মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২১

0
298

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
শেহজাদরা মীরাকে নিয়ে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেছে। ফ্রিশা গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ফ্রিশার মাথা মীরার কোলে আর পা শেহজাদের কোলে। গাড়ি শেহজাদদের বাড়ির গেইটে ঢুকতেই শেহজাদ বলে,

“ও-কে এবার কোলে নিতে হবে। তুমি একটু ও-কে ধরে বসিয়ে দাও।”

মীরা খুব নমনীয় ভাবে ধীরে ধীরে ফ্রিশাকে সিটে হেলান দিয়ে বসায়। গাড়ি থামলে শেহজাদ আগে নেমে তারপর ফ্রিশাকে নামিয়ে কোলে নেয়। অতঃপর মীরাকে বলে,
“তুমি ভেতরে আসো, আমি ফ্রিশাকে ওর রুমে রেখে আসি।”

মীরা মৃদু হেসে ইশারায় সম্মতি দেয়। শেহজাদ যেতেই মিসেস শাহিদা এসে মীরার পাশে দাঁড়ান। তারপর নরম স্বরে বলেন,
“তুমি কিছু মনে করো না।”

মীরা বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো,
“কী মনে করব, আন্টি?”

“এইযে শেহজাদ তোমার সাথে বাড়ির ভেতর ঢুকলো না। নতুন বর-কনে তো একসাথে প্রথমবার বাড়িতে প্রবেশ করে।”

মীরা হেসে মিসেস শাহিদাকে প্রত্যুত্তর করে,
“এটা কোন কারণ হলো? হ্যাঁ তবে আপনার কনসার্ন আমি বুঝতে পারছি। নববিবাহিতা তার স্বামীর হাত ধরেই নতুন ঘরে প্রবেশ করে। সাথে থাকে নতুন পরিবেশ, নতুন সংসার, নতুন মানুষদের নিয়ে একরাশ ভয় ও আশা। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তো সেটা আলাদা। আমি আপনাদের খুব ভালো করে জানি। তাছাড়া বিয়েটা করেছিও ওই বাচ্চাটার জন্য, যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্যার ভেতরে নিয়ে গেলেন। এখন এখানে যদি আমি কিছু মনে করে বসে থাকি, তা তো শোভনীয় না।”

মিসেস শাহিদা হেসে একবার স্বামীর দিকে দেখে নিয়ে বলেন,
“তোমার স্যার ঠিক কথাই বলেছিলেন। তুমি খুব বুদ্ধিমতি ও বুঝদার মেয়ে। এসো ভেতরে এসো।”

মীরা মুচকি হেসে মিসেস শাহিদা ও ড: আকবর রেহমান এর সাথে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।

_______
কিছুক্ষণ গল্প ও ভিডিও কলে ড: আকবর রেহমানের ভাই-বোনের পরিবারের সাথে পরিচয় পর্ব চলেছে। তারপর মিসেস শাহিদা নিজে মীরাকে শেহজাদের বেডরুমে দিয়ে গেছেন। তারপর তিনি সার্ভেন্টকে দিয়ে মীরার সুটকেস ও খাবার পাঠিয়ে দিয়েছেন । মীরা রুমের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে পুরো ঘরটা সূক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ঘরটা বড়ো ও বেশ ছিমছাম। আজ তাদের বিয়ের রাত হিসবে সাজানোও নেই। শুধু ঘরে থাকা ২-৩টা ফুলদানিতে তাজা ফুল রাখা। ঘরটার ব্যালকনি দক্ষিণমুখী, সেইসাথে জানালাও। উত্তর পাশে ওয়াশরুম, ড্রেসিংটেবিল ও কাঠের আলমারি। ওয়াশরুমের সাথে পূর্ব পাশে দুই সিটের সোফা ও ছোটো টেবিল রাখা। পশ্চিম পাশে স্টাডি ডেস্ক ও বুকশেলফ। ঘরের এক জায়গায় একটা ইজি চেয়ারও রাখা। পূর্ব পাশের দেয়ালে বিশাল জায়গা করে সাদা শিফন পর্দা লাগানো। মীরার কৌতুহল হলো। কারণ ঘরের এমন স্থানে পর্দা থাকার তো কথা না। কারণ জানালাতো দক্ষিণ দিকে। মীরা সেদিকে এগুতে নিলে দরজার নব ঘুরানোর শব্দে পেছনে ফিরে। শেহজাদকে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। হঠাৎই তার মাঝে যেন ইতস্তততার পসরা এসে হাজির। কোনোরকমে সালাম দিয়ে নিরব থাকে। শেহজাদও সালামের জবাব দেয়। অতঃপর নিজের মনোযোগ রুমের চারিপাশে ঘুরিয়ে বলে,

