মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩৭

0
316

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৭
আঁধারে আচ্ছন্ন খোলা আকাশের নিচে দার্জিলিংয়ের রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা পানের বিষয়টা হয়তো খুব সাধারণ। কিন্তু যখন পাশে দাঁড়ানো, আকাশপানে বিভোর হয়ে চা পানে ব্যাস্ত নিজ স্ত্রীর উন্মুক্ত চুলে শীতল হাওয়া দোল খেয়ে যায়! এবং তার নয়নজোড়া অজান্তেই পলক ঝাপটায়! মূহুর্তটা একজন স্বামীর নজরবন্দীতে মুগ্ধতার অপার সীমায় কি না থেকে পারে? উঁহু। একদমই না। মুগ্ধচিত্তে নিজ রমণীর নৈশরূপে মনের ভিতর উঠা প্র*লয়কারী ঝ*ড়কে ভীষণ শা*স*নে রুখে রেখেছে শেহজাদ। ফ্রিশা বেঞ্চে বসে আকাশের চ্যাপ্টাকৃতির চন্দ্রমাকে দেখছে আর বিস্কিট ভিজিয়ে চা খাচ্ছে। শেহজাদ মেয়ের পাশেই দাঁড়ানো। তারই খুব কাছে দাঁড়ানো মীরা। শেহজাদ এক পা পাশ এগিয়ে মীরার পেছনে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে,

“ওই চাঁদকে এতো কেন দেখছো?”

মীরা নজর না ফিরিয়েই মুগ্ধ হেসে উত্তর করে,
“মানুষ বলে, চাঁদেরও কলঙ্ক আছে। কিন্তু আমার কাছে তো এই কলঙ্কই মোহ-মায়া। কলঙ্ক বয়েও যে সে উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে।”

আরও ঘনি*ষ্ঠ হলো শেহজাদ। মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে মীরার একদম কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“মেঘে মেঘে চাঁদ যে তোমার চাহনিতে মুখ লুকাচ্ছে তা দেখছো না? ”

ঘোর ভাঙে মীরার। শীতল সমীরণ ও প্রিয় মানুষটার শীতলতম কণ্ঠস্বর। হৃদমাঝারে কম্পন ধরানোর জন্য যথেষ্ট। ইতস্তত হয়ে একটু পাশ সরে আমতা আমতা করে মাথা নিচু করে বলে,
“হোটেলে ফিরে চলুন। শীত শীত করছে।”

শেহজাদ মাথা সোজা করে খানিক ঠোঁট বাকিয়ে নিরব হাসে। এই হাসি মীরা দেখলো না। তমসাবৃত অম্বরে কোনো মনু*ষ্য-কূলেরও নজরে এলো না। সে প্রত্যুত্তরে শুধু বলে,
“চলো!”

মীরা ফ্রিশার কাছে এসে বলে,
“ফ্রিশামনি, তোমার চা খাওয়া হয়নি?”

ফ্রিশা আদুরে স্বরে বলে,
“আমার কুকিজই তো আমার চা খেয়ে নিয়েছে, ফেইরিমাম্মা! তাই দাদুটা আরেকটু চা দিয়েছে।”

“জলদি ফিনিশ করো। আমরা হোটেলে ফিরব। ঠান্ডা পড়ছে ভীষণ।”

ফ্রিশা ইতোমধ্যে প্রায় ঠান্ডা হয়ে যাওয়া অবশিষ্ট চা টুকু খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর মীরা ও শেহজাদের হাত ধরে চলতে থাকে।

