প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৫৩ (নতুন সম্পর্কের সূচনা)

0
475

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫৩ (নতুন সম্পর্কের সূচনা)

নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে আহমেদ ভিলার চারিদিক। একটু আগের আনন্দপূর্ণ পরিবেশ এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে। আয়েশা সুলতানার পাশেই নেহা বেগম আর কেয়া দাঁড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে কে কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না। সোহেল ফরাজী আজিজুল আহমেদকে বলেন।

–ভাইসাব আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। এটা নিয়ে এতো চিন্তা করার কিচ্ছু হয় নি।

আজিজুল আহমেদ কোনো কথা বলছেন না। এর মাঝে অভি মায়ের কাছে এসে বলে।

–মা আজকে কি আপুর বিয়ে হবে না। সবাইত তো এক এক করে চলে যাচ্ছে।

আয়েশা সুলতানা অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলের দিকে তাকায়। আজ তার জন্যই এই পরিস্থিতি কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না আকাশের এই‌ কর্মকান্ড গুলা সামনে আনলো কে? আর কেই বা ঐশী নামের মেয়েটাকে খবর দিলো। আয়েশা সুলতানা ঐশীর দিকে তাকাতেই ঐশী মুচকি হেসে আয়েশা সুলতানার কাছে এসে বলে।

–বুঝতে পারছি আপনাদের মনে অনক প্রশ্ন বইছে যে আমি কি করে এই খবরটা পেলাম। আসলে এই খবরটা আমাকে ইশান ভাই দিয়েছেন।

সবাই চমকে ঐশীর দিকে তাকায় এতো কিছু ইশান করেছে তার মানে। কিন্তু ইশান কোথায়? ঐশী আবারও বলা শুরু করে।

–প্রথমত আমি এটা বিশ্বাস করতে চায় নি যে আকাশ নতুন করে আবার কোনো মেয়েকে বিয়ে করতর যাচ্ছে। সবটা বিষয় ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু যখন সব প্রমাণ হাতে পেলাম তখন ইমিডিয়েটলি বাংলাদেশে রওয়ানা দেই বিয়েটা আটকানোর জন্য। আমাদের বিয়ের পাঁচ মাস পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এই পাঁচ মাস আমাকে ওদের পরিবারের কারো সাথে কথা বলতে দেয় নি। দু জনে ভালোবেসে বিয়ে করেছি পরিবারকে না জানিয়ে। আমি আকাশকে বলতাম তোমার পরিবারকে আগে জানাও আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা।‌ কিন্তু ও শুধু এটা বলতো ওরা পরিবারকে বুঝাতে নাকি এর আরো সময় লাগবে। কিন্তু তখন তো বুঝতে পারি নি আকাশ এতোটা বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ যে একটা বিয়ে থাকার পরেও আরেকটা বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগবে।

আজিজুল আহমেদ রে’গে গিয়ে আয়েশা সুলতানাকে বলেন।

–এই সবকিছু তোমার জন্য হয়েছে আয়েশা। আজ যদি ইশান না থাকতো বুঝতে পারছো আমার মেয়েটার কতো বড় একটা ক্ষতি হয়ে যেতো। তোমার জিদের জন্য আজ এই পরিস্থিতে পড়তে হয়েছে আমাদের। আমি আগেই বলেছিলাম সব কিছু জেনে শুনে আগে পা বাড়াও কিন্তু তোমার এক কথা তোমার বান্ধবীর ছেলে খুব ভালো। আমারেই ভুল হয়েছে তোমার কথায় চলা।

শাপলা বেগম রে’গে বলেন।

–আজিজুল চুপ কর বাবা। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন এটা নিয়ে মতামাতি করলে চলবে না। সব কিছু এখন সামাল দিতে হবে। বাইরের মানুষগুলা এসব কথা শুনলে সারা এলাকা রটে যাবে তখন কিন্তু হিতে বিপরীত হবে।

–কি করবো মা এখন আমি? আমার ছোট্ট মেয়েটা….

শাপলা বেগম গম্ভীর গলায় বলেন।

–যা করার আমিই করবো তোকে কিছু করতে হবে না।

______

আকাশ গেইট থেকে বের হতে নিলেই ইশানের মুখোমুখি হয়। ইশানের মুখে বাকা হাসি লেগে আছে। আকাশ ইশানকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে ইশান বলে উঠে।

–ওয়েট মিস্টার আকাশ শেখ। আপনার সাথে আজ সারাদিন একবারও দেখা হয় নি এখন দেখা হলো আর আপনি আমাকে এড়িয়ে চলে‌ যাচ্ছেন সেটা কি ভদ্রতার ভেতরে পড়ে না।

আকাশ রা’গী চোখে তাকায় ইশানের পানে। ইশান মুচকি হেসে আকাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে‌‌ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–আগেই বলেছিলাম বিয়ে করতে না আসার জন্য কিন্তু আপসোস আমার‌ কথাটা আপনি শুনলেন না। তাই আজ আপনার এমন করুণ অবস্থা।

আকাশ বিস্মিত নয়নে ইশানের দিকে তাকায়। আগেই সন্দেহ হয়েছিলো আকাশের এটার পেছনে ইশানের হাত আছে কিন্তু এটা বুঝতে পারি নি এভাবে যে ঐশীকে নিয়ে আসবে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে। ইশান আবারো বলে।

