প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪১

0
490

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪১

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। ইশান ড্রাইভ করছে আর তার পাশে রিফাত। পিছনের সিটে ইশা, তীর আর নীরা। ইশা আর নীরার মাঝখানে বসেছে তীর। তিন বন্ধবী নাকে মুখে কথা বলছে মনে হচ্ছে যেন হাজার বছর ধরে তাদের মাঝে কোনো কথা হয় না। আর অন্য দিকে রাহুল বেচারা পিছনে একা বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।

অন্যদিকে ইশান বার বার লুকিং গ্লাসের উপরে তীরের প্রতিবিম্বর দিকে তাকাচ্ছে। ইশানের বার বার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকানোটা রিফাত খেয়াল করে জোরেই বলে উঠে।

–ইশান বাবু। চোখ দুটো সামনে রেখে গাড়িটা মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ‌ করুন না হলে যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে। পরে আর এই জীবনেও আর দেখতে পাবেন না।

রিফাতের কথার মানে বুঝতে পেরে ইশান রাগী চোখে রিফাতের দিকে তাকায়। রিফাতও ইশানের এই চাওনির সাপেক্ষে মেকি একটা হাসি দেয়। কিন্তু গাড়ির অন্য সদস্যরা রিফাতের কথার মানেটা বুঝতে আর পারলো না।

_____

“বালিয়াটি জামিদার বাড়ি” মানিকগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় আট কিলো মিটার দুরে সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটি গ্রামে স্থাপিত এই‌ জমিদার বাড়ি। সাতটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ে বালিয়াটি জামিদার বাড়ি গৌরবের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এই বালিয়াটি জামিদার বাড়ি বালিয়াটি প্যালেস নামেও পরিচিত। ঊনবিংশ শতকে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী প্রসাদের চত্বরটি প্রায় ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জামিদার বাড়ির প্রবেশ ফটকের দুই পাশে রয়েছে দুই সিংহের মূর্তি। জমিদার বাড়ির মুল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সুপ্রশস্ত সবুজের ঢাকা আঙ্গিনা চোখে পড়ে। আঙ্গিনায় গড়ে তুলা হয়েছে নানা রকমের বাহারি ফুলের বাগান। আঙ্গিনার পরপরেই পাশাপাশি রয়েছে চারটি ভবনতল। এই ভবনগুলার পেছনেই রয়েছে চারটি পুকুর আর জামিদার বাড়ির অন্দরমহল। প্রাসাদে মোট কক্ষ সংখ্যা রয়েছে ২০০ টি আর সেই প্রত্যকেটা কক্ষই নিপুণ কারুকাজের নকশা দেখা যায়।

আড়াই ঘন্টা পরে “বালিয়াটি জামিদার বাড়িতে” এসে পৌঁছায় গাড়ি। আরো আগেই চলে আসতো কিন্তু রাস্তায় জ্যামে পড়ে যাওয়ার জন্য লেইট হয়ে যায়। একে একে সবাই নেমে গেলে ইশা ঘুমন্ত তীরকে ডাকার জন্য উদ্যত হতে নিলে এর আগেই ইশান বলে উঠে।

–ওকে ডাকার দরকার নেই ও ঘুমাক।

–কিন্তু ভাইয়া আমরা সবাই চলে গেলে ও একা গাড়িতে থাকবে কি করে?

–তোরা যা আমি আছি ওর সাথে।

–আচ্ছা।

ইশা নিজের কাঁধ থেকে তীরের মাথাটা সাবধানে সরিয়ে গাড়ির সিটে রেখে দিয়ে নিজে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ইশানের কাছ থেকে এক এক করে সবাই বিদায় নিয়ে চলে যায় জমিদার বাড়ি দেখার উদ্দেশ্যে রয়ে গেলো শুধু ইশান আর তীর। ইশান আবারও গাড়িতে উঠে আস্তে করে গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে তীরের পাশে বসে তীরের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। সারা রাত দু চোখের পাতা এক না করার কুফল হচ্ছে তীরের এই ঘুম। ইশান মুচকি হেসে তীরের কপালে পড়ে থাকা চুলে গুলা কানে গুজে দেয়। তীরের মাথাটা সিট থেকে পড়ে যেতে নিলে ইশান সাথে সাথে ধরে নিজের কাঁধে এনে মাথাটা রাখে। ঘুমন্ত তীর কারোর অস্তিত্ব টের পেয়ে নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয় ইশানের বুকে। তীরের এমন বাচ্চামো দেখে ইশানের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। একটা মানুষ বেড়াতে এসে এভাবে কি করে ঘুমিয়ে পড়তে পারে বুঝে আসছে না ইশানের।

