মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৬

0
334

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
ক্লাস থেকে ফিরে শেহজাদ, ফোন চেক করে দেখলো ওই একই নাম্বার থেকে কিছু মেসেজও। মেসেজগুলোতে নিজেকে শুভাকাঙ্ক্ষী বলে সম্ভোধিত। খানিক কৌতুহলের বসেই শেহজাদ স্ক্রিনশট গুলো চেক করলো। চেক করে বুঝলো মীরার সাথে কারও কনভার্সেশন। এতে মীরার চরিত্রে দা*গ লাগবে এমন কিছু। শেহজাদ সবগুলো পড়লো। অতঃপর কিঞ্চিত ভেবে সবগুলো ছবি মীরাকে ফরোয়ার্ড করে দিলো। মীরারও তখন ক্লাস ব্রেক। লাঞ্চ বক্স বের করেছে সবে। রুমে তার কলিগ কনক ম্যাম নেই। উনার এখন ক্লাস। আরেক কলিগ সাবিহা ম্যাম আছেন। মীরা, সাবিহা ম্যামের সাথে টুকটাক কথা ও হাসি বিনিময় করে বক্স খুলেছে খাবে তখনি মোবাইলে টুং শব্দ হয়। স্ক্রিণে শেহজাদের মেসেজ ভেসে উঠতে দেখে কিঞ্চিত চিন্তিত হয়। শেহজাদ স্যার তো তাকে মেসেজ করে না। রাতের বেলা শুধু ফ্রিশার সাথে কথা বলার জন্য কল করে। মীরা বক্সটা বন্ধ করে মেসেজটা আগে দেখে। সবগুলো স্ক্রিনশট দেখে তার চক্ষু চড়কগাছ! কারণ মেসেজ গুলোর ৬০% এডিটেড। এসব রাদিবের সাথে মেসেজিং। মীরা বিহ্বল দৃষ্টিতে মোবাইলের স্ক্রিণের পানে নিরন্তর চেয়ে রইল। সাবিহা ফোনে একটা নিউজ দেখে মীরাকে মৃদু স্বরে ডেকেও সাড়া না পেয়ে উঠে আসে। সাবিহা, মীরার কাঁধে হাত রাখলে মীরা চমকে উঠে। আকস্মিক মীরাকে হকচকিয়ে উঠতে দেখে সাবিহা সন্দিহান হয়ে শুধায়,

“কী হলো? হোয়াই আর ইউ স্কেয়ার্ড?”

মীরা দ্রুত নিজেকে সামলে বলে,
“নাথিং। আমি একটু বাহিরে থেকে আসছি।”

“খাবে না?”

“তুমি খেয়ে নাও। আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কল করতে হবে।”

“ওকে।”

মীরা রুম থেকে বেরিয়ে লিফটে উঠলো। অতঃপর ছাদে গেল। সেখানে গিয়ে খানিক ফাঁকা জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে শেহজাদকে কল লাগায়। শেহজাদও ফ্রি ছিল। সে রিসিভ করতেই মীরা সালাম দিয়ে বিরামহীন বলতে লাগে,

“দেখুন স্যার, ওসব মেসেজিং, স্ক্রিনশট সব এডিটেড। আমার নরমাল কথা-বার্তাকে এভাবে এডিট করেছে। ইয়েস, অ্যাই এগ্রি, রাদিব নামের লোকটার সাথে আমার পরিচয় ছিল। এমনকি কথাও হতো। লেট নাইট কথাও হতো। সে নিজেই কল করতো, নিজেই নক করতো। আমি বাধ্য হয়ে কথা বলতাম কারণ তার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু সে আমার মেসেজ গুলোকে যেভাবে এডিট করেছে সেসব কিছুই না। আপনি চাইলে নিজে আমার হোয়াটসআপ চেক করতে পারেন।”

শেহজাদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে হালকা হাসে। মীরার অস্থিরতা সম্পর্কে তার ধারনা আছে। নিজের সম্পর্কে মিথ্যা কিছু জানতে পারলে সে অস্থির হয়। আরও অনেক কিছুতে সে অস্থির হয়। শেহজাদ বলে,

“রিল্যাক্স। আজ দেখা করে সব ক্লিয়ার করা যাবে। হাইপার হওয়ার কিছু নেই।”

মীরা চোখ বন্ধ করে অস্বস্তিকর নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তারপর আকাশের পানে চেয়ে বলে,
“থ্যাংক ইউ স্যার। কোথায় দেখা করব?”