–এসব লুকোচুরি বাদ দিয়ে ঐশীর সাথে সুখে সংসার করুন মিস্টার আকাশ। কিন্তু এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে হয়তো ঐশী আপনার জীবনে আর ফিরে আসবে না। একজন প্রতারকের সাথে একটা মেয়ে সারা জীবন কিভাবে কাটাবে বলুন। আপনার না আত্মসম্মান বলতে কোনো বস্তু নেই কিন্তু তার তো আত্মসম্মান বলতে একটা বস্তু আছে নাকি।

ইশান আর কিছু না বলে পকেটে দু হাত গুজে শিস বাজাতে বাজাতে আহমেদ ভিলার ভেতরে চলে যায়। আকাশ রা’গী নজরে এক পলক ইশানের দিকে তাকায়।

______

–আমার নাতনির বিয়ে আজকেই হবে! আর সেটাও একটা ভালো, ভদ্র, মর্জিত একজন ছেলের সাথে।

শাপলা বেগমের দিকে সবাই চেয়ে আছে অবাক নয়নে। কার সাথে তীরের বিয়ে দেওয়ার কথা বলছ? নেহা বেগমের ভ’য়টা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে ওনি তো ভেবে রেখেছেন পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হলে ইশান আর তীরের বিয়ের প্রস্তাব দিবে। কিন্তু এর আগেই শাপলা বেগম তীরের বিয়ের কথা বলে ফেলেছেন। আজিজুল আহমেদ বলেন।

–কার কথা বলছো তুমি মা?

–আমাদের সকলের আদরের ইশান। ইশানেই তীরের যোগ্য স্বামী হতে পারবে।

সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে এই কথাটা শুনে। সবাই তো এটাই চাইছিলো ইশানের সাথে যেন তীরের বিয়েটা হয়। কিন্তু কেউ সাহস পাচ্ছিলো না কথাটা বলার। ইশা তো খুশিতে চিৎকার করে উঠে আর দৌঁড় দেয় তীরের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে ইশান সদর দরজাতে পা রাখতেই শপলা বেগমের বলা কথাটা শুনে থমকে‌ যায়। তার এতো দিনের বসনা তাহলে আজ পূরণ হতে চলেছে সে আজ সফল হয়েছে। ইশানের বুকের মাঝ থেকে যেন এক ভারী পাথর সরে গিয়েছে। চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। অভি ইশানকে দেখা মাত্রই ইশান ভাইয়া বলতে বলতে ইশানের কোমড় জড়িয়ে ধরে।

_____

আহমেদ ভিলার বিষাদময় পরিবেশ আবারো উৎসবমূখর পরিবেশে পরিণত হয়েছে। ইশান আর তীরের বিয়ের আয়োজন শুরু হচ্ছে নতুন করে। ইশান শুভ্র রঙের একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়ছে তার পাশে রিফাত বসে ইশানকে প্রচুর জ্বালাচ্ছে এটা সেটা বলে। আর ইশান তা মুখ বুজে সহ্য করছে আর ফোন টিপছে কিন্তু মুখে রয়েছে চিন্তার চাপ। রিফাত ইশানের চিন্তিত চেহারা দেখে বলে।

–কি হয়েছে মুখটা এমন ভার করে রেখেছিস? এখন তো খুশির দিন।

–কিছুটা একটা ঘটতে চলেছে রিফাত।

রিফাত ভ্রু কুচ করে বলে।

–কি ঘটতে চলেছে?

–জানি না।

ঠিক তাই হলো সবার দিক থেকে সবকিছুই ঠিকঠাক থাকলেও বাদ সাজলো তীরের বলা একটা কথা সে ইশানকে বিয়ে করবে না কোনো মতেই না। তীরের এমন কথা শুনে সবাই ভীষণ অবাক হয়। এই কথাটা শুনা মাত্রই ইশানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। স্টান দাঁড়িয়ে পড়ে ইশান বসা থেকে। তীরকে পাওয়ার জন্য এতো কাঠখড় পোড়ালো আর এখন এই মেয়ে বলছে বিয়ে করবে না। মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি ও বিয়ে করবে ওর ঘাড়ও বিয়ে করবে। ভীমরতী ধরেছে এই মেয়ের, এই‌ মেয়রে ভীমরতী যদি ইশান আজকে না ছুটিয়েছে তাহলে‌‌ আজ থেকে তার নাম ইশান ফরাজী না। ইশানের মেজাজ আজ সপ্তমে ছড়ে গেছে। ইশান গম্ভীর গলায় বড়দের উদ্দেশ্য বলে।

–আমি তীরের সাথে একান্তে কথা বলতে চাই যদি আপনাদের কারোর কোন সমস্যা না থাকে।

শপলা বেগম বলেন।

–না নানা ভাই কোনো সমস্যা থাকবে কেন? তুমি যাও ওর সাথে কথা বলে সবটা ঠিক করে নাও।

ইশান দু কদম এগুতেই আয়েশা সুলতানা ইশানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন।

–মেয়েটা তোমার উপর অভিমান করেছে ইশান। তাই তোমার যে করেই হোক ওর অভিমান কমাতে হবে। পারলে তুমিই পারবে।

