#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৩০ (অন্তিম পর্ব)
#Jhorna_Islam
সৌন্দর্য ইসরাতের মা কে সবকিছু খুলে বলে। ইসরাতের মা একটা টু শব্দ ও বের করে না।চুপচাপ সব শুনে সৌন্দর্যের মুখ থেকে। নূর শুধু ইসরাতের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে উনার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। কিন্তু উনি কোনো রেসপন্স করছেন না। সৌন্দর্য সবকিছু খুলে বলে চুপ হয়ে যায়। নূরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কি হতে চলেছে জিজ্ঞেস করে। নূর মাথা নাড়িয়ে জানায় সে কিছুই বুঝতে পারছে না। নূরের অবস্থা বুঝতে পেরে সৌন্দর্য চোখের ইশারায় আবার রিলেক্স হতে বলে। সৌন্দর্য রিলেক্স হতে বললেও নূর কিছুতেই তা হতে পারছে না। একেই তো ইসরাতের মা কোনো কিছু বলছে না হ্যা অথবা না আর অন্য দিকে তালহা স্যার ইসরাত কে মানাতে বা সবকিছু বোঝাতে পারছে কি না কে জানে।
******
বললেই হলো মে’রে ফেলবো তাই না? আপনি আমাকে মা’রার কে শুনি? খালি একবার মা’রার জন্য হাত উঠিয়ে দেখুন না।ঐ হাত যদি আমি কেটে কুকুর কে না খাওয়াতে পারি তাহলে আমার নাম ইসরাত না।বড় আসছে আমাকে মে’রে ফেলার হুমকি দিতে হুহ।
ইসরাতের এহেম কথায় তালহা শুকনো মুখে ও বিষম সামলে। কি ডেঞ্জেরাস মেয়ে তুমি ইসু।এভাবে কেউ কথা বলে?
বেশ করেছি বলেছি আরো বলবো। এই আপনি দাওয়াত ছাড়া আমার বাড়িতে কি করছেন শুনি? আমিতো বিয়েতে বলেছি সবার আগে দাওয়াত দিবো আর এখন তো আমার আকদ দাওয়াত ছাড়া এসে হাজির হয়েছেন? সে যাই হোক আমরা আবার অতিথিদের না খাইয়ে বাড়ি থেকে যেতে দেই না। পেট ভরে খেয়ে যাবেন অবশ্যই।
ইসরাতের আজকে আকদ কথা টা শুনেই হুট করে তালহার মাথাটা গরম হয়ে যায়। এই মেয়ে নাকি তার জন্য পা’গল দিওয়ানা তাহলে কি করে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো।
তালহা রাগী স্বরে বলে,, বিয়ে না বিয়ে মাই ফুট বলেই ইসরাতের হাত শক্ত করে ধরে নিজের মুখের কাছে ইসরাতের মুখ নিয়ে আসে। ইসরাত ব্যাথায় আহ্ করে উঠে কিন্তু তালহা এতে পাত্তা দেয় না।
এই এই তোর সাহস কি করে হলো বিয়েতে রাজি হওয়ার? এতো সেজেগুজে ওদের সামনে যেতে চাস তুই? এই তোর ভালোবাসা? এতো পা’গলামি ভালোবাসা সব শেষ? এতোদিন কি আবেগের বসে নাটক করেছিলি আমার সাথে? বলেই তালহা ইসরাতের শরীর থেকে টেনে গহনা খুলে ফেলতে থাকে। ইসরাত জোর করে তালহার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,,ভালোবাসা? ভালোবাসার আপনি কি বুঝবেন মি.তালহা। এতো ভালোবেসে আপনার মন পেয়েছি? এতো পাগলামির কি এক বিন্দু ও দাম দিয়েছেন আপনি? প্রতিনিয়ত আমি ভালোবাসার দাবি নিয়ে আপনার কাছে গিয়েছি আর আপনি হাসি ঠাট্টা বানিয়েছেন আমার সেই ভালোবাসা।
আমার চোখের সামনে অন্যজনকে ভালোবেসেছেন। সেই ভালোবাসা আপনাদের পিরিতি দেখার জন্য আমাকে আবার ডেকেছেন।কোথায় গেলো আপনার ভালোবাসার মানুষ?
তালহা ইসরাতের শেষের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে মানে?