“ওয়েলকাম। ভার্সিটি শেষে সেদিনকার সেম রেস্টুরেন্টে।”

“ওকে স্যার।”

মীরা কল কেটে ছাদে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রাদিবের মেসেজ গুলো দেখে তাচ্ছিল্য হাসলো। এই রাদিব তার পেছনে আঠার মতো পড়েছে তো পড়েছেই!

________

রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে শেহজাদ ও মীরা। খাবার অর্ডার করা হয়েছে। শেহজাদ লক্ষ্য করলো মীরা কেমন উদাসীন। সে জিজ্ঞাসা করে,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড, মীরা?”

মীরা পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। তার সামনে বসে থাকা ব্যাক্তিটিকে নিগূঢ় দৃষ্টিতে অবলোকন করে ভাবতে লাগলো, এই লোকটা তাকে বিশ্বাস করেছে। তার মুখের কথাতেই মেনে নিয়েছে। একটা সম্পর্কে বিশ্বাসটাই মূল ভিত্তি। পরক্ষণেই তার মনে পড়লো, বর্ণও তো তাকে বিশ্বাস করতো! এবং বিশ্বাসটা তো বর্ণ নিজেই ভেঙেছে। এসব মনে পড়তেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মীরা। তারপর বলল,

“আপনি নিজে আমার হোয়াটসআপ চেক করে দেখুন।’

“ইটস নট নিডেড, মীরা। অ্যাই ট্রাস্ট ইউ।”

নিজের অজান্তেই ঈষৎ কেঁপে উঠলো মীরা। শেষ তিনটা শব্দ অতি সাধারণ হলেও এর তীব্রতা বেশ অসাধারণ। মীরা টেবিলে রাখা পানির বোতল থেকে এক ঢোক পানি খেয়ে বলে,

“প্লিজ স্যার। অ্যাই ইনসিস্ট। আপনি চেক করলে আমি শান্তি পাব।”

শেহজাদ ঈষৎ শব্দ করে হাসলো। তারপর বলল,
“মীরা, তোমার মনে আছে? একবার তুমি আমার সাবজেক্টের মিড পরীক্ষাতে নাম্বার কম পেয়েছিলে? আসলে ওটা আমার টিএ এর গোনায় ভুল ছিল। তোমার ৪ নাম্বার বেড়েছিল। তুমি এসে বলাতে আমি চেক না করেই নাম্বার বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু নাম্বার বাড়ানোর পরেও তুমি যাচ্ছিলে না। কারণ, আমি চেক করিনি। অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে। বারবার বলছিলে চেক করে দেখতে। আমিও বারবার বলছিলাম, ইটস নট নিডেড। বাট ইউ আর সো স্টাবর্ন। আফটার দ্যাট, অ্যাই চেইকড ইট। আমি কিন্তু জানতাম তুমি অতো কম মার্কস পাবে না। খাতা তো আমিই চেক করেছিলাম।”

মীরা লাজুক হাসলো। শেহজাদ মীরার ফোন নিয়ে রাদিবের সাথে মেসেজ গুলো চেক করলো। পাশাপাশি রাদিবের মেসেজ এডিট করার কারণটা মীরা তাকে বলতে লাগলো। সব শুনে শেহজাদ বুঝলো রাদিব মীরাকে নিচু করতে চায়। সে ফের শুধালো,

“রাদিব বলল, তুমি আজ বর্ণর সাথে দেখা করেছ। বর্ণ দেশে ফিরেছে?”