–চিন্তা করবেন না আন্টি আমি ওর সকল রা’গ, অভিমান, হাসি, কান্না, দুঃখের দায়িত্ব নিলাম আজ থেকে।

আয়েশা সুলতানা প্রতি উত্তরে মুচকি হাসি দেয়। ইশানের উপর তার পুরোপুরি আস্থা আছে। মাঝখানে শুধু একটা ভুল কাজ করে ফেলেছে। যেটার জন্য নিজেকে কোনো দিনও ক্ষমা করতথ পারবেন বলে মনে হয়। ইশান আর কোনো কিছু না বলে সোজা তীরের ঘরের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়। তীরের ঘরের সামনে আসতেই তীরের কন্ঠস্বর ভেসে আসে।

–বলচ্ছি তো এই বিয়ে আমি করবো না। এই ইশান ফরাজীকে আমি জীবনেও বিয়ে করবো না। ওনি পেয়েছেনটা কি ওনি যা বলবেন আমাকে তাই করতে হবে।

তীর পেছন ফিরে এই কথাগুলা বলছে তাই ইশানকে লক্ষ্য করে নি। ইশান ঘরে ডুকদ ইশা, নীরা আর কেয়াকে ইশারা করে ঘর থেকে বের হতে। তারাও ইশানের কথা মতো বের হয়ে যায়। ওরা বের হতেই ইশান দরজার সিটকানি লাগিয়ে দেয়। সিটকানি লাগানোর শব্দ শুনে তীর সামনে ফিরতেই ইশানকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়। এই লোক তার ঘরে কখন আসলো? তীর যতো অন্য কারোর সামনে ফটরফটর করুক না কেন ইশানের সামনে সে একটা ভিজে বিড়াল। ভ’য়টা আজকে আরো বেশি পাচ্ছে তার কারণ হলো ইশান দু ঘন্টা যাবত ধরে তাকে ৫০+ ফোন আর ১০+ মেসেজ দিয়েছে কিন্তু তীর বার বার সেটা অগ্রাহ্য করেছে। তীর কাপাকাপা গলায় বলে।

–আপনি! আপনি এখানে কি করছেন?

ইশান কোনো কথা না বলে চুপচাপ একটা চেয়ার দরজার সামনে এনে পায়ের উপর পা তুলে বসে, পাছে যদি তীর আবার দরজা খুলে পালিয়ে যায় তাই এই পদ্ধতি। ইশানের কার্যক্রম তীর ভ্রু-কুচকে দেখে। ইশান চেয়ারের হাতলে হাত রেখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁট ঘষছে আর তীরের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। ইশানের এমন চাওনি দেখে তীর শুকনো ঢোক গিললো। এই এমন অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছে কেন? আগে তো এভাবে তাকাতো না তাহলে আজ কি হলো? তীর নিজেকে আরো একটু গুটিয়ে‌ নিয়ে আমতা আমতা করে বলে।

–এ.. এভ… ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন হুম?

ইশান “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে।

–নট ব্যাড! এতোটাও বাজে লাগছে না দেখতে।

–কি.. কি বাজে লাগছে না দেখতে?

ইশান এগোতে এগোতে বলে।

–তোকে এতোটাও বাজে লাগছে না আমার চয়েস করা লেহেঙ্গাটাতে বরং আরো সুর্দশনী আর আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে।

ইশানকে এগোতে দেখে তীর পিছাতে পিছাতে বলে।

–আপনি এভাবে এগিয়ে আসছেন কেন?

–তুই পিছিয়ে যাচ্ছিস, তাই তো আমাকে তোর দিকে এগিয়ে আসতে হচ্ছে।

তীর পিছুতে পিছুতে দেয়ালের সাথে আটকে যায়। তীর সাইড কেটে সরে যেতে নিলে ইশান দু হাত দিয়ে বন্দী করে নেয় তীরকে। তীর চইলেও ইশানের বাহুডোর থেকে সরে যেতে পারছে না। ইশান তীরের মায়বী মুখশ্রীতে তাকিয়ে আছে। তীর ইশানের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে মিনমিন গলায় বলে।

–কি সমস্যা আপনার?

ইশানের কন্ঠস্বর এবার কঠিন শুনা গেলো।

–সমস্যা আমার না তোর।

–আ… আমার কোনো সমস্যা নেই।

–তাহলে এমন করচ্ছিস কেন?

–কেমন করছি?

–তীর আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না।

–আমি কারোর ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছি না।

–নিচ্ছিস! তুই‌ আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিস। তোকে আমি কতোগুলা কল দিয়েছি হিসাব আছে তোর, একটাও ধরার প্রয়োজনবোধ করলি না এতটাই পর হয়ে গেছি আমি তোর কাছে।

–দুরে সরুন আমার কাছ থেকে।

ইশান বাকা হেসে তীরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–কাছে যখন এসেছি দুরে তো সরবো না জান। বরং এবার আরো কাছে আসবো তোর ধীরে-ধীরে, একটু-একটু করে।

