প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩৭

0
531

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩৭

গাড়ি এসে থামে একটা বাগান বাড়ির সামনে। তীর গাড়ির কাচ নামিয়ে বাড়িটা পর্যবেক্ষণ করছে। অন্য দিকে রিফাত আর ইশা চোখে চোখে এক জন আরেক জনকে কিছু একটা বলে ইশারা করছে। ইশা গলা পরিস্কার করে বলে।

–কি হলো তীর গাড়ি থেকে নাম তাড়াতাড়ি?

–এটা কোথায়?

–উফফ‌ এতো কথা না বলে তুই নাম তো। ইদানিং বেশি কথা বলচ্ছিস তুই।

–আরে নামছি রে বাবা এতো অস্থির হোচ্ছিস কেন?

তীর তো গাড়ি থেকে নেমে গেছে অবুঝ মেয়ের মতো কিন্তু অঘটন ঘটলো গাড়ির দরজা লাগনোর শব্দ শুনে। তীর তড়িৎ বেগে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ইশা গাড়ির ভেতর থেকে মিটিমিটি হাসছে আর ভ্রু নাচাচ্ছে।

তীর ভ্রু-কুচকে গাড়ির দরজা খুলতে নিলেই ইশা সাথে সাথে দরজা লক করে দেয়। ইশাকে এমন করতে দেখে তীর রেগে গিয়ে বাজখই কন্ঠে বলে।

–এসবের মানে কি ইশু?

ইশা দু কাঁধ নাচিয়ে বলে।

–কোন সবের?

–কোন সবের মানে তুই কি বুঝতে পারচ্ছিস না আমি কোন সবের কথা বলছি। নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করচ্ছিস কোনটা?

–তীরু সোনা মাথা ঠান্ডা কর। এভাবে চিৎকার করিস না গলা ব্যাথা করবে। তুই বরং ভেতরে যা তোর সারপ্রাইজটা ভেতরে তোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

তীর গাড়ির দরজা খুলার চেষ্টা করতে করতে বলে।

–দরজাটা খুল ইশু ভালো হচ্ছে না কিন্তু।

–ভালো না খা’রা’প সেটা পরে বুঝা যাবে।

–আরে আজব আমি এখানে একা একা করবোটা কি?

–তুই একা না আরো একজন আছে ভেতের।

তীর স’ন্দে’হে’র দৃষ্টিতে ইশার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে।

–কে আছে ভেতরে?

ইশা র’হ’স্য’ম’য় হাসি দিয়ে বলে।

–ভেতরে গেলেই দেখতে পাবি। আমরা বরং আসি আর তোকে অল দ্যা বেস্ট।

রিফাতও তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–তীর অল দ্যা বেস্ট। সময়টা ভালো কাটুক তোমাদের।

তীর অবাক হয়ে দু জনের দিকে তাকিয়ে আছে। কিসের জন্য এরা তাকে অল দ্যা বেস্ট জানাচ্ছে? তীর কিছু বলতে নিবে তার আগেই রিফাত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। তীর হাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল গাড়ির পানে। তার সাথে এতক্ষণ যা যা ঘটলো সব যেন মাথার উপর দিয়ে গেলো। গাড়িটা আড়াল হতেই তীর বাড়ির দিক মুখ করে তাকায়। কিছুক্ষণ বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ভাবে ভেতরে যাবে নাকি যাবে না। কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে হলো ও ফিরে যাবে বাড়িতে এখানে আর এক মুহূর্তও থাকবে না। কিন্তু যখনেই তীর চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তখনেই মনে পড়ে তার কাছে তো টাকা নেই। ব্যাগটা তো গাড়িতে রয়ে গেছে তাহলে যাবে কি করে হাত পুরা ফাঁকা। আর এখানের রাস্তাঘাটও তেমন ভালো করে চিনে না। তীর ঢোক গিলে চারিপাশটায় নজর বুলায় কেমন জনমানব শূণ্য এক জায়গাতে রেখে চলে গেলো থাকে। রাগে মন চাইছে ইশার নাক ফাটিয়ে দিতে কোন দুঃখে যে ইশার ফাঁ’দে পা দিলো উফফ। তীরের আর কি করা এক প্রকার বাধ্য হয়ে গেইটের কাছে গেলো। আর এটাও এখন জানার কৌতুহল হচ্ছে কি এমন সারপ্রাইজ আছে বাড়ির ভেতরে। তীর গেইটের কাছে আসতেই দেখে নীল একটা কাগজ ঝুলছে আর তাতে বড়ো বড়ো করে তীর লেখা। এটার মানে এই চিরকুট’টা তার জন্যই রাখা। তীর চিরকুট’টা হাতে নিয়ে ভাঁজ খুলে চিরকুটে কি লেখা আছে তা পড়তে থাকে।

“ভয় পাস না। চুপচাপ ভেতরে আয় আর নাক বরাবর সোজা হাঁটতে থাক”।

তীরের ভ্রু-কুচকে আসে এটা ভেবে কে এই চিরকুট’টা লিখতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয়ে চিরকুটের লেখা গুলা প্রিন্ট করা তাই চাইলেও আর বুঝতে পারবে কে লিখেছে? তবে চিরকুট’টের লেখা ভাষা গুলা একটু সন্দেহের সৃষ্টি করছে মনের মাঝে। তীর মনে মনে বলে।

–তবে কি ওনি…. না না এসব কি ভাবছি আমি ওনি তো ওনার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে আমাকে সময় দেওয়ার ওনার সময় কোথায়?

তীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে গেইট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। যতো ভেতরে যাচ্ছে ততই তীর অবাক হচ্ছে। সারা বাড়িতে নানা রকমের নাম না জানা ফুলে সজ্জিত হয়ে আছে। যত দুরে চোখ যাচ্ছে শুধু নানা রকম বাহারির ফুলের সামারোহ। ফুলের উপরে বাহারি রংয়ের প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। এক বার এক ফুলে তো অন্য ফুলে উড়ে গিয়ে বসছে। এতো ফুল থাকার কারনেই বাড়িটার নাম হয়তো বাগান বাড়ি রাখা হয়েছে। রাস্তার দু ধারে টগর গাছ লাগানো তাতে সাদা ফুলে ভর্তি। টগর ফুল গুলা হাত দ্বারা ছুঁয়ে ধীর পায়ে হেঁটে চলছে তীর। এতো ফুল দেখে তীরের বিষন্ন মনটা প্রফুল্লে পরিণত হয়েছে যেন।

সোজা রাস্তা এসে শেষ হয়েছে। এবার কোন দিকে যাবে তীর ভেবে পাচ্ছে না কারণ ডানে বামে দুটো রাস্তা চলে গেছে। কোন রাস্তা ধরে গেলে ঠিক জায়াগাতে পৌঁছাবে বুঝতে পারছে না। তীর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবলো হয়তো এখানেও কোনো চিরকুট থাকতে পারে যেহতেু আগে একটা চিরকুট পেয়েছে। তীর টগর গাছ গুলার পাশে ভালো করে খুজতে লাগলো কোনো চিরকুট আছে কিনা। কিছুক্ষণ খুজাখুজির পর দেখলো ডান পাশের রাস্তায় পড়ে আছে নীল একটা চিরকুট। তীর চিরকুট’টা হাতে নিয়ে পড়তে থাকে।

“যাক তোর মাথায় তাহলে বুদ্ধি নামক একটা বস্তু আছে। ভেবেছিলাম তোর ঘটে(মাথা) কোনো বুদ্ধি নেই কিন্তু না আমি ভুল প্রমাণিত হলাম। যাই হোক যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছিস সেই রাস্তার নাক বরাবর হাটতে থাক তাহলেই পেয়ে যাবি তোর সারপ্রাইজ”।

চিরকুট’টা পড়ে রাগে তীরের নাকের পাটা ফুলে উঠেছে। এত্ত বড় সাহস তাকে আকার ইঙ্গিতে বোকা বলল। চিরকুট লিখার মালিক হয়তো আগে থেকেই জানতো তীর এমন কিছু একটা করবে তাই এটা লিখে রেখেছে। তীরের মন চাইছে এই চিরকুট লিখার মালিককে পঁ’চা ডোবায় চুবিয়ে মা’র’তে। যত্তসব।

তীর হাঁটা ধরে কিছুটা সময় হাঁটার পর রাস্তার মোড় ঘুড়ে বাড়ির পেছেনের দিকে এসে সামনে তাকাতেই তীর চ’র’ম অবাক হয়। চারিপাশটায় অনেক সুন্দর ডেকোরেট করা আর তার মাঝ খানে খড়ের একটা ছাউনি। সেই ছাউনির চারিপাশটা খোলা। খোলা ছাউনির চারপাশটায় সাদা আর লাল পর্দা দিয়ে সুন্দর করে ডেকোরেট করা হয়েছে। বাতাসে পর্দা গুলা দুলছে। এসব দেখে তীরের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফুঁটে উঠে। এমন মনোরম দৃশ্য তো তীর সিনেমাতে দেখে কিন্তু বাস্তবে যে দেখবে কল্পনাও করতে পারে নি। ছাউনি দেওয়া ঘরটার মাঝ একটা টেবিলে রাখা তার উপরে কিছু একটা রাখা আছে।

