#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৪৬ (প্রথমাংশ)
#হুমাইরা_হাসান
ধুকপুকানির শব্দ টা স্পষ্ট চড়াঘাত করছে কানের পর্দায়। ঢিপঢিপ করে জানান দিচ্ছে একবুক স্বপ্ন আর অনুভূতিময় আবেগ গুলো। এতদিনে! এতদিনে ও কি সত্যিই এতদূর আসতে পারলো? এত ঝড় ঝাপটা, প্রাণের উপর আঁছড়ে পরা বিপদ, ঝক্কি গুলো সামলে ও তবে স্বপ্ন সারথি’র মুখোমুখি! হাত দুটোও যেনো প্রবল উত্তেজনায় কেঁপে কেঁপে উঠছে। অনুভূতিটা এতো সংবেদনশীল, সুগ্রাহী শুধু এই জন্য না যে ও স্বপ্নের শেকড়টা আগলে ধরতে চলেছে,বরং ভেতরটা তো খাঁ খাঁ করে উঠছে সেসব চেহারা গুলো মনে করে, যারা একবুক আশা বেঁধেছিলো ওর স্বপ্ন পূরণের সাথী হবে বলে, ওর স্বার্থকতায় অবদান রাখবে বলে।
আজ তারা কোথায়! বুকভরা যন্ত্রণা, আর আহাজারি, অপূর্ণতা নিয়ে মাটিতে মিশে গেছে যে তারা। টুপটাপ এক,দুই করে অজস্র নোনাজল গড়িয়ে পড়লো পরনের অ্যাপ্রোন টার ওপর। পরক্ষণেই কেও অশ্রুভেজা মুখটাকে দুহাতের আঁজলে আগলে নিলো। মোহর চোখ বুজে নিলো কান্নার দাপটে, নিঃশব্দে ভিজিয়ে নিলো নিজের গাল,বুক সহ ধরে রাখা হাতটা। মেহরাজ আরেকটু এগিয়ে এলো, মোহরের অশ্রুভেজা দু গালে পরপর দুবার অধর ছুঁয়ে দিলো গভীর ভাবে, সিক্ত পাপড়িতে ঠোঁট চেপে ধরে বলল
– একদম না মোহ। আপনার আব্বা আম্মা আপনার সাথে না থাকতে পারলেও তাদের দোয়া,ভালোবাসা সর্বদা আপনার সাথে আছে। নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে পূরণ করে দিবেন তাদের সকল স্বপ্ন। কিন্তু কাঁদবেন নাহ, কি বলেছি মনে নেই? আনন্দ গুলো সব আপনার, কষ্ট আর দুঃখগুলোর ভার নাহয় আমার থাক!
মোহর চোখ তুলে তাকালো মেহরাজের মুখটাতে। স্নিগ্ধ, শান্ত, সুপুরুষের শীতল শব্দ,বাক্য গুলো একটা করে প্রাণসঞ্চার করে দেয় মোহরের বুকের মাঝে। স্নেহ,আদরটুকুতে আরেকটু অভিলাষী হয়ে ঝাপিয়ে পড়লো বুকখানার মাঝে, পিঠের উপর হাত দুটো চেপে বুকের ভেতর মুখ ডুবিয়ে ফুঁপিয়ে বলল
– আপনি কেনো এলেন আমার জীবনে রুদ্ধ? কেনো! আমার বহুকষ্টে নিজেকে শক্ত করে নেওয়া খোলস টা দুমড়ে মুচড়ে চুরচুর করে দিয়েছেন। আপনি এতটা কেনো আমাকে মিশিয়ে নিলেন রুদ্ধ? আপনাকে ছাড়া একটা কদম ও আমার কাছে এক একটা ক্রোশ সমান মনে হয়। বাবা-মাকে ছাড়া তো টিকে গেলাম, আপনাকে ছাড়া আমি একটুও বাঁচতে পারবো নাহ
মেহরাজ মৃদু হাসলো। মেয়েটা দিন দিন এতটা জড়িয়ে যাচ্ছে ওর সাথে মেহরাজের এখন নিজেকে সামলাতে ভীষণ পীড়ন হয়। এই যে মেয়েটা সময়ে অসময়ে জড়িয়ে ধরে, বুকের ভেতর মুখ গুঁজে দেয়,,এতে মেহরাজের ঠিক কোন জায়গা টায় জ্বলন ধরে ও কি বোঝে! তার মোহ কে নিজের ভেতর শুষে নেওয়ার অদম্য অনুভূতি গুলো যে ওকে ক্ষণে ক্ষণে ক্ষতবিক্ষত করে তা কি বোঝে মোহ? মেহরাজ দুবাহুতে হাত রেখে আলগা করে নিলো মোহরকে, ওর মুখের কাছে ঝুকে এসে বলল
– আপনাকে ছেড়ে আমি যাবো কার কাছে?