মুছরে উঠে তীরের তল পেটে এমন কথা। গলা শুকিয়ে আসছে। বুকের ধড়ফড়ানিটা ক্রমশ বাড়ছে। ধম আটকে আসছে। শিরদাঁড়া বয়ে যাচ্ছে অসহনীয় এক অনুভতি। তীরের এমন অবস্থা দেখে ইশান ঠোঁট কাঁমড়ে হাসে। এই মেয়ের একটু কাছে আসতেই এই অবস্থা এর থেকে বেশি কিছু করতে গেলে তো অজ্ঞান হয়ে যাবে। তীরকে আরেকটু জ্বালাতন করার জন্য ইশান মোহনীয় কন্ঠে বলে।

–তুই কি চাস তোকে বিয়ে না করে তোর কাছে আসতে বলতো।

তীর বড়বড় চোখ করে তাকায় ইশানের দিকে। ইশান পুনরায় বলতে শুরু করে।

–দেখ তুই চাইলে আমরা এক্ষুণি বাসরটা করে ফেলতি পারি। বন্ধ করে তুই আর আমি এক বে….

তীর সাথে সাথে দু কান চেপে ধরে বলে।

–চুপ করুন।

–তুই তো আমার মেইন কথাটাই শুনলি না।

–আপনার অসভ্য কথাবার্তা শুনার কোনো দরকার নেই আমার।‌ তাই দয়া করে চুপ করুন।

–ঠিক আছে চুপ করলাম, বললাম না আর অসভ্য কথাবার্তা সেটা না হয় বিয়ের পরের জন্য তুলা থাকা।

তীর ইশানের দিকে তাকায়। ইশান এবার নিজের কন্ঠ কঠিন রেখে‌ বলে।

–চুপচাপ বিয়েতে মত দিবি। একটু পর কাজী আসবে তোর‌ ঘরে আর তিন কবুল পড়বি।

তীর রে’গে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান বলে।

–যেটা বলছি সেটা করবি তীর।

বলেই বেরিয়ে যায় ইশান ঘর থেকে। ইশান বের হতেই তীর ইশানকে ভেঙ্গিয়ে বলে।

–যেটা বলছি সেটা করবি। কচু করবো।

_______

শেষমেষ তীরকে রাজি হতে হলো এই বিয়েতে। যেখানে দু বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ এই বিয়েতে রাজি‌ সেখানে তীরকে এমন বাচ্চামোতে বানায়। তাই সবার মন রাখতে তীর ইশানকে বিয়ে করতে রাজি হলো। শরীয়ত মোতাবেক আর আইনগত ভাবে‌ ইশানের স্ত্রী হলো তীর। আজ থেকে তীর আর ইশান স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। আজ থেকে কেউ তাদের এই পবিত্র সম্পর্ক থেকে আলাদা করতে পারবে না। সারা জীবনের জন্য আজ থেকে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে থাকবে। যাকে পাওয়ার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করা আজ সেই‌ অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো ইশানের। এক অদ্ভুত সুখ আর শান্তি বিরাজ করছে ইশানের হৃদয়ে। মন চাইছে চিৎকার করে সারা শহরকে জানিয়ে দিতে তার সুখ পাখিটা তার হয়েছে তার জীবনের সাথে জড়িত হয়েছে।

এবার পালা আয়নাতে দু জনের মুখ দেখা। তীর আর ইশানকে পাশাপাশি বসানো হলো তবে দুজনের মধ্যখানে একটা বালিশ রাখা। দু জনের মুখের সামনে আয়না ধরা হলো। ইশান অনিমেষ ভঙ্গিতে আয়নাতে তাকিয়ে রইলো তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর দিকে। অন্য দিকে তীর লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তিন কবুল বলার পর কেন তীরের লজ্জাটা একটু বেশিই বেড়ে গেছে চাইলেও চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। এর মাঝে একজন ইশানকে বলে।

–আয়নাতে কি দেখো ইশান?

ইশানের ধ্যান নেই সে তো তার লজ্জা রাঙা বধূকে দেখতে ব্যস্ত। রিফাত ইশানের কাঁধে চাপড় মেরে বলে।

–কিরে ব্যাটা! কোথায় হারিয়ে গেলি কিছু তো বল।

ইশান রিফাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে পুনরায় আয়নাতে দৃষ্টি নিবন্ধ করে বলে।

–আমার নীল আকাশের ব্যক্তিগত চাঁদটাকে। যে চাঁদকে ছোঁয়ার জন্য চার বছর কেন হাজার বছর হলেও আমি তার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি। কিন্তু সেই চাঁদটাকে আমার হতেই হবে যে করেই হোক। কারণ তাকে ছাড়া যে আমি নিঃস্ব।

তীর এবার চোখ তুলে আয়নার দিকে তাকায়। মুহূর্তে চোখাচোখি হলো দুজনের। ইশানের চোখ মুখে ফুটে উঠছে আকুলতা। আজ ইশানের এই গভীর চোখের ভাষাটা তীর কিভাবে যেন ধরে ফেলেছে। তীরের বুক কেঁপে উঠে আর বেশিক্ষণ ইশানের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না সাথে সাথে নজর ফিরিয়ে নেয়। ইশানের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে মিষ্টি হাসির রেখা। তার লজ্জাবতী বউ কি খুব বেশি লজ্জা পাচ্ছে। কথায় আছে লজ্জা নারীর ভূষণ আর সেই নারীর লজ্জাই পারে একজন পরুষকে ঘায়েল করতে।

