#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪১
মীরার বাবা-মা, ভাই-ভাবি সবাই হসপিটালে এসে পৌঁছেছে। মীরার দুই ভাবি মিলে মীরার মাকে সামলে রাখছে। অপারেশন থিয়েটারের বাহিরের মহল বেশ ভারী। সেটাকে আরও ভারী করতে শেহজাদের ফোনে কল আসে। শেহজাদ একটু দূরে গিয়ে কল রিসিভ করতেই মিসেস শাহিদা হড়বড়িয়ে বলে ফেলেন,
“শেহজাদ, ফ্রিশাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তোমার গাড়ি থেকেই কেউ ফ্রিশাকে কি*ডন্যা*প করে নিয়ে গেছে।”
কথাগুলো শেহজাদের কানে যেন অবিশ্বাস্য ঠেকলো। সে অস্থির হয়ে উত্তেজিত স্বরে বলে,
“হোয়াট! ফ্রিশাকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কী? আমি গাড়ির চাবি কনক ম্যামকে দিয়ে এসেছিলাম। সেখান থেকে মিসিং কীভাবে হয়?”
মিসেস শাহিদার পাশে দাঁড়িয়ে কনক ম্যাম কথাগুলো লাউড স্পিকারে শুনছিলেন। তিনি জবাবে বলেন,
“মিস্টার শেহজাদ, আই অ্যাম এক্সট্রেমলি সরি। আমি গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি গাড়ির ডোর খোলা ও ফ্রিশা সেখানে নেই। তারপর দারোয়ান ও পুলি*শ আশেপাশে অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। এখনও খোঁজ জারি আছে। সিসিটিভিতে দেখা গেছে একটা মুখোশধারী লোক এসে ফ্রিশাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে।”
শেহজাদ কথাগুলো শুনে আন্দাজ করে ফেলেছে, এই কাজ কার হতে পারে। সে রাগে ফোন মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতে নিয়েও থেমে গেলো। ফোনে জলদি করে ফ্রিশার লোকেশন চেক করতে শুরু করে। বলা বাহুল্য যে, শেহজাদ ফ্রিশার হাতঘড়ি ও মীরার হাতঘড়িতে ট্র্যাকিং মাইক্রোচিপ ইনস্টল করে রেখেছিল। যবে থেকে মুরাদকে দেখেছে তবে থেকে সে সাবধানতা অবলম্বন করে রেখেছিল। শেহজাদ লোকেশন দেখলো ফ্রিশার লোকেশন গাজিপুরের দিকে যাচ্ছে। শেহজাদ দ্রুত হসপিটাল থেকে বেরোতে নিলে মীরার বড়ো ভাই রুবেল এসে বলে,
“আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে।”
“আপনি এখানে থাকুন। দরকার পড়তে পারে।”
শেহজাদ দ্রুত কথাটা বলে বেরিয়ে পড়ে। রবেলও সাথে সাথে বেরোয়। তারপর বলে,
“মারুফ আছে। তোমার সাথে এখন আমার যাওয়াটা জরুরী আমি মনে করি। চলো।”
শেহজাদও আর কথা বাড়ায় না। একটা সিএনজিতে উঠে পড়ে। পু*লিশের কাছে লোকেশনটাও পাঠিয়ে দেয়। পু*লিশ সেটাকে গাজিপুর থা*নাতে ইনফর্ম করে দেয়।
_____
এদিকে মুরাদ ও রাদিব ফ্রিশাকে নিজেদের ডেরায় নিয়ে পৌঁছায়। ফ্রিশাকে একটা চেয়ারের সাথে বে*ধে রেখে সন্ধ্যার চা-নাশতা সাড়ছে, এমন সময় পু*লিশ ভ্যানের হুইসেলের শব্দে টনক নড়ে তাদের। রাদিব ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে শুধায়,
“মামা, পু*লিশ এখানে আসছে নাকি?”
