ফানাহ্ 🖤 #পর্বসংখ্যা_৫২ #হুমাইরা_হাসান | অংশ ০১ |

0
711

#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৫২
#হুমাইরা_হাসান

| অংশ ০১ |

পুরো বাড়িটা নিস্তব্ধ পোড়োবাড়িতে পরিনত হলো যেন একটা দিনের ব্যবধানে। এমনিতেও খুব একটা প্রাণোচ্ছল বাড়ি না হলেও প্রাণের সুরটাও যেন নিমেষ হয়ে গেছে। প্রতিটি মানুষের মুখটা কালো মেঘে ছেয়ে আছে। কারো বা দুঃশ্চিতায় কারো বা ক্রোধ, ক্ষোভে। শাহারা বেগম অত্যাধিক মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সাঞ্জের শরীর টা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিধ্বংসী পরিবেশের আদলে তলিয়ে আছে পুরো আব্রাহাম ম্যানসন’টা।

শাহারা বেগমের ঘর থেকে বেরিয়েই দরজাটা ভিরিয়ে দিলো মোহর। বয়স্কা খুব বেশিই আহত হয়েছেন এহেন পরিবেশে। মোহর সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে নিল পুরো বাড়ির উদয়। এক ঘোরতর কোন্দলের রেশটুকু যেন মুড়ে ফেলেছে শোকে,কাতরে। কদম ফেলে এসে দাঁড়ালো কাঙ্ক্ষিত ঘরটার দরজার সামনে। ভীষণ সাবধানে, সন্তপর্ণে নব মুচড়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখতে পেলো চিন্তা,দুঃখের প্রলেপে ঢাকা উদ্বেগিত মুখটা। নিঃশব্দে চোখে জল মুছছে আর বোনের কপালে হাত ছুঁয়ে দিচ্ছে। ধীরপায়ে কাছাকাছি এলেই মোহরকে দেখে চোখের জল বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়লো অবলীলায়। কান্নামিশ্রিত চাপা স্বরে বলল,

– এটা কি হলো মোহর আমার বোনটার এ কোন দশা হলো! আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি এমন দিন দেখতে হবে। আমার ছোট্ট বোনটা এতো ধকল কি করে সামলাবে? ও যতই মুখে বড়ো বড়ো কথা বলুক, ও তো এখনো বড়ো হয়ে উঠতে পারেনি।

মোহর তাথই এর পাশে বসে ওর হাতটা ধরে বলল,

– কাঁদবে না আপা। কাঁদলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে বলো? তুমি নিজেকে সামলাতে না পারলে সাঞ্জে কে কি করে সামলাবে? ও জেগে থাকলে কতটা হাইপার হয়ে উঠছে দেখেছোই তো।

– ওর সারা গা জ্বরে পু’ড়ে যাচ্ছে মোহর। কয়েকবার জলপট্টি দিয়েছি কপালে, কিছুতেই কমছেনা। মা-বাবা বিকেল থেকে ওর মুখটা দেখতেও আসেনি একবার। বড়মা এসেছিলো সে বলল বাবা মা, বড় আব্বু নাকি নিষেধ করেছে বাইরের কোনো ডাক্তার আনতে। উনারা এই বিষয় টাকে কোনো ভাবেই চার দেওয়ালের বাইরে যেতে দিতে চাননা। তারা তো এই বলেই চলে গেলো, এড়িয়ে গেল, মুখ ফিরিয়ে নিলো। কিন্তু আমি কি করবো, আমি তো নিজের ছোট বোনের এই অবস্থায় মুখ ফেরাতে পারছিনা। আমার জীবনে তো এক ঝড়ে শেষ হয়েই গেছে, আমার বোনটার এমন কেনো হলো মোহর! ও এখন কি নিয়ে বাঁচবে। বাবা মায়ের যা ভাব বুঝছি ওরা খুব তাড়াতাড়ি অ্যাবোর্সন করানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবে

– শান্ত হও। আপাতত ওর সুস্থতা টা দরকার। প্রথমত পারফেক্ট ম্যাচিউরিটির আগেই কনসিভ করেছে। দ্বিতীয়ত ওর শরীর টা অনেক বেশিই অ্যাবনোরমাল হয়ে আছে এখন। ওর সুস্থতা টা খুব বেশি প্রয়োজন।