#চলবে______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫৩ (নতুন সম্পর্কের সূচনা)

নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে আহমেদ ভিলার চারিদিক। একটু আগের আনন্দপূর্ণ পরিবেশ এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে। আয়েশা সুলতানার পাশেই নেহা বেগম আর কেয়া দাঁড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে কে কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না। সোহেল ফরাজী আজিজুল আহমেদকে বলেন।

–ভাইসাব আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। এটা নিয়ে এতো চিন্তা করার কিচ্ছু হয় নি।

আজিজুল আহমেদ কোনো কথা বলছেন না। এর মাঝে অভি মায়ের কাছে এসে বলে।

–মা আজকে কি আপুর বিয়ে হবে না। সবাইত তো এক এক করে চলে যাচ্ছে।

আয়েশা সুলতানা অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলের দিকে তাকায়। আজ তার জন্যই এই পরিস্থিতি কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না আকাশের এই‌ কর্মকান্ড গুলা সামনে আনলো কে? আর কেই বা ঐশী নামের মেয়েটাকে খবর দিলো। আয়েশা সুলতানা ঐশীর দিকে তাকাতেই ঐশী মুচকি হেসে আয়েশা সুলতানার কাছে এসে বলে।

–বুঝতে পারছি আপনাদের মনে অনক প্রশ্ন বইছে যে আমি কি করে এই খবরটা পেলাম। আসলে এই খবরটা আমাকে ইশান ভাই দিয়েছেন।

সবাই চমকে ঐশীর দিকে তাকায় এতো কিছু ইশান করেছে তার মানে। কিন্তু ইশান কোথায়? ঐশী আবারও বলা শুরু করে।

–প্রথমত আমি এটা বিশ্বাস করতে চায় নি যে আকাশ নতুন করে আবার কোনো মেয়েকে বিয়ে করতর যাচ্ছে। সবটা বিষয় ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু যখন সব প্রমাণ হাতে পেলাম তখন ইমিডিয়েটলি বাংলাদেশে রওয়ানা দেই বিয়েটা আটকানোর জন্য। আমাদের বিয়ের পাঁচ মাস পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এই পাঁচ মাস আমাকে ওদের পরিবারের কারো সাথে কথা বলতে দেয় নি। দু জনে ভালোবেসে বিয়ে করেছি পরিবারকে না জানিয়ে। আমি আকাশকে বলতাম তোমার পরিবারকে আগে জানাও আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা।‌ কিন্তু ও শুধু এটা বলতো ওরা পরিবারকে বুঝাতে নাকি এর আরো সময় লাগবে। কিন্তু তখন তো বুঝতে পারি নি আকাশ এতোটা বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ যে একটা বিয়ে থাকার পরেও আরেকটা বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগবে।

আজিজুল আহমেদ রে’গে গিয়ে আয়েশা সুলতানাকে বলেন।

–এই সবকিছু তোমার জন্য হয়েছে আয়েশা। আজ যদি ইশান না থাকতো বুঝতে পারছো আমার মেয়েটার কতো বড় একটা ক্ষতি হয়ে যেতো। তোমার জিদের জন্য আজ এই পরিস্থিতে পড়তে হয়েছে আমাদের। আমি আগেই বলেছিলাম সব কিছু জেনে শুনে আগে পা বাড়াও কিন্তু তোমার এক কথা তোমার বান্ধবীর ছেলে খুব ভালো। আমারেই ভুল হয়েছে তোমার কথায় চলা।

শাপলা বেগম রে’গে বলেন।

–আজিজুল চুপ কর বাবা। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন এটা নিয়ে মতামাতি করলে চলবে না। সব কিছু এখন সামাল দিতে হবে। বাইরের মানুষগুলা এসব কথা শুনলে সারা এলাকা রটে যাবে তখন কিন্তু হিতে বিপরীত হবে।

–কি করবো মা এখন আমি? আমার ছোট্ট মেয়েটা….

শাপলা বেগম গম্ভীর গলায় বলেন।

–যা করার আমিই করবো তোকে কিছু করতে হবে না।

______

আকাশ গেইট থেকে বের হতে নিলেই ইশানের মুখোমুখি হয়। ইশানের মুখে বাকা হাসি লেগে আছে। আকাশ ইশানকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে ইশান বলে উঠে।

–ওয়েট মিস্টার আকাশ শেখ। আপনার সাথে আজ সারাদিন একবারও দেখা হয় নি এখন দেখা হলো আর আপনি আমাকে এড়িয়ে চলে‌ যাচ্ছেন সেটা কি ভদ্রতার ভেতরে পড়ে না।

আকাশ রা’গী চোখে তাকায় ইশানের পানে। ইশান মুচকি হেসে আকাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে‌‌ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–আগেই বলেছিলাম বিয়ে করতে না আসার জন্য কিন্তু আপসোস আমার‌ কথাটা আপনি শুনলেন না। তাই আজ আপনার এমন করুণ অবস্থা।

আকাশ বিস্মিত নয়নে ইশানের দিকে তাকায়। আগেই সন্দেহ হয়েছিলো আকাশের এটার পেছনে ইশানের হাত আছে কিন্তু এটা বুঝতে পারি নি এভাবে যে ঐশীকে নিয়ে আসবে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে। ইশান আবারো বলে।