মানে বুঝতে পারছেন না আপনি? আমার মুখ থেকে শুনতে চান? তাহলে শুনুন আপনার আর তূরের ভালোবাসার সম্পর্ক।
কথাটা বলতে দেরি কিন্তু ইসরাতের গালে তালহার চর মারতে দেরি হয় না।
সাট আপ জাস্ট সাট আপ। কি বলছো তোমার কোনো আইডিয়া আছে? ওহ এবার বুঝতে পারছি এই কয়দিন তুমি কেনো এত নাটক করেছো।চোখের সামনে এখন সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে আমার।
ইসরাত অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। তালহা এবার সব বলতে থাকে।
ঐদিন সকালে তোমাকে কেন ডেকেছি জানো? তোমার ভালোবাসা কে গ্রহন করতে আর এটাও বলতে যে আমিও তোমার জন্য কিছু ফিল করি।কিন্তু তুমি কি করলে? গিয়েও আমার সাথে দেখা না করে চলে এসেছো।
চলে আসবো না তো কি করবো শুনি? আপনি তূরের হাতে যত্ন সহকারে ভালোবাসা পরিয়ে দিচ্ছেন তা দেখবো?
প্লিজ ইসরাত নিজেকে আর নিচে নামিও না ঐ বাচ্চা মেয়েটা কে নিয়ে। তূর তো আমার ছোট্ট বোনের মতো। ঐদিন ওর ক্লাস শেষে যাওয়ার সময় আমার সাথে দেখা হয়। তাও ওর কাছে ভাংতি ছিলো না লোকটার কাছে ও ভাংতি ছিলো না এজন্য কিনতে পারছিলো না। আমার সাথে দেখা হয়ে যায় তাই আমি কিনে দেই। তারপর বলছিল ভাইয়া যখন ছোট বোনকে কিনে দিলেন তখন হাতে পরিয়ে ও দেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানো? আমি পরিয়ে দিচ্ছি সময় তূর আমাকে বলতেছিলো ভাইয়া এখন ইসু আপু যদি এই দৃশ্য দেখতো তাহলে ভাবেন কি হতো। হয় হার্ট অ্যাটাক করতো নয়তো আমাকেই মে’রে ফেলতো। মেয়েটার কথা সত্যি করে তুমি দেখলেও আর আমাকে ভুল ও বুঝলে।আর ঐদিন রেস্টুরেন্টে তূর আমাকে এজন্য ফোন দিয়েছিল সৌন্দর্য আর নূরের সম্পর্কে বলতে।ওদের মধ্যে সব ঠিক করে দিতে যেনো সাহায্য করি। আর তুমি? তালহা আর কিছু বলে না কোমরে হাত দিয়ে চুপ করে থাকে।
সব কথা শুনে ইসরাত থতমত খেয়ে যায়।কি করবে বা বলবে বুঝতে পারে না। অনেকটা সময় পার হয় কেউ কিছু বলে না। চুপচাপ দুইজন দাঁড়িয়ে থাকে। এরমধ্যে ইসরাত তালহা কে কিছু না বলে দরজা খুলে বের হয়ে যায়। তালহা পিছন থেকে ডাকলেও শুনে না।
বসার ঘরে এসে দেখে সব শান্ত। বাড়ির লোক নূর আর সৌন্দর্য ছাড়া আর কেউ নেই। এতো সময় পুরো বাড়ি ভরা লোক থাকলেও এখন নেই। বিয়ে বিয়ে আমেজ টা আর নেই মনে হচ্ছে। ইসরাতের মা সোফায় একই ভাবে বসে আছে। পাত্র পক্ষকে সৌন্দর্য আর ইসরাতের বাবা সব বলে মাফ চেয়ে বিদায় করেছে। ইসরাতের মা সব দেখেও চুপ ছিলো।
ইসরাত মায়ের পাশে এসে বসে বলে,,মা সবাই কোথায়? মেহমানরা কি আসে নি? যেই লোক আমার বিয়ের কথা শুনে ও চুপ ছিলো সৌন্দর্য স্যার না বললে লোকটা আসতো না। মা ওদের আসতে বলো আমি ঐ ছেলেকেই বিয়ে করবো তালহা স্যার কে না বলেই তালহার দিকে তাকায়।
ইসরাতের মা হুট করেই উঠে গালে চ’ড় লাগিয়ে দেয়। দ্বিতীয় বারের মতো একই গালে চ’ড় খেয়ে থমকে যায় ইসরাত।
এই মেয়ে কে যতদ্রুত সম্ভব এই বাড়ি থেকে বিদায় করো এই ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে । বলেই উনি চলে যান।
নূর ইসরাতের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,,অনেক ঝামেলা করেছিস আর করিস না।আর তালহা স্যারের মা খুবই অসুস্থ তাই তোর বিয়ের খবর শুনেও আসতে পারেনি। এখন উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সোজা তোর কাছে এসেছে। ইসরাত এবার গালে হাত দিয়ে নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে যায়।
