#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০
সন্ধ্যার দিকে ভার্সিটি থেকে ফিরে শেহজাদ বাড়িতে প্রবেশ করবে এমন সময় ড্রাইভার তার গতি রোধ করতে ডাকে। শেহজাদ দাঁড়ালে ড্রাইভাে বলে,
“স্যার, একটা কথা বলতাম। যদি কিছু মনে না করেন।”
“বলেন।”
“স্যার, আমার মনে হয় আজকে ফ্রিশামনির স্কুলে কিছু হইছে।”
শেহজাদ ভ্রু কুঁচকায়। সন্দিগ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শুধায়,
“কী হয়েছে?”
“সকালে ফ্রিশামনি ও ছোটো ম্যাডামরে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার প্রায় আধাঘণ্টার মতো পর ছোটো ম্যাডাম গাড়িতে এসে বসেন। তার মুখটা বেজার দেখাইতেছিল। তারপর আমারে ১০০ টাকা দিয়ে বলছিলেন চা-পানি খেয়ে আসতে। এরপর সে গাড়ি লক করে অনেকক্ষণ বসে আছিল। আমি বাইরে চা-পানি খাইতে গিয়া স্কুলের দারোয়ানের থেকে শুনছি ভিতরে নাকি গার্ডিয়ান মহিলাদের মধ্যে কিছু একটা ঝামেলা হইছিল। প্রিন্সিপ্যালরেও নাকি আসতে হইছে।”
দারোয়ানের কথা শুনে শেহজাদ চিন্তায় পড়ে গেল। কী এমন হয়েছিল সেখানে? আর মীরার মুখই বা কেন ভার ভার লাগছিল? সব প্রশ্নের জবাব মীরাই তাকে দিতে পারবে। শেহজাদ ড্রাইভারকে বলে,
“আচ্ছা। আপনি যান। আমি দেখছি। থ্যাংকিউ। ”
শেহজাদ এরপর বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখে, ড্রয়িংরুম ও হলে মীরা ও ফ্রিশা ছুটাছুটি করছে। দুজনের মুখে লেগে আছে, প্রাণখোলা হাসি। মিসেস শাহিদা, আবিরকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে সেখানে আনছেন। আবিরও মাথা কাত করা অবস্থায় হাসছে। মিসেস শাহিদা বারবার ওদের দৌঁড়াতে সাবধান করছিলেন। শেহজাদ যত্র দাঁড়িয়ে এসব দেখছিল, তখনি হঠাৎ ছুটতে ছুটতে ফ্রিশা এসে তার বাবার আড়ালে লুকায়। মীরা ও-কে ধরতে এসে শেহজাদকে দেখে থেমে যায়। তারপর ইতস্তত করে শুধায়,
“আপনি কখন এলেন?”
“এইতো মাত্র।”
ফ্রিশা হাঁপাতে হাঁপাতে ও হাসতে হাসতে বলে,
“ফেইরিমাম্মাম, ধরো আমাকে। পারবে না।”
মীরা ইশারায় ফ্রিশাকে থামতে বলার পর শেহজাদকে বলে,
“আপনি রুমে যান। আমি শরবত নিয়ে আসছি।”
শেহজাদ, ফ্রিশার মাথায় হাত বুলিয়ে ও-কে দৌঁড়াতে নিষেধ করে রেস্ট করতে বলে। অতঃপর উপরে রুমে চলে যায়। মীরা জলদি করে লেবুর শরবত তৈরি করে রুমে নিয়ে যায়। রুমে গিয়ে দেখে শেহজাদ শার্ট খুলে হ্যাঙারে রাখছে। এই বাড়িতে এসেছে তিন দিন হলো কিন্তু আজকেই প্রথমবার শেহজাদকে এভাবে দেখছে। কিছুটা হলেও ব্রীড়ার আভাস ফুটে উঠলো তার চেহারায়। মীরা তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করে বলে,
“নিন শরবতটা খেয়ে নিন।”
মীরা শরবতের গ্লাসটা ডেস্কে রেখে চলেই যাচ্ছিল, শেহজাদ ডাকে।
“মীরা!”
দাঁড়ায় মীরা। হালকা পাশ ঘুরে কিন্তু এখনও মাথা উঁচু করেনি। শেহজাদ শুধায়,
“আজ ফ্রিশার স্কুলে কী হয়েছিল?”
মীরা থতমত খেয়ে শেহজাদের দিকে তৎপর হয়ে দৃষ্টি ফেলে। অতঃপর দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে বলে,
“কিছু হয়নি তো!”
“কিছু হয়নি?”
“না। সব ঠিক আছে।”
“সত্যি? কিছু লুকাচ্ছ না তো?”
মীরার গলার স্বর খানিক কাঁপছে। সকালের কথাগুলো সব তার মস্তিষ্কের নিউরনে একে একে আ*ঘা*ত করছে। তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় অটল সে।
“না। কিছু লুকাচ্ছি না। কী লুকাব আবার!”