মোহ.. আপনি ছাড়া কি আদও আমার কোনো ঠিকানা আছে?
মোহর প্রত্যুত্তরে শুধু নিঃশব্দেই রইলো। মেহরাজ স্টেথোস্কোপটা নিজ হাতে মোহরের গলায় পড়িয়ে দিলো, খানিক ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে থেকে বলল
– উহম,,এবার একটু ডাক্তার ডাক্তার লাগছে বুঝলেন। না তো এভাবে চোখের পানি,নাকের পানি এক করলে শুধুই ছিচকাঁদুনেই লাগে তো
মোহর ভ্রু কুচকে নিলো। দুহাতে চোখ মুছে কপট রাগ দেখিয়ে বলল
– আমি ছিচকাঁদুনে? আমাকে তাই বললেন?
– কই আপনাকে? না তো! আর যাই বলেন আবার ভীষণ বিবিভক্ত। তার নামে এমন দুষ্টু কথা বলতেই পারিনা, ছি ছি
মোহর না চাইতেও হেসে ফেলল।মেহরাজের কথা বলার ধরণ টা অনেকটা ছোটদের মতোই লাগলো। মোহরের হাসি দেখে মেহরাজ বলল
– হ্যাঁ। ঠিক এইভাবে লক্ষী মেয়ের মতো কাজে যান তো, সকাল করে বিবিজানের হাসিমুখ না দেখলে দিন ভালো যায় না বুঝলেন!
মোহর ঠোঁট চেপে হাসলো, আস্তে করে গাড়িটার দরজা একহাতে খুলে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো মেহরাজের দিকে, মেহরাজ চাবি ঘুরিয়ে ঘাড় কাৎ করে তাকালেও পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগেই থেমে গেলো। হাতের আঙুল দুটো চাবির সাথেই আঁটকে গেলো, ধূসর বর্ণা আখিযুগল ঠিক সেই অবস্থাতেই থমকে রইলো। শুধু কানের পর্দায় বারংবার প্রতিধ্বনিত হলো ছোট্ট শব্দগুলো৷ “শুকরিয়া আব্রাহাম সাহেব” ।
প্রতিমাস্বরুপ চেহারাতে নিজের অজান্তেই হাতটা গালের বাঁ পাশটায় চলে গেলো। ভেজা ভেজা ঠোঁট দুটির নরম স্পর্শটা যেনো এখনো লেগে আছে। মোহর ততক্ষণে দরজা ধাক্কে চলে গেছে অনেকখানি দূরে। এলোমেলো অনুভূতির পিঞ্জরাস্থিতে আবদ্ধ মনটার ইচ্ছেতে সাঁয় দিয়ে মোহর এমন কাজটা করে ফেলবে মেহরাজ ভাবতেও পারেনি, একটা বার ও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো না মোহরের যাওয়ার দিকে, যেই ঝড়টা বুকের মাঝে মেয়েটা ঠোঁটের ছোট্ট স্পর্শে তুলে দিয়ে গেছে, তা ওই চেহারাতে তাকালে আর আটকানো সম্ভব হবে নাহ, মেহরাজের গালের উপরে হাতটা রেখেই অস্থির স্বরে বলল
– বড্ড জালাতন করছেন ইদানীং মিসেস আব্রাহাম। আপনার জন্য অতিষ্ট হয়ে বাঁধ ভাংলে সামলাতে পারবেন না তোহ!
বলেই ইঞ্জিনের দাপটে বিকট শব্দে ছুটিয়ে নিলো চার চাকার পিচ ব্ল্যাক গাড়িটা। স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে মুহুর্তেই হারিয়ে গেলো দৃষ্টি সীমানার বাইরে।
.