তীর ধীর পায়ে হেঁটে যায় ছাউনির কাছটায়। ছাউনির নিচে আসতেই তীর যেন আরো অবাকের চূড়ায় পৌঁছে যায়। টেবিলের উপরে রাখা চকলেট ফ্লেভারের একটা কেক আর ইয়া বড় একটা লাল গোলাপের বুকে দেখে। কেকের উপরে “Happy Birthday Thir” লেখা দেখে বুঝতে পারে এটা তার বার্থডে উপলক্ষেই কিনা। তীর এসব দেখে খুশির জোয়ারে ভাসতে থাকে। ছাউনির চারপাশটায় ভালো করে ঘুড়ে আবারও টেবিলের কাছে এসে গোলাপ ফুলের বুকেটা হাতে নিয়ে ফুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তীর চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ নিয়ে চোখ খুলতেই চোখের সামনে একটা অবয়ব ভেসে উঠে। সেটা আর কেউ নয় স্বয়ং ইশান ফরাজী দাঁড়িয়ে আছে। ইশানের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। ছাউনির খুটির সাথে হেলান দিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। নজর তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা পরী নামক তীরের দিকে। তীরের এমন সিম্পল সাজ যেন ইশানের বুকের বা পাশে গিয়ে লেগেছে সোজা। চোখে কাঁজল, ঠোঁট হালকা লিপস্টিক, কোমড় পর্যন্ত চুল গুলা ছাড়া যেগুলা বাতাস নিজের আপন মনে খেলা করছে। ইশানের খুব হিংসা হচ্ছে এই বাতাসের উপরে। আজ পর্যন্ত ও এখনো এই‌ রেশমি চুলের ঘ্রাণ নিতে পারলো না আর এই বাতাস নামক শু’ত্রু প্রতিনিয়ত খেলা করছে এই‌ রেশিম চুলের সাথে।

তীরের মুখে এতক্ষণ হাসি লেগে থাকা‌ মুখটা ইশানকে দেখার সাথে সাথে চুপসে গেলো। মনে পড়ে গেলো ইশানের করা ইগনোরের কথা। কিশোরি ছোট হৃদয়ের মনটা আবারও অভিমানে ভরে গেলো ভালোবাসার মানুষটাকে চোখের সামনে দেখে। তীর গোলাপের বুকেটা টেবিলের উপরে রেখে দেয়। তীরের নাক ফুসছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আসছে, নিজেকে সামলে রাখার যথেষ্ট প্রয়াস করছে কিন্তু না চাওয়া সত্ত্বেও দু’চোখ ভরে আসছে নোনা জলে।

তীরের চোখে পানি দেখার সাথে সাথে ইশান হন্ততন্ত হয়ে এগিয়ে হাত বাড়িয়ে তীরের চোখের জল মুজতে নিলে তীর দু কদম পিঁছিয়ে গিয়ে ভাঙ্গা গলায় বলে।

–ছুঁবেন না আপনি আমায়।

ইশানের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠলো। মেয়েটা তার উপর ভীষণ রকমের অভিমানে করে ফেলেছে। এখন এই অভিমান কিভাবে কমাবে। এমনটা করা একদমেই উচিত হয় নি তার। ইশান আর কিছু না ভেবেই তীরের হাত চেপে ধরে নিজের বক্ষস্থলে এনে ফেললো। তীর ছটপট করছে ইশানের কাছ থেকে ছুটার জন্য কিন্তু ইশান জাপ্টে ধরলো তীরকে আর নরম কন্ঠে সুধালো।

–সরি জান। প্লিজ রাগ করিস না আর এমন করবো না তোর সাথে প্রমিজ। এবারের মতো প্লিজ ক্ষমা করে দে আমাকে।

তীর এবার জোরেই কান্না করে দেয়। দু গাল বেয়ে পড়ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অজস্র নোনা জল। তীরকে এমন করে কান্না করতে দেখে বলে।

–স্টপ তীর! এবার তো অন্তত কান্নাটা বন্ধ কর।

তীর নিজেকে ইশানের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেই না। যতো চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়ানোর ততোই ইশানের হাতের বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। এক পর্যায়ে তীর না পেরে ফুপাতে ফুপাতে বলে।

–ছাড়ুন আমাকে। আমাকে কোন সাহসে ছড়িয়ে ধরেছেন আপনি? কে হোন আপনি আমার? দুরে সরে যান আমার থেকে।

তীরের কথা শুনে ইশান মুচকি হেসে বলে।

–আমিই তোর সব বুঝলি। আর এতো ছটপট করচ্ছিস কেন একটু স্থির হয়ে থাকতে পারচ্ছিস না।

তীর নাক ফুসাচ্ছে রাগে, দুঃখে, কষ্টে। মন চাইছে ইশানকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে কিন্তু এই হাতির মতো মানুষটাকে এক চুল পরিমাণও সরাতে পারছে না শত চেষ্টা করেও।

তীর শান্ত তো হলো কিন্তু নাক এখনও ফুসাচ্ছে। তীরকে শান্ত হতে দেখে ইশান মুচকি হেসে হাতের বন্ধন নরম করতেই তীর নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ইশানকে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয়। ইশান দু কদম পিছিয়ে গিয়ে তীরের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকায়। তীর যে ভীষণ ক্ষেপে আছে ইশানের উপরে সেটা আর বুঝতে বাকি নেই। এখন এই মেয়ের অভিমান মিশ্রিত রাগ কমাতে ইশানকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।

#চলবে_____

বানান ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। আর যারা গল্প পড়েন সবাই দয়া করে মায়া করে রেসপন্স করিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here