ফিরে_আসা ২৯ লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

0
697

#ফিরে_আসা
২৯
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে অরা। তবে সেই চেষ্টা সফল করা যেন দুঃসাধ্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাতে ঘুমাতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মানুষের নোংরা নোংরা সব মন্তব্য। অরা জানে ওই মানুষগুলোর একটা কথাও সত্যি নয়। মানুষগুলো একসঙ্গে জড়ো হয় চেঁচিয়ে তাকে ‘চরিত্রহীন’ ডাকলেও এই সত্য কেউ বদলাতে পারবে না যে অরা চরিত্রহীন নয়। তবুও মাঝে মধ্যে বিচিত্র এক কষ্ট হয়। একটা মানুষকে ভেতর থেকে শেষ করে দেওয়ার জন্যে কথার বুলেটের থেকে ভারী অস্ত্র আর কিছুই হতে পারে না।

অরা ভেবে পায় না, ফেসবুকে তাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কমেন্ট করা ওই মানুষগুলো তার মুখোমুখি দাঁড়ালে কী করতো? তারা কী অরার মুখের সামনে তাকে নিয়ে বাজে কথা বলার সাহস পেত? মোটেই না। মোবাইল স্ক্রিনের আড়ালে লুকিয়ে মনে যা আসে তাই বলা খুব সহজ।

খারাপ মন্তব্যের স্রোত আপাতত ঠান্ডা হয়েছে। তবুও অরাকে নিয়ে আলোচনা শেষ হওয়ার কোনো নামগন্ধ নেই। আরশাদ হকের স্ত্রী বলে কথা! তাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ একেবারে তুঙ্গে। বিশেষ করে তার বানিয়ে বানিয়ে বলা ওই ভালোবাসার গল্পে। বিয়ের ঘোষণার পর থেকে অরার ফলোয়ার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় বিশ লাখে। আগে পোস্ট করা ছবিগুলোর নিচে মানুষের একটাই কমেন্ট। “আরশাদের সঙ্গে আপনার প্রেমটা শুরু হলো কী করে?”
ফোন থেকে ফেসবুক অ্যাপটাই ধরে ফেলে দিয়েছে অরা। তার কোনো প্রয়োজন নেই অজানা মানুষের অহেতুক অ্যাটেনশন।

বাজে মন্তব্য নিয়ে দুশ্চিন্তাপর্ব শেষে অরার দুশ্চিন্তা শুরু হয় এই বিয়েটা নিয়ে। আচ্ছা, সে কি বিয়েটা করে ঠিক কাজ করলো? বিয়েটা না করলে এখনও তাকে জর্জরিত হতে হতো মানুষের কথার বুলেটে। তাকে সকলের দৃষ্টিতে একটা চরিত্রহীন বাজে মেয়ে হয়েই থেকে যেতে হতো। আর বিয়ে করেই বা কী হলো? যে বিয়ের কোনো ভিত্তি আরশাদের কাছে নেই। তার কাছেও যে আছে এমনটা নয়।

অরা মনে করে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এই পৃথিবীতে কমই আছে। বিয়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে দুটো মানুষের জীবন। মানুষ তাকেই বিয়ে করে যাকে সে জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসে। আজীবন যাকে কাছে রাখতে চায়। অরার বারবার মনে হচ্ছে, ইমেজ রক্ষার খাতিরে এই বিয়ে করে ‘বিয়ে’ শব্দটাকেই অপমান করছে সে এবং আরশাদ। বিচিত্র এক অপরাধবোধ ঘিরে ধরছে তাকে।

আরশাদের এই বাড়িটা একটু একটু করে আপন হতে শুরু করেছে অরার কাছে। যদিও এর আগে কাজের খাতিরে বহুবার আসা হয়েছে এখানে, তবে তার বিচরণ বসার ঘর এবং স্টাডি রুম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন এই পুরো বাড়িটাকে ঘুরে ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছে অরা। এ বাড়ির দুই তলায় চারটা ঘর, আর নিচ তলায় পাঁচটা। অরা যে গেস্ট রুমে থাকছে সেটা নিচতলায়। ওপরের চারটি ঘরের সবথেকে বড় আর সুন্দর ঘরটায় আরশাদ থাকে। বাকি ঘরগুলোর একটায় তার বিশাল লাইব্রেরী।

