#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৭
–তোর ফোনটা।
তীর ইশার কাছ থেকে ফোন নিয়ে বলে।
–থ্যাঙ্ক ইউ রে আসলে ফোনটার প্রয়োজন ছিলো আমার হবু বরের সাথে কথা বলতে হবে।
তীরের কথা শুনে ইশা পিলে চমকে তাকায় তীরের মুখ পানে। তীরের কথার আগা মাথা কিচ্ছু বুঝতে পারছে না যে মেয়ে কয়েক মাস আগে ইশানের মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা শুনার জন্য এতো কিছু করলো আর আজকে কি না সেই মেয়টা এসব আজগুবি কথা বলছে। চলছে কি এই মেয়েরে ছোট্ট মাথায় কি খিচুড়ি পাকাচ্ছে। ইশা তীরের বাহু ধরে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে।
–কি বলচ্ছিস কি তুই এসব? মাথা টাথা কি পুরাটাই খারাপ হয়ে গেছে নাকি।
তীর ইশার হাত নিজের বাহু থেকে সরাতে সরাতে বলে।
–আমার মাথা পুরোটাই ঠিক আছে।
–তাহলে এসব কি উদ্ভট কথাবার্তা বলছিস!
–আসলে কি বলতো তোর ভাইয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে যাচ্ছি আমি।
ইশা ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচ করে বলে।
–ভাইয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে যাচ্ছিস মানে। হচ্ছেটা কি এসব আমাকে ক্লিয়ার করে বলবি একটু।
–তোর ভাই চায় আমি যেন বিয়ে করে নেই ওই ছেলেকে তাই আমিও তোর ভাইয়ের ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব নিলাম।
ইশা তীরের কথা শুনে বিস্মিতা নয়নে তীরের দিকে তাকায়। ইশান যে এই ধরণের কথা বলেছে ঠিক হজম হচ্ছে না তার। ইশা হতবাক হয়ে বলে।
–তুই কি আমার সাথে মজা করছিস তীর।
–মজা করতে যাবো কেন আমি তোর সাথে!
আলমারি থেকে জামা বের করতে করতে বলে। তীরের এমন ভাবলেশহীন কথাবার্তা শুনে ইশা রে’গে গিয়ে তীরকে ধমকের স্বরে বলে।
–যা বলবি স্পষ্ট ভাবে বল। এমন হেয়ালি মার্কা কথাবার্তা বলবি না একদম আমার সাথে।
তীরের হাত দুটো মুহূর্তে থেমে যায়। বুক চিরে কান্না আসছে। এতো কষ্ট হচ্ছে যে বলার বাহিরে। কেন ইশান তার সাথে এমনটা করলো? কি দোষ ছিলো তার? ইশানকে ভালোবেসে ছিলো এটা কি তার দোষ ছিলো। তবে তীর এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ইশান যে তাকে এখনও ভালোবাসে। তবে কিছু একটা কারণে ইশান তাকে দুরে সরিয়ে দিতে চাইছে। তীরকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ইশা ত্রস্ত পায়ে তীরের কাছে এসে তীরের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরাতেই আতকে উঠে তীরকে দেখে। তীরের চো পানিতে টইটম্বুর করছে। একটু ছুয়ে দিলেই তা ঝর্ণার স্বচ্ছ পানির মতো গড়িয়ে পড়বে নিচে। ইশা গলার স্বর নিচু করে বলে।
–কি হয়েছে তীর?
ঠোঁটে ভেঙ্গে কান্না আসছে তীরের। নিজের কঠিন রুপটা আর ধরে রাখতে পারছে না শত চেষ্টা করেও। মুহূর্তের মাঝে হামলে পড়ে ইশার বুকে। ইশা হতভম্ব হয়ে যায় তীরের এহেন কাজে। হঠাৎ মেয়েটার হলো কি? একটু আগে ছিলো এক রুপে এখন চলে এসেছে অন্য এক রুপে। ইশা যেন একটা গোলকধাঁধার মাঝে পড়ে গেছে। ইশা মুখ ফুটে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তীর ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে।
–ওনি কেন আমার সাথে এমন করছে ইশু? কি দোষ করেছি আমি যে এভাবে আমাকে শাস্তি দিছে। এতো নি’ষ্ঠু’র ওনি কি করে হতে পারে? ওনার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না আমার সাথে এমনটা করার জন্য।
ইশা নির্বোধের মতো তীরের কথা গুলা শুনে গেলো। এতোটা কষ্ট তীর নিজের মনের মধ্যে পুষে রেখেছে ইশা বুঝতে পারে নি। ইশা তীরকে শান্ত করে কোমল কন্ঠে বলে।
–কি হয়েছে? এভাবে কান্না করচ্ছিস কেন? সব তো ঠিকেই ছিলো, তাহলে হঠাৎ কি হলো?