“খাবার রাখা আছে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও। ওখানে তো সবার মাঝে খেতে পারোনি।”

মীরা মাথা নেড়ে কিয়ৎ মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলে,
“আপনি খাবেন না?”

“আমি তো সেখানে খেয়েছি। সবাই একে একে খাওয়াতে খাওয়াতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়েছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।”

এই বলে শেহজাদ বুকশেলফের দিকে এগোলো। মীরা লক্ষ্য করলো শেহজাদ ফ্রেশ হয়েই এসেছে। মীরা নিজের সুটকেস থেকে থ্রিপিস বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।

প্রায় আধঘণ্টা পর মাথায় তাওয়াল পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফিরে মীরা দেখে শেহজাদ স্টাডি ডেস্কে বসে বই পড়ছে। মীরার রুমে আসার শব্দে শেহজাদ বই থেকে নজর সরায়। মীরার দিকে চেয়ে শুধায়,

“এই রাতে শাওয়ার নিয়েছ?”

মীরার ধিমি স্বরে জবাব,
“জি স্যার। টায়ার্ড লাগছিল।”

“ভালো করেছ। তবে হেয়ার ড্রায়ারটা ফ্রিশার বেডরুমে। ওয়েট অ্যা মিনিট। আমি এনে দিচ্ছি।”

মীরা মাথা নাড়ে। শেহজাদ রুম থেকে বের হয়ে গেলে মীরা চুল থেকে তাওয়াল খুলে ভালো করে চুল ঝেড়ে নেয়। তারপর খাবারের ঢাকনা খুলে দেখে নেয়। ইতোমধ্যে শেহজাদ ফিরে আসে।

“এইযে হেয়ার ড্রায়ার। তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি ঘুমাতে যাচ্ছি।”

“আচ্ছা।”

মীরা হেয়ার ড্রায়ারটা নেয়। শেহজাদও গিয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ে। মীরা সময় নিয়ে চুল শুকিয়ে নেয়। অতঃপর খেয়ে নামাজ পড়ে নিজেও বিছানার আরেক কোনায় শুয়ে পড়ে।

________

বেশ সকাল সকাল মীরার ঘুম ভেঙে যায়। দেখে শেহজাদ তার পাশে বসে কফি খাচ্ছে আর ফোন স্ক্রল করছে। শেহজাদের ভাবসাব দেখে মীরা ভেবে বসলো, সে হয়তো খুব লেট করে ঘুম থেকে ঘুম থেকে উঠেছে। তারপর তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে সামনের দেয়ালে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে এখনও ছয়টাও বাজেনি। অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। শেহজাদ মীরার ছটফটে ও তাড়াহুড়ো করে উঠে বসার দৃশ্য ঠিকি লক্ষ্য করেছে। সে নিরবে হেসে মীরাকে ডেকে বলে,

“মীরা, তুমি লেইট করে ঘুম থেকে উঠোনি। অ্যাই ওয়েক আপ আর্লি এভরি মর্নিং। নাউ গো এন্ড ফ্রেশেন আপ।”

মীরা উঠে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে বিছানায় বসে। শেহজাদকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“স্যার, আপনি প্রতিদিন যে সময় উঠবেন, আমাকেও প্লিজ ডেকে দিবেন।”