মুরাদও শব্দটা খেয়াল করে চিন্তিত সুরে বলে,
“আমরা তো এখানে এসেছি দুইদিন হলো। তারমধ্যে আজকে ছাড়া এমন কিছুতো করিনি। মনে হয়, আশেপাশের কোথাও কিছু হয়েছে।”
“আমার কিন্তু ভয় লাগছে, মামা। এই পু*লিশের থেকে বাঁচতে চো*রাই পথে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিলাম।”
“তুই বেশি বুঝিস। বাচ্চাটাও তো তেমন কোনো শব্দ করেনি। অজ্ঞান হয়ে আছে। তাহলে আশেপাশের মানুষজনেরও আলাপ পাওয়ার কথা না। পু*লিশ অন্য কোথাও এসেছে হয়তো।”
এই বলে মুরাদ নিশ্চিন্তে খাচ্ছে। মুরাদরা যেখানে সাময়িক নিজেদের আস্তানা গেড়েছে তা একটা নির্মাণাধীন ভবন। ভবন মালিককে মোটা অঙ্ক বুঝিয়ে ৩-৪ দিনের জন্য মাঝের দিকের একটা রুম ভাড়া নিয়েছে। এদিকে পু*লি*শ নিজেদের গাড়ি কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে থামায় যাতে ওরা বুঝতে না পারে। লোকেশন এই নির্মাণাধীন ভবনেই দেখাচ্ছে। শেহজাদরাও গাজিপুর শহরে ঢুকছে কেবল। কিছুটা সময় লাগবে। পু*লিশ সদস্যরা সাবধানতা অবলম্বন করে রেলিং ছাড়া সিঁড়ি দিয়ে তিন তালায় উঠে সেই রুমটার দরজায় জোড়ে জোড়ে বা*ড়ি দিতে থাকে।
দরজায় হঠাৎ তীব্র জোড়ালো শব্দে আঁতকে উঠে মুরাদ ও রাদিব। রাদিবের মুখ থেকে চা ছিটকে পড়ে তার মামার গায়ে! মুরাদের সেদিকে তোয়াক্কা নেই। সে ভীত হয়ে পড়েছে। রাদিব ভয়ার্ত স্বরে হড়বড়িয়ে বলতে থাকে,
“পু..লি..শ! মামা, পু..লিশ এসেছে? এ..খন কী হবে? খবর পেল কীভাবে? মামা, তুমি চুপ করে আছো কেন? কিছু করো। পু*লিশ তো আমাদের ধরে ফেলবে!”
মুরাদ ঢোক গিলে ফিসফিস করে বলে,
“চুপ করে থাক। কোনো কথা বলবি না। পু*লিশ কী-না বুঝব কী করে? সন্দেহের বশত এসেছে নাকি!”
“আমি জানিনা, মামা। কেন যে তুমি এই পুচকেটাকে তুলে আনলে! উফ! এখন কী হবে?”
“চল কোথাও লুকিয়ে পড়ি! একটা জানালাও নেই যে পালাব! বাথরুমটাতে চল।”
ওদের কথোপকথনের মধ্যেই পু*লিশ সদস্যরা দরজা ভে*ঙে ফেলেছে। ভেতরে এসে মুরাদ ও রাদিবকে আটকও করে ফেলেছে। মুরাদ ও রাদিব পুরো হতভম্ব হয়ে গেছে। পু*লিশরা ফ্রিশাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে।
শেহজাদ ও রুবেল থানায় পৌঁছে দেখে ফ্রিশা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। শেহজাদ দৌঁড়ে গিয়ে ফ্রিশাকে কোলে তুলে নিলে ফ্রিশা অভিমানী স্বরে বলে,
“তুমি কোথায় গিয়েছিলে, বাবা? আই ওয়াজ ওয়েটিং।”
শেহজাদের আঁখিযুগলে জল ভিড় করছে। সে ধরা গলায় বলে,
“সরি, মাম্মাম। এক্সট্রেমলি সরি। তোমাকে রেখে যাওয়া ঠিক হয়নি আমার।”
“ওকে। সরি গ্রেন্টেড। ফেইরিমাম্মাম কোথায়? আমরা যাব না?”