তীর গতকাল রাত্রের সম্পূর্ণ ঘটনাটা খুলে বলে। তীরের প্রতিটা কথাই যেন ইশার বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। তার ভাই যে এমন ব্যবহার করেছে ঠিক মানতে পারছে না। ইশা অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে।
–কিন্তু ভাইয়া এমনটা করতে যাবেই বা কেন?
–জানি না আমি কিচ্ছু জানি না ওনি আমাকে হার্ট করেছেন। এর মূল্য ওনাকে দিতে হবে। কি পেয়েছেন ওনি আমাকে যা বলবে তাই করতে হবে আমাকে।
–কিছু তো একটা গন্ডগোল আছেই এর ভেতরে না হলে ভাইয়া এমন অদ্ভুত আচরণ করতো না। তোকে ভাইয়া যে হাতে চ’ড় মেরেছে সে হাতকেই আবার নিজেই ক্ষতবিক্ষত করেছে।
তীর ইশার কথাটা শুনে ভ্রু কুচ করে বলে।
–মানে।
–ভাইয়া তোকে কষ্ট দিয়ে নিজেও যে কষ্ট পাচ্ছে।
–তো কে বলছে ওনাকে কষ্ট পেতে আমি বলেছি।
–ভাইয়ার সাথে আমাকে কথা বলতে হবে এই বিষয়ে।
তীর ইশার বা হাত ধরে বলে।
–একদম না ওনার সাথে এই বিষয়ে তুই কথা বলবি না। ওনার জালে যদি ওনাকে না ফাঁসিয়েছি আমি তাহলে আমার নামও তীর না। তুই শুধু দেখ আমি কি করি? খুব শখ না ওনার জীবন থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়ার। এতো সহজে ওনাকে আমি ছাড়ছি না। ওনি নিজে এসে সব সত্যিটা বলবে কেন এমনটা করছেন?
ইশা তীরের মুখ পানে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে এই মেয়ের পেটে আর মন ঠিক কি চলছে। কি করতে চাইছে?
_____
বড় কাচের দরজা টেলে তীর রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। মাথার শুভ্র রঙের ওড়নাটা কিছুটা সরে যাওয়াতে বা হাত দিয়ে সামনের দিকে টেনে এনে চারদিকটা নজর বুলায়। কিন্তু তীর যার সাথে এই রেস্টুরেন্টে দেখা করতে এসেছে তাকে তীর চিনে না জাস্ট ফোনে এক বার কথা হয়েছে। তীর আসতে চায় নি কিন্তু মায়ের কথা রাখার জন্য বাধ্য হয়ে আসতে হলো। ইশাকে নিজের সাথে আনতে চেয়েছিলো কিন্তু ইশা শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে পারে নি। তীর কাঁধের ব্যাগের চেইনটা খুলে যখনেই ফোন বের করতে যাবে ওমনি হঠাৎ করেই অপরিচিত একজন মানব ঝড়ের বেগে এসে সামনে দাঁড়ায়। তীর ভ’য় পেয়ে দু কদম পিছিয়ে যায় হাত থেকে ফোনটা নিচ পড়তে পড়তে বেচে গেছে। তীর রা’গী কন্ঠে বলে।
–এসবের মানে কি? আপনি কি চোখে দেখতে পান না। নাকি পকেটের ভেতরে চোখ নিয়ে হাটেন।
তীরের সামনের দাঁড়ানো সুর্দশন ছেলেটা মুচকি হেসে বলে।
–রিলেক্স ম্যাডাম! আমি বুঝতে পারে নি আপনি যে এতোটা ভ’য় পেয়ে যাবেন। আর আপনি যদি আমার দ্বারা ভ’য় পেয়ে থাকেন তাহলে তার জন্য সরি।