________

পরদিন খুব ভোরে দার্জিলিংয়ের মনোরোম সূর্যদোয় দেখতে ওরা টাইগার হিলে হাজির হয়েছে। এখানে প্রায় অনেক পর্যটক ভীড় জমিয়েছে তুষারশৃঙ্গের সাথে সূর্যদোয় দেখতে। দূরে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শুভ্র পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টও দৃশ্যমান। হিমালয় পর্বতমালাকে দূর থেকে কতোই না চোখ জুড়ানো লাগছে কিন্তু কাছ থেকে এর উচ্চতা দেখলে রুহু কেঁপে উঠতে বাধ্য। খাড়া খাঁই কোনো দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য ভয়ংকর অনুভূতি তো বটেই।
ফ্রিশা সচরাচর দেরি করে ঘুম থেকে উঠে কিন্তু আজ এতো জলদি উঠতে হয়েছে বলে মনটা তার খারাপই ছিল। কিন্তু প্রকৃতির এই অপরূপ চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে সে এখন হাসছে, ছবি তুলছে। উৎফুল্ল সে। শেহজাদ, মীরা ও ফ্রিশার সিঙ্গেল, ডাবল সবরকমের ছবি তুলে দিয়ে এখন তিনজনের একসাথে একটা সেলফিই তুলে নিলো। এখানে কাকেই বা বিরক্ত করবে! মীরাও ওদের বাবা-মেয়ের একটা ছবি তুলে দেয়। ফ্রিশা এবার ফোন নিয়ে তার বাবা-মাকে একসাথে দাঁড়াতে বলতে বলতেই হঠাৎই আচমকা ধাক্কায় মীরা একদম রেলিংয়ের উপর আছড়ে পড়ে! শরীরের ভারসাম্য অধিকাংশই রেলিংয়ের বাহিরে যেতে নিলেই শেহজাদ খপ করে মীরার হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আকস্মিক কাণ্ডে মীরা ভয়ে হতবাক হয়ে শেহজাদের বু*কের সাথে একদম মিশে আছে। ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী ফ্রিশার ভয়ার্ত আর্তচিৎকারে আশেপাশের মানুষজন থেমে কৌতুহল দৃষ্টি ওদের দিকেই নিক্ষেপ করে রেখেছে। শেহজাদ সবাইকে হাতের ইশারায় ‘সব ঠিক আছে’ বুঝিয়ে মৃদু স্বরে মীরাকে বলে,

“কাম ডাউন, মীরা। ইউ আর ফাইন। ইউ আর সেইফ।”

মীরার হৃৎস্পন্দন নিজ স্বাভাবিক গতিতে নেই। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়। ফ্রিশা মীরার ওড়না ধরে গাঁ ঘেঁষে আছে। খানিক স্বাভাবিক হলে শেহজাদ শুধায়,

“তুমি এতো কর্ণারে কীভাবে গেলে?”

মীরা মাথা নাড়ছে। ফ্রিশা জবাবে বলে,
“না, বাবা। ফেইরিমাম্মাম এতোটাও কর্ণারে ছিলো না। সামওয়ান পুসড ফেইরিমাম্মাম।”

শেহজাদ চিন্তিত হয়। কেউ কেন মীরাকে ধা*ক্কা দিবে? হয়তো অনিচ্ছাকৃত লেগে গেছে ভেবে শেহজাদ ওদেরকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

এদিকে আড়াল থেকে একজন রে*গে জোড়ে ভূমিতে আ*ঘা*ত করে আর বলে,
“একটুর জন্য! ওই বাচ্চাটা চিৎকার না করলেই কেউ আজ মীরাকে বাঁচাতে পারতো না। পুচকে মেয়েটাই সব শেষ করে দিলো! ছোটো ম*রিচের ঝা*ল আসলেই বেশি!”

