#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩১
রাতের খাবার শেষে মীরা ফ্রিশাকে ঘুম পাড়িয়ে রুমে আসতেই দেখে শেহজাদ কারও সাথে ফোনে কথা বলছে। সেও চুপিচুপি ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দেখে শেহজাদ বিছানায় বসে আছে। হাতে তার কিছু একটা আছে। মীরা সেখানে আসতেই শেহজাদ উঠে দাঁড়িয়ে হাতের নীল বক্সটা মীরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ইটস ফর ইউ।”
মীরা কৌতুহলী হয়ে চেয়ে শুধায়,
“জুয়েলেরি বক্স! হঠাৎ জুয়েলারি কেন?”
“এমনিতেই।”
“বাহ্! এমনিতেই কেউ আবার জুয়েলারি দেয়?”
মীরার কথা বলার ধরণে শেহজাদ হাসলো। মীরাও হেসে জুয়েলারি বক্সটা খুলে দেখলো তাতে ছোটো সিম্পল একটা ডায়মন্ড প্যান্ডেট, ম্যাচিং টপ এয়ারিং ও একটা সিম্পল ডায়মন্ড ব্রেসলেট। মীরা অবাক হয়ে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে শেহজাদের পানে চেয়ে বলে,
“আপনার পছন্দ তো খুব সুন্দর।”
“থ্যাংকস। ক্যান ইউ ট্রাই ইট নাউ?”
মীরা চোখে হেসে শেহজাদের চোখের দিকে তাকায়। শেহজাদের চোখের দ্যুতি বলছে, মীরা যেন এখন একবার এগুলো পড়ে দেখায়। মীরাও সায় দিয়ে হুট করে শেহজাদের হাত ধরে তাকে সহ আয়নার সামনে যায়। অতঃপর টুল টেনে বসে বলে,
“আপনিই না হয় পরিয়ে দিন। আপনি পছন্দ করে এনেছেন।”
শেহজাদ একটু চিন্তিত হলো। ফের শুধালো,
“তোমার পছন্দ হয়নি? না হলে বলো, ডিজাইন চেঞ্জ করা যাবে।”
মীরা আশ্চর্য দৃষ্টিতে আয়নাতে পড়া শেহজাদের প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,
“আমি কখন বললাম যে আমার পছন্দ হয়নি? আমি বললাম, আপনি এনেছেন আপনি পরিয়ে দিন।”
“ওহ আচ্ছা!”
“থাক। আমিই পড়ে নিচ্ছি।”
মীরার কণ্ঠে অভিমানের আভাস! সে নিজেই বক্স থেকে এয়ারিং বের করছে। তখন শেহজাদের মনে হলো, মীরা হয়তো রাগ করেছে। সে বিষয়টা বুঝে মীরার হাত থেকে এয়ারিংটা নিয়ে নেয়। তারপর বলে,
“সরি। ডোন্ট বি আপসেট প্লিজ। ইট ওয়াজ মাই ফল্ট। আই ওয়াজ কনফিউজড সো…”
শেহজাদ, মীরার কানের ফুঁ*টোতে খুব কসরত করেই এয়ারিং পড়াতে সক্ষম হয়। এদিকে মীরা ঠোঁট চেপে হাসছে। শেহজাদ দুই কানে এয়ারিং পড়িয়ে আয়নায় তাকাতেই মীরাকে হাসতে দেখে। অতঃপর চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,
“এখানে হাসার কিছু নেই। তুমি ব্যাথা পাবে ভেবে সাবধানে পড়াচ্ছিলাম। নিজেও তো মাঝেমাঝে সাডেন আহ উহ করে ওঠছিলে! ইট ওয়াজ স্কেরি।”
মীরা মুখ ঢেকে খানিক সময় হেসে নিয়ে ফের আয়নায় তাকালে দেখতে পায়, শেহজাদের দৃষ্টি ও ভাবভঙ্গির বদল তো হয়নিই বরং আরও সরু হয়েছে দৃষ্টি। মীরা ইশারায় সরি বলে বাকিগুলো পড়াতে বলে মুখ একদম স্বাভাবিক করে রোবটের মতো বসে থাকে। শেহজাদ মীরার গলা থেকে চেইনটা খুলে তাতে প্যান্ডেট ঢুকিয়ে আবার চেইনটা পড়িয়ে দেয়। তারপর ডান হাতে ব্রেসলেট পড়িয়ে বলে,
“ডান। এন্ড ইউ লুকিং সিম্পলি গর্জিয়াস।”
মীরা আয়নায় গভীর ভাবে নিজেকে দেখলো। তার এলোমেলো চুলে এই সাঁজে বুঝি তাকে গর্জিয়াস লাগছে মানুষটার কাছে! নিজের কাছে তো কা*কের বাসা লাগছে! মীরা বলেই ফেলে,
“সিধা মুখে বলেই দিন কা*কের বাসা! সেটাকে ফ্যান্সিভাবে গর্জিয়াস বলার কী আছে!”
শেহজাদের মুখ কুঁচকে গেলো। হঠাৎ মীরার কী হলো যে, এমনভাবে কথা বলছে!
“তোমার কী হয়েছে, মীরা? নাকি আমিই তোমার কথা বুঝতে পারছি না? আর ইউ আপসেট? সকালের ঘটনাতে?”