কোনো এক ইন্টারভিউতে আরশাদ একবার বলছিল, একটা সময়ে তার প্রবল বই পড়ার শখ ছিল। তবে সেই শখের তীব্রতা যে এত ভয়াবহ তা কে জানত? লাইব্রেরির চারটি দেয়ালের তিনটি জুড়েই প্রকান্ড লাইব্রেরি। দেশি-বিদেশি এমন কোনো লেখক নেই যার বই নেই এখানে। তবে সমস্যা একটাই, বইগুলো সুন্দর করে সাজানো নেই। একেক লেখকের একেক বই, একেক তাকে ছড়িয়ে আছে। কোনো জায়গায় আবার বাংলা বইয়ের মধ্যে একটা ইংরেজি বই পড়ে আছে। বই পড়া যেমন আনন্দের, বইগুলো বিভাগ অনুযায়ী সাজিয়ে রাখা ঠিক ততটাই আনন্দের। আরশাদ দীর্ঘদিন এই লাইব্রেরিতে পা রাখে না বলেই হয়তো বইগুলো সাজানো নেই। অরা ঠিক করে রেখেছে এইদিন সময়-সুযোগ করে সে নিজেই বইগুলো সাজিয়ে রাখবে। এতে নিশ্চয়ই আরশাদ রাগ করবে না।

লাইব্রেরি ঘরে খয়েরী রঙের বিশাল এক সোফা আছে। অরার সন্ধ্যা বেলাটা আজকাল এখানেই কাটে। এক মগ কফি বানিয়ে একটা বই নিয়ে বসে পড়ে সে। সময়টা দারুণ কেটে যায়। বই পড়ার শখ তার মধ্যেও নেহায়েত কম নেই। তবে জীবনের করুণ পরিস্থিতি তাকে কখনো বই সংগ্রহ করে শখের বশে তা পড়তে দেয়নি। এখন যখন সুযোগ পেয়েই যাচ্ছে, কেন শুধু শুধু সেই সুযোগ হাত ছাড়া করতে যাবে অরা।

সকালের দিকে বাড়িটা জমজমাট থাকে। বাড়ি পরিষ্কার করার জন্যে প্রতিদিন চারজন স্টাফ আসে। মতিউরের নির্দেশে তারা পুরো উদ্যমে পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়ে। বাবুর্চি আব্দুল চলে আসে তার দুজন সঙ্গী নিয়ে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রান্নাঘরটা তাদের দখলেই থাকে। অরা বহুবার চেষ্টা করেছে সকালবেলা নিজের কফিটা নিজে বানাতে। কোনোবারই সক্ষম হয়নি। আব্দুল প্রতিবারই আঁতকে উঠে বলেছে, “আপনি কফি বানাইবেন কেন অরা আপা? আমি কি মইরা গেছি?”

দূরের আকাশে যেমন ক্রমেই সূর্যের তীব্রতা কমে আসে, ঠিক তেমনি দিন যতই বাড়তে থাকে এই বাড়িয়ে নেমে আসে এক শান্ত পরিবেশ। আব্দুল রান্নাবান্না শেষে তার দলবল নিয়ে চলে যায়। পরিষ্কার করতে আসা ওই স্টাফরাও সন্ধ্যার আগ দিয়ে চলে যায়। সবশেষে মতিউর বাড়ির চাবি অরাকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়। আরশাদ রাতে বাড়িতে কোনপ্রকার মানুষজন পছন্দ করে না বলে এরা কেউ থাকে না।

এই বিশাল বাড়িতে একা একা গা ছমছম করে ওঠে অরার। তবে ভয় লাগে না। তাকে ছোটবেলায় কেউ কোনোদিন ভূতের ভয় দেখায়নি বলে তার মধ্যে ভয় ব্যাপারটা নেই। অরার শুধু অবাক লাগে এই ভেবে, জীবন কতটা অদ্ভুত! কোথায় তার এখন শুটিং ইউনিটের সঙ্গে সিলেটে থাকার কথা ছিল, কিন্তু অরা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে আরশাদের বাড়িতে। তাও আবার তার স্ত্রী হয়ে।

বাড়ির সামনের সাংবাদিকদের ভীড় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সিকিউরিটি গার্ডরা বাড়ির সামনে বা আশেপাশে তাদের জড়ো হতে দেয় না। তবুও ঘর থেকে বের হবার কোনপ্রকার সাহস করে উঠতে পারছে না অরা। সীমা মাঝেমধ্যে দেখা করতে এলেও কয়েকদিন ধরে সেটাও বন্ধ। সে গেছে তার গ্রামের বাড়িতে।

সীমার বাবার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ঝগড়া। মেয়ে এইচএসসি পাশ করার পর তিনি চেয়েছিলেন সীমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে। উপযুক্ত পাত্রও পেয়েছিলেন। ছেলে সিঙ্গাপুরে চাকরি করে, ঢাকায় নিজেদের ফ্ল্যাট। ছেলে আশ্বাস দিয়েছিল বিয়ের পর সীমাকে পড়াবে। পড়াশোনা শেষ করে সীমাও তার সঙ্গে সিঙ্গাপুরে গিয়ে থাকবে।