ইসরাতের বাবা এবার এগিয়ে এসে তালহা কে বলে,, ওর ফ্যামিলি নিয়ে যেনো এসে বিয়ের কথা বার্তা বলে।এরমধ্যে সৌন্দর্য একটা প্রস্তাব রাখে সৌন্দর্য আর নূরের সাথে যেনো তালহা আর ইসরাতের ও যেনো একই দিনে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তালহা সম্মতি জানালে ইসরাতের বাবা আর অমত করে না। সবশেষে নূর অনেক খুশি হয় দুই বান্ধবীর এক সাথে বিয়ে। ফাইনালি ইসরাত তার ভালোবাসার মানুষকে পেতে যাচ্ছে। ইসরাত মুখ টা গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকলেও মনে মনে লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছে।
************
নির্ধারিত তারিখে দুই কাপলের বিয়ে সম্পন্ন হয় খুব ভালো ভাবে। এরমধ্যে আরো দুইজনের মধ্যে ও প্রেম ভালোবাসা হয়ে যায়। ইসরাত কে যখন শুভকামনা জানাতে আসে একটা ছেলে গলাটা কেমন চেনা চেনা লাগে তাকিয়েও চিনতে পারে না। পরে মনে হলো রেস্টুরেন্টের ঐ ছেলেটা। ছেলেটা আর কেউ নয় তালহার চাচাতো ভাই। নূরের বাবা কে ওই সাহায্য করেছিলো। আর বসার ঘরে ফ্যামিলি ফটোতে তূরের পিক দেখে মন হারিয়ে ছিলো।হাসপাতালে নূরের মাকে ও সাহায্য করেছিলো। তূরের প্রেমে সে হাবুডুবু খাচ্ছে।
***********:***
ইসরাত নূরের সংসার জীবন খুব ভালো কাটছে। কিন্তু ইসরাতের দুষ্টুমি কমেনি একটুও। সে তার কাজ করে যাচ্ছে। তালহার জীবন তেজপাতা বানিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে তালহার কাঁদতে ইচ্ছে করে ইসরাতের দুষ্টুমি দেখে । এই মেয়ে টা কিছুদিন পর মা হবে অথচ সে বাচ্চামো করে বেড়ায়।
ইসরাত নূরের লাস্ট ইয়ার এক্সাম কিছুদিন পর। তাই ওদের নিয়মিত ক্লাস করতে হয়। ইসরাতের বেবি হবে তাই ওকে একটু সাবধানে চলাচল করতে হয়।তালহা তবুও ভয়ে থাকে এই মেয়ে যেই কেয়ারলেস কখন কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে,তাই নিজেই ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে যায়। নূরকে বলে যায় খেয়াল রাখার জন্য।
দ্বিতীয় ক্লাস শেষ হবার পরে তালহা এসে কি জরুরি কাজ আছে বলে ইসরাত কে নিয়ে যায়। নূর রয়ে যায়। সৌন্দর্যের ক্লাস এখন।ক্লাস চলাকালীন হুট করেই জড়ো হাওয়া বইতে থাকে সাথে বিদ্যুৎ চমকানো।চারিদিকে কেমন অন্ধকার হয়ে আছে। নূরের খুব ভয় করতে লাগলো। বা’জ পরলে এমনিতেই ভয় পায় সে।এতো এতো মানুষ হওয়া সত্যে ও ভয় পাচ্ছে সে। সৌন্দর্য সবই লক্ষ করে। নূরের বেঞ্চের পাশে এসে দাঁড়ায়। সকলকে হইচই ও ভয় পেতে বারণ করে। নূরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝায় ভয় পেও না আমিতো আছি। নূর সেই চোখের ইশারায় ভরসা খুঁজে পায়।সৌন্দর্য পাশে এসে দাঁড়ানোতে অর্ধেক ভয় এমনিতেই কেটে গেছে তার। এই লোকটা তার ভরসার স্বস্তির আশ্রয়স্থল।
নূর ক্লাস শেষ করে পার্কিং প্লেসে এসে দেখে সৌন্দর্য আগে থেকেই তারজন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে।এখন আকাশ পুরোই পরিষ্কার। দেখে মনেই হচ্ছে না একটু আগে অমন ঝড় উঠেছে। সৌন্দর্য গাড়ির দরজা খুলে দিলে নূর ঢুকেই সৌন্দর্য কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। সৌন্দর্য মুচকি হেসে বলে,,খুব ভয় পেয়েছিলে পরাণ?