শহরের অন্যতম ব্যায়বহুল হসপিটাল। নামি দামি ডাক্তারসহ, এখানে চিকিৎসার্থে আসা মানুষ গুলোও পয়সার হিসেবে বেশ দাপটধারী। মেডিক্যালে পড়বে আর এইরকম সনামধন্য হসপিটালে কার্যরত হবার স্বপ্ন পুষবে না এমন মানুষ তো নেই। মোহর ও তাদের ই দলে, ও বরাবরই চেয়েছিলো যাতে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ টা এইখানেই পাই। আর ওর দোয়া কবুল হয়ে সেই সুযোগ টাকেই হাতের মুঠোয় পেয়ে গেলো মোহর।
ভেতরে ঢুকতেই রিসিপশনের কাছে শ্রীতমাকে দেখতে পেলো। মোহরকে দেখেই এগিয়ে এলো ও, উত্তেজিত হয়ে বলল
– এতক্ষণে আসলি, জানিস আমার কতো চিন্তা হচ্ছিলো। আমিতো ভাবলাম আমি আবার স্বপ্ন দেখেই এখানে চলে এলাম নাকি। আমিতো কাল পূজো ও দিয়েছি এর জন্য। তুই এলি, আমার বুকটা এখন হালকা হলো
শ্রীতমার ভেতরের চাপা উত্তেজনা গুলো যেনো আর বাঁধ মানছে না। মোহর আশপাশে তাকিয়ে বলল
– আস্তে আস্তে, এতটা এক্সাইটেড হোস না। এটা হসপিটাল। জোরে কথা বললে প্রথম দিনেই আমরা রেড ফ্ল্যাগ পাবো।
শ্রীতমা ঘনঘন ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। দুজন মিলে এগিয়ে গেলো ওদের কাঙ্ক্ষিত জায়গা টিতে। শুরুতেই যেই চেহারা টা আগে চোখে পড়লো। এই মানুষটাকে, এই চেহারাটাকে মোহর এতদিন খুঁজেছে, কোথায় ছিলো মানুষটা এতদিন! সেদিন গাড়ির ভেতর দেখার পর আর একবার ও চোখে পড়েনি!
মোহর আর শ্রীতমা এগিয়ে যেতেই স্পষ্ট গলার, নিয়মমাফিক কণ্ঠস্বরটা কানে এলো
– গুড মর্নিং, ওয়েলকাম।
মোহর আর শ্রীতমা ভদ্রতা সুলভ জবাব দিলো। ফায়াজ শরুতেই ওদেরকে নিয়ে বাকি ইন্টার্নি শিক্ষার্থীদের সাথে সবটা বুঝিয়ে দিতে দিতে ওয়ার্ড ভিজিট করালো। গ্রুপের ছেলেমেয়েদের একত্রে ওয়ার্ড চেক করিয়ে, আনলো অথরিটির মিটিং রুমে।
বলা বাহুল্য ড.ফায়াজ করিম এই হসপিটালের সিনিয়র ডক্টর, আর মোহর ওর আন্ডারেই অ্যাজ অ্যা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডক্টর হিসেবে যোগদান করবে। অথরিটি মিটিংয়ে এমনটাই ঠিক হলো। মিটিং সহ অন্যান্য ফরমালিটিস কমপ্লিট করে বেরোতে বেশ অনেক সময় পার হয়ে গেলো। ডক্টর’সরা ব্রেক এ গেলে, ফায়াজ ওর একজন সহকর্মীর সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিলো, তখনই পেছন থেকে ডাক পড়লো,
– স্যার!
ফায়াজ হাঁটা থামিয়ে দাঁড়ালো। সাথে দাঁড়ালো পাশের লোকটিও। ফায়াজকে ডাকা মানুষটার চেহারার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল ড. কে এগোনোর কথা বলে নিজে একাই এগিয়ে এলো মোহরের সামনে। মোহর ফায়াজকে বলল
– স্যার আপনাকে ফোনে পাওয়া যায়নি এতদিন
ফায়াজ খানিক নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটার সকল নাড়ি নক্ষত্র ওর ও কম জানা নেই। কতগুলো বছর ধরে দেখে আসছে, ওর যে দরকার ছিলো ফায়াজের সাথে কথা বলার তা স্পষ্টভাবে বলবে নাহ। তাই ফোনের কথাটি বলেছে, ফায়াজ গাম্ভীর্যতা বজায় রেখেই বলল
– হ্যাঁ আমি ইমার্জেন্সিতে দেশের বাইরে গেছিলাম কিছুদিনের জন্য।
মোহর হাসফাস করতে থাকলো। কি দিয়ে কিভাবে বলবে ও? তিয়াসার কথাটা জিগ্যেস করা কি উচিত হবে? তিয়াসা ফায়াজের সাথে কেনো ছিলো, ওরা কিভাবে একে অপরের সাথে পরিচিত এটা জিগ্যেস করা কি উচিত হ? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই মোহর লক্ষ্য করলো ফায়াজের চোখ মুখের গাম্ভীর্য। কথা বলার ধরণ। অন্যরকম, অচেনা লাগছে মানুষটাকে, পরক্ষণেই নিজের মত পালটে নিলো, সৌজন্য মুলক হেসে বলল
– কলেজে আপনাকে দেখিনি তাই জিগ্যেস করলাম। তেমন কিছু নয়, আপনাকে দেরী করানোর জন্য দুঃখিত স্যার।
ফায়াজ মৃদু ঘাড় নাড়িয়ে এগিয়ে যেতে নিলেও দু কদম এগিয়ে থেমে যায়। দেহ বাকিয়ে মোহরের দিকে ফিরে বলে
– সকাল ৯ টার মধ্যেই চলে আসবে কাল থেকে। তুমি আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডক্টর, ফোকাস শুধুমাত্র আমার দেওয়া কাজগুলোর ওপরেই থাকবে, ওকে?