–এসব লুকোচুরি বাদ দিয়ে ঐশীর সাথে সুখে সংসার করুন মিস্টার আকাশ। কিন্তু এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে হয়তো ঐশী আপনার জীবনে আর ফিরে আসবে না। একজন প্রতারকের সাথে একটা মেয়ে সারা জীবন কিভাবে কাটাবে বলুন। আপনার না আত্মসম্মান বলতে কোনো বস্তু নেই কিন্তু তার তো আত্মসম্মান বলতে একটা বস্তু আছে নাকি।

ইশান আর কিছু না বলে পকেটে দু হাত গুজে শিস বাজাতে বাজাতে আহমেদ ভিলার ভেতরে চলে যায়। আকাশ রা’গী নজরে এক পলক ইশানের দিকে তাকায়।

______

–আমার নাতনির বিয়ে আজকেই হবে! আর সেটাও একটা ভালো, ভদ্র, মর্জিত একজন ছেলের সাথে।

শাপলা বেগমের দিকে সবাই চেয়ে আছে অবাক নয়নে। কার সাথে তীরের বিয়ে দেওয়ার কথা বলছ? নেহা বেগমের ভ’য়টা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে ওনি তো ভেবে রেখেছেন পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হলে ইশান আর তীরের বিয়ের প্রস্তাব দিবে। কিন্তু এর আগেই শাপলা বেগম তীরের বিয়ের কথা বলে ফেলেছেন। আজিজুল আহমেদ বলেন।

–কার কথা বলছো তুমি মা?

–আমাদের সকলের আদরের ইশান। ইশানেই তীরের যোগ্য স্বামী হতে পারবে।

সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে এই কথাটা শুনে। সবাই তো এটাই চাইছিলো ইশানের সাথে যেন তীরের বিয়েটা হয়। কিন্তু কেউ সাহস পাচ্ছিলো না কথাটা বলার। ইশা তো খুশিতে চিৎকার করে উঠে আর দৌঁড় দেয় তীরের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে ইশান সদর দরজাতে পা রাখতেই শপলা বেগমের বলা কথাটা শুনে থমকে‌ যায়। তার এতো দিনের বসনা তাহলে আজ পূরণ হতে চলেছে সে আজ সফল হয়েছে। ইশানের বুকের মাঝ থেকে যেন এক ভারী পাথর সরে গিয়েছে। চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। অভি ইশানকে দেখা মাত্রই ইশান ভাইয়া বলতে বলতে ইশানের কোমড় জড়িয়ে ধরে।

_____

আহমেদ ভিলার বিষাদময় পরিবেশ আবারো উৎসবমূখর পরিবেশে পরিণত হয়েছে। ইশান আর তীরের বিয়ের আয়োজন শুরু হচ্ছে নতুন করে। ইশান শুভ্র রঙের একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়ছে তার পাশে রিফাত বসে ইশানকে প্রচুর জ্বালাচ্ছে এটা সেটা বলে। আর ইশান তা মুখ বুজে সহ্য করছে আর ফোন টিপছে কিন্তু মুখে রয়েছে চিন্তার চাপ। রিফাত ইশানের চিন্তিত চেহারা দেখে বলে।

–কি হয়েছে মুখটা এমন ভার করে রেখেছিস? এখন তো খুশির দিন।

–কিছুটা একটা ঘটতে চলেছে রিফাত।

রিফাত ভ্রু কুচ করে বলে।

–কি ঘটতে চলেছে?

–জানি না।

ঠিক তাই হলো সবার দিক থেকে সবকিছুই ঠিকঠাক থাকলেও বাদ সাজলো তীরের বলা একটা কথা সে ইশানকে বিয়ে করবে না কোনো মতেই না। তীরের এমন কথা শুনে সবাই ভীষণ অবাক হয়। এই কথাটা শুনা মাত্রই ইশানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। স্টান দাঁড়িয়ে পড়ে ইশান বসা থেকে। তীরকে পাওয়ার জন্য এতো কাঠখড় পোড়ালো আর এখন এই মেয়ে বলছে বিয়ে করবে না। মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি ও বিয়ে করবে ওর ঘাড়ও বিয়ে করবে। ভীমরতী ধরেছে এই মেয়ের, এই‌ মেয়রে ভীমরতী যদি ইশান আজকে না ছুটিয়েছে তাহলে‌‌ আজ থেকে তার নাম ইশান ফরাজী না। ইশানের মেজাজ আজ সপ্তমে ছড়ে গেছে। ইশান গম্ভীর গলায় বড়দের উদ্দেশ্য বলে।

–আমি তীরের সাথে একান্তে কথা বলতে চাই যদি আপনাদের কারোর কোন সমস্যা না থাকে।

শপলা বেগম বলেন।

–না নানা ভাই কোনো সমস্যা থাকবে কেন? তুমি যাও ওর সাথে কথা বলে সবটা ঠিক করে নাও।

ইশান দু কদম এগুতেই আয়েশা সুলতানা ইশানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন।

–মেয়েটা তোমার উপর অভিমান করেছে ইশান। তাই তোমার যে করেই হোক ওর অভিমান কমাতে হবে। পারলে তুমিই পারবে।