শেহজাদ এবার জবাব দেওয়ার শব্দ পাচ্ছে না। ফ্রিশা উৎসুক ভাবে চেয়ে আছে। কীভাবে বলবে যে তার ফেইরিমাম্মামের অবস্থা ভালো না। শেহজাদের নিরবতায় ফ্রিশা আবারও প্রশ্ন করলে রুবেল এগিয়ে এসে ফ্রিশাকে বলে,
“এই দেখো, মামা এসেছি। তোমাকে তোমার ফেইরিমাম্মামের কাছে নিয়ে যাব।”
“চলো তবে। এখানে কেন আছি আমরা? পু*লিশ আঙ্কেলটা বলল বাবা আসলে যাব। চলো লেটস গো।”
রুবেল জোরপূর্বক হেসে ফ্রিশাকে নিজের কোলে নেয়। শেহজাদ এবার ইন্সপেক্টরের সাথে দেখা করে রাদিব ও মুরাদের সেলের কাছে যায়। রাদিব ও মুরাদকে দেখে শেহজাদ ঘৃণামিশ্রিত স্বরে বলে,
“তোদের লজ্জা হয় না। না? আবারও আমার ফ্যামিলির পেছনে পড়েছিস? মীরার মা-থায় আ*ঘা*ত তোরাই করেছিস তাই না?”
রাদিব মাথা নিচু করে বসে থাকলেও মুরাদ উঠে এসে বলে,
“হ্যাঁ। তোর বউ-বাচ্চা দুটোকেই তোর থেকে সরাতে চেয়েছি। মনে আছে আমাকে?”
শেহজাদ তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,
“তোকে মনে থাকবে না? তোর মতো বা*স্টা*র্ড, পা*ভা*-র্টকে ভুলি কী করে? তুই তো টিচার জাতিকে ক*লঙ্কিত করেছিলি। অতো বছর আগেই যদি তোকে নিজ হাতে শেষ করতে পারতাম, তবে আজ এসব হতো না। এবার দেখবি তোর কী হয়। এটেম্প টু মা*র্ডা*র এন্ড কি-ডন্যা*পিং কে*সে রেস্ট অফ দ্যা লাইফ পু*লি*শ কাস্টাডিতে থাকবি। আমি এটা মাস্ট এনশিউর করব।”
মুরাদ বিশ্রি হেসে বলে,
“পারবি না। আবারও পালাব।”
এটা বলতেই পু*লি*শ ইন্সপেক্টর মু*রা*দের গালে কষে চ*ড় বসিয়ে দেয়। তারপর শেহজাদকে নিয়ে সে*ল থেকে বেরিয়ে আসে। যেহেতু পু*লি*শের সামনেই স্বিকারোক্তি দিয়ে ফেলেছে তাই আগামীকালই ওদের কোর্টে তোলা হবে।
শেহজাদ ও রুবেল, ই*ন্সপে*ক্টরকে ধন্যবাদ দিয়ে রওনা করে। ইতোমধ্যে মীরার অপারেশন শেষ হয়েছে।সাকসেসফুলও হয়েছে। এখনও জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তার বলেছে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফিরে আসবে। কিছু প্রবলেম হতে পারে, সেটা ট্রিটমেন্ট করলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। অটির বাহিরে অপেক্ষারত সবার মধ্যে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বয়। শেহজাদও ফোন করে ফ্রিশাকে পেয়েছে জানিয়ে দিয়েছে।
________
হসপিটালে পৌঁছে ফ্রিশা মীরাকে এভাবে দেখে খুব কেঁদেছে। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছিল। মীরারও তখন জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার তাকে মাথায় চাপ নিতে মানা করেছে তাই ফ্রিশাকে শেহজাদ সরিয়ে নিয়ে এসেছে। মিসেস শাহিদা ফ্রিশাকে দেখে রাখছেন। মীরার মা মলি জাহান মেয়ের কাছে বসে আছেন। আজ তার মেয়েটার জন্মদিন! আর আজই সে মৃ*ত্যুর কাছাকাছি থেকে গিয়ে এসেছে। মীরা অক্সিজেন মাস্ক খোলার চেষ্টা করলে মলি জাহান বাধা দেন। বলেন,
“তোর কথা বলতে হবে না। চুপ করে থাক। ডাক্তার তোকে চাপ নিতে ও কথা বলতে মানা করেছেন।”
মীরা হাত সামান্য উঠিয়ে মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিতে চাইলো। মলি জাহান এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। ঝরঝর করে মেয়ের সামনেই কেঁদে ফেললেন। শারমিন ও নিধি কেবিনের বাহির থেকে দেখে এসে শাশুড়িকে শান্ত করতে করতে বাহিরে নিয়ে আসে। মলি জাহান বেরিয়ে আসলে শেহজাদ একা কেবিনে প্রবেশ করে। মীরা তা দেখে আবারও কথা বলতে মাস্ক খুলতে চাইলে শেহজাদ থামিয়ে দিয়ে বলে,
“কথা বলো না। ফ্রিশা এখন ঠিক আছে। তুমিও জলদি ঠিক হয়ে যাও। তারপর আমরা এখান থেকে চলে যাব।”
মীরা কিছুটা অবাক হয়। হাতের ইশারায় কৌতুহল প্রকাশ করলে শেহজাদ মৃদু স্বরে বলে,
“তোমার সব ডকুমেন্ট চেয়েছিলাম মনে আছে?”