বলে উঠে ওয়াশরুমের দিকে গেলো। ক্ষানিক বাদেই ঠান্ডা পানিভর্তি একটা পাত্র এনে তাতে কাপড় ভিজিয়ে তাথইয়ের হাতে দিয়ে বলল,

– ওর সারা শরীর মুছিয়ে দাও। যতক্ষণ না তাপমাত্রা কমবে বারবার মুছিয়ে দেবে। হাত আর পায়ের তালুতে ঠান্ডা কাপড় চেপে রাখবে। আর হাই পাওয়ারের কোনো মেডিসিন দিচ্ছি না। তুমি ওর শরীর মুছিয়ে দাও আমি নাজমা খালাকে ডেকে কিছু খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

বলে তাথইকে শান্ত করে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো। নাজমাকে ডেকে সাঞ্জের জন্য গরম স্যুপ করে নিয়ে যেতে বলে ও আবারও উপরে উঠে এলো। তবে এবার আর সাঞ্জের ঘরে না, নিজের ঘরটাতেই ঢুকলো৷ বুকের ভেতরটা কেমন অসহনীয় ঠেকছে। মেহরাজ সন্ধ্যার থেকে একটা বারের জন্যেও বের হয়নি ঘর থেকে। পৃথকের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে পৃথক চলে গেলেও মেহরাজ আর কারো সাথে কোনো প্রকার কথা বলেনি।
ঘরের ভেতর টা গুমোট, আলোহীন হয়ে আছে। মোহর দরজা ঠেলে দিয়ে অন্ধকার হাতড়েই বারান্দার দিকে এগিয়ে স্লাইডিং দরজাটা ফাঁক করে দিতেই হুড়মুড়িয়ে শৈথিল্যে ভরা বাতাসে ঘরটা ভরে গেলো। বাইরের লাইটের ছোট ছোট আলোকণাও এসে পড়ছে ঘরটাতে। বারান্দা থেকে আসা মৃদু আলোতে মোহর স্পষ্ট দেখতে পেলো বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা লম্বাটে শরীর টা। বুক চিড়ে ভারী প্রশ্বাস বেরিয়ে এলো। মৃদুমন্দ পায়ে এটি গিয়ে বসলো মেহরাজের পাশে ফাঁকা রাখা জায়গাটার।
বালিশ ছাড়াই উপুড় হয়ে আছে মানুষটা। সুনসান নীরবতায় অক্লিষ্ট ঘরটায় নিঃশ্বাসের অক্রুর ফিসফিসানি ছাড়া আর কোনো শব্দের উপস্থিতি নেই। মোহর নিজের হাতটা এগিয়ে খুব আরামসে রাখলো মেহরাজের প্রসর পিঠে। নিঃশ্বাসের ওঠানামার সাথে তাল মিলিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠলো মোহরের হাতটাও। শাড়িটা একহাতে সামলে পা তুলি এগিয়ে বসলো মোহর। হাতের তালুর বিচরণ সন্তপর্ণে পিঠময় ছাড়িয়ে ঘাড় বয়ে চুলগুলোয় বিলীন হলো। খুব আদরে, আত্ততায়, যত্নে চিকন চিকন আঙুলগুলো ঘন চুলগুলোতে বুলিয়ে দিলো। এভাবেই অতিবাহিত হলো মিনিট দশেক। নিস্তব্ধতার বুক চিরলো মোহরের চিকন রিনিঝিনি গলায় স্বরে,

– সাঞ্জের জন্য খুব খারাপ লাগছে?

মেহরাজ পড়ে রইলো ঠাঁই নিঃশব্দে। যেন ঘুমে তলিয়ে যাওয়া অসাড় শরীর। মেহরাজের প্রতিক্রিয়াহীনতাকে আমলে না নিয়ে মোহর আবারও বলল,

– সাঞ্জের বাবা মায়ের মতো কি আপনিও অ্যাবোর্সন করিয়ে দিতে চান রুদ্ধ?

কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই শরীর টা কেঁপে উঠলো মোহরের। মেহরাজ বিছানা থেকে মুখ তুলে হুড়মুড়িয়ে এসে মোহরের কোলে মাথা রেখেছে। আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেলেও পরক্ষণেই স্বাভাবিক ভাবমূর্তিতে মুখ তুলে জানালার কাঁচ পেরিয়ে রাতের আকাশে তাকালো। তীব্র বিষাদে ভরা ভারিক্কী মন-মস্তিষ্কে ক্লেশ নিয়ে বলল,

– সাঞ্জে কি করে এমন ভুলটা করলো। নিজের জীবন টাকে কোন মোড়ে এনে দাঁড় করালো ও। তাও আবার এমন একজনের জন্য যে কি না . . .

শেষটুকু বলতে গিয়েও বলল না। কণ্ঠ কেঁপে উঠলো। মানুষ টার নামটা না নিতেও ক্রোধ, ঘৃণায় মুদে এলো চোখ মুখ। মেহরাজ দুহাতের করপুট ভীষণভাবে দৃঢ় করে মোহরের কোমর পেঁচিয়ে ধরলো। মেয়েলী শরীরের নরম পেটে মুখ গুঁজে ফোসফাস নিঃশ্বাস ছেড়ে অস্থিরতা নিয়ে বলল,

– সাঞ্জে এটা কীভাবে করলো মোহ। আমি ভাবতে পারছিনা, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা। ও আমাকে একবার বললে যাকে চাইতো আমি তাকেই এনে দিতাম। কিন্তু ও কি করে . . ওর মুখের দিকে আমি তাকাতে পারছিনা মোহ। ছোট ছোট যেই হাত দুটো আমার হাত ধরে দাভাই দাভাই করে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতো সেই দু’হাতটাই যখন আমার পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদলো তখন আমার কেমন লেগেছে এটা আমি কি করে বোঝাবো মোহ? ওর এই চেহারাটা তো আমি সহ্য করতে পারছিনা

কথার সাথে তীব্র যন্ত্রণা, মনস্তাপে কেঁপে কেঁপে উঠলো গলার স্বর। দুহাতে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রইলো মোহরের কোমর। চোখ দু’টো ভরে এলো মোহরের নোনাজলে। ছোট বোন সমতূল্য মেয়েটার এহেন পরিস্থিতি যে ওকে ও কম যন্ত্রণা দিচ্ছে না! তবে নিজের দুঃখ, কষ্টটাকে আড়াল করে দুহাতে মেহরাজের মুখটা ধরে টেনে উঁচিয়ে নিলো। যতটা সম্ভব কাছে টেনে নিলো পুরুষালী শরীর টাকে। দুই গাল,কপালেসহ সারা মুখজুড়ে এক দুই করে অসংখ্য ছোট ছোট ঠোঁটের স্পর্শ মেখে দিয়ে বলল,

– সমস্যা যখন হয়েছে সমাধান ও আছে। আপনি এভাবে বললে তাথই আপা, দিদা তারা কি বলবে। দিদা তো এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আপা নিজেকে ধরে রেখেছে শুধু সাঞ্জের মুখের দিকে চেয়ে। আপনি অন্তত ভেঙে পড়বেন না।

মেহরাজ উত্তর করলো না। প্রিয়তমার বুকে ঠেস দিয়ে পড়ে রইলো চোখ বুজে। অশান্ত মন, দুঃশ্চিন্তা, বিষাদে আপাতত এই জায়গাটা ছাড়া কোনো স্থান নেই মাথা গুজার।

•••

– দুটো দিন ছুটি নিয়েছি। যাই হোক, আজতো আসতেই হবে।

– কিন্তু বাড়ির এই পরিস্থিতিতে তুই ছাড়া ওদের সামলাবে কে। তাথই দিদি একা কীভাবে . .

– দরকার হয় আজ হাফ শিফট নেবো। ফায়াজ স্যারকে বললে উনি অবশ্যই বুঝবেন ব্যাপারটা।

– আচ্ছা তবে তাই কর,যেটা তোর ভালো মনে হয়

মোহর আচ্ছা বলে ফোনটা কান থেকে নামিয়ে সেন্টার টেবিলে রেখে হ্যাণ্ডব্যাগ টা গুছিয়ে রাখলো। চুলগুলো আঁচড়ে গায়ে ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। সাঞ্জের ঘরে দরজাটা হালকা ফাঁক করে দেখলো তাথই আধশোয়া হয়েই বসে আছে ওর পাশে। তবে মোহর আর ঘরে ঢুকলো না, দরজাটা ভিরিয়ে দিয়েই নেমে এলো। মোহরকে বেরিয়ে যেতে দেখে নাজমা ডেকে বলল,

– আপনি খেয়ে যাবেন না ম্যাডাম?

