মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া #লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৯

0
301

#মন_মোহনায়_ফাগুন_হাওয়া
#লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
মীরা নিজেকে ধাতস্থ করে জবাব দিলো,
“আপনাদের ভাষায় আমি স্টে*পমা*দারই। আপনারা বলুন তো? এর মানে কী?”

উপস্থিত মহিলারা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে একজন জবাব দিলো,
“কী আবার? বাবা দ্বিতীয় অথবা একাধিক বিয়ে করলে তারা সৎ মা হয়।”

আরেকজন বলে,
“এটা জিজ্ঞাসা করার কী আছে বুঝলাম না!”

মীরা তাচ্ছিল্য হেসে জবাবে বলে,
“স্টে*পমা*দার কি সবসময় নেগেটিভ হয়?”

“আপা, আপনি কী বলতে চাইছেন? আশেপাশে কী দেখেন না? খবরের কাগজ, নিউজ দেখেন না? মোস্ট অফ দ্যা টাইম নেগেটিভই হয়।”

একজন মহিলার জবাবে মীরা হাসলো। অতঃপর প্রত্যুত্তর করলো,
“জবাব তো আপনি দিয়েই দিলেন। মোট অফ দ্যা টাইম। নট অল টাইম। ধরলাম, ৯০% খারাপ হয়। ৫% খারাপ-ভালোর মাঝামাঝি। আর ৫% ভালো। এই রেশিওটা কেন আসছে জানেন? আপনাদের জন্য। নিজে তো স্বামীর আগের ঘরের বাচ্চা থাকলেও দেখবেন না! আবার কেউ যদি নিজের স্বামীর আগের ঘরের সন্তানকে আগলে রাখতে চায়, তাকেও বাজে কথা বলবেন। আবার নিজে সেধে গিয়ে কুম*ন্ত্রণা দিয়ে আসবেন। কিন্তু কেন? কারও সৎ মা হওয়া আর হাসবেন্ডের দ্বারা চিটেড হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে বুঝলেন!”

আরেক মহিলা বলে ওঠে,
“আমাদের শেখাতে আসবেন না। বাচ্চাসহ পুরুষকে মানুষ কেন বিয়ে করে তা আমাদের ভালো করে জানা আছে।”

মীরা শক্ত চোয়ালে জোরপূর্বক হেসে শুধায়,
“ওহ তাই? তা কেন করে?”

“কেন আবার! টাকা-পয়সা দেখে। ফ্রিশাদের তো অবস্থা ভালো। হাইক্লাস সোসাইটির। লোভে তো পড়বেনই।”

মীরা সাথে সাথে প্রশ্ন তোলে,
“আমাকে দেখে কী আপনার লো ক্লাস মনে হয়? আমাকে চেনেন আপনি? কতোটুকু জানেন আমার সম্পর্কে?”

“আপনাকে চিনে আমরা কী করব! আপনিই তো কথা বাড়াচ্ছেন।”

“আমি কথা বাড়াচ্ছি? নাকি আপনাদের মধ্যে একজন এসেছিলেন পরিচিত হতে। নাকি আমি গিয়েছিলাম? এখন কি তবে এটিটিউট বলবেন? এটিটিউট হলে হোক, তাও কারও সাথে যেচে কথা বলতে গিয়ে তাকে ইনসাল্ট তো করি না। আমার ক্লাস নিয়ে যেহেতু কথা উঠলো তখন আমি নিজে যেচেই বলে দেই। আমার ফ্যামিলি মিডেলক্লাস কিন্তু উনারা আমার কোনো অভাব রাখেনি। ফ্রিশার বাবা যেই প্রাইভেট ভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন, আমি সেখান থেকে অনার্স কম্পিলিট করে ইন্ডিয়ার এক ওয়েল নোওন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছি। তারপর সেখানে ১ বছরের জব অভিজ্ঞতাও আছে আমার। এখন তো একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে লেকচারারও। আমি মিডেলক্লাস হলেও আমার ডেজিগনেশন কিন্তু হাই ক্লাস। ক্লাস বিবেচনার ৩টা উপায়ের আমি ২ উপায়ে হাই ক্লাস। হাইলি এডুকেটেড এন্ড গুড মেন্টালিটি। কিন্তু আপনারা হয়তো হাইক্লাস সোসাইটি থেকে বিলং করেন কিন্তু মনমানসিকতা অনেক নিচু। এখন মানসিকতার সাথেই কিন্তু শিক্ষাটাও আসে। একজন অশিক্ষিত ব্যাক্তির মন-মানসিকতা যদি উন্নত হয় তবে সে সম্মানের পাত্র। কিন্তু একজন শিক্ষিত ব্যাক্তির নিচু মন-মানসিকতা হলে সে ধি*ক্কারের পাত্র। বলে না? দু*র্জন বিদ্যান হলেও পরিত্যাজ্য! আপনারাই তো যদি বাচ্চাদের বাসায় কখোনো নিজে পড়ান তবে পড়িয়েছেন। কিন্তু ভেবে দেখেছেন, যে আপনি নিজেই দু*র্জন! তাই অন্যের ক্লাস বিবেচনার আগে নিজের ক্লাস বিবেচনা করে নিবেন।”

মীরার উচিত কথা যেন সেই মহিলাদের গায়ে আ*গু*ন ধরিয়ে দিয়েছে! উনারা তেলে-বেগুনে জ্ব*লে উঠে কিছু বলতে নিতেই সেখানে স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ও একজন ম্যাম হাজির হোন।

“সাইল্যান্ট। এটা স্কুল। কোনো নাটক-মঞ্চ না যে এভাবে চিৎকার, চেঁচামেচি করবেন!”