এদিকে ইশা, রিফাত, নীরা আর রাহুল নিজেদের ইচ্ছে মতো সারা রাজ বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাহুল তো ক্যামেরা দিয়ে সারা রাজবাড়ি ফ্রেম বন্দী করে নিচ্ছে। ইশান সাথে না থাকাতে যেন ইশার জন্য ভালোই হয়েছে। রিফাতকে যেভাবে বলছে সেভাবেই চলছে।

৪০ মিনিট পর তীরের ঘুম ভাঙ্গে। আবছা নয়নে চোখ মেলে তাকিয়ে বুঝে এখনো ও গাড়িতেই আছে কিন্তু গাড়ি চলছে না আর গাড়ির সামনেও কেউ নেই। পাশে ফিরে তাকাতেই তীরের চোখ কপালে উঠে যায় ইশানকে দেখে। তীর দ্রুত বেগে ইশানের কাছ থেকে দুরে সড়ে যায়। তীরের হঠাৎ এমন করাতে ইশান ভ্রু-কুচকে তীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তীর আঁড় চোখে ইশানের দিকে তাকায়। তীরের ভীষণ অস্বস্তি লাগছে এভাবে ইশানের বুকে ঘুমিয়ে ছিলো। ছিহ! কি লজ্জার বিষয়? তীরের মাথায় হঠাৎ করেই হানা দেয় অন্যরা সবাই কোথায় কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না? গেলো কোথায় সবাই? তীর মাথা নিচু করেই বলে।

–ওরা সবাই কোথায়?

ইশানের শীতল কন্ঠ ভেসে আসে।

–কেন ওদের দিয়ে তোর কি দরকার?

তীর এবার ইশানের দিকে ফিরে বলে।

–মানে?

–মানেটা হলো! আমি হলে কি তোর চলবে না। নাকি ওদেরকেও প্রয়োজন তোর।

তীর মাথা নুইয়ে ফেলে।‌ কিন্তু কিচ্ছু বলছে না দেখে ইশান আবারও বলে।

–কি হলো কিছু বলচ্ছিস কেন?

ইশা জিভ দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে।

–কি বলবো?

ইশান বাঁকা হেসে বলে।

–কিছু বলতে হবে না তোকে। নে গাড়ি থেকে নাম।

তীর চুপচাপ গাড়ি নেমে দাঁড়ায়। ইশানও গাড়ি লক করে এসে তীরের পাশে এসে তীরের হাত ধরে রাজ বাড়িতে প্রবেশ করে। ইশান চাইলেই রিফাতকে কল করে জেনে নিতে পারতো ওরা কোথায় আছে? কিন্তু ইশান চায় তার একান্ত মানুষটার সাথে একান্ত ভাবে কিছুটা সময় কাটাতে। তীর বার বার ইশানের হাতে নিজের রাখা হাতটার দিকে তাকাচ্ছে। এই হাতটা কি সারা জীবন ধরে রাখতে পারবে তো নাকি অকালেই ছেড়ে যাবে। তীর কেঁ’পে উঠে মনে মনে বলে।

–এসব কি ভাবছি আমি। এমন কিচ্ছুই হবে না।

তীরের এভাবে কেঁ’পে উঠতে দেখে ইশান হাঁটা থামিয়ে‌‌ অস্থির হয়ে বলে।

–কি হয়েছে এভাবে কেঁ’পে উঠলি?

–কিছু হয় নি তো।

–তাহলে কেঁ’পে উঠলি কেন?

–এমনি।

–এমনি কেউ কেঁ’পে উঠে!

–উফফ! আপনি এতো প্রশ্ন করেন কেন বলেন তো?