স্বপ্নের মতো সুন্দর এই প্রস্তাব নিমিষেই ভেঙে চুরমার করে দেয় সীমা। তার কথা, বিয়ের আগে সব ছেলেই বলে স্ত্রীকে পড়াবে। কিন্তু বিয়ের পর শেষমেশ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে কয়জন মেয়ে? তার ওপরে আবার সিঙ্গাপুরে গিয়ে থাকার বিষয়ে তার ঘোর আপত্তি। সে সিঙ্গাপুরে গিয়ে থাকতে যাবে কেন? এই গরীবের দেশে তার জন্ম হয়েছে, এখানেই মরবে সে।

বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর বাবা-মেয়ের মাঝে বাঁধে ঘোর ঝগড়া। ঝগড়ার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে বাবা এক পর্যায়ে সীমাকে বলে দেন নিজের মরা মুখ দেখার অধিকার পর্যন্ত দেবেন না মেয়েকে। সীমাও রেগেমেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। ঢাকায় এসে নিজেই নিজের থাকার ব্যবস্থা করে, অরাকে খুঁজে পায়, ফ্রিল্যান্সিং করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই যোগায়।

এতদিনে বাবা-মেয়ের মধ্যকার পাথর গলতে শুরু করেছে। সীমা আগেকার মতো অভিমান নিয়ে বসে নেই। বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাই সে ছুটে চলে গেছে গ্রামের বাড়ি। পরিবারের সঙ্গে কারও এমন বন্ধন দেখলে খুব আনন্দ হয় অরার। তার তো পরিবার নেই, তাই সে জানে এই সম্পর্কের গুরুত্ব কতটুকু।

প্রায় বিশ দিন পর শুটিং শেষে কাল রাতে বাড়িতে ফিরেছে আরশাদ। সে বাড়িতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই কেমন এক শীতল হওয়া বয়ে যাচ্ছে। সকলে আজ কাজও করছে কেমন ধীরস্থির ভঙ্গিতে। একটু শব্দ হলে যদি আরশাদের ঘুম ভেঙে যায়?

অরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো ঘড়ির কাঁটা ঠিক একটার ঘরে। সে জানতো আরশাদ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। তাই বলে এতটা দেরি? প্রতিদিন কি এতটাই দেরি করে না-কি টানা শুটিং করে বেচারা একটু ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত? কাল রাতে বাড়িতে পা রেখেই আরশাদ সোজা নিজের ঘরে চলে গিয়েছে। অরার সঙ্গে তার দেখা হয়নি। অবশ্য ভালোই হয়েছে। বিয়ের ঘটনার পর আরশাদের মুখোমুখি হওয়ার কথা কল্পনাতে আনলেও কেমন অস্থির লাগে অরার। এই বিশ দিনে ফোনে অসংখ্যবার কথা হয়েছে তার সঙ্গে। আরশাদ তার স্বভাবমতো বেশ কয়েকবার ধমকও দিয়েছে অরাকে। তবে কাজের বাইরে কোনো কথা তাদের হয়নি। অবশ্য না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তারা তো সত্যিকারের স্বামী-স্ত্রী নয়।

কিন্তু সমস্যা হলো একজন তাকে আরশাদের সত্যিকারের স্ত্রী ভেবে বসে আছেন। আরশাদের মা। অরা ঢাকায় চলে আসার পরপরই সেলিনা হক তাকে ফোন দিয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক কথা বলেন। এই দীর্ঘ কথোপকথনের সারমর্ম হলো, অরা আর আরশাদ যে বিয়ে করেছে এতে তার আনন্দের সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অরার মতো লক্ষ্মী একটা মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে পেয়ে তিনি ধন্য।

আনন্দের বহিঃপ্রকাশ কেবল কথা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। অরাকে অপরূপ সুন্দর একটা সোনার হার পাঠিয়েছেন। এটা না-কি তিনি যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন পুত্রবধূকে দেবেন বলে। অরা ভেবে পায় না, পুত্রবধূকে দেওয়ার জন্যে যত্ন করে রেখে দিলে তো এই হার নওশীনের পাবার কথা।

নওশীনের কথা মনে পড়তেই অরার গা বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। না জানি এই বিয়ে নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া কেমন? নওশীনের কানাডা থেকে ফিরে আসতে আরও কয়েক মাস বাকি। কানাডা থেকে ফিরে সে কি আর কোনোদিন স্বাভাবিক চোখে দেখতে পারবে অরাকে? নওশীন যেমনই হোক না কেন, অরা মনে মনে তাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করে। তার কারণেই তো এই সুন্দর জীবনটা পেয়েছে অরা। নওশীন তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তা আসলেই কষ্টকর হবে।

অরার ভাবনায় ছেদ পড়লো মতিউরের ডাকে। “আফা! স্যার আফনেরে ডাকে।”

অরা স্বাভাবিকভাবে বলল, “স্যার উঠেছেন?”