অবাক হয় মীরা। বর্ণর দেশে আসার কথা রাদিব কীভাবে জানলো? আর আজ দেখা হয়েছে সেটাই বা কীভাবে? মীরা বলল,
“জি স্যার। বর্ণ কিছুদিন আগেই দেশে ফিরেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সে বিভিন্ন নাম্বার থেকে বারবার আমাকে কল করছিল। আমি ব্লক করতে করতে পরে সিমকার্ডটাই খুলে ফেলেছি। আজ তো ভার্সিটিতে চলে এসেছিল। তারপর সবকিছু ভালো ভাবে শেষ করে তাকে বিদায় জানিয়েছি। কিন্তু এগুলো রাদিব কীভাবে জানে?”

“দ্যাটস মাই কোশ্চেন। মেবি বর্ণর হঠাৎ দেশে আসাতেও রাদিবের হাত আছে। ইউ শুড আস্ক হিম।”

“বর্ণকে?”

“ইয়াহ।”

মীরা বর্ণর নাম্বারের ব্লক খুলে কল করলো। প্রথমবার রিং হতেই বর্ণ রিসিভ করে খুশিমনে বলতে শুরু করে,

“মীরা, তুমি কল করেছ? তুমি আমাকে….”

মাঝপথেই থামায় মীরা। ফোন লাউডে দেওয়া। বর্ণর সব কথা শেহজাদও শুনতে পাবে। মীরা প্রশ্ন ছুড়ে,
“আপনি রাদিবকে চিনেন?”

বর্ণ হতাশ হয়। অতঃপর মলিন স্বরে উত্তর করে,
“হুম। ওয়ান উইক এগো, হি নকড মি। অ্যাই ডোন্ট নো, হাউ হি নো মি এন্ড ম্যানেজ মাই ফেসবুক একাউন্ট। হি ইন্ট্রোডিউস হিম এজ মাই ওয়েল উইশার এন্ড হি টোল্ড মি দ্যাট ইউ আর ম্যারিং শেহজাদ স্যার।”

মীরা শেহজাদের দিকে তাকায়। শেহজাদও তাকায়। মীরা বর্ণের উদ্দেশ্যে বলে,
“রাদিবের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু তার কুকীর্তি আমার সামনে চলে আসাতে, আমি বিয়েটা ভেঙে দিয়েছি। তারপর থেকে সে নানাভাবে চেষ্টা করছে আমার ক্ষতি করতে। আমার ফ্যামিলির কাছে এসেও আমার নামে মিথ্যা কথা রটিয়ে গিয়েছিল। স্টে এওয়ে ফর্ম হিম। ইট উইল বি বেটার ফর ইউ। গুড লাক, বর্ণ!”

বর্ণকে কোন প্রত্যুত্তর করার সুযোগ না দিয়ে মীরা কল কেটে দেয়। বর্ণ কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কল কেটে যাওয়াতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যালকনির ইজিচেয়ারা শরীর এলিয়ে দেয়।

মীরা শেহজাদকে বলে,
“সব ক্লিয়ার, স্যার। রাদিব আমাকে খারাপ প্রুভ করতে চাইছে।”

“এর ব্যবস্থাও করা হবে। মানহা*নি করতে চেয়েছে সে। রিল্যাক্স। এখন খাবার চলে আসবে। গরম গরম খেয়ে নাউ।”

মীরা স্বস্তির হাসি হাসে, সাথে শেহজাদও।

________

বাড়ি ফিরে মীরা আরেক দফা অবাক হয়। তার ঘরে ফ্রিশা ঘুমিয়ে আছে। মীরা অবাক হয়ে তার বড়ো ভাবিকে ডাকে। মীরার ডাকে ফ্রিশা কিঞ্চিত নড়ে ওঠে। শারমিন এসে বলে,

“আস্তে কথা বলো। ফ্রিশা গাড়িতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। তোমার ভাই ও-কে কোলে করে এনে শুইয়ে দিয়েছে।”

ভাবির কথা যেন মীরার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। সে সন্দিগ্ধ প্রশ্ন ছুড়ে।
“ভাইয়া, ফ্রিশাকে নিয়ে এসেছে মানে?”