শেহজাদ সেকেন্ডের মধ্যে মীরার খুব কাছাকাছি এসে হেঁচকা টানে মীরা ও তার মধ্যকার দূরত্ব দূর করে ফেলে। মীরার ডান বাহু খুব শক্ত করে ধরে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“আই হেইট দিস। আমার থেকে কিছু লুকাবে না। পরবর্তীতে যদি আমি সত্যটা জেনেই যাই, তবে লুকাও কেন? ডোন্ট ডু দ্যাট।”
আচমকা কাণ্ডে মীরা হকচকিয়ে গেল। বিহ্বল ও বিস্ময়ের দৃষ্টিতে শেহজাদের চোখ-মুখের পানে চেয়ে আছে। প্রায় ত্রিশ সেকেন্ডের মতো সময় গড়ানোর পর শেহজাদ পুনরায় একই প্রশ্ন করে,
“কী হয়েছিল?”
মীরা নজর নামিয়ে ফ্লোরের দিকে চেয়ে ঢোক গিলে বলে,
“ওসব কথা কেন এখানে তুলছেন বলুন তো? বাদ দিন। আপনি বাহিরে থেকে এসেছেন, রেস্ট করুন।”
“তুমি বলবে? নাকি আমি স্কুলের প্রিন্সিপ্যালকে কল করব?”
মীরা অবাক হয়ে দ্রুত বলে ওঠে,
“আরেহ্ না না। এসবের কী দরকার? ঝামেলা মিটে গেছে, আমি নিজে মিটিয়েছি। এভরিথিং ইজ ফাইন নাউ।”
শেহজাদ, মীরাকে ছেড়ে খানিক সরে আসে। চোখ বন্ধ করে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল মুছে নিয়ে মিনতির সুরে বলে,
“প্লিজ টেইল মি, হোয়াট হ্যাপেন্ড এট দ্যা স্কুল?”
মীরা হতাশ হলো। শেহজাদ না শোনা পর্যন্ত তাকে শান্তি দিবে না, তা সে বুঝে গেছে। তারপর মীরা সংক্ষেপ করে ঘটনাটা বলে। সব শুনে শেহজাদ রেগে যায়। প্রত্যুত্তরে বলে,
“রিডিকুলাস! হোয়াই আর দো সোয়িং সো মাচ কনসার্ন এবাউট আস? ইটস আওয়ার লাইফ এন্ড আওয়ার চয়েজ। দে হ্যাভ নো রাইট টু ইনসাল্ট ইউ লাইক দ্যাট।”
শেহদের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে মীরা তাকে নিয়ে বিছানায় বসায়। তারপর শরবতের গ্লাসটা এনে দিয়ে বলে,
“শরবতটুকু খেয়ে নিন। তারপর শান্ত হোন।”
“দে আর… ”
“হুশ। আগে শরবতটা শেষ করবেন। তারপর কথা। জলদি করুন তো।”
শেহজাদ মীরার মুখের দিকে চেয়ে গ্লাসটা নিয়ে শরবত খাচ্ছে তখন মীরা বলে,
“আমি কিন্তু তাদেরকে মোটেও ছাড় দেইনি। প্রতিটা কথার পাই টু পাই জবাব দিয়েছি এবং তাদের মুখ বন্ধ করেছি। তাও তারা অযথা তর্ক করতে আসছিল। তখন প্রিন্সিপাল এসে বাকিটা হ্যান্ডেল করে নিয়েছেন। ওসব নিয়ে আপনাকে এত ভাবতে হবে না।”
শেহজাদ খালি গ্লাসটা মীরার হাতে দিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“এরপর থেকে কিছু হলে আমাকে অবশ্যই জানাবে। আই নো, ইউ আর অ্যা স্টং গার্ল, বাট ইউ আর অলসো অ্যা হিউম্যান। হিউম্যান হ্যাভ ফিলিংস। এন্ড দে ফিল ব্যাড।”
মীরা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। শেহজাদ হালকা হেসে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কাভার্ড থেকে টাওয়াল ও টিশার্ট, ট্রাউজার বের করে শাওয়ার নিতে যাবে, তখন হঠাৎ থামে। অতঃপর মীরার কাছে ফিরে আসে। মীরা ফ্লোরের দিকে চেয়ে হাতের খালি গ্লাসটাতে ন*খের দ্বারা মৃদু শব্দের সৃষ্টি করছিল। শেহজাদ মীরার কাছাকাছি এসে হাতের টাওয়াল ও পোষাকগুলো বিছানায় রেখে নিজের দুই হাত মীরার দুই গা*লে রাখে। হাতের আঁজলায় মীরার মুখটাকে উঁচু করে কপালে উষ্ণ ঠোঁ*টের স্পর্শ এঁকে তৎক্ষণাৎ সরে আসে। আকস্মিক ঘটে যাওয়া ঘটনায় মীরারর অক্ষিগোলক বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। হতবাক সে। শেহজাদ মুচকি হেসে টাওয়াল গলায় ঝুলিয়ে পোষাকগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। মীরা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে নিজে নিজেই বলে,
“অ্যাম অ্যাই ড্রিমিং? হি রিয়েলি কেম ব্যাক টু কি*স মি!”
চলবে ইনশাআল্লাহ,
শনিবার থেকে আমার মিড পরীক্ষা। আমার জন্য দোয়া করবেন। ২দিনে ৪টা সাবজেক্টের মিড হবে। ৬ টা সাবজেক্টের ৪টাই ২দিনে! মানে এক দিনে ২টা পরীক্ষা। জানিনা, আল্লাহ ভাগ্যে কী রেখেছেন। সবার দোয়া চাই।
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।