– আজ না।

বলে দাঁড়ালো না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেটের সামনে আসলেই সাদা রঙের গাড়িটাকে দেখে থেমে গেলো। গাড়ি থেকে বেরিয়ে মোহরকে দেখে শুকনো মুখেই হাসলো পৃথক,

– হসপিটালের জন্য বেরোচ্ছ?

– হ্যাঁ ভাইয়া।

– ভেতরের অবস্থা কেমন?

– আগের মতই।

বলে মোহর বিরতিহীনা আবারও জিগ্যেস করলো,

– মেহরাজ এতো সকালে কোথায় বেরিয়েছে ভাইয়া?

– একটু কাজ আছে। আমার একটু সাঞ্জের সাথে কথা বলা দরকার। ও কি এখনো স্ট্যাবল না?

মোহর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

– কাল সারারাত জ্বরে কাবু ছিল। এই শরীরে এতটা কি করে সামাল দেবে আমি এটা নিয়েই বেশি চিন্তিত।

পৃথক কপালে সরু ভাঁজ ফেলে জিগ্যেস করলো

– ওর বাবা মা কি কোনো ভাবে . .

– হ্যাঁ। তারা গর্ভপাত করানোর কথাটাই ভাবছে। আর তার জন্য খুব শীঘ্রই স্টেপ নিবে সেটাও বুঝতে পারছি।

– কিন্তু তারা স্টেপ নিলেও তো লাভ নেই। এই স্টেজে অ্যাবোর্সন কোনো ভাবেই পসিবল না!

মোহর ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,

– সেটা আপনি বা আমি বুঝলে তো কিছুই হবে না। যাই হোক আমার দেরী হচ্ছে ভাইয়া। আমি এসে কথা বলবো।

বলে পৃথকের থেকে বিদায় নিয়ে এগোলে পৃথক ও বাড়ির দিকে ঢুকতে গেলো। তবে মোহর কি মনে হতে, পেছনে ফিরে বলল,

– ভাইয়া! আপার কাল থেকে ঘুম,খাওয়া কিছুই নেই। সবচেয়ে বেশি আঘাত টা মনে হয় আপাই পেয়েছে। উনাকে একটু সামলে নিবেন

বলে গাড়িতে উঠতেই গাড়িটা তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে গেলো। পৃথক নিরবে সম্মতি দিয়ে এগিয়ে গেলো বাড়ির ভেতর।

•••

– সমস্যাটা আপনাদের। এখানে আমার কিছু করার আছে বলে তো মনে হয় না!

– ভাই যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। যেই ঘটনা পেরিয়ে গেছে সেটার রেশ ধরে এখনো এই মন কষাকষির কোনো মানে হয়!

– মন কষাকষির তো কিছু নেই মুর্তজা সাহেব! আমি আপনাদের সম্মুখেই সমস্ত ল্যাটা চুকিয়ে এসেছি। আপনাদের সাথে এখন আর কোনো লেনদেন আমি করিনা।

বলেই নিজের কথায় ইতি টানলেন ওয়াকিফ চৌধুরী। এতক্ষণ আরহাম বললেও এবার মুখ খুললো আজহার। ভীষণ সাবলীল ভাবেই বললেন,

– লেনদেন করিনা বললেই তো লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়নি ওয়াকিফ। কোম্পানির শেয়ারের মালিকানায় এখনো তোমার নামটা বহাল আছে, ফ্যাক্টরির সকলে এখনো তোমাকে ম্যানেজমেন্টের অথোর হিসেবে জানছে, আর ব্যাংক এখনো এআর গ্রুপ থেকে তোমার অ্যাকাউন্টে মানি ট্রান্সফার করছে। তাহলে বন্ধ টা কি হলো?