–এভাবে কারো সামনে এসে দাঁড়ালে গণপিটুনি খেতে হবে তাই নেক্সট টাইম সাবধানে হাটাচলা করবেন হাত পা না ভাঙ্গতে চাইলে।
–এভাবে আর কারো সামনে যাবো না আপনিই লাস্ট আর আপনিই ফাস্ট।
–মানে।
–আমি আকাশ শেখ যার সাথে আপনি দেখা করতে এসেছেন সেই মানুষটা আমি।
ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে কথাটা বলে আকাশ। তীর এবার বুঝতে পারলো এই ছেলেটাই তার মায়ের পছন্দ করা ছেলেটা আর অভিলা আন্টির ছেলে। তীর আকাশকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নজর বুলায়। ছেলেটা দেখতে মাশাল্লাহ অনেক হ্যান্ডসাম কিন্তু তার ইশানের মতো এতোটাই সুদর্শন পুরুষ নয়। ইশান কত্ত লম্বা আর সুঠাম দেহের অধিকারী এই ছেলে ইশানের ধারে কাছেও আসবে না কোনো দিন। তীরের এমন চাওনি দেখে আকাশ বাঁকা হেসে বলে।
–আমাকে যদি আপনার দেখা হয়ে থাকে তাহলে আমরা কোথাও গিয়ে বসি।
তীর আকাশের কথা শুনে ইতস্তত বোধ করলো। এভাবে তাকিয়ে থাকাটা একদম উচিত হয় নি কিন্তু সে তো অন্য চিন্তায় মগ্ন ছিলো। দৃষ্টি যদিও আকাশের দিকে ছিলো কিন্তু মন ছিলো ইশানের কাছে। আকাশ নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে।
–চলুন বসি গিয়ে।
তীর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। মধ্যম সারির একটা ফাঁকা টেবিলে এসে দাঁড়ায় তারা। তীর চেয়ার সারাতে নিলেই আকাশ বলে।
–আমি সরিয়ে দিচ্ছি ওয়েট।
তীর মেকি হাসি দিয়ে বলে।
–ধন্যবাদ।
আকাশ বসতে বসতে বলে।
–ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন এটা আমার দায়িত্বের মাঝেই পড়ে।
আকাশের কথা শুনে তীর মনে মনে ব্যঙ্গ করে বলে।
–হুমম। দায়িত্বের মাঝে পড়ে তোর দায়িত্ব তোর কাছে রাখ।
আকাশ মেনু কার্ড দেখতে দেখতে বলে।
–কি খাবেন বলুন?
–আপনার যা মন চায় তাই অর্ডার দেন।
–আমার যা মন চাইলে তো হবে না। আপনার কি পছন্দ অপছন্দ সেটা তো আমি জানি না এখন পর্যন্ত।
তীর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে।
–আমার সব কিছুই পছন্দ কোনো অপছন্দ নেই আমার।
–ওও তাহলে তো ভালোই। আজকে অনেক গরম পড়েছে তাই দুটো কোল্ড কফিই অর্ডার করলাম।
আকাশ ওয়েটার ডেকে দুটো কোল্ড কফি অর্ডার দিয়ে তীরের মুখ পানে তাকিয়ে বলে।
–কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো।
–বলুন।
–আপনাকে তুমি করে বললে কি আপনি মাইন্ড করবেন।
–হ্যাঁ রে শালা মাইন্ড করবো।
মনে মনে কথাটা বলে আকাশকে বলে।
–না না মাইন্ড করবো কেন?