এর জবাব দিলো মিসেস শাহিদা রেহমান। তিনি এসে হাসি মুখে বলেন,
“হঠাৎই আমার কাছে ফোন আসলো, আমি যেন ফ্রিশাকে নিয়ে জলদি তোমাদের বাসায় চলে আসি। আমিও তাই করলাম। গাড়িতে আসতে আসতে ফ্রিশা ঘুমিয়ে গেছে।”

মীরা মিসেস শাহিদাকে দেখে ও তার কথা শুনে আরো অবাক হয়। সে সালাম দিয়ে ফের শুধায়,
“আমি বুঝতে পারিনি, আন্টি। কিছু হয়েছে?”

নিধি এসে হাস্যজ্জ্বল কন্ঠে বলে,
“হবে গো ননদিনী। যাও জলদি এই লাল শাড়িখানা পড়ে আসোতো (হাতে তার লাল জামদানী শাড়ি)।”

হঠাৎ কী হচ্ছে মীরা বুঝতে পারছে না। এতো রাতে শাড়িই বা পড়বে কেন? আর ফ্রিশা ও মিসেস শাহিদাই বা কেন এসেছে? মীরার মনে প্রশ্নদের অস্থির পদচারণা। মীরাকে এভাবে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে শারমিন হেসে বলে,

“তোমার এইনগেজমেন্ট হবে আজ।”

চমকে উঠে মীরা! বিস্ময়ে কিয়ৎক্ষণ বাকরুদ্ধ থাকে। ফের হড়বড়িয়ে শুধায়,
“আজ! মানে এটা কখন সিদ্ধান্ত হলো? আমি তো কিছুই জানতাম না। শুক্রবার না বলা হয়েছিল?”

“বলা হয়েছিল কিন্তু তোমার মেয়ের বাবা ঘণ্টা খানেক আগে কল করে বলল যেন আমরা এখানে আসি। সে ও তার ফুফা একসাথে আসবে।”

মিসেস শাহিদার কথাগুলো মীরা মিলাতে পারলো না। ঘণ্টা খানেক আগেই তো ফ্রিশার বাবা মানে শেহজাদ স্যার তাকে উবার ডেকে উঠিয়ে দিলো। বলেছিল, আজ কাজ আছে বলে এগিয়ে দিতে পারছে না! তাহলে এখন? এসব সে কী শুনছে? ধীরে বিছানায় বসলো সে। পাশ ফিরে ঘুমন্ত ফ্রিশাকে দেখলো। তার বিছানায় এক প*রীর বাচ্চা আদুরে ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে আছে। মীরা পলকহীন বাচ্চাটার দিকে চেয়ে থাকলো। আচমকা তার মস্তিষ্ক তাকে জানান দিলো, মিসেস শাহিদা শেহজাদকে “তোমার মেয়ের বাবা” বলে সম্বোধন করেছে। তৎক্ষণাৎ তার লোমকূপ পর্যন্ত কেঁপে উঠলো। হৃদযন্ত্র তার স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি পাম্প করছে। দ্রুত নিজেকে সামলাতে উঠে গিয়ে বেড সাইড টেবিলে রাখা পানির বোটল থেকে পানি পান করে।
মীরার এই অস্থির অবস্থা দেখে মিসেস শাহিদা, শারমিন, নিধি মুচকি হাসছে। পেছনে সদ্য আসা মীরার মা মিসেস মলি জাহান নিজ ওড়নার কোনা দিয়ে খুশিমিশ্রিত অশ্রুজল মোছেন।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
নোট তো পড়বেন না। দিতে ইচ্ছে করেও না। কিন্তু তাও দিলাম। রাইটিং ব্লকে পড়ে গিয়ে যা লিখি সব আওলে যাচ্ছে। এটা ও আরেকটা কারণে গল্প দিতে দেরি হয়। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here