প্রিন্সিপ্যাল ফের বললেন,
“আমার পিয়ন আমাকে বলেছে। আপনারা সবাই জোট হয়ে একজনকে ইনসাল্ট করছেন।”

তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠলো,
“আমরা তো কথা বলছিলাম। উনিই তো শুরু করলো।”

“আমি কিছুটা শুনেছি। ফ্রিশার বাবা আবার বিয়ে করলে আপনাদের কী? উনাদের ব্যাপার উনারা বুঝে নিবেন। আমরা তো প্রে করতে পারি। সবাই তো নেগেটিভ হয় না। যারা পজেটিভ, তাদের কাছে আপনাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য নজরও হার্ট করে। আই থিংক, আপনারা বুঝতে পেরেছেন।”

তারপর প্রিন্সিপ্যাল চলে যান। মীরাও সেখানে দাঁড়ায় না। গাড়িতে গিয়ে বসে। কান্না আসছে তার। কিছুক্ষণ আটকানোর চেষ্টা করে, ড্রাইভারকে বলে,

“ভাইয়া, আপনি একটু আশেপাশে থেকে ঘুরে আসুন। এই টাকাটা রাখুন, চা-পানি খেয়ে আসুন।”

ড্রাইভার লোকটা একবার তাকিয়ে মীরার মুখের অবস্থা দেখে টাকাটা নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মীরা ঝরঝর করে মুখ চেপে কেঁদে ফেলে। আজকের কথাগুলো তার খুব খারাপ লেগেছে। কী এমন করেছে যে সেখানে সবাই তাকে খারাপ নজরে দেখছে! কিছু সময় পর চোখ মুছে লম্বা শ্বাস নিয়ে তার মাকে কল করে। মলি জাহান তখন সবজি কা*টছিলেন। ফোনের রিংটোন কানে আসতেই তিনি নিহানকে ডেকে ফোনটা দিয়ে যেতে বলেন। নিহান একছুটে এসে দাদিকে ফোন দিয়ে আবার একছুটে চলে যায়। মলি জাহান স্ক্রিণে মীরার নাম দেখে হাস্যজ্জ্বল মুখ নিয়ে ফোন রিসিভ করেন। অপরপাশ থেকে মেয়ের ভাঙা কণ্ঠে সালাম আসলে তিনি সালামের জবাব দিয়ে শুধান,

“কী হয়েছে, মীরু? তোর কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?”

“মা, আমি যদি কখোনো খারাপ হয়ে যাই?”

মীরার কণ্ঠে জড়তা স্পষ্ট বুঝতে পেরে মলি জাহান ফের জিজ্ঞেসা করলেন,
“তুই খারাপ হতে যাবি কেন? কী হয়েছে স্পষ্ট করে বল।”

“মা! বড়োমা তো তোমার নিজের বোন ছিল, তাই তুমি বড়ো ভাইয়াকে দেখে রেখেছ। কিন্তু ফ্রিশার মায়ের সাথে তো আমার কোনো র*ক্তের সম্পর্ক নেই। তাহলে যদি আমি কোনোদিন অন্যসব স্টে*পমা-দারদের মতো ফ্রিশার সাথে রুড বিহেভ করে ফেলি!”

মলি জাহান এবার কিছুটা হলেও মেয়ের মন খারাপের কারণ আন্দাজ করতে পারলেন। তিনি শান্ত স্বরে বললেন,
“আমি জানি তুই হবি না। এসব নিয়ে ভাবার কী দরকার! কার ভাগ্যে কী আছে আমরা তো জানিনা। তুই বর্তমানে ফোকাস কর। ভবিষ্যৎ এমনিই সুন্দর হবে।”

মীরার ওষ্ঠকোণে কিছুটা হাসির রেখা ফুটে ওঠলো। সে বলল,
“আই লাভ ইউ, মা।”

“লাভ ইউ, সোনা।”

“রাখছি। তুমি যা করছিলে করো।”

মীরা ফোন রেখে লম্বা করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে একটু সময় ঘুমানোর কথা ভাবলো। ঘাড়ের কাছে কম্ফোর্টার দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

_________

ফ্রিশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে মীরা। পানি-জুস খেয়ে একটু বসে। তারপর ফ্রিশাকে ইউনিফর্ম বদলে শাওয়ার নিয়ে আসতে বলে, নিজেও শাওয়ার নিতে চলে যায়। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে বিছানায় রাখা ফোনটাকে ভাইব্রেট হতে দেখে সেটাকে উঠিয়ে দেখে শেহজাদের নাম্বার থেকে কল আসছে। মীরা রিসিভ করে সালাম দিলে, শেহজাদও জবাব দিয়ে বলে,

“ফ্রিশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছ?”

“হ্যাঁ। একটু আগেই। এসেই ও-কে শাওয়ারে পাঠিয়ে নিজেও শাওয়ার নিয়ে বের হলাম।”

“ওহ ওকে। তবে কিছু হালকা-পাতলা খেয়ে নাও তোমরা।”

“আচ্ছা। আপনার কি এখন গ্যাপ?”

“হুম। ১০ মিনিট। ব্যাক টু ব্যাক দুটো ক্লাস আজ। আচ্ছা রাখছি। তোমরা রেস্ট করো।”

“ক্লাস শেষে লাঞ্চ করে নিয়েন।”

“হুম।”

শেহজাদ তারপর ফোন রেখে দেয়। মীরা লাজুক হেসে আয়নার সামনে তোয়ালে নিয়ে চুল মুছতে বসে। আয়নায় নিজেকে দেখে আরেকদফা লজ্জা পেয়ে যায়। তার গালের অংশ ঈষৎ র*ক্তবর্ণ হয়ে আছে। মাথা নুইয়ে মৃদু হেসে আয়নার সামনে থেকেই উঠে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here