–ধন্যবাদ।
আকাশের মনে তো লাড্ডু ফুটছে। তীরকে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে ছবির থেকেও বাস্তবে যেন তীর আরো বেশি সুদর্শনী। আকাশ মনে মনে ঠিক করে রেখেছে বাড়িতে গিয়ে মাকে বলবে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি তীরকে তার বউ করে ঘরে নিয়ে যেতে চায়।
______
রিফাত আর ইশান রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। রেস্টুরেন্টে আসার কারণ হলো একটা ডিল সাইন করার জন্য। রিফাত ইশানের এমন বিধ্বস্ত চেহারা দেখে বার বার জিঙ্গেসা করেছে কি হয়েছে কিন্তু প্রতি বারেই ইশানের কাছ থেকে আশানুরূপ কোনো উত্তর পেলো না। তাই রিফাতও আর জোর করে নি জানার জন্য। আবির ইশানকে দেখার সাথে সাথে হাত নাড়িয়ে ডাক দেয়। ইশানও আবিরের ডাক শুনে আবির যেথায় আছে সেথায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
এদিকে তীরের একদম ভালো লাগছে না আকাশের সাথে থাকতে। আকাশ একাএকাই বকবক করে যাচ্ছে আর তীর তা অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিলছে। কিন্তু হঠাৎ করে তার নাকে এসে মিষ্টি একটা সুঘ্রাণ বারি খায়। এই ঘ্রাণ যে তার বড্ড পরিচিত তবে কি সেই মানুষটা তার আশেপাশে কোথাও আছে। তীর আশেপাশে নজর বুলাতেই দেখতে পায় পাশের সারির দু টেবিল পড়েই ইশান বসে আছে তার মুখোমুখি হয়ে। তীরের নজর যায় ইশানের ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে যা দেখে তীরের বুকটা ধ্বক করে উঠে। লোকটা তাহলে সত্যি সত্যিই হাত কেটেছে। কেন নিজেকে এভাবে আঘাত করে কষ্ট দিছে আর তাকেও বা কেন কষ্ট দিছে। কি চাইছে ইশান? তীরের অস্থিরতা টের পেয়ে আকাশ বলে।
–এনি প্রবলেম?
তীর মেকি হাসি দিয়ে বলে।
–না না কোনো প্রবলেম নেই।
কিন্তু মনে মনে বলে।
–কিন্তু এবার প্রবলেম হবে।
তীর যে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুযোগ পেয়ে যাবে ইশানকে জ্বালানোর জন্য তা কল্পনাও করতে পারে নি। তো সুযোগের সৎ ব্যবহার তো তাকে এক্ষুনি কাজে লাগাতে হবে।
______
ইশানের কোনো ধ্যান নেই এই ডিলটার উপরে। আবিরেই যা করার করছে। ইশান কোনো এক চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। আবিরের ডাকে ইশানের ধ্যান ভাঙ্গে।
–স্যার আপনি এবার সাইনটা করে দেন।
–হুম দাও।
ইশান সাইন করে কলমটা টেবিলের উপর রাখতে নিলে কারোর নাম শুনে থমকে যায়। সামনে তাকাতেই চমকে যায় তীরের হাস্যজ্জ্বল চেহারা দেখে। তীরও যে এতক্ষণ ধরে এটা চাইছিলো ইশান যেন তাকে দেখতে পায়। তাই তো আকাশকে বাধ্য করেছে তার নাম উচ্চস্বরে ডাকার জন্য। যখন তীর বুঝতে পারলো ইশানের নজরে সে পড়ে গেছে তখনেই নিজের রুপ পাল্টে আকাশকে বলে।
–আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে?
তীরের মুখে এমন কথা শুনে আকাশ কিছুটা অবাক হয়। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে।
–খুব পছন্দ হয়েছে তোমাকে? তোমার পছন্দ হয়েছে তো আমাকে।
তীর লাজুক হেসে বলে।
–এতো জলদি বলাটা মনে হয় ঠিক হবে না আমার।
–কোনো সমস্যা নেই সময় নিয়ে আমাকে জানিও। তবে সেটা যেন হ্যাঁ হয়।
তীর মাঝে মাঝে আঁড় চোখে তাকাচ্ছে ইশানের দিকে। ইশান রা’গে বো’ম হয়ে আছে। কালো বলপেনটা ডান হাতে শক্ত করে মুঠো বন্দী করে রেখেছে। ইশানের রা’গে আরেকটু ঘি ঢালার জন্য তীর আকাশকে হেসে হেসে বলে।
–আপনি চাইলে আমার হাতটা ধরতে পারেন।
আকাশ যেন আকাশ থেকে পড়ে। তার মনের কথাটা জানলো কি করে তীর। এতক্ষণ ধরে তো সে চাইছিলো তীরের এই ছোট্ট হাতটা ধরতে কিন্তু সাহস পাচ্ছিলো না বলার। আকাশ তীরের হাত ধরতেই ইশান দাঁড়িয়ে পড়ে। ইশানকে এভাবে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে রিফাতের সাথে অন্যরা যারা বসে ছিলো তারও অবাক হয়। রিফাতও দাঁড়িয়ে বলে।
–ইশান কি হয়েছে?