মোহর বিব্রতবোধ করলেও প্রকাশ করলো নাহ। তবে ফায়াজ আর দাঁড়ালো নাহ। ও সরে যেতেই মোহর ও চলে আসলো অন্যদের জাগায়। সব কাজ শেষে, শ্রীতমার সাথে ফিরতে অনেকটা দেরী হয়ে গেলো।
দুজন মিলে হসপিটাল থেকে যখন বেরিয়েছে, তখন বেলা পেরিয়ে গেছে অনেকটা। শ্রীতমা আর ও একসাথে বেরিয়ে এলে বাইরে আসতেই পরিচিত একটা চেহারা দেখে শ্রীতমার চোখ চিকচিক করে উঠলো। ও মোহরকে রেখেই এগিয়ে গেলো, সউৎসাহে বলল
– এই যে আপনি! পেয়েছি, আপনি আগে বলুন কাল আমাকে ভরা রাস্তায় ওভাবে অপমান করার সাহস হলো কি করে আপনার! হ্যাঁ? কি মনে করেন নিজেকে? কাল অপমান করে হয়নি আজ এখানেও খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছেন আমাকে অপদস্ত করতে হনুমান মুখো কোথাকার!
ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় হুট করেই তীক্ষ্ণ স্বরে চমকে উঠলো অভিমন্যু। চোখের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত চেহারাটা দেখে বিস্মিত হলেও শ্রীতমার মুখ থেকে নিঃসৃত কথা গুলো শুনে বিরক্ত হয়ে গেলো। চশমাটা চোখ থেকে খুলে ধমকে বলল
– এই আপনার সমস্যা টা কোথায় হ্যাঁ? আমি যেখানেই যাই সেখানেই আগে আগে টপকে পরেন কেনো আপনি? আর সবসময় এমন চিল্লাচিল্লি করেন কেনো? মাথায় সমস্যা আছে?
শ্রীতমা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো এরূপ কথায়। ও কিছু বলবে তার আগেই অভিমন্যু আঙুল তুলে বলল
– দেখুন এটা রেপুটেড প্লেস। একদম ষাঁড়ের মতো চ্যাঁচামেচি করবেন নাহ
শ্রীতমা প্রচণ্ড রাগে, অভিমন্যুর হাতের চশমাটা একটানে ছিনিয়ে নিয়ে দু খণ্ড করে রাস্তার মাঝে ফেলে দিলো। ক্ষিপ্ত স্বরে বলল
– আমাকে যদি আর একবার ষাঁড় বলেছেন, তাহলে এই চশমার মতো আপনাকেও ভেঙে ফেলবো আমি
– আপনা…
– কি হচ্ছে এসব! কি শুরু করেছো দুজন?
তুমুল ঝগড়ার রেশ টা মাঝপথেই আঁটকে গেলো। মোহরের উপস্থিতিতে অভিমন্যু তড়িত বেগে সরে গিয়ে দাঁড়ালো। নিচু স্বরে কিছু একটা বলার প্রস্তুতি নেবে তখনই শ্রীতমা বলল
– এই যে। এই চামচা টাইপ লোকটা, কাল আমাকে ভরা রাস্তায় অপমান করেছে। লোকজনের সামনে আমার মুখের সামনে গ্লাস লাগিয়ে গাড়ি নিয়ে পালয়েছে যাযাবর লোক।
মোহর বিহ্বলিত হয়ে অভিমন্যুর দিকে তাকালো, অভি মোহরের এহেন দৃষ্টি দেখে অপ্রস্তুত হয়ে বলল
– ম্যাডাম উনি ভুল বলছেন। উনি একা যাচ্ছিলেন দেখে আমি উনাকে লিফট দিতে চেয়েছিলাম,কিন্তু তার বদলে উনি রাস্তার মাঝে চ্যাঁচামেচি শুরু করেছিল।সবাই আড়চোখে দেখছিল ব্যাপারটা, তাই আমি সরে এসেছি।
– হ্যাঁ তো আপনি কেনো আমার মুখের উপর..