অতঃপর সে স্থান ত্যাগ করে।

_______

নিজেদের স্বাভাবিক করে শেহজাদ, মীরা ও ফ্রিশা একটা খাবারের ধাবা থেকে সকালের নাস্তা খেয়ে নেয়। অতঃপর ওরা দার্জিলিং মিউজিয়াম দেখতে বেরোয়। নেপালি জাতীর স্বাক্ষর বহন করে এই মিউজিয়ামটি। মিউজিয়াম ঘুরে-ফিরে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ওরা ফিরেছে। এই ভাবনা এসেছে মীরার মা*থায়! তার এখন হাঁটতে ইচ্ছে করছে! শেহজাদও আর কী করবে? সাথে চলতে থাকে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। দুপুরের খাবার শেষে হোটেলে রেস্ট করে এখন ওরা এসেছে ‘হ্যাপি ভ্যালি টি স্টেটে’। এটি দার্জিলিংয়ের দ্বিতীয় প্রাচীন চা বাগান। এই চা বাগান থেকে পুরো দার্জিলিং শহরের প্যানোরোমিক সৌন্দর্য দেখা যায়। এখানে বসে বিখ্যাত ব্লাক টি এর সাথে পুরো শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যেন মনের জন্য এক কার্যকরি পথ্য হিসেবে কাজ করে। এই সুযোগ তো মিস করা যায় না। শেহজাদ, মীরারাও করলো না। তবে তার আগে পুরো চা বাগানটা ঘুরে তো দেখতে হবে। তারপর সূর্যাস্তের সময়কালে আয়েশ করে চা খাওয়া যাবে। গাইড ঠিক করে ওরা চা বাগান ঘুরছে। চা বাগানের বিষয়ে তথ্যও পেয়েছে। সময়টা ওদের বেশ সুন্দর ও উপভোগ্যই কে*টেছে।
সুবিশাল অম্বরের পশ্চিমাংশে এখন গাড়ো গোধূলি। গোধূলির ঈষৎ লালিমা পুরো আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সূর্য ধীরে ধীরে নিজেকে আড়ালে ব্যাস্ত। এখন যে তার ঘুমের সময়! তাইতো পৃথিবীকে আঁধারে নিমজ্জিত করে নিদ্রায় আচ্ছন্ন হতে পাড়ি জমিয়েছে। এই সুন্দরতম দৃশ্য উপভোগ করাটা যদি হয় চা বাগানের মাঝে বসে চায়ের সাথে তাহলে তো কথাই নেই। মীরা ঘোরলাগা স্বরে বলে,

“যদি এই চা বাগানের মাঝে আমার একটা ছোট্টো বাড়ি থাকতো! এই সৌন্দর্য তবে শুধু স্মৃতিপটে না, আজীবনের জন্য জীবন্ত রাখতাম।”

হালকা হাসে শেহজাদ। ফ্রিশা উৎসাহী কণ্ঠে বলে ওঠে,
“চলো একটা বাড়ি বানিয়ে ফেলি।”

ফ্রিশার কথা শুনে শেহজাদ ও মীরক যেন হেসেই খু-*ন! ফ্রিশা কিয়ৎক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পিটপিট করে এই হাসির কারণ উৎঘাটন করার প্রচেষ্টায় থেকে ব্যার্থ হয়ে নিজেও হাসির রোলে সামিল হয়ে যায়।

______

পরদিন আরও কিছু জায়গা ঘোরাফেরা করে ওরা দার্জিলিং টু জলপাইগুড়ি আসে বাষ্প ইঞ্জিন চালিত ট্রেন ‘টয়ট্রেন’ দিয়ে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে চলা এই টয়ট্রেনই কিন্তু পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ! ছবির মতো ছুটে চলা প্রকৃতি। এরপর জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি তারপর বাই এয়ার কোলকাতা এসে একরাত থেকে আবার পরদিন বাই এয়ার বাংলাদেশে চলো আসে। এদিকে কোলকাতার হুগলি নদীর উপর বিখ্যাত হাওড়া ব্রিজ যখন ওরা ঘুরতে গিয়েছিল তখনও আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। কেউ একজন খুব জোড়ে মীরাকে ধা*ক্কা দিয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে এবারও মীরা বেঁচে যায়। সেই থেকে শেহজাদ কিছুটা চিন্তিত। একই ঘটনা দুইবার একইভাবে কীভাবে ঘটে? সব কি কোইন্সিডেন্স নাকি অন্যকিছু?

চলবে ইনশাআল্লাহ,

রাইটিং ব্লকে পড়ে গিয়ে লেখার রিদম একদম নষ্ট হয়ে গেছে। নিজের উপরই বিরক্ত লাগে যখন লিখতে বসেও অন্যকাজে বা অন্যকিছুতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি। রিচেক করা হয়নি। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here