–চিন্তা করবেন না আন্টি আমি ওর সকল রা’গ, অভিমান, হাসি, কান্না, দুঃখের দায়িত্ব নিলাম আজ থেকে।

আয়েশা সুলতানা প্রতি উত্তরে মুচকি হাসি দেয়। ইশানের উপর তার পুরোপুরি আস্থা আছে। মাঝখানে শুধু একটা ভুল কাজ করে ফেলেছে। যেটার জন্য নিজেকে কোনো দিনও ক্ষমা করতথ পারবেন বলে মনে হয়। ইশান আর কোনো কিছু না বলে সোজা তীরের ঘরের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়। তীরের ঘরের সামনে আসতেই তীরের কন্ঠস্বর ভেসে আসে।

–বলচ্ছি তো এই বিয়ে আমি করবো না। এই ইশান ফরাজীকে আমি জীবনেও বিয়ে করবো না। ওনি পেয়েছেনটা কি ওনি যা বলবেন আমাকে তাই করতে হবে।

তীর পেছন ফিরে এই কথাগুলা বলছে তাই ইশানকে লক্ষ্য করে নি। ইশান ঘরে ডুকদ ইশা, নীরা আর কেয়াকে ইশারা করে ঘর থেকে বের হতে। তারাও ইশানের কথা মতো বের হয়ে যায়। ওরা বের হতেই ইশান দরজার সিটকানি লাগিয়ে দেয়। সিটকানি লাগানোর শব্দ শুনে তীর সামনে ফিরতেই ইশানকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়। এই লোক তার ঘরে কখন আসলো? তীর যতো অন্য কারোর সামনে ফটরফটর করুক না কেন ইশানের সামনে সে একটা ভিজে বিড়াল। ভ’য়টা আজকে আরো বেশি পাচ্ছে তার কারণ হলো ইশান দু ঘন্টা যাবত ধরে তাকে ৫০+ ফোন আর ১০+ মেসেজ দিয়েছে কিন্তু তীর বার বার সেটা অগ্রাহ্য করেছে। তীর কাপাকাপা গলায় বলে।

–আপনি! আপনি এখানে কি করছেন?

ইশান কোনো কথা না বলে চুপচাপ একটা চেয়ার দরজার সামনে এনে পায়ের উপর পা তুলে বসে, পাছে যদি তীর আবার দরজা খুলে পালিয়ে যায় তাই এই পদ্ধতি। ইশানের কার্যক্রম তীর ভ্রু-কুচকে দেখে। ইশান চেয়ারের হাতলে হাত রেখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁট ঘষছে আর তীরের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। ইশানের এমন চাওনি দেখে তীর শুকনো ঢোক গিললো। এই এমন অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছে কেন? আগে তো এভাবে তাকাতো না তাহলে আজ কি হলো? তীর নিজেকে আরো একটু গুটিয়ে‌ নিয়ে আমতা আমতা করে বলে।

–এ.. এভ… ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন হুম?

ইশান “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে।

–নট ব্যাড! এতোটাও বাজে লাগছে না দেখতে।

–কি.. কি বাজে লাগছে না দেখতে?

ইশান এগোতে এগোতে বলে।

–তোকে এতোটাও বাজে লাগছে না আমার চয়েস করা লেহেঙ্গাটাতে বরং আরো সুর্দশনী আর আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে।

ইশানকে এগোতে দেখে তীর পিছাতে পিছাতে বলে।

–আপনি এভাবে এগিয়ে আসছেন কেন?

–তুই পিছিয়ে যাচ্ছিস, তাই তো আমাকে তোর দিকে এগিয়ে আসতে হচ্ছে।

তীর পিছুতে পিছুতে দেয়ালের সাথে আটকে যায়। তীর সাইড কেটে সরে যেতে নিলে ইশান দু হাত দিয়ে বন্দী করে নেয় তীরকে। তীর চইলেও ইশানের বাহুডোর থেকে সরে যেতে পারছে না। ইশান তীরের মায়বী মুখশ্রীতে তাকিয়ে আছে। তীর ইশানের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে মিনমিন গলায় বলে।

–কি সমস্যা আপনার?

ইশানের কন্ঠস্বর এবার কঠিন শুনা গেলো।

–সমস্যা আমার না তোর।

–আ… আমার কোনো সমস্যা নেই।

–তাহলে এমন করচ্ছিস কেন?

–কেমন করছি?

–তীর আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না।

–আমি কারোর ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছি না।

–নিচ্ছিস! তুই‌ আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিস। তোকে আমি কতোগুলা কল দিয়েছি হিসাব আছে তোর, একটাও ধরার প্রয়োজনবোধ করলি না এতটাই পর হয়ে গেছি আমি তোর কাছে।

–দুরে সরুন আমার কাছ থেকে।

ইশান বাকা হেসে তীরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–কাছে যখন এসেছি দুরে তো সরবো না জান। বরং এবার আরো কাছে আসবো তোর ধীরে-ধীরে, একটু-একটু করে।