“ইয়ার অফকোর্স। আজকেই দিতাম বাট দেন অ্যাই থট ইউ ওয়ার টায়ার্ড। কাল থেকে তোমাকেও আর্লি মর্নিং উঠতে হবে।”

মীরা হালকা হেসে আয়নার সামনে গিয়ে চুল ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। গতকাল রাতে মিসেস শাহিদা তাকে বলেছিলেন, কোনটা কার রুম। সেই অনুসারে ফ্রিশার রুমে গিয়ে দেখে ফ্রিশা বড়ো টেডিকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। মীরা মুচকি হেসে ফ্রিশার পাশে বসে। তারপর ওর মাথায় হাত বুলায়। পুরো রুমটা হালকা গোলাপি রঙের। দেখতেও সুন্দর। খেলনা, টেডি সব সাজানো। মীরা দেখলো ফ্রিশা নড়ে ওঠেছে। সে তৎপর হয়ে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। তারপর সেখান থেকে উঠে রান্নাঘরে যাওয়ার মনস্থির করে। সে শুনেছে, এই বাড়ির রান্নাবান্না সব সার্ভেন্ট দেখাশোনা করে। কিন্তু আজ তার এই বাড়িতে প্রথম দিন। তাই ভাবলো, সবার জন্য কিছু না কিছু স্পেশাল রান্না তো করতেই পারে। যা ভাবা সেই কাজ। রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো সবকিছু খুব সাজানো। কোন কন্টিনারে কী রাখা, সব গোছানো। এতে মীরা বেশ খুশিও হয়ে গেছে। অতি সহজেই হাতের কাছে সব পেয়ে গেছে। প্রথমেই বানালো পায়েশ। তারপর কী বানাবে ভাবতে ভাবতে সার্ভেন্ট এসে হাজির হয়। সার্ভেন্ট অবাক হয়ে বলে,

“ম্যাডাম, আপনি এখানে? কিছু লাগবে?”

মীরা নিজের ভাবনার সমাধান পেয়ে গিয়ে অত্যন্ত খুশি হয়ে বলে,
“হ্যাঁ। আপনি একটু আমাকে বলুন তো, এই বাড়ির সবাই ব্রেকফাস্টে কী খায়?”

“পাউরুটির সাথে ডিম মাঝে দিয়ে খায় আর ফলের সাথে ওটস। সাথো ফলের জুসও।”

“ওহ। প্রতিদিন এগুলোই?”

“জি। বড়ো স্যার ও ম্যাডামের ডায়াবেটিস আছে তো। আর ছোটো স্যার ও ফ্রিশামনিরও এগুলাই পছন্দ। ছোটো স্যার তো বিদেশে ছিল আবার ফ্রিশামনির মা মানে ছোটো স্যারের প্রথম পক্ষের বউও তো বিদেশের। উনারা সকালে ভাত-রুটি খায় না।”

সার্ভেন্টটার কথা শুনে মীরা হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে। আজকের নাস্তা আমি বানাব।”

সার্ভেন্ট অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে বলে,
“কী বলেন ম্যাডাম! আমরা থাকতে আপনি কেন করবেন? আপনি কালকেই এখানে নতুন আসলেন। আপনি ঘরে গিয়ে রেস্ট করুন, ম্যাডাম।”

“আজকে আমিই নাস্তা বানাব। উনারা যা পছন্দ করে তাই বানাব। প্লিজ। আপনি বাধা দিবেন না।”

“কিন্তু ম্যাডাম…”

“কোনো কিন্তু না। প্লিজ। আমি সবসময় এই সময়ও পাব না। প্রতিদিন তো আপনারাই করবেন।”

সার্ভেন্ট রাজি হয়। তারপর সে রান্নাঘরেই দাঁড়িয়ে মীরার কাজ দেখতে থাকে। মাঝেমধ্যে কিছু লাগলে এগিয়েও দিচ্ছে।

__________

খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসেছে। মীরা এখনও কাউকে জানায়নি যে রান্না আজ সে করেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই একটা দুর্ঘটনা ঘটলো….

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here