মীরা চোখের পলক ফেলে হ্যাঁ বুঝালে শেহজাদ বলে,
“আমি আমেরিকায় তোমার পিএইচডি করার জন্য এপ্লাই করে দিয়েছি। আমিও আমেরিকায় আগে যেখানে ফ্যাকাল্টি ছিলাম, সেখানে জয়েন করব। ফুফাও এতোদিন অনেক রিসার্চ বেইসড ইউনিভার্সিটিতে অফার পেয়েছিল, একটা একসেপ্ট করে নিয়েছে। আমরা সবাই আমেরিকায় চলে যাব।”
মীরা অবাক হয়ে চেয়ে আছে। এতোকিছুর জন্যই তবে এতোদিন এতো লুকোচুরি! শেহজাদ দেখছে মীরা কিছুটা উত্তেজিত হচ্ছে। সাথে সাথে শেহজাদ বলে,
“প্লিজ প্লিজ উত্তেজিত হয়ো না। তুমি সুস্থ হও। সব বলব তোমাকে। কিছু লুকাব না। আই অ্যাম সো সরি। এখন শান্ত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো। প্লিজ প্লিজ।”
মীরা শান্ত হলো। আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করলো। নার্স এসে একটা ঘুমের ইন*জে*কশন দিয়ে গেলো।
________
পরদিন কোর্টে মুরাদ ও রাদিবের যাবজ্জীবন কারাদ*ণ্ড হয়েছে। ওদের আগেও পু*লিশ রেকর্ড থাকলেও যাবজ্জীবন কারাদ*ণ্ডের রেকর্ড ছিলো না বলে মৃ*ত্যুদ*ণ্ড দেওয়া হয়নি। শেহজাদ কোর্ট থোকে সরাসরি হসপিটালে এসেছে। মীরার কলিগরা ও মীরার ভার্সিটির টিচাররা মীরাকে দেখতে এসেছে। মীরার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ডাক্তার বলেছে চার-পাঁচ দিন হসপিটালে থাকতে হবে। তারপর ডিসচার্জ দিবে। ফ্রিশাও হসপিটাল ছেড়ে যেতে চাইছে না। মিসেস শাহিদা জোর করেও নিতে পারছেন না। কনক ম্যাম ও সাবিহা ম্যাম শেহজাদের সাথে কথা বলতে আসে।
“আই অ্যাম সরি, মিস্টার শেহজাদ।”
“আপনি সরি কেন বলছেন, ম্যাম। ইটস নট ইউর ফল্ট। অল ফল্ট ইজ মাইন। আই ওয়াজ ইরেসপন্সিবল। আমার আইডিয়াতে ছিল কোনো খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে বাট….”
“আপনারও দোষ না, মিস্টার শেহজাদ। ইটস অল ডেসটিনি। এখন মীরা জলদি সুস্থ হয়ে যাক, এটাই দোয়া করি।”
শেহজাদ সৌজন্য হাসে। কনক ম্যাম ও সাবিহা ম্যামও বিদায় বলে চলে আসে।
_________
পাঁচ বছর পর,,
মীরা ভার্সিটি থেকে ফিরতেই সবাই একসাথে বলে ওঠে,
“সারপ্রাইজ!”
মীরা অবাক হয়ে চেয়ে দেখে, তার বাবা-মা, দুই ভাই-ভাবি, ভাতিজা-ভাতিজি সবাই এসেছে। মীরার চোখে খুশিতে পানি চলে এসেছে। মীরা ছুটে গিয়ে তার বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করে,
“তোমরা? অ্যাম আই ড্রিমিং? রিয়েলি তোমরা এসেছ?”