ওয়াকিফ চৌধুরী ক্রুর চোখে তাকালো দুই ভাইয়ের দিকে। যারা আজ সকালেই নিমন্ত্রণ হীনায় এসে বসেছে তার তলবে। বেশ ভারী গলাতে বলল,

– কোম্পানিতে আমার শেয়ার,মানি,নাম সবই আছে। তাহলে এসব তো হবেই। আমার হকের জিনিস, এ নিয়ে খোটা দিচ্ছেন আপনারা আমাকে!

– ভুল বুঝছেন আপনি। ভাইজান আপনাকে খোটা দিচ্ছেন না বরং মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমাদের নাম,ঠিকানা, ব্যবসা, আবাস্থল এখনো একই আছে। আমরা এখনো এক সুত্রেই আঁটকে আছি। এসবের মাঝে শুধু শুধু মনোমালিন্যতা ধরে রাখা টা অহেতুক বিলাসিতার মতো অবান্তরতা ছাড়া কিছুই না। আপনি না চাইলেও এখনো আমরা একই আছি, আর চুক্তি শেষ না হওয়া অব্দি থাকতেও হবে।

আরহামের কথাটার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে অসুবিধা হলো না ওয়াকিফের। কথার কোনো অংশে ভুল বলেননি তারা। তবে তার অহমিকাও তো অহেতুক নয়! কিন্তু সেই মনোভাব টা সন্তপর্ণে লুকিয়ে বেশ খানিকটা নিরবতা পালন করে গম্ভীর স্বরে বলল,

– তাহলে কি চাচ্ছেন আপনারা!

– আপনি লয়্যার মোতায়েন করুন। নোমানের যত দ্রুত সম্ভব জামিন হওয়া দরকার

আরহামের কথায় ভীষণ রকম ভাঁজ পড়লো ওয়াকিফের কপালে। ভ্রু কুঁচকে বললেন,

– লয়্যার তো আমার আলাদা নয়। একই, তবে সেই কাজটা তো আপনারাও করতে পারেন

আজহার চ জাতীয় শব্দ করে ব্যতিব্যস্ত হয়ে অস্থির গলায় বললেন,

– কিসব বোকার মতন কথা বলছো ওয়াকিফ। নোমানকে জেলে দিয়ে ওর নামে কেস ঠু’কেছে কে? মেহরাজ, যে আমাদেরই বাড়ির ছেলে। এখন ছেলে কেস ঠু’কেছে আর আমরা বাপ চাচারা লয়্যার অ্যাপোয়েন্ট করবো! জল কতদূরে গড়াবে ভাবতে পারছো?

– ভাইজান ঠিক বলছেন ওয়াকিফ ভাই। আমাদের কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, নোমান যা করেছে ওকে শূ’লে চড়ালেও আমার রাগ হজম হবে না। কিন্তু আপাতত ওই অ’জাত টাকে আমাদের দরকার। যতসব লেনদেন, এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট ওর হাত দিয়েই হচ্ছে। ডিলার’রা আমাদের বলতে নোমানের নামটাই জানে। এখন যদি ওকে আমাদের হাতে রাখতে না পারি তাহলে কোটি কোটি টাকা আমাদের পকেট থেকে চুকাতে হবে। তাই আপনি নোমানের হয়ে কেস লড়াবেন। কারণ বিজনেসটায় আপনারও সমান ভাবে শেয়ার আছে, সেক্ষেত্রে নোমান আপনার ও আন্ডারে কাজ করে। তাই নিজের এমপ্লয়িকে জামিন দিতে আপনার লয়্যার মোতায়েন করাটাকে কেও ই সন্দিহান নজরে দেখবে না।

পুরো কথাটা চুপচাপ হজম করলো ওয়াকিফ। হয়তো বুঝতেও পারলো সবটা। কিন্তু তাতে কালো করে রাখা মুখটার পরিবর্তন হলো না। বরং আরও দ্বিগুণ উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল,

– সেসব নাহয় করলাম। কিন্তু মেহরাজের হয়ে কে লড়ছে সেটা ভুলে যাচ্ছেন আপনারা! ব্যারিস্টারকে আমার লয়্যার কিছুতেই মোকাবিলা করতে পারবেনা আরহাম। ওর হাত অনেক লম্বা, বরং আমি হাত ঢোকাতে গেলে শেষে কেঁচো খুঁজতে কেওটে না বেরিয়ে আসে!
.
.
.
চলমান।

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here