–আচ্ছা ঠিক আছে‌ আর‌ প্রশ্ন করবো না।

বলেই হাঁটা ধরে। সারা রাজ বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে গিয়ে দেখা হয় ইশাদের সাথে। তারপর সকলে‌ মিলে এক সাথে ঘুরাফেরা করে সন্ধ্যার দিকে রওয়ানা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বাড়িতে এসে একেক জন জন ক্লান্ত হয়ে বেডে শরীরের লাগাতেই দু চোখের পাতায় ভিড় জমায় রাজ্যের ঘুম।

______

দেখতে দেখতে আরো একুশ দিন পার হয়ে গেছে। আর কয়েকদিন পরেই পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে। তীর আর ইশা ট্যুর থেকে ফিরার পরের দিন গুলো অনেক ঘুরাফেরা করেছে। ঘুরাফেরা শেষ করে তীর বাড়িতে চলে আসলেও ইশার এখনো ঘুরা শেষ হয় নি। সে এখনও নানা বাড়িতেই পরে আছে। ইশা আজকে সন্ধ্যার দিকে আসবে যখনেই শুনেছে তীর ফিরে এসেছে বাড়িতে তখনেই নিজেও বাড়িতে আসার‌ জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তীর দুই দিন আগেই ফিরেছে বাড়িতে মায়ের কথা শুনে। আর বাড়িতে এসেই শুনে দু দিন পর নাকি বাড়িতে মায়ের এক বান্ধবী সপরিবারের আসবে। তারেই আয়োজন চলছে আপাতত। কিন্তু তীরের মনে সন্দেহ‌ জাগছে তাকে তার মা কোনো কাজেই করতে দিছে না বরং বার বার বলছে বিশ্রাম করার জন্য। তীরের আর কি করার মায়ের কথা মতো নিজের ঘরে শুয়ে ফোনে ড্রামা দেখছে। ইশানের সাথে তেমন একটা কথা হচ্ছে না কয়েকদিন ধরে কারণ ইশানের কাজের প্রে’সা’র’টা একটু বেড়ে গেছে একটা ডিলের জন্য। আজকে সেই ডিলের মিটিং টা শেষ হলে ইশানের কাজের চাপটা কমবে।

তিনটার দিকে মেহমানরা আসে আহমেদ ভিলাতে। তীর নিজের ঘরে বসে ফোন টিপছে এমন সময় আয়েশা সুলতানা হাতে একটা খয়েরি রং এর কাতান শাড়ি নিয়ে তীরের ঘরে আসে। মায়ের হাতে শাড়ি দেখে তীরে ভ্রু-কুচকে বলে।

–শাড়ি দিয়ে কি করবে মা?

আয়েশা সুলতানা শাড়িটা বেডের উপরে রেখে মেয়ের মুখে দিকে তাকিয়ে বলে।

–শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে নিচে চলে আসো।

তীর অবাক হয়ে মাকে প্রশ্ন করে।

–মানে! আমি এখন শাড়ি পড়বো কেন?

–পড়তে বলেছি পড়ো চুপচাপ‌ এতো প্রশ্ন না করে।

তীর কন্ঠ নিচু করে বলে।

–মা তুমি কি কোনো রকম ভাবে আমাকে পাত্রী দেখাচ্ছো তোমার বান্ধবীকে।

আয়েশা সুলতানা কিচ্ছু বলছে না দেখে তীর মার‌ পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে।

–কি হলো মা কিছু তো বলো?

–এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না আমি। তবে এটা মনে রেখো যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি। হাতে বেশি সময় নেই দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আসো।

বলেই আয়েশা সুলতানা চলে যায়। তীর‌ মাকে পিছু ডেকেও লাভ হলো না। তীর কি করবে এখন কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। মাথা ভার হয়ে আসছে মা যে তাকে এভাবে নানা বাড়ি থেকে এনে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে কল্পনাও করতে পারি নি। এবার কি হবে? ইশানকে সবটা জানতে হবে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি। কিছু করতে পারলে ইশানেই কিছু একটা করতে পারবে।

#চলবে______

সরি গল্প দেরি করে দেওয়ার জন্য। জানেনই তো আমি অসুস্থ। সম্পূর্ণ ভাবে এখনো সুস্থ হয় নি শরীরের দুর্বলতা এখনো কমে নি। আজকের পর্বটা হয়তো তেমন ভালো হয় নি তার জন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রাপ্তি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here