– শ্রী!
মোহরের শান্তস্বরে শ্রীতমা চুপ করে গেলো। আর কিছু বলার সাহস করলো নাহ। যেহেতু এটা ঝগড়া করার পার্ফেক্ট প্লেস না তাই চুপচাপ দমে গেলো। লোকটাকে তো পরে শায়েস্তা করবে।
_________________________
ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজমান ঘরটা জুড়ে পিনপতন নীরবতা। কে বলবে একটু আগেই এই ঘরটা জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে কেও। উপরটা যতটাই শান্ত চোখ দু’টো নামিয়ে নিচে তাকালেই ফ্লোর ভর্তি ভাঙা কাঁচের টুকরো, কাগজ, সোপিচ সহ ঘরভর্তি জিনিসের বিধ্বস্ত অবস্থাটা চোখ ধাঁধিয়ে দেবে।
ঘরের এক কোণায় বসে ফোঁসফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে তিয়াসা। বা হাতটার তালু আর তার উপরের অংশ জুড়ে ব্যান্ডেজের আস্তর। সফেদ কাপড়ে ঢাকা ব্যান্ডেজের ভেতরের অবস্থাটা কতটা নির্মম,বিভৎস তা নিজ চোখে দেখা মানুষগুলোই শুধু বুঝতে পারবে, চোখ বন্ধ করে ফেলে তিয়াসা, মনে পড়ে যায় সেদিনের কথাটা
তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করে যখন গলার স্বর ভেঙে যাওয়ার অবস্থা ঠিক তখনি জ্বলন ধরা জায়গাটাতে ঠান্ডা পানি ঢেলে দেয় মেহরাজ। গলা কা’টা মুরগীর মতো ছটফট করছিলো তিয়াসা বাঁধা অবস্থাতেই। সেই অবস্থা যন্ত্রণা থেকে যেনো প্রাণ ভরা শান্তি পেলো তিয়াসা। মেহরাজ ওর ক্ষত স্থানে সাদা গুড়ো পাউডারের ন্যায় কতখানি নিউট্রিলাইজার পাউডার ছিটিয়ে দিলো। তিয়াসা প্রচন্ড বিধ্বস্ত শরীরে গা এলিয়ে দিলো, মেহরাজ তখন হিসহিসিয়ে বলল
– এবার শুধু হাতটা দিয়েই ছেড়ে দিলাম। এরপর থেকে আমার মোহকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে যে মস্তিষ্ক ছক করবে সেই মস্তিষ্কটাকেই আমি অ’কেজো করে দেবো, এ্যন্ড আই মিন ইট্
ধপ করে চোখ খুলে তাকালো তিয়াসা। সেদিনের যন্ত্রণা, কষ্ট, আত্মচিৎকার গুলো যেনো ভেতর ভেতর হুংকার দিয়ে উঠছে একটু পরপরই। খাট থেকে ফোনটা তুলে, উদ্ভ্রান্তের ন্যায় চেপে কানে ধরলো গত দুইদিনের মতো এবারও একই জবাব
‘ the number you’re trying is currently unreachable ‘
চিৎকার করে ফোনটা ছু’ড়ে ফেলল তিয়াসা, দাঁতে দাঁত চেপে বলল
– বা’স্টার্ড, কাওয়ার্ড! একবার তোকে হাতের কাছে পাই। যেই কাজটা দিয়েছিলাম সেটা তো করতে পারেইনি বরং আমাকে ম’রতে দিয়ে পালিয়েছে শুয়ো’রের বাচ্চা
.
.
.
চলমান
#হীডিংঃ পর্ব ছোট বলে অভিযোগ করবেন না। একদিন পরপর দিতে চেয়েছিলাম যেহেতু, এটাকে বোনাস ধরে নিতে পারেন।
শুকরিয়া, আসসালামু আলাইকুম ❤️
©Humu_❤️