নূর মাথা নাড়িয়ে জানায় হ্যা।তারপর বলে,,কিন্তু আমার সুন্দর মানুষ পাশে এসে দাঁড়ানোয় সব ভয় বাতাসের সাথে উড়ে চলে গেছে। সৌন্দর্য মুচকি হেসে নূরের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
এরমধ্যে পিছনের গাড়ির দরজা খুলার আর গলা খেকা্রি দেওয়ার শব্দ কানে আসে।
উহুম উহুম আমরাও আছি কিন্তু বলেই তালহা আর ইসরাত গাড়িতে ঢুকে। নূর সৌন্দর্য কে লজ্জা পেয়ে ছাড়িয়ে নেয়।পিছনে ফিরে বলে তোরা?
ফাতিহা তালহার কোল থেকে বলে মাম্মা আমিও আছি হিহিহি। নূর ফাতিহা কে কোলে নিয়ে নেয়।গালে চুমু খেয়ে বলে,,মাম্মাটাহ আমার।
কোথায় যাওয়ার প্লেন করেছিস তালহা?(সৌন্দর্য)
আপাতত রেস্টুরেন্টে চল জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করি তারপর লং ড্রাইভে যাবো। তারপর সকলেই গল্পে মত্ত হয়।ইসরাত কথায় কথায় বলে,,নূর ফাতিহা তার ভাই বোন চায় কবে আনার ব্যবস্থা করবি শুনি?
নূর বলে,,এখন না ইসু আগে ফাতিহা আরেকটু বড় হোক,,নয়তো ওর যত্নে না চাইতেও অনিয়ম হবে আমি চাই না আমার মেয়েটা এমন পরিস্থিতিতে পরুক।তাছাড়া এক্সাম শেষ করে ছোট খাটো একটা জব করতে চাই পরে ভাববো এসব বুঝলি?
কেউ আর কথা বাড়ায় না সবাই জানে নূর ফাতিহা কে নিয়ে কতোটা পজেসিভ।বলেও লাভ নেই সকলেই বুঝিয়েছে এমনকি সৌন্দর্য কিন্তু সে এখন রাজি না।
পাঁচজন মিলে একটা রেস্টুরেন্টে এসে থামে। ভিতরে ঢুকে বসে পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করে। তালহা ইসরাত কে নিয়ে ব্যস্ত,কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা,কিছু লাগবে কিনা। এইদিকে সৌন্দর্য নূরের সামনে চলে আসা চুল ঠিক করে দিচ্ছে। নূর আর ফাতিহা কি বলে যেনো খিলখিলিয়ে হাসছে।
পাশের টেবিলের বসে থাকা অনেকেই এই দুই দম্পতি ও ছোট বাচ্চাটার দিকে তাকাচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে দেখতে। ওদের দেখে মনে মনে বলছে,,ভালোবাসা সুন্দর খুব সুন্দর, পূর্ণতা পেলে ও যত্ন নিলে।
#সমাপ্ত।
অবশেষে গল্পের সমাপ্তি টানলান। গল্পে হয়তো অজান্তে অনেক ভুল হয়েছে সকলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হলো জানাবেন। নতুন গল্প নিয়ে খুব দ্রুত আপনাদের মাঝে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। সকলে ভালো থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন। আশা করি পরবর্তী গল্পে ও পাশে থাকবেন।যারা এতোটা সময় ধরে পাশে ছিলেন তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।