ইশান রা’গে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তীর যে এটা ইচ্ছে করে করছে তাকে রা’গা’নো’র জন্য এটা বুঝতে ইশানের বাকি নেই। ইশান তীরের এমন চোরা চেহারা দেখেই বুঝে ফেলেছে যে এটা অভিনয় কিন্তু ছেলেটা কে এটা বুঝতে পারছে না। তবে মন বলছে এই সেই ছেলে যার জন্য আজ তাদের দু’জনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। রিফাত ইশানের স্থির দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলেই সামনে তাকিয়ে তীরকে দেখে চমকে উঠে। রিফাত কিছু বলার আগেই ইশান এগিয়ে যায় তীরের টেবিলের কাছে। ইশানকে এগোতে দেখে তীর কিছুটা ভয় পায় কিন্তু ইশান যদি রা’গারা’গী করে তো তীর আজকে ইশানকে ছেড়ে কথা বলবে না। কিন্তু তীরকে অবাক করে ইশান কিচ্ছু না বলে রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে যায় দ্রুত পায়ে। ইশানের এমন আচরণে তীর ভীষণ ভাবে অবাক হয়। তীরের সাথে রিফাতও অবাক হয়। তীর তো ভেবেছিলো ইশান হয়তো খুব রাগারাগী করবে তাকে অন্য এক ছেলের সাথে এতো ক্লোজ দেখে কিন্তু কিচ্ছু করলো না। তীরের মনটা ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো। তবে কি সত্যি ইশানের মন থেকে উঠে গেছে সে। কিন্তু কেন উঠে গেছে সে এটার কোনো উত্তরেই খুজে পাচ্ছে না।
আকাশকে অবাক করে তীর দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। আকাশ অনেক বার পিছু ডেকেছে কিন্তু তীর ফিরেও তাকায় নি। শেষমেষ আকাশ জলদি বিল মিটিয়ে তীরের পিছনে যায়। কিন্তু গিয়েও লাভ হলো তার আগেই তীর মিলিয়ে গেছে।
_______
ইশান ক্ষ’ত হাতে দ্রুত ড্রাইভ করে নিস্তব্ধ এক জায়গাতে এসে গাড়ি থামায়। চোখের সামনে ভাসছে একটু আগের ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা। অন্য কোনো পুরুষ ছুয়ে দিয়েছে আজ তার সুখ পাখিটাকে। তাও কিছু করতে পারলো না শুধু দেখা ছাড়া। আজ যদি এই পরিস্থিতি না হতো তো ওই ছেলের হাত ভেঙ্গে দিতো ইশান। কিন্তু এরপর যখন আরো গভীর ভাবে স্পর্শ করবে তার ছোট্ট সুখ পাখিকে তখন তা কি করে সইবে ইশান। ভাবতেই শরীরের কা’টা দিয়ে উঠে। তাড়াহুড়ো হাতে সিট বেল্ট খুলে গলায় ঝুলানো টাইটা এক টানে খুলে শার্টের দুটো বোতাম খুলে দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে মাথাটা হেলিয়ে দেয় সিটে আর দুর্বল কন্ঠে বিড়বিড় করে উঠে।
–আমি সইতে পারবো না জান তোকে অন্য কেউ স্পর্শ করবে সেটা আমি সইতে পারবো না।
ইশানের ফোনে লাগাতার কল করে যাচ্ছে রিফাত। কিন্তু ইশানের কারো সাথে এখন কোনো ধরণের কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ইশান কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবারও বলে।
–উপসংহারে যদি বিচ্ছেদেই লেখা ছিলো, তাহলে সূচনা এতো রঙিন করে লেখা হলো কেন?
#চলবে________