তু মাঝখানে আয়েশা সব গন্ডগোল পাকিয়ে দিলো। এমন কি আমাকেও কথার বেড়াজালে আটকে দিলো যাতে কিছু না করতে পারি। কিন্তু দেখো খোদার কি লিলা আয়েশা তীরের জন্য যে ছেলেটা ঠিক করেছে সেই ছেলেটার মাঝে এতো বড় একটা খুদ ধরা পড়ে গেলো।
ইশান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তাহলে সে ঠিক জায়াগাতেই এসেছে এবার শুধু সঠিক সময় আসার পালা। শাপলা বেগম পুনরায় বলেন।
–চিন্তা করো না নানা ভাই তীরের বিয়ে তোমার সাথেই হবে। আমি তোমার পাশে আছি।
ইশান সৌজন্যমূলক হাসি দেয়। আহমেদ পরিবারের বড় সদস্যকে যখন নিজের পাশে পাচ্ছে তখন আর কিসের চিন্তা।
_____
–মিস্টার আকাশ শেখ আগামীকাল আপনি যদি বিয়ে করতে আসেন তীরকে তাহলে কিন্তু আপনার বড়সড় ধরণের একটা ক্ষ’তি হয়ে যাবে।
অচেনা একটা নাম্বার দেখে এমন হু’ম’কি শুনে আকাশ কিছুটা অবাক হয়। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে স্বাভাবিক করে হাতে ধরে রাখা ড্রিংকের গ্লাসটা টেবিলের উপরে রেখে বাজখাই গলায় বলে।
–এই কে আপনি এভাবে রাত বিরাতে হু’ম’কি দিচ্ছেন।
লোকটা বাঁকা হেসে বলে।
–আমি…মনে করে নিন আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী যে আপনার ভালো চায়।
–শুনন আমার ভালোটা আমাকে বুঝতে দেন। আর আমি কাকে বিয়ে করবো না করবো সেটা আপনাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। এাব না ভেবে নিজের চড়কায় তেল দেন।
–নিজের চড়কায় তো তেল দিচ্ছি।
–এই আপনি ফোন রাখেন তো আজাইরা পাবলিক।
–ওকে ফাইন নিজের ভালোটা পাগলও বুঝে কিন্তু আপসোস আপনি বুঝতে চাইচ্ছেন না। তবে সর্তক বার্তাটা দিয়ে দিলাম তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।
বলেই ফোন কেটে দেয়। আকাশ বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে বিয়ের আগের রাতে এভাবে কেন একজন আগন্তুক তাকে হু’ম’কি দিছে। তবে আকাশের সন্দেহ হচ্ছে ইশানকে নিয়ে ইশান আবার বিয়েটা ভাঙ্গার জন্য এমন হু’ম’কি দেয় নি তো। হু’ম’কি দিলেই বা কি আকাশ এসবের পরোয়া করে না। সে সাহসী ছেলে। সে তীরকে বিয়ে করবেই করবে যা কিছু হয়ে যাক না কেন?
____
রিফাত কানের কাছ থেকে ফোন সরিয়ে পা উপর পা তুলে বসে থাকা ইশানের দিকে পূর্ণ নজর দিয়ে বলে।
–ইশান তুই ঠিক কি করতে চাইচ্ছিস আমাকে পরিস্কার করে বলবি প্লিজ। আর এভাবে আমাকে দিয়ে ওই আকাশকে হু’ম’কি বা কেন দেওয়ালি। তুই ঠিক কি করতে চাইছিস ইশান? তোকে আমার সুবিধার লাগছে না।
ইশান রহ’স্য’জনক এক হাসি দিয়ে বলে।
–সেটা জনতে হলে কালকের জন্য যে তোকে অপেক্ষা করতে হবে।
–পারবো না অপেক্ষা করতে এক্ষুণি বল।
ইশান বসা থেকে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে।
–এত অধৈর্য হলে চলে একটু ধৈর্য ধর। কথায় আছে না সবুরে মেওয়া ফলে।
–তার মানে তুই বলবি না আমাকে।
ইশান রিফাতের কাছে এসে রিফাতের কাঁধে হাত রেখে বলে।
–আরেকটা কাজ আছে সেটা এখন কমপ্লিট করতে হবে আমাকে তাই এখন আমাকে যেতে হবে।
বলেই হাটা ধরে। রিফাত জোরে বলে।
–এখন আবার কি কাজ বাকি আছে তোর।
ইশানও দরজা খুলে বের হতে হতে বলে।
–সেটা সিক্রেট।
ইশান চলে যেতে রিফাত চেয়ারে বসে বিড়বিড়িয়ে উঠে।
–এই ছেলে আগামীকাল নিশ্চিত বিনা সংকেতে ঝ’ড় তুলতে চলেছে। না জানি কালকে কি হয়?
বলেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে।
_____
তীর ক্লান্ত মস্তিষ্ক আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিভোরে ঘুমাচ্ছে। ইঠাৎ করেই মনে হচ্ছে যেন কেউ ওর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তীর চাইলেও চোখ মেলে তাকাতে পারছে না শতো চেষ্টা করেও বার বার বৃথা হচ্ছে। তীর বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে নেয়। তা দেখে তীরের পাশে বসা মানুষটা নিঃশব্দে হেসে উঠে। তীর হঠাৎ করেই অনুভব করে তার কপালে উষ্ণ নরম এক ছোঁয়ার অনুভতি। আর সারা মুখে আছড়ে পড়ছে তার গরম নিঃশ্বাস। এর মাঝে আবারোও অনুভব করে নাকে শীতল স্পর্শ। ডান হাতে অনুভব করলো খুচা খুচা জাতীয় কিছু একটা। সে কি কোনো বাজে স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তবে তার সাথে ঘটছে। এবার ভয়ে তীরের শরীর ঘামছে চোখমুখ খিঁচে রেখেছে। তীর এসব আর সইতে না পেরে নিজের সাথে যুদ্ধ করে এক চিৎকার দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। তীরের চিৎকার শুনে ইশা বেলকনি থেকে দ্রুত পায়ে এসে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে তীরের পাশে বসে বলে।
–কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করলি কেন?
তীর ইশার দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে।
–কোথায় ছিলি তুই এতক্ষণ?
–বেলকনিতে ছিলাম।
–বেলকনিতে কি করছিলি?
–ফোনে কথা বলচ্ছিলাম আর তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? হয়েছেটা কি?
তীর ঢোক গিলে বলে।
–একটু আগে মনে হচ্ছিলো যেন কেউ আমার কাছে ছিলো আমার খুব কাছে।
তীর কপালে আর নাকে হাত দিতে দিতে বলে।
–আমার কপালে কিছু একটা ছুঁয়ে দিয়েছিলো। আর নাকে, নাকে ঠান্ডা কিছু লাগিয়ে দিয়েছে দেখ।
ইশা তীরের নাক দেখে বলে।
–কই কিছুই তো নেই। তুই স্বপ্ন দেখছিলি তীর।
–না এসব বাস্তবে ঘটছিলো আমার সাথে।
–তোর বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখ তোর নাকে কিচ্ছু নেই হলুদের রঙ ছাড়া।
তীর বসা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে ইশার কথাই সঠিক। কিন্তু তার নাকে তো কেউ হলুদ ছোঁয়ায় নি তাহলে নাকে হলুদ রঙ হলো কি করে? তীর তড়িৎ বেগে বলে।
–নাকে তো কেউ হলুদ ছোঁয়ায় নি তাহলে নাকের ডগা হলুদ হলো কি করে?
–তীর তোর কি মাথাটা কি পুরাটাই গেছে ভাইয়ার শোকে। মনে নেই আমি তোর গাল থেকে হলুদ এনে তোর নাকে দিয়েছিলাম মজা করে।
–কিন্তু।
–আর একটাও কথা নয়। সারা দিন অনেক খাটাখাটনি গেছে তাই চুপচাপ ঘুমা এসব ভুলভাল না জপে।
বলে ইশা ঠোঁট চেঁপে হেসে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। তীর ঠোঁট ফুলিয়ে ডান হাতটা সামনে ধরে। তার সাথে কি সবটাও বাস্তবে ঘটেছে নাকি সবটা স্বপ্ন ছিলো। তীর কি সত্যি ইশানের শোকে পাগল হয়ে যাচ্ছে। তীরের ভাবনার মাঝে ইশা বলে।
–লাইট অফ করে চুপচাপ ঘুমা।
তীরের আর কি করা লাইট অফ করে শোয়ে পড়ে। কিন্তু মন বলছে এটা স্বপ্ন ছিলো না তার সাথে বাস্তবে ঘটেছে।
______
ইশান দু হাত মাথার নিচে রেখে ছাদের ফ্লোরে শুয়ে আছে। দৃষ্টি তার দুর আকাশের চাঁদটার দিকে আর মুখে মিটিমিটি হাসি। আজকে ইশান খুব খুশি খুব। ইচ্ছে করছে আকাশ ফাঁটিয়ে হাসতে। ইশান চট করে উঠে বসে। ডান হাতের তর্জনী আর মধ্যমা আঙুল দ্বারা নাকের ডগায় লেগে থাকা হলুদটা মুজে চোখের সামনে ধরতে শব্দ করে হেসে উঠে। মেয়েটা যে এতোটা ভ’য় পাবে ইশান তা একসেপ্ট করে নি। তাই তীর ভ’য়ে যাতে হার্ট অ্যাটাক না করে তার আগেই চলে যায়। এই সুযোগটা আজকে ইশাই করে দিয়েছে ভাইকে।
ইশান আবারও মাথার নিচে দু হাত দিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে। কালকের দিনটা জন্য ইশান অধীর আগ্রহে বসে। কালকেই তার হৃদয়ে জ্বলতে থাকা #প্রনয়ের_দহন নিভে যাবে।
#চলবে_____
বিয়েটা আজকে দিতে পারি নাই। কালকে ইনশাআল্লাহ আমাদের ”তীরশানের” বিয়েটা হবে।