মতিউর কয়েক মুহূর্ত অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অরার দিকে। মনে মনে নির্ঘাত ভাবছে, এই মেয়েটা বিয়ের পরও আরশাদকে স্যার ডাকছে কেন? অরার কিছুই করার নেই এতে। এক নিমিষে তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস ছেড়ে আসা তো আর সম্ভব নয়।

মতিউর বলল, “জি উঠছে। বারান্দায় আফনের অপেক্ষা করতেছে।”

আরশাদের চোখেমুখে আজ বিচিত্র এক স্নিগ্ধতা ছেয়ে আছে। টানা শুটিংয়ের ফলে ক্লান্তির কোনো ছাপই পড়েনি চেহারায়। শান্ত ভঙ্গিতে কফির কাপে চুমুক দিয়ে সুইমিং পুলের দিকে তাকালো। বারান্দার এই সুইমিং পুল নিয়ে কথার বাড়াবাড়ির শেষ নেই। প্রতিবার আরশাদের কাছে এসেই সবার আগে নামবে এই সুইমিং পুলে। কতদিন হয়ে গেল মেয়েটা দৃষ্টি সীমানার বাইরে। কবে সে ফিরে আসবে কথা!

অরা ইতস্তত ভঙ্গিতে বসে আছে আরশাদের মুখোমুখি। সেই কখন থেকে নীরবতা জালে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে আরশাদ। নীরবতাও মাঝে মাঝে অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারে। অরা প্রাণপণ চাইছে আরশাদ মুখ খুলুক, কিছু একটা বলুক!

অরার সেই ইচ্ছা পূরণ করে আরশাদ বলল, “ঠিক আছো তুমি?”

অরা অস্পষ্ট গলায় বলল, “জি স্যার।”

আরশাদ শান্ত গলায় বলল, “এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?”

অরা না-সূচক মাথা নাড়লো। তার হৃদস্পন্দন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এখন তো মনে হচ্ছে নীরবতাই ভালো ছিল। আরশাদ মুখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে কেমন এক অস্থিরতা খেলে যাচ্ছে তার মনে।

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে আরশাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “I’m sorry Aura.”

অরা হতবাক গলায় বলল, “আপনি কেন সরি বলছেন স্যার?”

“আমার কারণেই তো তোমাকে এত বাজে কথা শুনতে হলো।”

“না স্যার। আপনি তো আমার উপকারই করেছেন। ওই দিন আপনি ডক্টর ডেকে না আনলে সত্যিই আমার খবর হয়ে যেত!”

আরশাদ গম্ভীর গলায় বলল, “মানুষের বাজে কথায় মন খারাপ করবে না অরা। কিছু মানুষের কাজই ঘটনার আদি-অন্ত না জেনে মনে যা আসে তাই বলা। আমি তো অভ্যস্ত।”

অরা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার কষ্ট হয় না স্যার?”

আরশাদ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “না। বরং এদের জন্যে মায়া হয়। প্রকৃত সত্যিটা এরা কোনোদিনও জানতে পারবে না। মিথ্যার আশ্রয় নিতে নিজেদের পাপের পাল্লা ভারী করেছে।”

অরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আরশাদের দিকে। এই পৃথিবীতে আরশাদ যতটা আনন্দ পেয়েছে, তার থেকে নেহায়েত কম কষ্ট পায়নি। এতকিছুর পর তবুও এতটা ইতিবাচক কী করে থাকতে পারে সে?

আরশাদ পরিষ্কার গলায় বলল, “চাকরি নিয়ে তোমাকে কোনো টেনশন করতে হবে না। তুমি আমার ম্যানেজারই থাকবে। আপাতত কয়েকটা মাস বাড়িতে থেকে কাজ করো। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে শুটিংয়ে যেতে হবে না। আর এক বছর পরেও তুমি আমার ম্যানেজারই থাকবে।”

অরা বিভ্রান্ত গলায় বলল, “কিন্তু স্যার…”

অরার কথা শেষ হবার আগেই আরশাদ বলল, “নানা মানুষ নানা কথা বলবে। প্রশ্ন তুলবে, ডিভোর্সের পরেও একসাথে কাজ করছে কী করে? I don’t care about them, neither should you. মানুষের কথা এড়িয়ে যাওয়া এখন থেকেই শিখে নেও, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।”

“জি স্যার।”

“এখানে কমফোর্টেবলি থাক, আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবে।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here