মুছরে উঠে তীরের তল পেটে এমন কথা। গলা শুকিয়ে আসছে। বুকের ধড়ফড়ানিটা ক্রমশ বাড়ছে। ধম আটকে আসছে। শিরদাঁড়া বয়ে যাচ্ছে অসহনীয় এক অনুভতি। তীরের এমন অবস্থা দেখে ইশান ঠোঁট কাঁমড়ে হাসে। এই মেয়ের একটু কাছে আসতেই এই অবস্থা এর থেকে বেশি কিছু করতে গেলে তো অজ্ঞান হয়ে যাবে। তীরকে আরেকটু জ্বালাতন করার জন্য ইশান মোহনীয় কন্ঠে বলে।

–তুই কি চাস তোকে বিয়ে না করে তোর কাছে আসতে বলতো।

তীর বড়বড় চোখ করে তাকায় ইশানের দিকে। ইশান পুনরায় বলতে শুরু করে।

–দেখ তুই চাইলে আমরা এক্ষুণি বাসরটা করে ফেলতি পারি। বন্ধ করে তুই আর আমি এক বে….

তীর সাথে সাথে দু কান চেপে ধরে বলে।

–চুপ করুন।

–তুই তো আমার মেইন কথাটাই শুনলি না।

–আপনার অসভ্য কথাবার্তা শুনার কোনো দরকার নেই আমার।‌ তাই দয়া করে চুপ করুন।

–ঠিক আছে চুপ করলাম, বললাম না আর অসভ্য কথাবার্তা সেটা না হয় বিয়ের পরের জন্য তুলা থাকা।

তীর ইশানের দিকে তাকায়। ইশান এবার নিজের কন্ঠ কঠিন রেখে‌ বলে।

–চুপচাপ বিয়েতে মত দিবি। একটু পর কাজী আসবে তোর‌ ঘরে আর তিন কবুল পড়বি।

তীর রে’গে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান বলে।

–যেটা বলছি সেটা করবি তীর।

বলেই বেরিয়ে যায় ইশান ঘর থেকে। ইশান বের হতেই তীর ইশানকে ভেঙ্গিয়ে বলে।

–যেটা বলছি সেটা করবি। কচু করবো।

_______

শেষমেষ তীরকে রাজি হতে হলো এই বিয়েতে। যেখানে দু বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ এই বিয়েতে রাজি‌ সেখানে তীরকে এমন বাচ্চামোতে বানায়। তাই সবার মন রাখতে তীর ইশানকে বিয়ে করতে রাজি হলো। শরীয়ত মোতাবেক আর আইনগত ভাবে‌ ইশানের স্ত্রী হলো তীর। আজ থেকে তীর আর ইশান স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। আজ থেকে কেউ তাদের এই পবিত্র সম্পর্ক থেকে আলাদা করতে পারবে না। সারা জীবনের জন্য আজ থেকে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে থাকবে। যাকে পাওয়ার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করা আজ সেই‌ অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো ইশানের। এক অদ্ভুত সুখ আর শান্তি বিরাজ করছে ইশানের হৃদয়ে। মন চাইছে চিৎকার করে সারা শহরকে জানিয়ে দিতে তার সুখ পাখিটা তার হয়েছে তার জীবনের সাথে জড়িত হয়েছে।

এবার পালা আয়নাতে দু জনের মুখ দেখা। তীর আর ইশানকে পাশাপাশি বসানো হলো তবে দুজনের মধ্যখানে একটা বালিশ রাখা। দু জনের মুখের সামনে আয়না ধরা হলো। ইশান অনিমেষ ভঙ্গিতে আয়নাতে তাকিয়ে রইলো তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর দিকে। অন্য দিকে তীর লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তিন কবুল বলার পর কেন তীরের লজ্জাটা একটু বেশিই বেড়ে গেছে চাইলেও চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। এর মাঝে একজন ইশানকে বলে।

–আয়নাতে কি দেখো ইশান?

ইশানের ধ্যান নেই সে তো তার লজ্জা রাঙা বধূকে দেখতে ব্যস্ত। রিফাত ইশানের কাঁধে চাপড় মেরে বলে।

–কিরে ব্যাটা! কোথায় হারিয়ে গেলি কিছু তো বল।

ইশান রিফাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে পুনরায় আয়নাতে দৃষ্টি নিবন্ধ করে বলে।

–আমার নীল আকাশের ব্যক্তিগত চাঁদটাকে। যে চাঁদকে ছোঁয়ার জন্য চার বছর কেন হাজার বছর হলেও আমি তার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি। কিন্তু সেই চাঁদটাকে আমার হতেই হবে যে করেই হোক। কারণ তাকে ছাড়া যে আমি নিঃস্ব।

তীর এবার চোখ তুলে আয়নার দিকে তাকায়। মুহূর্তে চোখাচোখি হলো দুজনের। ইশানের চোখ মুখে ফুটে উঠছে আকুলতা। আজ ইশানের এই গভীর চোখের ভাষাটা তীর কিভাবে যেন ধরে ফেলেছে। তীরের বুক কেঁপে উঠে আর বেশিক্ষণ ইশানের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না সাথে সাথে নজর ফিরিয়ে নেয়। ইশানের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে মিষ্টি হাসির রেখা। তার লজ্জাবতী বউ কি খুব বেশি লজ্জা পাচ্ছে। কথায় আছে লজ্জা নারীর ভূষণ আর সেই নারীর লজ্জাই পারে একজন পরুষকে ঘায়েল করতে।

#চলবে______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here