পেছন থেকে শেহজাদের কোলের দুই বছরের ছেলে বাচ্চা বলে,
“ইউ আল(আর) নত(নট) ড্রিমিং, মাম্মা!”
ছোটো বাচ্চাটার আধো স্বর শুনে মীরা হেসে ফেলে। এবার ফ্রিশাও বলে,
“ইউ আর নট ড্রিমিং, মাম্মাম!”
সবাই হেসে উঠে। ফ্রিশা এবার বাবার কোল থেকে ভাইকে নিজের কোলে নিয়ে নামায়। তারপর দুই ভাই-বোন মিলে মীরার দুই হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে যায়। ফ্রিশা বলে,
“ইউ নো মাম্মাম, মি এন্ড মিশকাত মেইড দিস কেক ফর ইউ। মিশকাত হেল্পস মি অ্যা লট। ইয়াহ, দাদুমনি অলসো হেল্পড মি।”
মীরা আবেগে হাঁটু গেড়ে বসে দুই ছেলে-মেয়ের কপালে চু*মু দিয়ে জড়িয়ে ধরে। তারপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেক কাটা হয়। তারপর মীরা ফ্রেশ হয়ে এসে একসাথে ডিনার করে।
________
অনেকদিন পর নিজের বাবা-মা, ভাই-ভাবিদের পেয়ে মীরা অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করেছে। রুমে এসে দেখে শেহজাদ, মিশকাতকে ঘুম পাড়িয়ে ফেলেছে। এখন শেহজাদ টেরেসে দাঁড়িয়ে আছে বাহিরের দিকে মুখ করে। মীরা গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কী হয়েছে?”
শেহজাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“পাঁচ বছর আগে আজকের দিনটা আমি ভুলতে পারিনা।”
মীরা এবার শেহজাদকে ছেড়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“প্রতি বছর এভাবে মুখ কালো করে থাকলে হয়? ভুলে যান সব। আমরা ভালো আছি। হ্যাপি আছি। দেখুন। আমাদের পুরো পরিবার আমাদের সাথে। আমি ঠিক করেছি ওদেরকে একেবারে আমেরিকায় নিয়ে আসবো।”
“আমিও তাই চাই।”
“জানি জানি।”
“একটা কথা বলি?”
“বলুন। পারমিশন নিচ্ছেন কেন?”
“আই লাভ ইউ! আমি তোমাকে ভালোবাসি, মীরা!”
মীরা হালকা হেসে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,
“কেউ একজন বলেছিল, মুখে না বললেও কাজেকর্মে বুঝে নিতে হয় ভালোবাসা। আমিও বুঝে নিয়েছি।”
শেহজাদও হালকা হেসে মীরা ললাটে ঠোঁ*ট ছোঁয়ায়। মীরা আবার শেহজাদকে জড়িয়ে ধরলে ঘর থেকে মিশকাতের কান্নার সুর ভেসে আসে। মীরা ফিক করে হেসে ফেলে বলে,
“ছেলে আপনার রোমান্টিকতার দু*শ*মন বুঝলেন! যাই আমি।”
মীরা ঘরে চলে আসে। শেহজাদ সেখানেই দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে বলে,
“এটাই তো ভালোবাসা। মুখে প্রকাশ না করলেও যা মন মোহনায় ঠিকি ফাগুন হাওয়া রূপে বয়ে বেড়ায়!”
সমাপ্ত
এতোদিন ধৈর্য ধরে পড়াে জন্য ধন্যবাদ। আসি যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি গুছিয়ে শেষ করার। এখন আপনাদের মন্তব্য করাে পালা। রাইটিং ব্লক, অসুস্থতা, পড়ালেখা, রিসার্চের প্যারা সব মিলিয়ে অনেক অনিয়মিত ছিলাম। দুঃখিত। আজ সারাদিন কারেন্ট ছিলো না। ফোনে চার্জ ছিল সামান্য। তাই শেষ টুকু মাত্রই লিখলাম।
গল্পটাতে একটা জিনিস চেয়েছিলাম যে, কোনো মা-হারা সন্তানকে অ*ত্যা*চার, অবহেলা না করে আগলে নিন।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।