মীরা উঠে দাঁড়িয়ে শেহজাদের দিকে ফিরে বলে,
“আরে না। এমনিই। আমি কথা বলিই এভাবে। এতদিন হয়তো আপনি আমার কথার মাঝে ফর্মালিটি পেয়েছেন। থাক বাদ দিন সেসব। আপনার গিফট আমার খুব পছন্দ হয়েছে। থ্যাংকিউ সো মাচ। ইটস সো প্রিটি। আই লাভ ইট।”
“মাই প্লেজার। এখন ঘুমাও। সকালে তোমার ক্লাস আছে তো?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। উফ এই কয়দিন রেস্ট করে ভুলেই গেছি। জানেন, ভার্সিটিতে থাকতেও এমন হতো। শুক্রবার ও শনিবার ছুটি কাটানোর পর রবিবার দিন যদি সকালে ক্লাস থাকতো, ওই দিনটা আমার সকালে উঠতে যে কী কষ্ট হতো! বাকি চারদিন নিজেই উঠতে পারতাম কিন্তু রবিবার দিনটাই আম্মু না ডাকলে উঠতেই পারতাম না।”
শেহজাদ হালকা হেসে বলে,
“ওকে যাও এবার।”
এই বলে শেহজাদ নিজেও শুয়ে পড়লো। মীরা বক্সটা গুছিয়ে রেখে আসে।
________
সকাল সকাল মীরার তাড়াহুড়ো করে তৈরি হচ্ছে। শেহজাদ ব্যালকনি থেকে রুমে এসে মীরার অবস্থা দেখে। মীরাকে আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে। কর্মজীবী পরিপূর্ণা নারী। আজ সে শাড়ি পড়েছে। লাল-নীলের মিশেলে সিল্ক শাড়ির সাথে ফুল স্লিভস ও কলার নেক ব্লাউজ। চুলে নামিয়ে খোঁপা করেছে। না খোঁপায় কোনো ফুল এসব লাগায়নি! কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে, বেড়াতে না! লিপস্টিকের কালারটাও খুব মাইল্ড। চশমার কারণে এতোটা দূর থেকে চোখে কাজলের অবস্থা বুঝা যাচ্ছে না যদিও! শেহজাদের মনে হচ্ছে, আজকে মীরাকে অন্যদিনের তুলনায় আলাদাই লাগছে। শেহজাদ ব্যালকনির দরজার সাথে বুকে হাত গুঁজে হেলান দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন?”
“করব না? এখান থেকে ভার্সিটি পৌঁছেতে কতো সময় লাগে তা আমি জানিনা। যদি লেট হয়ে যায়?”
“হবে না। আস্তে আস্তে তৈরি হও। আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসব।”
মীরা ঘড়ি পড়া থামিয়ে অবাক কণ্ঠে বলে,
“আপনার ভার্সিটি থেকে তো আমারটা দূরে। আপনি কেন নামাবেন?”
“কেন? কী সমস্যা?”
“আমাকে নামিয়ে আবার ব্যাক করবেন। তারউপর বাংলাদেশে ট্রাফিক জ্যামের কোনো বিশ্বাস নেই। আপনার লেট হবে। দরকার নেই।”
শেহজাদ নিজের ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বলে,
“কী দরকার আর কী দরকার নেই, সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি যখন বলেছি আমি তোমাকে ড্রপ করবো তো, আমিই ড্রপ করব। এন্ড পিকও আমিই করব। রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে এসো।”
শেহজাদ ব্যাগ গুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মীরা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শেহজাদ তাকে অর্ডার করে গেল! অতঃপর সে নিজে নিজে স্বগতোক্তি করে,
” আমি যখন বলেছি আমি তোমাকে ড্রপ করবো তো, আমিই ড্রপ করব! হুহ্! আপনার ভালোর জন্যই বলেছিলাম। একদিন ড্রপ করে যখন জ্যামে ফাঁসবেন, তখন বুঝবেন। আমার আর কী! রিল্যাক্সে যাব।”
মীরা তারপর জলদি করে সব গুছিয়ে নিয়ে গতকাল রাতে শেহজাদের দেওয়া গিফট গুলো পড়ে নেয়। বিয়ের পর আজকে প্রথম নিজের কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে। মানুষজন মুখে না বললেও হাবভাবে ঠিকই বিবাহিতের লক্ষণ দেখতে চাইবে। আয়নায় নিজেকে দেখে মুচকি হেসে বিছানার উপর রাখা স্কার্ফটা জায়গামতো গুছিয়ে বেরিয়ে যায়। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে গেলে স্কার্ফটা জড়িয়ে যেত। যেহেতু আজ নিজের স্বামীর সাথে যাচ্ছে তাই এটার দরকার নেই।
_____
নাস্তার টেবিলে বসে মীরা, ফ্রিশাকে বলে,
“শোনো বাচ্চা, কেউ যদি তোমাকে পড়ালেখা ছাড়া ব্যাড কিছু বলে তাহলে শুনবে না। সেখান থেকে চলে আসবে। মনে থাকবে?”
ফ্রিশা বিষয়টা বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থেকে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলে,
“ওকে ফেইরিমাম্মাম। আমি গুড গার্ল।”
“ইয়াহ বাচ্চা, ইউ আর।”
মীরা ও-কে পাশ থেকে জড়িয়ে আবার খাওয়া শুরু করে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
আপনারা তো জানেন আমার পরীক্ষা চলছে। বৃহস্পতিবার শেষ হবে। ২টা বাকি আর। কাল ও পরশু হবে। সবার দোয়া চাই। তাই ছোটো বলে মন খারাপ করবেন না।
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।